Suah Al An-aam (সূরাহ আল আন-আম)

নামকরণঃ 

এ সূরার ১৬ ও ১৭ রুকূ’তে কোন কোন আন’আমের (গৃহপালিত পশু) হারাম হওয়া এবং কোন কোনটির হালাল হওয়া সম্পর্কিত আরববাসীদের কাল্পনিক ও কুসংস্কারমূলক ধারণা বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে এ সূরাকে আল আন’আম নামকরণ করা হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ

ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে এ সম্পূর্ণ সূরাটি একই সাথে মক্কায় নাযিল হয়েছিল। হযরত মূ'আয ইবনে জাবালের চাচাত বোন হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটনীর পিঠে সওয়ার থাকা অবস্থায় এ সূরাটি নাযিল হতে থাকে। তখন আমি তাঁর উটনীর লাগাম ধরে ছিলাম। বোঝার ভারে উটনীর অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে ছিল যেন মনে হচ্ছিল এই বুঝি তার হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।” হাদীসে একথাও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, যে রাতে এ সূরাটি নাযিল হয় সে রাতেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে লিপিবদ্ধও করান।
এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে সুস্পষ্টভাবে মনে হয়, এ সূরাটি মক্কী যুগের শেষের দিকে নাযিল হয়ে থাকবে। হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদের রেওয়ায়াতটিও একথার সত্যতা প্রমাণ করে। কারণ তিনি ছিলেন আনসারদের অন্তর্ভুক্ত। হিজরতের পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। যদি ইসলাম গ্রহণ করার আগে তিনি নিছক ভক্তি-শ্রদ্ধার কারণে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিতভাবে হয়ে থাকবেন তাঁর মক্কায় অবস্থানের শেষ বছরে। এর আগে ইয়াসরেববাসীদের সাথে তাঁর সম্পর্ক এত বেশী ঘনিষ্ঠ হয়নি যার ফলে তাদের একটি মহিলা তাঁর খেদমতে হাযির হয়ে যেতে পারে।

নাযিল হওয়ার উপলক্ষ্যঃ

সূরাটির নাযিল হওয়ার সময়-কাল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পর আমরা সহজেই এর প্রেক্ষাপটের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে পারি। আল্লাহর রসূল যখন মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেবার কাজ শুরু করেছিলেন তারপর থেকে বারোটি বছর অতীত হয়ে গিয়েছিল। কুরাইশদের প্রতিবন্ধকতা, জুলুম ও নির্যাতন চরমে পৌঁছে গিয়েছিল। ইসলাম গ্রহণকারীদের একটি অংশ তাদের অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে দেশ ত্যাগ করেছিল। তারা হাবশায় (ইথিওপিয়া) অবস্থান করছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহায্য-সমর্থন করার জন্য আবু তালিব বা হযরত খাদীজা (রা.) কেউই বেঁচে ছিলেন না। ফলে সব রকমের পার্থিব সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়ে তিনি কঠোর প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে ইসলাম প্রচার ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। তাঁর ইসলাম প্রচারের প্রভাবে মক্কায় ও চারপাশের গোত্রীয় উপজাতিদের মধ্য থেকে সৎ লোকেরা একের পর এক ইসলাম গ্রহণ করে চলছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমগ্র জাতি ইসলামের অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের গোঁয়ার্তুমি অব্যাহত রেখেছিল। কোথাও কোন ব্যক্তি ইসলামের দিকে সামান্যতম ঝোঁক প্রকাশ করলেও তার পেছনে ধাওয়া করা হতো। তাকে তিরস্কার, গালিগালাজ করা হতো। শারীরিক দুর্ভোগ ও অর্থনৈতিক, সামাজিক নিপীড়নে তাকে জর্জরিত করা হতো। এ অন্ধকার বিভীষিকাময় পরিবেশে একমাত্র ইয়াসরেবের দিক থেকে একটি হালকা আশার আলো দেখা দিয়েছিল। সেখানকার আওস ও খাযরাজ গোত্রের প্রভাবশালী লোকেরা এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে বাই’আত করে গিয়েছিলেন। সেখানে কোন প্রকার আভ্যন্তরীণ বাধা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়েই ইসলাম প্রসার লাভ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ ছোট্ট একটি প্রারম্ভিক বিন্দুর মধ্যে ভবিষ্যতের যে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল তা কোন স্থুলদর্শীর দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়া সম্ভবপর ছিল না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হতো, ইসলাম একটি দুর্বল আন্দোলন। এর পেছনে কোন বৈষয়িক ও বস্তুগত শক্তি নেই। এর আহবায়কের পেছনে তাঁর পরিবারের ও বংশের দুর্বল ও ক্ষীণ সাহায্য-সমর্থন ছাড়া আর কিছুই নেই। মুষ্টিমেয় অসহায় ও বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেন মনে হয় নিজেদের জাতির বিশ্বাস, মত ও পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা সমাজ থেকে এমনভাবে দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে যেমন গাছের মরা পাতা মাটির ওপর ঝরে পড়ে।

আলোচ্য বিষয়ঃ

এহেন পটভূমিতে এ ভাষণটি নাযিল হয়। এ হিসেবে এখানে আলোচ্য বিষয়গুলোকে প্রধান সাতটি শিরোনামে ভাগ করা যেতে পারেঃ
একঃ শিরককে খণ্ডন করা ও তাওহীদ বিশ্বাসের দিকে আহবান জানানো।
দুইঃ আখেরাত বিশ্বাসের প্রচার এবং এ দুনিয়ার জীবনটাই সবকিছু, এ ভুল চিন্তার অপনোদন।
তিনঃ জাহেলীয়াতের যে সমস্ত ভ্রান্ত কাল্পনিক বিশ্বাস ও কুসংস্কারে লোকেরা ডুবে ছিল তার প্রতিবাদ করা।
চারঃ যেসব বড় বড় নৈতিক বিধানের ভিত্তিতে ইসলাম তার সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে চায় সেগুলো শিক্ষা দেয়া।
পাঁচঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর দাওয়াতের বিরুদ্ধে উত্থাপিত লোকদের বিভিন্ন আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব।
ছয়ঃ সুদীর্ঘ প্রচেষ্টা ও সাধনা সত্ত্বেও দাওয়াত ফলপ্রসূ না হবার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যে অস্থিরতা ও হতাশাজনক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছিল সে জন্য তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়া।
সাতঃ অস্বীকারকারী ও বিরোধী পক্ষকে তাদের গাফলতি, বিহ্বলতা ও অজ্ঞানতা প্রসূত আত্মহত্যার কারণে উপদেশ দেয়া, ভয় দেখানো ও সতর্ক করা।
কিন্তু এখানে যে ভাষণ দেয়া হয়েছে তাতে এক একটি শিরোনামের আওতায় আলাদা আলাদাভাবে একই জায়গায় পূর্ণাঙ্গরূপে আলোচনা করার রীতি অনুসৃত হয়নি। বরং ভাষণ এগিয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো মুক্ত অবাধ বেগে আর তার মাঝখানে এ শিরোনামগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভেসে উঠেছে এবং প্রতিবারেই নতুন নতুন ভংগীতে এর ওপর আলোচনা করা হয়েছে।

মক্কী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ঃ

এখানে পাঠকের সামনে সর্বপ্রথম একটি বিস্তারিত মক্কী সূরা আসছে। তাই এ প্রসংগে মক্কী সূরাগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমির একটি পূর্ণাঙ্গ বিশদ আলোচনা করে নেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। এ ধরনের আলোচনার পরে পরবর্তী পর্যায়ে যেসব মক্কী সূরা আসবে এবং তাদের ব্যাখ্যা প্রসংগে আমি যেসব কথা বলবো সেগুলো অনুধাবন করা সহজ হবে।
মাদানী সূরাগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোর নাযিলের সময়কাল আমাদের জানা আছে অথবা সামান্য চেষ্টা-পরিশ্রম করলে তার সময়-কাল চিহ্নিত করে নেয়া যেতে পারে। এমনকি সেসব সূরার বহু সংখ্যক আয়াতের পর্যন্ত নাযিলের উপলক্ষ্য ও কারণ নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতে পাওয়া যায়। কিন্তু মক্কী সূরাগুলো সম্পর্কে এতটা বিস্তারিত তথ্য–উপকরণ আমাদের কাছে নেই। খুব কম সংখ্যক সূরা এমন রয়েছে যার নাযিলের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত পাওয়া যায়। কারণ মাদানী যুগের তুলনায় মক্কী যুগের ইতিহাসে খুটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা কম। তাই মক্কী সূরাগুলোর ব্যাপারে আমাদের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য-প্রমাণের পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূরার বিষয়বস্তু, আলোচ্য বিষয় ও বর্ণনা পদ্ধতি এবং প্রত্যেক সূরার নাযিলের পটভূমি সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ও অস্পষ্ট ইশারা-ইঙ্গিতের আকারে যে আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে তার ওপরই নির্ভর করতে হয়। একথা সুস্পষ্ট যে, এ ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণের সাহায্যে প্রত্যেকটি সূরা ও আয়াত সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে অংগুলি নির্দেশ করে একথা বলা যেতে পারে না যে, এটি অমুক তারিখে অমুক বছর বা অমুক উপলক্ষ্যে নাযিল হয়েছে। সর্বাধিক নির্ভুলভাবে বড় জোর এতটুকু বলা যেতে পারে যে, একদিকে আমরা মক্কী সূরাগুলোর ভেতরের সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং অন্যদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের ইতিহাস পাশাপাশি রেখে এবং উভয়ের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে কোন্‌ সূরা কোন্‌ পর্যায়ের সাথে সম্পর্কিত ছিল সে সম্পর্কে একটি মত গঠন করতে পারি।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের এ পদ্ধতি অনুসরণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা ইলামী দাওয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে একে চারটি প্রধান প্রধান ও উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে বিভক্ত দেখতে পাইঃ
প্রথম পর্যায়ঃ নবুওয়াত প্রাপ্তির সূচনা থেকে শুরু করে নবুওয়াতের প্রকাশ্য ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় তিন বছর। এ সময় গোপনে দাওয়াত দেবার কাজ চলে। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদেরকে দাওয়াত দেয়া হয়। মক্কার সাধারণ লোকেরা এ সম্পর্কে তখনো কিছুই জানতো না।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ নবুওয়াতের প্রকাশ্য ঘোষণার পর থেকে জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও উৎপীড়নের সূচনাকাল পর্যন্ত প্রায় দু’বছর। এ সময় প্রথমে বিরোধিতা শুরু হয়। তারপর তা প্রতিরোধের রূপ নেয়। এরপর ঠাট্টা, বিদ্রুপ, উপহাস, দোষারোপ, গালিগালাজ, মিথ্যা প্রচারণা এবং জোটবদ্ধভাবে বিরোধিতা করার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়ে যায়। যারা তুলনামূলকভাবে বেশী গরীব, দুর্বল ও আত্মীয় বান্ধবহীন ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে তারাই হয় সর্বাধিক নির্যাতনের শিকার।
তৃতীয় পর্যায়ঃ চরম উৎপীড়নের সূচনা অর্থাৎ নবুওয়াতের ৫ম বছর থেকে নিয়ে আবু তালিব ও হযরত খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ইন্তিকাল তথা ১০ম বছর পর্যন্ত পাঁচ বছর সময়-কাল পর্যন্ত এ পর্যায়টি বিস্তৃত। এ সময়ে বিরোধীতা চরম আকার ধারণ করতে থাকে। মক্কার কাফেরদের জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মুসলমান আবিসিনিয়া হিজরত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও অবশিষ্ট মুসলমানদেরকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বয়কট করা হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সমর্থক ও সংগী-সাথীদের নিয়ে আবু তালিব গিরিবর্তে অবরুদ্ধ হন।
চতুর্থ পর্যায়ঃ নবুওয়াতের দশম বছর থেকে ত্রয়োদশ বছর পর্যন্ত প্রায় তিন বছর। এটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথীদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ও বিপজ্জনক সময়। তাঁর জন্য মক্কায় জীবন যাপন করা কঠিন করে দেয়া হয়েছিল। তায়েফে গেলেন। সেখানেও আশ্রয় পেলেন না। হজ্জের সময়ে আরবের প্রতিটি গোত্রকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং ইসলাম গ্রহণ ও তাঁকে সাহায্য করার আবেদন জানালেন। কিন্তু কোথাও সাড়া পেলেন না। এদিকে মক্কাবাসীরা তাঁকে হত্যা করার, বন্দী করার বা নগর থেকে বিতাড়িত করার জন্য সলা-পরামর্শ করেই চলছিল। অবশেষে আল্লাহর অপার অনুগ্রহে আনসারদের হৃদয় দুয়ার ইসলামের জন্য খুলে গেলো। তাদের আহবানে তিনি মদীনায় হিজরত করলেন।
এ সকল পর্যায়ে বিভিন্ন সময় কুরআন মজীদের যে সমস্ত আয়াত নাযিল হয় সেগুলোর প্রত্যেকটি তাদের বিষয়বস্তু ও বর্ণনা রীতির দিক দিয়ে পরস্পর থেকে বিভিন্ন। এক পর্যায়ের আয়াতের বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী অন্য পর্যায়ের আয়াতের থেকে ভিন্নধর্মী। এদের বহু স্থানে এমন সব ইশারা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা থেকে তাদের পটভূমির অবস্থা ও ঘটনাবলীর ওপর সুস্পষ্ট আলোকপাত হয়। প্রত্যেক পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যের প্রভাব সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে নাযিলকৃত বাণীর মধ্যে বিপুলভাবে লক্ষণীয়। এসব আলামতের ওপর নির্ভর করে আমি পরবর্তী পর্যায়ে আলোচিত প্রত্যেকটি মক্কী সূরার ভূমিকায় সেটি মক্কী যুগের কোন পর্যায়ে নাযিল হয় তা জানিয়ে দেবো।

اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِىۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ وَجَعَلَ الظُّلُمٰتِ وَالنُّوۡرَ ؕ ثُمَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا بِرَبِّهِمۡ يَعۡدِلُوۡنَ

১.) প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উৎপত্তি ঘটিয়েছেন। তবুও সত্যের দাওয়াত অস্বীকারকারীরা অন্যদেরকে তাদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করাচ্ছে।

هُوَ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ طِيۡنٍ ثُمَّ قَضٰىۤ اَجَلاً‌ؕ وَّاَجَلٌ مُّسَمًّى عِنۡدَهٗ‌ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تَمۡتَرُوۡنَ‏

২.) তিনিই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।  তারপর তোমাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন জীবনের একটি সময়সীমা এবং আর একটি সময়সীমাও আছে, যা তাঁর কাছে স্থিরীকৃত, কিন্তু তোমরা কেবল সন্দেহেই লিপ্ত রয়েছে।

وَهُوَ اللّٰهُ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَفِىۡ الۡاَرۡضِ‌ؕ يَعۡلَمُ سِرَّكُمۡ وَجَهۡرَكُمۡ وَيَعۡلَمُ مَا تَكۡسِبُوۡنَ

৩.) তিনিই এক আল্লাহ‌ আকাশেও আছেন এবং পৃথিবীতেও, তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সব অবস্থান জানেন এবং ভালো বা মন্দ যা-ই তোমাদের উপার্জন করো তাও তিনি ভালোভাবেই অবগত।

وَمَا تَاۡتِيۡهِمۡ مِّنۡ اٰيَةٍ مِّنۡ اٰيٰتِ رَبِّهِمۡ اِلَّا كَانُوۡا عَنۡهَا مُعۡرِضِيۡنَ

৪.) মানুষের অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই যে, তাদের রবের নিদর্শন সমূহের মধ্য থেকে এমন কোন নিদর্শন নেই যা তাদের সামনে আসার পর তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।

﴿فَقَدۡ كَذَّبُوۡا بِالۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمۡ‌ؕ فَسَوۡفَ يَاۡتِيۡهِمۡ اَنۡۢبٰٓؤُا مَا كَانُوۡا بِهٖ يَسۡتَهۡزِءُوۡنَ﴾

৫.) অনুরূপভাবে এখন যে সত্য তাদের কাছে এসেছে তাকেও তারা মিথ্যা বলেছে। ঠিক আছে, এতদিন পর্যন্ত যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করে এসেছে শীঘ্রই সে সম্পর্কে কিছু খবর তাদের কাছে পৌঁছবে।

اَلَمۡ يَرَوۡا كَمۡ اَهۡلَكۡنَا مِنۡ قَبۡلِهِمۡ مِّنۡ قَرۡنٍ مَّكَّنّٰهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ مَا لَمۡ نُمَكِّنۡ لَّكُمۡ وَاَرۡسَلۡنَا السَّمَآءَ عَلَيۡهِمۡ مِّدۡرَارًا وَّجَعَلۡنَا الۡاَنۡهٰرَ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهِمۡ فَاَهۡلَكۡنٰهُمۡ بِذُنُوۡبِهِمۡ وَاَنۡشَاۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ قَرۡنًا اٰخَرِيۡنَ

৬.) তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে এমনি ধরনের কত মানব গোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করেছি, যারা নিজ নিজ যুগে ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপশালী? পৃথিবীতে তাদেরকে এমন কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকেও দেইনি। তাদের ওপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম এবং তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম। (কিন্তু যখন তারা নিয়ামতের প্রতি অকৃজ্ঞতা প্রকাশ করলো তখন) অবশেষে তাদের গোনাহের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের জায়গায় পরবর্তী যুগের মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি।

وَلَوۡ نَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ كِتٰبًا فِىۡ قِرۡطَاسٍ فَلَمَسُوۡهُ بِاَيۡدِيۡهِمۡ لَقَالَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّبِيۡنٌ

৭.) হে নবী! যদি তোমার প্রতি কাগজে লেখা কোন কিতাবও নাযিল করতাম এবং লোকেরা নিজেদের হাত দিয়ে তা স্পর্শ করেও দেখে নিতো, তাহলেও আজ যারা সত্যকে অস্বীকার করছে তারা তখন বলতো, এটা সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়।

وَقَالُوۡا لَوۡلَاۤ اُنۡزِلَ عَلَيۡهِ مَلَكٌ‌ؕ وَلَوۡ اَنۡزَلۡنَا مَلَكًا لَّقُضِىَ الۡاَمۡرُ ثُمَّ لَا يُنۡظَرُوۡنَ

৮.) তারা বলে, এ নবীর কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয় না কেন? যদি ফেরেশতা পাঠাতাম, তাহলে এতদিনে কবেই ফায়সালা হয়ে যেতো, তখন তাদেরকে আর কোন অবকাশই দেয়া হতো না।

وَلَوۡ جَعَلۡنٰهُ مَلَكًا لَّجَعَلۡنٰهُ رَجُلاً وَّلَلَبَسۡنَا عَلَيۡهِمۡ مَّا يَلۡبِسُوۡنَ

৯.) যদি ফেরেশতা পাঠাতাম তাহলেও তাকে মানুষের আকৃতিতেই পাঠাতাম এবং এভাবে তাদেরকে ঠিক তেমনি সংশয়ে লিপ্ত করতাম যেমন তারা এখন লিপ্ত রয়েছে। 

وَلَقَدِ اسۡتُهۡزِئَ بِرُسُلٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِيۡنَ سَخِرُوۡا مِنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا بِهٖ يَسۡتَهۡزِءُوۡنَ

১০.) হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও অনেক রসূলের প্রতি বিদ্রূপ করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্রূপকারীরা যে অকাট্য সত্য নিয়ে বিদ্রূপ করতো, সেটাই অবশেষে তাদের ওপর চেপে বসেছিল।

قُلۡ سِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ ثُمَّ انظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُكَذِّبِيۡنَ

১১.) এদেরকে বলে দাও, পৃথিবীর বুকে একটু চলাফেরা করে দেখো, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে। 

قُل لِّمَنۡ مَّا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ‌ؕ قُل لِّلَّهِ‌ؕ كَتَبَ عَلٰى نَفۡسِهِ الرَّحۡمَةَ‌ؕ لَيَجۡمَعَنَّكُمۡ اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِ لَا رَيۡبَ فِيۡهِ‌ؕ الَّذِيۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَهُمۡ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ

১২.) এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলো কার? –বলো, সবকিছু আল্লাহরই।৯ অনুগ্রহের পথ অবলম্বন করা তিনি নিজের জন্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। (এ জন্যই তিনি নাফরমানী ও সীমালংঘন করার অপরাধে তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে পাকড়াও করেন না। ) কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সবাইকে অবশ্যি একত্র করবেন। এটি এমন একটি সত্য যার মধ্যে সংশয়-সন্দেহের কোন অবকাশই নেই। কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে তারা একথা মানে না।

وَلَهٗ مَا سَكَنَ فِىۡ الَّيۡلِ وَالنَّهَارِ‌ؕ وَهُوَ السَّمِيۡعُ الۡعَلِيۡمُ

১৩.) রাতের আঁধারে ও দিনের আলোয় যা কিছু বিরাজমান সবই আল্লাহর এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।

﴿قُلۡ اَغَيۡرَ اللّٰهِ اَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَهُوَ يُطۡعِمُ وَلَا يُطۡعَمُ‌ؕ قُلۡ اِنِّىۡۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَكُوۡنَ اَوَّلَ مَنۡ اَسۡلَمَ‌ؕ وَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ﴾

১৪.) বলো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি আর কাউকে নিজের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবো? সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে –যিনি পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা এবং যিনি জীবিকা দান করেন, জীবিকা গ্রহণ করেন না। বলো, আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে যেন আমি সবার আগে তাঁর সামনে আনুগত্যের শির নত করি। (আর তাগিদ করা হয়েছে, কেউ শিরক করলে করুক) কিন্তু তুমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

قُلۡ اِنِّىۡۤ اَخَافُ اِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّىۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيۡمٍ

১৫.) যদি আমি আমার রবের নাফরমানী করি, তাহলে ভয় হয় একটি মহা (ভয়ংকর) দিনে আমাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

مَّنۡ يُّصۡرَفۡ عَنۡهُ يَوۡمَٮِٕذٍ فَقَدۡ رَحِمَهٗ‌ؕ وَذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡمُبِيۡنُ

১৬.) সেদিন যে ব্যক্তি শাস্তি থেকে রেহাই পাবে আল্লাহ‌ তার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন এবং এটিই সুস্পষ্ট সাফল্য।

وَاِنۡ يَّمۡسَسۡكَ اللّٰهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ‌ؕ وَاِنۡ يَّمۡسَسۡكَ بِخَيۡرٍ فَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ

১৭.) যদি আল্লাহ‌ তোমার কোন ধরনের ক্ষতি করেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যে তোমাকে ঐ ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।

وَهُوَ الۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهٖ‌ؕ وَهُوَ الۡحَكِيۡمُ الۡخَبِيۡرُ

১৮.) আর যদি তিনি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তাহলে তিনি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী। তিনি নিজের বান্দাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি জ্ঞানী ও সবকিছু জানেন।

قُلۡ اَىُّ شَىۡءٍ اَكۡبَرُ شَهَادَةً‌ؕ قُلِ اللّٰهُ‌ؕ شَهِيۡدٌۢ بَيۡنِىۡ وَبَيۡنَكُمۡ‌ وَاُوۡحِىَ اِلَىَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ لِاُنۡذِرَكُمۡ بِهٖ وَمَنۡۢ بَلَغَ‌ؕ اَٮِٕنَّكُمۡ لَتَشۡهَدُوۡنَ اَنَّ مَعَ اللّٰهِ اٰلِهَةً اُخۡرٰى‌ؕ قُل لَّاۤ اَشۡهَدُ‌ۚ قُلۡ اِنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّاِنَّنِىۡ بَرِىۡٓءٌ مِّمَّا تُشۡرِكُوۡنَ

১৯.) এদেরকে জিজ্ঞেস করো, কার সাক্ষ্য সবচেয়ে বড়? –বলো, আল্লাহ‌ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আর এ কুরআন আমার কাছে পাঠানো হয়েছে অহীর মাধ্যমে, যাতে তোমাদের এবং আর যার যার কাছে এটি পৌঁছে যায় তাদের সবাইকে আমি সতর্ক করি। সত্যিই কি তোমরা এমন সাক্ষ্য দিতে সক্ষম যে, আল্লাহর সাথে আরো ইলাহ আছে? বলে দাও, আমি তো কখনোই এমন সাক্ষ্য দিতে পারি না। বলো, আল্লাহ‌ তো একজনই এবং তোমরা যে শিরকে লিপ্ত রয়েছো আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

الَّذِيۡنَ اٰتَيۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ يَعۡرِفُوۡنَهٗ كَمَا يَعۡرِفُوۡنَ اَبۡنَآءَهُمُ‌ۘ الَّذِيۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَهُمۡ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ

২০.) যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তারা এ বিষয়টি এমন সন্দেহাতীতভাবে চেনে যেমন নিজেদের সন্তানদেরকে চেনার ব্যাপারে তারা সন্দেহের শিকার হয় না।১৪ কিন্তু যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তারা একথা মানে না।

وَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰيٰتِهٖۤ‌ؕ اِنَّهٗ لَا يُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ‏

২১.) আর তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে  অথবা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে? অবশ্যি এ ধরনের জালেমরা কখনই সফলকাম হতে পারে না।

وَيَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِيۡعًا ثُمَّ نَقُوۡلُ لِلَّذِيۡنَ اَشۡرَكُوۡۤا اَيۡنَ شُرَكَآؤُكُمُ الَّذِيۡنَ كُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ

২২.) যেদিন এদের সবাইকে একত্র করবো এবং মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস করবো, এখন তোমাদের মনগড়া সেই শরীকরা কোথায়, যাদেরকে তোমরা নিজেদের ইলাহ মনে করতে?

ثُمَّ لَمۡ تَكُنۡ فِتۡنَتُهُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡا وَاللّٰهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشۡرِكِيۡنَ

২৩.) তখন তারা এ (মিথ্যা বিবৃতি দেয়া) ছাড়া আর কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না যে, হে আমাদের প্রভু! তোমার কসম, আমরা কখনো মুশরিক ছিলাম না।

اُنْظُرۡ كَيۡفَ كَذَبُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ‌ؕ وَضَلَّ عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ‏

২৪.) দেখো, সে সময় এরা কিভাবে নিজেরাই নিজেদের সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে নেবে এবং সেখানে তাদের বানোয়াট মাবূদ উধাও হয়ে যাবে।

وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّسۡتَمِعُ اِلَيۡكَ‌‌ۚ وَجَعَلۡنَا عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ اَكِنَّةً اَنۡ يَّفۡقَهُوۡهُ وَفِىۡۤ اٰذَانِهِمۡ وَقۡرًا‌ؕ وَاِنۡ يَّرَوۡا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤۡمِنُوۡا بِهَا‌ؕ حَتّٰۤى اِذَا جَآءُوۡكَ يُجَادِلُوۡنَكَ يَقُوۡلُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِيۡرُ الۡاَوَّلِيۡنَ

২৫.) এদের কিছু লোক কান পেতে তোমার কথা শোনে কিন্তু অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের অন্তরের ওপর আবরণ ফেলে দিয়েছি যার ফলে তারা এর কিছুই বোঝে না এবং তাদের কানে ভার রেখে দিয়েছি (যার ফলে সবকিছু শোনার পরও তারা কিছুই শোনে না) । তারা যে নিদর্শনই প্রত্যক্ষ করুক তার ওপর ঈমান আনবে না। এমনকি যখন তারা তোমার কাছে এসে তোমার সাথে ঝগড়া করে তখন তাদের মধ্য থেকে যারা অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত করে ফেলেছে তারা (সমস্ত কথা শোনার পর) একথাই বলে যে, এটি প্রাচীন কালের একটি গালগল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।

 وَهُمۡ يَنۡهَوۡنَ عَنۡهُ وَيَنۡـَٔوۡنَ عَنۡهُ‌ۚ وَاِنۡ يُّهۡلِكُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُوۡنَ

২৬.) তারা এ মহাসত্যবাণী গ্রহণ করা থেকে লোকদেরকে বিরত রাখে এবং নিজেরাও এর কাছ থেকে দূরে পালায়। (তারা মনে করে এ ধরনের কাজ করে তারা তোমার কিছু ক্ষতি করেছে) অথচ আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করেছে। কিন্তু এটা তারা উপলব্ধি করে না। হায়! যদি তুমি সে সময়ের অবস্থা দেখতে পারতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারে দাঁড় করানো হবে। সে সময় তারা বলবে,

وَلَوۡ تَرٰٓى اِذۡ وُقِفُوۡا عَلَى النَّارِ فَقَالُوۡا يٰلَيۡتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰيٰتِ رَبِّنَا وَنَكُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ

২৭.) হায়! যদি এমন কোন উপায় হতো যার ফলে আমরা আবার দুনিয়ায় প্রেরিত হতাম তখন আমাদের রবের নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলতাম না এবং মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।

بَلۡ بَدَا لَهُمۡ مَّا كَانُوۡا يُخۡفُوۡنَ مِنۡ قَبۡلُ‌ؕ وَلَوۡ رُدُّوۡا لَعَادُوۡا لِمَا نُهُوۡا عَنۡهُ وَاِنَّهُمۡ لَكٰذِبُوۡنَ‏

২৮.) আসলে একথা তারা নিছক এ জন্য বলবে যে, তারা যে সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল তা সে সময় আবরণমুক্ত হয়ে তাদের সামনে এসে যাবে। নয়তো তাদেরকে যদি আগের জীবনের দিকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে আবার তারা সে সবকিছুই করে যাবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। তারা তো মিথ্যুকই

وَقَالُوۡۤا اِنۡ هِىَ اِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنۡيَا وَمَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوۡثِيۡنَ

২৯.) (তাই নিজেদের মনোবাঞ্চা প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও তারা মিথ্যারই আশ্রয় নেবে) । আজ এরা বলে, জীবন বলতে যা কিছু আছে, তা কেবল এ দুনিয়ার জীবনটুকুই এবং মরার পর আমাদের আর কোনক্রমেই উঠানো হবে না।

وَلَوۡ تَرٰٓى اِذۡ وُقِفُوۡا عَلٰى رَبِّهِمۡ‌ؕ قَالَ اَلَيۡسَ هٰذَا بِالۡحَقِّ‌ؕ قَالُوۡا بَلٰى وَرَبِّنَا‌ؕ قَالَ فَذُوۡقُوۡا الۡعَذَابَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡفُرُوۡنَ

৩০.) হায়! সেই দৃশ্যটা যদি তোমরা দেখতে পারতে যখন এদেরকে এদের রবের সামনে দাঁড় করানো হবে। সে সময় এদের রব এদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “এটা কি সত্য নয়?” এরা বলবে, “হ্যাঁ, হে আমাদের রব! এটা সত্যই।” তিনি বলবেন, “আচ্ছা, এবার তাহলে নিজেদের সত্য অস্বীকারের ফলস্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।”

قَدۡ خَسِرَ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ اللّٰهِ‌ؕ حَتّٰىۤ اِذَا جَآءَتۡهُمُ السَّاعَةُ بَغۡتَةً قَالُوۡا يٰحَسۡرَتَنَا عَلٰى مَا فَرَّطۡنَا فِيۡهَاۙ وَهُمۡ يَحۡمِلُوۡنَ اَوۡزَارَهُمۡ عَلٰى ظُهُوۡرِهِمۡ‌ؕ اَلَا سَآءَ مَا يَزِرُوۡنَ

৩১.) যারা আল্লাহর সাথে নিজেদের সাক্ষাতের ঘোষণাকে মিথ্যা গণ্য করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যখন অকস্মাৎ সে সময় এসে যাবে তখন এরাই বলবে, “হায়, আফসোস! এ ব্যাপারে আমাদের কেমন ভুল হয়ে গেছে।” আর তারা নিজেদের পিঠে নিজেদের গোনাহের বোঝা বহন করতে থাকবে। দেখো, কেমন নিকৃষ্ট বোঝা এরা বহন করে চলেছে!

وَمَا الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهۡوٌ‌ؕ وَّلَلدَّارُ الۡاٰخِرَةُ خَيۡرٌ لِّلَّذِيۡنَ يَتَّقُوۡنَ‌ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ

৩২.) দুনিয়ার জীবন তো একটি খেল-তামাসার ব্যাপার। আসলে যারা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চায় তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই ভালো। তবে কি তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনাকে কাজে লাগাবে না?

قَدۡ نَعۡلَمُ اِنَّهٗ لَيَحۡزُنُكَ الَّذِىۡ يَقُوۡلُوۡنَ‌ فَاِنَّهُمۡ لَا يُكَذِّبُوۡنَكَ وَلٰكِنَّ الظّٰلِمِيۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ يَجۡحَدُوۡنَ

৩৩.) হে মুহাম্মাদ! একথা অবশ্যি জানি, এরা যেসব কথা তৈরী করে, তা তোমাকে কষ্ট দেয় কিন্তু এরা তোমাকে মিথ্যা বলে না বরং এ জালেমরা আসলে আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করছে।

﴿وَلَقَدۡ كُذِّبَتۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِكَ فَصَبَرُوۡا عَلٰى مَا كُذِّبُوۡا وَاُوۡذُوۡا حَتّٰىۤ اَتٰٮهُمۡ نَصۡرُنَا‌ؕ وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِ‌ؕ وَلَقَدۡ جَآءَكَ مِنۡ نَّبَاِى الۡمُرۡسَلِيۡنَ﴾

৩৪.) তোমার পূর্বেও অনেক রসূলকে মিথ্যা বলা হয়েছে কিন্তু তাদের ওপর যে মিথ্যা আরোপ করা হয়েছে এবং যে কষ্ট দেয়া হয়েছে, তাতে তাঁরা সবর করেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে গেছে। আল্লাহর কথাগুলো পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারোর নেই এবং আগের রসূলদের সাথে যা কিছু ঘটে গেছে তার খবর তো তোমার কাছে পৌঁছে গেছে।

وَاِنۡ كَانَ كَبُرَ عَلَيۡكَ اِعۡرَاضُهُمۡ فَاِنِ اسۡتَطَعۡتَ اَنۡ تَبۡتَغِىَ نَفَقًا فِىۡ الۡاَرۡضِ اَوۡ سُلَّمًا فِىۡ السَّمَآءِ فَتَاۡتِيَهُمۡ بِاٰيَةٍ‌ؕ وَلَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَجَمَعَهُمۡ عَلَى الۡهُدٰى فَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡجٰهِلِيۡنَ

৩৫.) তবুও যদি তাদের উপেক্ষা তোমার কাছে অসহনীয় হয়ে থাকে তাহলে তোমার মধ্যে কিছু শক্তি থাকলে তুমি ভূগর্ভে কোন সুড়ংগ খুঁজে নাও অথবা আকাশে সিঁড়ি লাগাও এবং তাদের কাছে কোন নিদর্শন আনার চেষ্টা করো। আল্লাহ চাইলে এদের সবাইকে হেদায়াতের ওপর একত্র করতে পারতেন। কাজেই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

اِنَّمَا يَسۡتَجِيۡبُ الَّذِيۡنَ يَسۡمَعُوۡنَ‌ؕ وَالۡمَوۡتٰى يَبۡعَثُهُمُ اللّٰهُ ثُمَّ اِلَيۡهِ يُرۡجَعُوۡنَ

৩৬.) সত্যের দাওয়াতে তারাই সাড়া দেয় যারা শোনে। আর মৃতদেরকে তো আল্লাহ‌ কবর থেকেই ওঠাবেন, তারপর তাদেরকে (তাঁর আদালতে হাযির হবার জন্য) ফিরিয়ে আনা হবে।

وَقَالُوۡا لَوۡلَا نُزِّلَ عَلَيۡهِ اٰيَةٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ‌ؕ قُلۡ اِنَّ اللّٰهَ قَادِرٌ عَلٰٓى اَنۡ يُّنَزِّلَ اٰيَةً وَّلٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ

৩৭.) তারা বলে, এ নবীর ওপর তাঁর রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন? বলো, আল্লাহ‌ নিদর্শন অবতীর্ণ করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোক অজ্ঞতায় ডুবে আছে।

وَمَا مِنۡ دَآبَّةٍ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا طٰۤٮِٕرٍ يَّطِيۡرُ بِجَنَاحَيۡهِ اِلَّاۤ اُمَمٌ اَمۡثَالُكُمۡ‌ؕ مَا فَرَّطۡنَا فِىۡ الۡكِتٰبِ مِنۡ شَىۡءٍ‌ؕ ثُمَّ اِلٰى رَبِّهِمۡ يُحۡشَرُوۡنَ

৩৮.) ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল কোন প্রাণী এবং বাতাসে ডানা বিস্তার করে উড়ে চলা কোন পাখিকেই দেখ না কেন, এরা সবাই তোমাদের মতই বিভিন্ন শ্রেণী। তাদের ভাগ্যলিপিতে কোন কিছু লিখতে আমি বাদ দেইনি। তারপর তাদের সবাইকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে।

وَالَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا صُمٌّ وَّبُكۡمٌ فِىۡ الظُّلُمٰتِ‌ؕ مَنۡ يَّشَاِ اللّٰهُ يُضۡلِلۡهُؕ وَمَنۡ يَّشَاۡ يَجۡعَلۡهُ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ

৩৯.) কিন্তু যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলে তারা বধির ও বোবা, তারা অন্ধকারে ডুবে আছে, আল্লাহ যাকে চান বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন।

قُلۡ اَرَءَيۡتَكُمۡ اِنۡ اَتٰٮكُمۡ عَذَابُ اللّٰهِ اَوۡ اَتَتۡكُمُ السَّاعَةُ اَغَيۡرَ اللّٰهِ تَدۡعُوۡنَ‌ۚ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ

৪০.) এদেরকে বলো, একটু ভেবে চিন্তে বলতো দেখি, যদি তোমাদের ওপর কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বড় রকমের বিপদ এসে পড়ে অথবা শেষ সময় এসে যায়, তাহলে সে সময় কি তোমরা আল্লাহ‌ ছাড়া আর কাউকে ডাকো? বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

بَلۡ اِيَّاهُ تَدۡعُوۡنَ فَيَكۡشِفُ مَا تَدۡعُوۡنَ اِلَيۡهِ اِنۡ شَآءَ وَتَنۡسَوۡنَ مَا تُشۡرِكُوۡنَ‏‏

৪১.) তখন তোমরা একমাত্র আল্লাহকেই ডেকে থাকো। তারপর তিনি চাইলে তোমাদেরকে সেই বিপদমুক্ত করেন। যাদেরকে তোমরা তাঁর সাথে শরীক করতে তাদের কথা এ সময় একদম ভুলে গিয়ে থাকো।

وَلَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰٓى اُمَمٍ مِّنۡ قَبۡلِكَ فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِالۡبَاۡسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمۡ يَتَضَرَّعُوۡنَ

৪২.) তোমার পূর্বে অনেক মানব গোষ্ঠীর কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে বিপদ ও কষ্টের মুখে নিক্ষেপ করেছি, যাতে তারা বিনীতভাবে আমার সামনে মাথা নত করে।

فَلَوۡلَاۤ اِذۡ جَآءَهُمۡ بَاۡسُنَا تَضَرَّعُوۡا وَلٰكِنۡ قَسَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيۡطٰنُ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

৪৩.) কাজেই যখন আমার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপিত হলো তখন তারা বিনম্র হলো না কেন? বরং তাদের মন আরো বেশী কঠিন হয়ে গেছে এবং শয়তান তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চয়তা বিধান করেছে যে, তোমরা যা কিছু করছো ভালই করছো।

فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُكِّرُوۡا بِهٖ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ اَبۡوٰبَ كُلِّ شَىۡءٍ حَتّٰٓى اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰهُمۡ بَغۡتَةً فَاِذَا هُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ

৪৪.) তারপর যখন তারা তাদের যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তা ভুলে গেলো তখন তাদের জন্য সমৃদ্ধির সকল দরজা খুলে দিলাম। শেষ পর্যন্ত তারা যখন তাদেরকে যা কিছু দান করা হয়েছিল তার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে গেলো তখন অকস্মাত তাদেরকে পাকড়াও করলাম এবং তখন অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তারা সব রকমের কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে পড়েছিল।

فَقُطِعَ دَابِرُ الۡقَوۡمِ الَّذِيۡنَ ظَلَمُوۡا‌ؕ وَالۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ

৪৫.) এ ভাবে যারা জুলুম করেছিল তাদের শিকড় কেটে দেয়া হলো। আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রভু আল্লাহর জন্য (কারণ তিনিই তাদের শিকড় কেটে দিয়েছে) ।

قُلۡ اَرَءَيۡتُمۡ اِنۡ اَخَذَ اللّٰهُ سَمۡعَكُمۡ وَاَبۡصَارَكُمۡ وَخَتَمَ عَلٰى قُلُوۡبِكُمۡ مَّنۡ اِلٰهٌ غَيۡرُ اللّٰهِ يَاۡتِيۡكُمۡ بِهِ‌ؕ اُنْظُرۡ كَيۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰيٰتِ ثُمَّ هُمۡ يَصۡدِفُوۡنَ

৪৬.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, তোমরা কি কখনো একথা ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ‌ তোমাদের থেকে তোমাদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ছিনিয়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন তাহলে আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন্‌ ইলাহ আছে যে এ শক্তিগুলো তোমাদের ফিরিয়ে দিতে পারে? দেখো, কিভাবে আমরা বারবার আমাদের নিশানীগুলো তাদের সামনে পেশ করি এবং এরপরও তারা কিভাবে এগুলো থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়।

قُلۡ اَرَءَيۡتَكُمۡ اِنۡ اَتٰٮكُمۡ عَذَابُ اللّٰهِ بَغۡتَةً اَوۡ جَهۡرَةً هَلۡ يُهۡلَكُ اِلَّا الۡقَوۡمُ الظّٰلِمُوۡنَ

৪৭.) বলো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে অকস্মাৎ অথবা প্রকাশ্যে আযাব এসে যায় তাহলে জালেমরা ছাড়া আর কেউ ধ্বংস হবে কি?

وَمَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِيۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِيۡنَ وَمُنۡذِرِيۡنَ‌ۚ فَمَنۡ اٰمَنَ وَاَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَ

৪৮.) আমি যে রসূল পাঠাই তা তো কেবল এ জন্যই পাঠাই যে, তারা সৎকর্মশীলদের জন্য সুসংবাদ দানকারী এবং দুষ্কৃতকারীদের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হবে।

وَالَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا يَمَسُّهُمُ الۡعَذَابُ بِمَا كَانُوۡا يَفۡسُقُوۡنَ

৪৯.) তারপর যারা তাদের কথা মেনে নেবে এবং নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করবে তাদের জন্য কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই। আর যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলবে তাদেরকে নিজেদের নাফরমানীর শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

قُل لَّاۤ اَقُوۡلُ لَكُمۡ عِنۡدِىۡ خَزَآٮِٕنُ اللّٰهِ وَلَاۤ اَعۡلَمُ الۡغَيۡبَ وَلَاۤ اَقُوۡلُ لَكُمۡ اِنِّىۡ مَلَكٌ‌ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوۡحٰىۤ اِلَىَّ‌ؕ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِىۡ الۡاَعۡمٰى وَالۡبَصِيۡرُ‌ؕ اَفَلَا تَتَفَكَّرُوۡنَ

৫০.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, “আমি তোমাদের একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভাণ্ডার আছে, আমি গায়েবের জ্ঞানও রাখি না এবং তোমাদের একথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো কেবলমাত্র সে অহীর অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি নাযিল করা হয়।” তারপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা করো না?

وَاَنۡذِرۡ بِهِ الَّذِيۡنَ يَخَافُوۡنَ اَنۡ يُّحۡشَرُوۡۤا اِلٰى رَبِّهِمۡ‌ لَيۡسَ لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ وَلِىٌّ وَّلَا شَفِيۡعٌ لَّعَلَّهُمۡ يَتَّقُوۡنَ

৫১.) আর হে মুহাম্মাদ! তুমি এ অহীর জ্ঞানের সাহায্যে তাদেরকে নসিহত করো যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের সামনে কখনো এমন অবস্থায় পেশ করা হবে যে, সেখানে তাদের সাহায্য-সমর্থন বা সুপারিশ করার জন্য তিনি ছাড়া আর কেউ (ক্ষমতা ও কর্তৃত্বশালী) থাকবে না। হয়তো (এ নসিহতের কারণে সতর্ক হয়ে) তারা আল্লাহভীতির পথ অবলম্বন করবে।

وَلَا تَطۡرُدِ الَّذِيۡنَ يَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَدٰوةِ وَالۡعَشِىِّ يُرِيۡدُوۡنَ وَجۡهَهٗ‌ؕ مَا عَلَيۡكَ مِنۡ حِسَابِهِمۡ مِّنۡ شَىۡءٍ وَّمَا مِنۡ حِسَابِكَ عَلَيۡهِمۡ مِّنۡ شَىۡءٍ فَتَطۡرُدَهُمۡ فَتَكُوۡنَ مِنَ الظّٰلِمِيۡنَ

৫২.) আর যারা তাদের রবকে দিন-রাত ডাকতে থাকে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রচেষ্টারত থাকে তাদেরকে তোমার কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়ো না। তাদের কৃতকর্ম থেকে কোন জিনিসের (জবাবদিহির) দায়িত্ব তোমার ওপর নেই এবং তোমার কৃতকর্ম থেকেও কোন জিনিসের (জবাবদিহির) দায়িত্ব তাদের ওপর নেই। এ সত্ত্বেও যদি তুমি তাদেরকে দূরে ঠেলে দাও তাহলে তুমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

وَكَذٰلِكَ فَتَنَّا بَعۡضَهُمۡ بِبَعۡضٍ لِّيَقُوۡلُوۡۤا اَهٰٓؤُلَآءِ مَنَّ اللّٰهُ عَلَيۡهِمۡ مِّنۡۢ بَيۡنِنَاؕ اَلَيۡسَ اللّٰهُ بِاَعۡلَمَ بِالشّٰكِرِيۡنَ

৫৩.) আসলে আমি এভাবে মানুষের মধ্য থেকে এক দলকে আর এক দলের সাহায্যে পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা এদেরকে দেখে বলে, “এরা কি সেসব লোক, আমাদের মধ্য থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন?”

وَاِذَا جَآءَكَ الَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰيٰتِنَا فَقُلۡ سَلٰمٌ عَلَيۡكُمۡ‌ كَتَبَ رَبُّكُمۡ عَلٰى نَفۡسِهِ الرَّحۡمَةَ‌ۙ اَنَّهٗ مَنۡ عَمِلَ مِنۡكُمۡ سُوۡٓءًۢا بِجَهٰلَةٍ ثُمَّ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ وَاَصۡلَحَ فَاَنَّهٗ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ

৫৪.) –হ্যাঁ, আল্লাহ কি তাঁর শোকরগুজার বান্দা কারা, সেটা এদের চাইতে বেশী জানেন না? আমার আয়াতের প্রতি যারা ঈমান আনে তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বলো, “তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।” তোমাদের রব দয়া ও অনুগ্রহের নীতি নিজের জন্য অপরিহার্য করে নিয়েছেন। তোমাদের কেউ যদি অজ্ঞতা বশত কোন খারাপ কাজ করে বসে, তারপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয়, তাহলে তিনি তাকে মাফ করে দেন এবং নরম নীতি অবলম্বন করেন, এটি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহেরই প্রকাশ।

وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ وَلِتَسۡتَبِيۡنَ سَبِيۡلُ الۡمُجۡرِمِيۡنَ

৫৫.) আর এভাবে আমি আমার নিশানীগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি যাতে অপরাধীদের পথ একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

قُلۡ اِنِّىۡ نُهِيۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ الَّذِيۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ‌ؕ قُل لَّاۤ اَتَّبِعُ اَهۡوَآءَكُمۡ‌ۙ قَدۡ ضَلَلۡتُ اِذًا وَّمَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُهۡتَدِيۡنَ

৫৬.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যাদেরকে ডাকো তাদের বন্দেগী করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। বলো, আমি তোমাদের ইচ্ছা-বাসনার অনুসরণ করবো না। এমনটি করলে আমি বিপথগামী হবো এবং সরল-সত্য পথ লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবো না।

قُلۡ اِنِّىۡ عَلٰى بَيِّنَةٍ مِّنۡ رَّبِّىۡ وَكَذَّبۡتُمۡ بِهٖ‌ؕ مَا عِنۡدِىۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖؕ اِنِ الۡحُكۡمُ اِلَّا لِلّٰهِ‌ؕ يَقُصُّ الۡحَقَّ‌ۚ وَهُوَ خَيۡرُ الۡفٰصِلِيۡنَ‏

৫৭.) বলো, আমার রবের পক্ষ থেকে আমি একটি উজ্জ্বল প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমরা তাকে মিথ্যা বলেছো। এখন তোমরা যে জিনিসটি তাড়াতাড়ি চাচ্ছো সেটি আমার ক্ষমতার আওতাধীন নয়। ফায়সালার সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর হাতে। তিনিই সত্য বিবৃত করেন এবং তিনিই সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।

قُل لَّوۡ اَنَّ عِنۡدِىۡ مَا تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِهٖ لَقُضِىَ الۡاَمۡرُ بَيۡنِىۡ وَبَيۡنَكُمۡ‌ؕ وَاللّٰهُ اَعۡلَمُ بِالظّٰلِمِيۡنَ‏

৫৮.) বলো, তোমরা যে জিনিসটি তাড়াতাড়ি চাচ্ছো সেটি যদি আমার আওতার মধ্যে থাকতো তাহলে তো আমার ও তোমাদের মধ্যে কবেই ফায়সালা হয়ে যেতো। কিন্তু জালেমদের সাথে কোন্‌ ধরনের ব্যবহার করা উচিত তা আল্লাহই ভাল জানেন।

وَعِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ‌ؕ وَيَعۡلَمُ مَا فِىۡ الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ‌ؕ وَمَا تَسۡقُطُ مِنۡ وَّرَقَةٍ اِلَّا يَعۡلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِىۡ ظُلُمٰتِ الۡاَرۡضِ وَلَا رَطۡبٍ وَّلَا يَابِسٍ اِلَّا فِىۡ كِتٰبٍ مُّبِيۡنٍ

৫৯.) তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে- স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন একটি শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শুষ্ক ও আর্দ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে।

وَهُوَ الَّذِىۡ يَتَوَفّٰٮكُمۡ بِالَّيۡلِ وَيَعۡلَمُ مَا جَرَحۡتُمۡ بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبۡعَثُكُمۡ فِيۡهِ لِيُقۡضٰٓى اَجَلٌ مُّسَمًّى‌ۚ ثُمَّ اِلَيۡهِ مَرۡجِعُكُمۡ ثُمَّ يُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ

৬০.) তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিবসে তোমরা যা কিছু করো তা জানেন। আবার পরদিন তোমাদের সেই কর্মজগতে ফেরত পাঠান, যাতে জীবনের নির্ধারিত সময়-কাল পূর্ণ হয়। সবশেষে তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি জানিয়ে দেবেন তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে।

وَهُوَ الۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهٖ‌ۚ وَيُرۡسِلُ عَلَيۡكُمۡ حَفَظَةً حَتّٰٓى اِذَا جَآءَ اَحَدَكُمُ الۡمَوۡتُ تَوَفَّتۡهُ رُسُلُنَا وَهُمۡ لَا يُفَرِّطُوۡنَ

৬১.) তিনি নিজের বান্দাদের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তোমাদের ওপর রক্ষক নিযুক্ত করে পাঠান। অবশেষে যখন তোমাদের কারোর মৃত্যুর সময় সমুপস্থিত হয় তখন তাঁর প্রেরিত ফেরেশতারা তার প্রাণ বের করে নেয় এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে তারা সামান্যতম শৈথিল্যও দেখায় না।

 ثُمَّ رُدُّوۡۤا اِلَى اللّٰهِ مَوۡلٰٮهُمُ الۡحَقِّ‌ؕ اَلَا لَهُ الۡحُكۡمُ وَهُوَ اَسۡرَعُ الۡحٰسِبِيۡنَ

৬২.) তারপর তাদের প্রকৃত মালিক ও প্রভু আল্লাহর দিকে তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনা হয়। সাবধান হয়ে যাও, ফায়সালা করার যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন একমাত্র তিনিই এবং তিনি হিসেব গ্রহণের ব্যাপারে অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন।

قُلۡ مَنۡ يُّنَجِّيۡكُمۡ مِّنۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ تَدۡعُوۡنَهٗ تَضَرُّعًا وَّخُفۡيَةً لَّٮِٕنۡ اَنۡجٰٮنَا مِنۡ هٰذِهٖ لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِيۡنَ‏

৬৩.) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে জিজ্ঞেস করো, জল-স্থলের গভীর অন্ধকারে কে তোমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে? কার কাছে তোমরা কাতর কণ্ঠে ও চুপে চুপে প্রার্থনা করো? কার কাছে বলে থাকো, এ বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধার করলে আমরা অবশ্যি তোমার শোকরগুজারী করবো?

قُلِ اللّٰهُ يُنَجِّيۡكُمۡ مِّنۡهَا وَمِنۡ كُلِّ كَرۡبٍ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تُشۡرِكُوۡنَ

৬৪.) –বলো, আল্লাহ‌ তোমাদের এ থেকে এবং প্রতিটি দুঃখ–কষ্ট থেকে মুক্তি দেন। এরপরও তোমরা অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করো।

قُلۡ هُوَ الۡقَادِرُ عَلٰٓى اَنۡ يَّبۡعَثَ عَلَيۡكُمۡ عَذَابًا مِّنۡ فَوۡقِكُمۡ اَوۡ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِكُمۡ اَوۡ يَلۡبِسَكُمۡ شِيَعًا وَّيُذِيۡقَ بَعۡضَكُمۡ بَاۡسَ بَعۡضٍ‌ؕ اُنْظُرۡ كَيۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰيٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَفۡقَهُوۡنَ

৬৫.) বলো, তিনি ওপর থেকে বা তোমাদের পদতল থেকে তোমাদের ওপর কোন আযাব নাযিল করতে অথবা তোমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে এক দলকে আর এক দলের শক্তির স্বাদ গ্রহণ করিয়ে দিতে সক্ষম। দেখো, আমি কিভাবে বারবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমার নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে পেশ করছি, হয়তো তারা এ সত্যটি অনুধাবন করবে।

وَكَذَّبَ بِهٖ قَوۡمُكَ وَهُوَ الۡحَقُّ‌ؕ قُل لَّسۡتُ عَلَيۡكُمۡ بِوَكِيۡلٍ

৬৬.) তোমার জাতি সেটি অস্বীকার করছে। অথচ সেটি সত্য। এদেরকে বলে দাও, আমাকে তোমাদের ওপর হাবিলদার নিযুক্ত করা হয়নি।

لِّكُلِّ نَبَاٍ مُّسۡتَقَرٌّ‌ وَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ

৬৭.) প্রত্যেকটি খবর প্রকাশিত হবার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। শীঘ্রই তোমরা নিজেরাই পরিণাম জানতে পারবে।

وَاِذَا رَاَيۡتَ الَّذِيۡنَ يَخُوۡضُوۡنَ فِىۡۤ اٰيٰتِنَا فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ حَتّٰى يَخُوۡضُوۡا فِىۡ حَدِيۡثٍ غَيۡرِهٖ‌ؕ وَاِمَّا يُنۡسِيَنَّكَ الشَّيۡطٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ الذِّكۡرٰى مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ‏

৬৮.) আর হে মুহাম্মাদ! যখন তুমি দেখো, লোকেরা আমার আয়াতের মধ্যে দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন তাদের কাছ থেকে সরে যাও, যে পর্যন্ত না তারা এ আলোচনা বাদ দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি কখনো শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তাহলে যখনই তোমার মধ্যে এ ভুলের অনুভূতি জাগে তারপর আর এ জালেম লোকদের কাছে বসো না।

وَمَا عَلَى الَّذِيۡنَ يَتَّقُوۡنَ مِنۡ حِسَابِهِمۡ مِّنۡ شَىۡءٍ وَّلٰكِنۡ ذِكۡرٰى لَعَلَّهُمۡ يَتَّقُوۡنَ

৬৯.) তাদের কৃতকর্ম থেকে কোন কিছুর দায়-দায়িত্ব সতর্কতা অবলম্বনকারীদের ওপর নেই। তবে নসীহত করা তাদের কর্তব্য। হয়তো তারা ভুল কর্মনীতি অবলম্বন করা থেকে বেঁচে যাবে।

وَذَرِ الَّذِيۡنَ اتَّخَذُوۡا دِيۡنَهُمۡ لَعِبًا وَّلَهۡوًا وَّغَرَّتۡهُمُ الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَا‌ وَذَكِّرۡ بِهٖۤ اَنۡ تُبۡسَلَ نَفۡسٌۢ بِمَا كَسَبَتۡ‌ۖ لَيۡسَ لَهَا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِىٌّ وَّلَا شَفِيۡعٌ‌ۚ وَاِنۡ تَعۡدِلۡ كُلَّ عَدۡلٍ لَّا يُؤۡخَذۡ مِنۡهَا‌ؕ اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ اُبۡسِلُوۡا بِمَا كَسَبُوۡا‌ۚ لَهُمۡ شَرَابٌ مِّنۡ حَمِيۡمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيۡمٌۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡفُرُوۡنَ

৭০.) যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশায় পরিণত করেছে এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারণায় নিক্ষেপ করেছে তাদেরকে পরিত্যাগ করো। তবে এ কুরআন শুনিয়ে উপদেশ দিতে ও সতর্ক করতে থাকো, যাতে কোন ব্যক্তি নিজের কর্মকাণ্ডের দরুন ধ্বংসের শিকার না হয়, যখন আল্লাহর হাত থেকে তাকে বাঁচাবার জন্য কোন রক্ষাকারী, সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী থাকবে না, আর যদি সে সম্ভাব্য সকল জিনিসের বিনিময়ে নিষ্কৃতি লাভ করতে চায় তাহলে তাও গৃহীত হবে না। কারণ, এ ধরনের লোকেরা তো নিজেরাই নিজেদের কৃতকর্মের ফলে ধরা পড়ে যাবে। নিজেদের সত্য অস্বীকৃতির বিনিময়ে তারা পান করার জন্য পাবে ফুটন্ত পানি আর ভোগ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

قُلۡ اَنَدۡعُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا يَنۡفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلٰٓى اَعۡقَابِنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدٰٮنَا اللّٰهُ كَالَّذِىۡ اسۡتَهۡوَتۡهُ الشَّيٰطِيۡنُ فِىۡ الۡاَرۡضِ حَيۡرَانَ لَهٗۤ اَصۡحٰبٌ يَّدۡعُوۡنَهٗۤ اِلَى الۡهُدَى ائۡتِنَا‌ؕ قُلۡ اِنَّ هُدَى اللّٰهِ هُوَ الۡهُدٰى‌ؕ وَاُمِرۡنَا لِنُسۡلِمَ لِرَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَۙ

৭১.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, আমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকবো, যারা আমাদের উপকারও করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না? আর আল্লাহ‌ যখন আমাদের সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তখন আবার কি আমরা উল্টো দিকে ফিরে যাবো? আমরা কি নিজেদের অবস্থা সে ব্যক্তির মতো করে নেবো, যাকে শয়তানরা মরুভূমির বুকে পথ ভুলিয়ে দিয়েছে এবং সে হয়রান, পেরেশান ও উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? অথচ তার সাথীরা তাকে চীৎকার করে ডেকে বলছে, এদিকে এসো, এখানে রয়েছে সোজা পথ? বলো, আসলে আল্লাহর হেদায়াতই একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল হেদায়াত এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে নির্দেশ এসেছে, বিশ্ব-জাহানের প্রভুর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দাও,

وَاَنۡ اَقِيۡمُوۡا الصَّلٰوةَ وَاتَّقُوۡهُ‌ؕ وَهُوَ الَّذِىۡۤ اِلَيۡهِ تُحۡشَرُوۡنَ‏

৭২.) নামায কায়েম করো এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকো। তাঁরই কাছে তোমাদের সমবেত করা হবে।

وَهُوَ الَّذِىۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ بِالۡحَقِّ‌ؕ وَيَوۡمَ يَقُوۡلُ كُنۡ فَيَكُوۡنُ‌ ؕ قَوۡلُهُ الۡحَقُّ‌ؕ وَلَهُ الۡمُلۡكُ يَوۡمَ يُنۡفَخُ فِىۡ الصُّوۡرِ‌ؕ عٰلِمُ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ‌ؕ وَهُوَ الۡحَكِيۡمُ الۡخَبِيۡرُ

৭৩.) তিনিই যথাযথভাবে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, হাশর হয়ে যাও, সেদিনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথা যথার্থ অকাট্য সত্য। আর যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন রাজত্ব হবে একমাত্র তাঁরই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য ৪৯ সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন এবং তিনি প্রজ্ঞাময় ও সবকিছু জানেন।

وَاِذۡ قَالَ اِبۡرٰهِيۡمُ لِاَبِيۡهِ اٰزَرَ اَتَتَّخِذُ اَصۡنَامًا اٰلِهَةً‌ۚ اِنِّىۡۤ اَرٰٮكَ وَقَوۡمَكَ فِىۡ ضَلٰلٍ مُّبِيۡنٍ

৭৪.) ইবরাহীমের ঘটনা স্মরণ করো যখন সে তাঁর পিতা আযরকে বলেছিল, “তুমি কি মূর্তিগুলোকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করছো? আমি তো দেখছি, তুমি ও তোমার জাতি প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত।

وَكَذٰلِكَ نُرِىۡۤ اِبۡرٰهِيۡمَ مَلَكُوۡتَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَلِيَكُوۡنَ مِنَ الۡمُوۡقِنِيۡنَ

৭৫.) ইবরাহীমকে এভাবেই আমি যমীন ও আসমানের রাজ্য পরিচালন ব্যবস্থা দেখাতাম। আর এ জন্য দেখাতাম যে, এভাবে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

فَلَمَّا جَنَّ عَلَيۡهِ الَّيۡلُ رَاٰ كَوۡكَبًا‌ۚ قَالَ هٰذَا رَبِّىۡ‌ۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَاۤ اُحِبُّ الۡاٰفِلِيۡنَ

৭৬.) অতঃপর যখন রাত তাকে আচ্ছন্ন করলো তখন একটি নক্ষত্র দেখে সে বললোঃ এ আমার রব। কিন্তু যখন তা ডুবে গেলো, সে বললোঃ যারা ডুবে যায় আমি তো তাদের ভক্ত নই।

فَلَمَّا رَاٰ الۡقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هٰذَا رَبِّىۡ‌ۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَ قَالَ لَٮِٕنۡ لَّمۡ يَهۡدِنِىۡ رَبِّىۡ لَاَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡقَوۡمِ الضَّآلِّيۡنَ

৭৭.) তারপর যখন চাঁদকে আলো বিকীরণ করতে দেখলো, বললোঃ এ আমার রব। কিন্তু যখন তাও ডুবে গেলো তখন বললোঃ আমার রব যদি আমাকে পথ না দেখাতেন তাহলে আমি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।

فَلَمَّا رَاٰ الشَّمۡسَ بَازِغَةً قَالَ هٰذَا رَبِّىۡ هٰذَاۤ اَكۡبَرُ‌ۚ فَلَمَّاۤ اَفَلَتۡ قَالَ يٰقَوۡمِ اِنِّىۡ بَرِىۡٓءٌ مِّمَّا تُشۡرِكُوۡنَ

৭৮.) এরপর যখন সূর্যকে দীপ্তিমান দেখলো তখন বললোঃ এ আমার রব, এটি সবচেয়ে বড়! কিন্তু তাও যখন ডুবে গেলো তখন ইবরাহীম চীৎকার করে বলে উঠলোঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

اِنِّىۡ وَجَّهۡتُ وَجۡهِىَ لِلَّذِىۡ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ حَنِيۡفًا‌ وَّمَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ‌ۚ‏

৭৯.) আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।”

وَحَآجَّهٗ قَوۡمُهٗ‌ؕ قَالَ اَتُحٰٓجُّوۡٓنِّىۡ فِىۡ اللّٰهِ وَقَدۡ هَدٰٮنِ‌ؕ وَلَاۤ اَخَافُ مَا تُشۡرِكُوۡنَ بِهٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ يَّشَآءَ رَبِّىۡ شَيۡـًٔا‌ؕ وَسِعَ رَبِّىۡ كُلَّ شَىۡءٍ عِلۡمًا‌ؕ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوۡنَ

৮০.) তাঁর সম্প্রদায় তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলো। তাতে সে তাঁর সম্প্রদায়কে বললোঃ তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে বিতর্ক করছো? অথচ তিনি আমাকে সত্য-সরল পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তোমরা যাদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছো তাদেরকে আমি ভয় করি না, তবে আমার রব যদি কিছু চান তাহলে অবশ্যি তা হতে পারে। আমার রবের জ্ঞান সকল জিনিসের ওপর পরিব্যাপ্ত। এরপরও কি তোমাদের চেতনার উদয় হবে না?

وَكَيۡفَ اَخَافُ مَاۤ اَشۡرَكۡتُمۡ وَلَا تَخَافُوۡنَ اَنَّكُمۡ اَشۡرَكۡتُمۡ بِاللّٰهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهٖ عَلَيۡكُمۡ سُلۡطٰنًا‌ؕ فَاَىُّ الۡفَرِيۡقَيۡنِ اَحَقُّ بِالۡاَمۡنِ‌ۚ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

৮১.) আর তোমরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করেছো তাদেরকে আমি কেমন করে ভয় করবো যখন তোমরা এমন সব জিনিসকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক করতে ভয় করো না যাদের জন্য তিনি তোমাদের কাছে কোন সনদ অবতীর্ণ করেননি? আমাদের এ দু’দলের মধ্যে কে বেশী নিরাপত্তা লাভের অধিকারী? বলো, যদি তোমরা কিছু জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকো।

اَلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَلَمۡ يَلۡبِسُوۡۤا اِيۡمٰنَهُمۡ بِظُلۡمٍ اُولٰۤٮِٕكَ لَهُمُ الۡاَمۡنُ وَهُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ

৮২.) আসলে তো নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ততা তাদেরই জন্য এবং সত্য-সরল পথে তারাই পরিচালিত যারা ঈমান এনেছে এবং যারা নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সাথে মিশিয়ে ফেলেনি।

وَتِلۡكَ حُجَّتُنَاۤ اٰتَيۡنٰهَاۤ اِبۡرٰهِيۡمَ عَلٰى قَوۡمِهٖ‌ؕ نَرۡفَعُ دَرَجٰتٍ مَّنۡ نَّشَآءُ‌ؕ اِنَّ رَبَّكَ حَكِيۡمٌ عَلِيۡمٌ

৮৩.) ইবরাহীমকে তাঁর জাতির মোকাবিলায় আমি এ যুক্তি-প্রমাণ প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে চাই উন্নত মর্যাদা দান করি। প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, তোমার রব প্রজ্ঞাময় ও জ্ঞানী।

وَوَهَبۡنَا لَهٗۤ اِسۡحٰقَ وَيَعۡقُوۡبَ‌ؕ كُلاًّ هَدَيۡنَا‌ۚ وَنُوۡحًا هَدَيۡنَا مِنۡ قَبۡلُ‌ؕوَمِنۡ ذُرِّيَّتِهٖ دَاوٗدَ وَسُلَيۡمٰنَ وَاَيُّوۡبَ وَيُوۡسُفَ وَمُوۡسٰى وَهٰرُوۡنَ‌ؕ وَكَذٰلِكَ نَجۡزِىۡ الۡمُحۡسِنِيۡنَۙ

৮৪.) তারপর আমি ইবরাহীমকে ইসহাক ও ইয়াকূবের মতো সন্তান দিয়েছি এবং সবাইকে সত্য পথ দেখিয়েছি, (সে সত্য পথ যা) ইতিপূর্বে নূহকে দেখিয়েছিলাম। আর তাঁরই বংশধরদের থেকে দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুণকে (হেদায়াত দান করেছি) । এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে তাদের সৎকাজের বদলা দিয়ে থাকি।

وَزَكَرِيَّا وَيَحۡيَىٰ وَعِيۡسٰى وَاِلۡيَاسَ‌ؕ كُلٌّ مِّنَ الصّٰلِحِيۡنَۙ‏

৮৫.) (তাঁরই সন্তানদের থেকে) যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা ও ইলিয়াসকে (সত্য পথের পথিক বানিয়েছি) । তাদের প্রত্যেকে ছিল সৎ।

وَاِسۡمٰعِيۡلَ وَالۡيَسَعَ وَيُوۡنُسَ وَلُوۡطًا‌ؕ وَكُلاًّ فَضَّلۡنَا عَلَى الۡعٰلَمِيۡنَۙ

৮৬.) (তাঁরই বংশ থেকে) ইসমাঈল, আল ইয়াসা, ইউনুস ও লূতকে (পথ দেখিয়েছি) । তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেককে আমি সমস্ত দুনিয়াবাসীর ওপর মর্যাদা সম্পন্ন করেছি।

وَمِنۡ اٰبَآٮِٕهِمۡ وَذُرِّيّٰتِهِمۡ وَاِخۡوَانِهِمۡ‌ۚ وَاجۡتَبَيۡنٰهُمۡ وَهَدَيۡنٰهُمۡ اِلٰى صِرٰطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ

৮৭.) তাছাড়া তাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতৃ সমাজ থেকে অনেককে আমি সম্মানিত করেছি, নিজের খেদমতের জন্য তাদেরকে নির্বাচিত করেছি এবং সত্য-সরল পথের দিকে তাদেরকে পরিচালিত করেছি।

ذٰلِكَ هُدَى اللّٰهِ يَهۡدِىۡ بِهٖ مَنۡ يَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ‌ؕ وَلَوۡ اَشۡرَكُوۡا لَحَبِطَ عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

৮৮.) এটি হচ্ছে আল্লাহর হেদায়াত, নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে তিনি যাকে চান তাকে এর সাহায্যে হেদায়াত দান করেন। কিন্তু যদি তারা কোন শির্‌ক করে থাকতো তাহলে তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ধ্বংস হয়ে যেতো।

اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ اٰتَيۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ وَالۡحُكۡمَ وَالنُّبُوَّةَ‌ؕ فَاِنۡ يَّكۡفُرۡ بِهَا هٰٓؤُلَآءِ فَقَدۡ وَكَّلۡنَا بِهَا قَوۡمًا لَّيۡسُوۡا بِهَا بِكٰفِرِيۡنَ‏

৮৯.) তাদেরকে আমি কিতাব, হুকুম ও নবুওয়াত দান করেছিলাম। এখন যদি এরা তা মানতে অস্বীকার করে তাহলে (কোন পরোয়া নেই) আমি অন্য এমন কিছু লোকের হাতে এ নিয়ামত সোপর্দ করে দিয়েছি যারা এগুলো অস্বীকার করে না।

اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ هَدَى اللّٰهُ‌ؕ فَبِهُدٰٮهُمُ اقۡتَدِهۡ‌ؕ قُل لَّاۤ اَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَيۡهِ اَجۡرًا‌ؕ اِنۡ هُوَ اِلَّا ذِكۡرٰى لِلۡعٰلَمِيۡنَ

৯০.) হে মুহাম্মাদ! তারাই আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত প্রাপ্ত ছিল, তাদেরই পথে তুমি চল এবং বলে দাও, এ (তাবলীগ ও হেদায়াতের) কাজে আমি তোমাদের কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক চাই না। এটি সারা দুনিয়াবাসীর জন্য একটি সাধারণ উপদেশমালা।

وَمَا قَدَرُوۡا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖۤ اِذۡ قَالُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ عَلٰى بَشَرٍ مِّنۡ شَىۡءٍ‌ؕ قُلۡ مَنۡ اَنۡزَلَ الۡكِتٰبَ الَّذِىۡ جَآءَ بِهٖ مُوۡسٰى نُوۡرًا وَّهُدًى لِّلنَّاسِ‌ تَجۡعَلُوۡنَهٗ قَرَاطِيۡسَ تُبۡدُوۡنَهَا وَتُخۡفُوۡنَ كَثِيۡرًا‌ۚ وَّعُلِّمۡتُمۡ مَّا لَمۡ تَعۡلَمُوۡۤا اَنۡتُمۡ وَلَاۤ اٰبَآؤُكُمۡ‌ؕ قُلِ اللّٰهُ‌ۙ ثُمَّ ذَرۡهُمۡ فِىۡ خَوۡضِهِمۡ يَلۡعَبُوۡنَ

৯১.) তারা আল্লাহ‌ সম্পর্কে বড়ই ভুল অনুমান করলো যখন তারা বললো, আল্লাহ‌ কোন মানুষের ওপর কিছুই নাযিল করেননি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাহলে মূসা যে কিতাবটি এনেছিল, যা ছিল সমস্ত মানুষের জন্য আলো ও পথ নির্দেশনা, যাকে তোমরা খণ্ড বিখণ্ড করে রাখছো, কিছু দেখাও আর কিছু লুকিয়ে রাখো এবং যার মাধ্যমে তোমাদের এমন জ্ঞান দান করা হয়েছে, যা তোমাদেরও ছিল না, তোমাদের বাপ-দাদাদেরও ছিল না।---কে তা নাযিল করেছিল কেবল এতটুকুই বলে দাওঃ আল্লাহ, তারপর তাদেরকে তাদের যুক্তিবাদের খেলায় মেতে থাকতে দাও।

وَهٰذَا كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ مُبٰرَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِىۡ بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَلِتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰى وَمَنۡ حَوۡلَهَا‌ؕ وَالَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَةِ يُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ‌ وَهُمۡ عَلٰى صَلَاتِهِمۡ يُحَافِظُوۡنَ

৯২.) (সে কিতাবের মতো) এটি একটা কিতাব, যা আমি নাযিল করেছি, বড়ই কল্যাণ ও বরকতপূর্ণ, এর পূর্বে যা এসেছিল তার সত্যতা প্রমাণকারী এবং এর সাহায্যে তুমি জনপদসমূহের এ কেন্দ্র (অর্থাৎ মক্কা) ও তার চারপাশের অধিবাসীদেরকে সতর্ক করবে। যারা আখেরাত বিশ্বাস করে তারা এ কিতাবের ওপর ঈমান আনে এবং নিজেদের নামাযগুলো নিয়মিত যথাযথভাবে হেফাজত করে।

وَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ قَالَ اُوۡحِىَ اِلَىَّ وَلَمۡ يُوۡحَ اِلَيۡهِ شَىۡءٌ وَّمَنۡ قَالَ سَاُنۡزِلُ مِثۡلَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ‌ؕ وَلَوۡ تَرٰٓى اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِىۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَالۡمَلٰٓٮِٕكَةُ بَاسِطُوۡۤا اَيۡدِيۡهِمۡ‌ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَكُمُ‌ؕ الۡيَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ غَيۡرَ الۡحَقِّ وَكُنۡتُمۡ عَنۡ اٰيٰتِهٖ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ

৯৩.) আর সে ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটায় অথবা বলে আমার কাছে অহী এসেছে অথচ তার ওপর কোন অহী নাযিল করা হয়নি অথবা যে আল্লাহর নাযিল করা জিনিসের মোকাবিলায় বলে, আমিও এমন জিনিস নাযিল করে দেখিয়ে দেবো? হায়! তুমি যদি জালেমদেরকে সে অবস্থায় দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে থাকবে। “নাও, তোমাদের প্রাণ বের করে দাও।” তোমরা আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করে যেসব অন্যায় ও অসত্য কথা বলতে এবং তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে তারই শাস্তি স্বরূপ আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে।

وَلَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقۡنٰكُمۡ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكۡتُمۡ مَّا خَوَّلۡنٰكُمۡ وَرَآءَ ظُهُوۡرِكُمۡ‌ۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمۡ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيۡنَ زَعَمۡتُمۡ اَنَّهُمۡ فِيۡكُمۡ شُرَكٰٓؤُا‌ؕ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيۡنَكُمۡ وَضَلَّ عَنۡكُمۡ مَّا كُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ‏

৯৪.) (আর আল্লাহ‌ বলবেনঃ) “দেখো এবার তোমরা ঠিক তেমনি নিঃসঙ্গ ও একাকী আমার সামনে হাযির হয়ে গেছো যেমনটি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, যা কিছু তোমাদের দুনিয়ায় দিয়েছিলাম তা সব তোমরা পেছনে রেখে এসেছো এবং এখন তোমাদের সাথে তোমাদের সেসব সুপারিশকারীদেরকেও দেখছি না যাদের সম্পর্কে তোমরা মনে করতে তোমাদের কার্য সম্পাদন করার ব্যাপারে তাদেরও কিছুটা অবদান আছে। তোমাদের মধ্যকার সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমরা যেসব ধারণা করতে তা সবই তোমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।”

اِنَّ اللّٰهَ فَالِقُ الۡحَبِّ وَالنَّوٰى‌ؕ يُخۡرِجُ الۡحَىَّ مِنَ الۡمَيِّتِ وَمُخۡرِجُ الۡمَيِّتِ مِنَ الۡحَىِّ‌ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ‌ فَاَنّٰى تُؤۡفَكُوۡنَ

৯৫.) আল্লাহই শস্যবীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী।  তিনিই জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন এবং তিনিই বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে। এ সমস্ত কাজ তো আল্লাহই করেন, তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে কোন্‌ দিকে ছুটে চলছো?

فَالِقُ الۡاِصۡبَاحِ‌ۚ وَجَعَلَ الَّيۡلَ سَكَنًا وَّالشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ حُسۡبَانًا‌ؕ ذٰلِكَ تَقۡدِيۡرُ الۡعَزِيۡزِ الۡعَلِيۡمِ

৯৬.) রাতের আবরণ দীর্ণ করে তিনিই ফোটান উষার আলো। তিনিই রাতকে করেছেন প্রশান্তিকাল। চন্দ্র ও সূর্যের উদয়াস্তের হিসেব তিনিই নির্দিষ্ট করেছেন। এসব কিছুই সেই জবরদস্ত ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারীর নির্ধারিত পরিমাপ।

وَهُوَ الَّذِىۡ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوۡمَ لِتَهۡتَدُوۡا بِهَا فِىۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ‌ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ

৯৭.) আর তিনিই তারকাগুলোকে বানিয়েছেন তোমাদের জন্য পৃথিবী ও সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে পথের দিশা জানার মাধ্যম। দেখো, আমি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্য যারা জ্ঞান রাখে। 

وَهُوَ الَّذِىۡۤ اَنۡشَاَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَةٍ فَمُسۡتَقَرٌّ وَّمُسۡتَوۡدَعٌ‌ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّفۡقَهُوۡنَ

৯৮.) আর তিনিই একটি মাত্র প্রাণসত্তা থেকে তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর প্রত্যেকের জন্য রয়েছে একটি অবস্থান স্থল এবং তাকে সোপর্দ করার একটি জায়গা। এ নিদর্শনগুলো সুস্পষ্ট করে দিয়েছি তাদের জন্য যারা জ্ঞান বুদ্ধি রাখে।

وَهُوَ الَّذِىۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً‌ۚ فَاَخۡرَجۡنَا بِهٖ نَبَاتَ كُلِّ شَىۡءٍ فَاَخۡرَجۡنَا مِنۡهُ خَضِرًا نُّخۡرِجُ مِنۡهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا‌ۚ وَمِنَ النَّخۡلِ مِنۡ طَلۡعِهَا قِنۡوَانٌ دَانِيَةٌۙ وَّجَنّٰتٍ مِّنۡ اَعۡنَابٍ وَّالزَّيۡتُوۡنَ وَالرُّمَّانَ مُشۡتَبِهًا وَّغَيۡرَ مُتَشٰبِهٍ‌ؕ اُنْظُرُوۡۤا اِلٰى ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَيَنۡعِهٖؕ اِنَّ فِىۡ ذٰلِكُمۡ لَاَيٰتٍ لِّقَوۡمٍ يُّؤۡمِنُوۡنَ‏

৯৯.) আর তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। তারপর তার সাহায্যে সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপাদন করেছেন। এরপর তা থেকে সবুজ শ্যামল ক্ষেত ও বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করেছেন। আর খেজুর গাছের মাথি থেকে খেজুরের কাঁদির পর কাঁদি সৃষ্টি করেছেন, যা বোঝার ভারে নুয়ে পড়ে। আর সজ্জিত করেছেন আংগুর, যয়তুন ও ডালিমের বাগান। এসবের ফলগুলো পরস্পরের সাথে সাদৃশ্যও রাখে আবার প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যেরও অধিকারী। এ গাছ যখন ফলবান হয় তখন এর ফল ধরা ও ফল পাকার অবস্থাটি একটু গভীর দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করো এসব জিনিসের মধ্যে ঈমানদারদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

وَجَعَلُوۡا لِلّٰهِ شُرَكَآءَ الۡجِنَّ وَخَلَقَهُمۡ‌ وَخَرَقُوۡا لَهٗ بَنِيۡنَ وَبَنٰتٍۢ بِغَيۡرِ عِلۡمٍ‌ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَتَعٰلٰى عَمَّا يَصِفُوۡنَ

১০০.) এসব সত্ত্বেও লোকেরা জ্বিনদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করলো, অথচ তিনি তাদের সৃষ্টিকর্তা। আর তারা না জেনে বুঝে তাঁর জন্য পুত্র ও কন্যা তৈরী করে ফেললো, অথচ এরা যেসব কথা বলে তা থেকে তিনি পবিত্র এবং তার উর্ধ্বে।

بَدِيۡعُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ‌ؕ اَنّٰى يَكُوۡنُ لَهٗ وَلَدٌ وَّلَمۡ تَكُنۡ لَّهٗ صَاحِبَةٌ‌ؕ وَّخَلَقَ كُلَّ شَىۡءٍ‌ۚ وَّهُوَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيۡمٌ

১০১.) তিনি তো আসমান ও যমীনের উদ্ভাবক। তাঁর কোন সন্তান হতে পারে কেমন করে, যখন তাঁর কোন জীবন সঙ্গিনী নেই? তিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সবকিছুর জ্ঞান রাখেন।

ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ‌ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ‌ۚ خَالِقُ كُلِّ شَىۡءٍ فَاعۡبُدُوۡهُ‌ۚ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ وَّكِيۡلٌ

১০২.) এ তো আল্লাহ‌ তোমাদের রব। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সবকিছুর তিনিই স্রষ্টা। কাজেই তোমরা তাঁরই বন্দেগী করো। তিনি সবকিছুর তত্বাবধায়ক।

لَّا تُدۡرِكُهُ الۡاَبۡصَارُ وَهُوَ يُدۡرِكُ الۡاَبۡصَارَ‌ۚ وَهُوَ اللَّطِيۡفُ الۡخَبِيۡرُ‏

১০৩.) দৃষ্টিশক্তি তাঁকে দেখতে অক্ষম কিন্তু তিনি দৃষ্টিকে আয়ত্ব করে নেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সর্বজ্ঞ।

قَدۡ جَآءَكُمۡ بَصَآٮِٕرُ مِنۡ رَّبِّكُمۡ‌ۚ فَمَنۡ اَبۡصَرَ فَلِنَفۡسِهٖ‌ۚ وَمَنۡ عَمِىَ فَعَلَيۡهَا‌ؕ وَمَاۤ اَنَا عَلَيۡكُمۡ بِحَفِيۡظٍ

১০৪.) দেখো, তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অন্তর্দৃষ্টির আলো এসে গেছে। এখন যে ব্যক্তি নিজের দৃষ্টিশক্তিকে কাজে লাগাবে, সে নিজেরই কল্যাণ সাধন করবে। আর যে অন্ধ সাজবে, সে নিজেই নিজের ক্ষতি করবে। আমি তো তোমাদের পাহারাদার নই।

وَكَذٰلِكَ نُصَرِّفُ الۡاٰيٰتِ وَلِيَقُوۡلُوۡا دَرَسۡتَ وَلِنُبَيِّنَهٗ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ‏

১০৫.) এভাবে আমার আয়াত আমি বার বার বিভিন্ন পদ্ধতিতে বর্ণনা করে থাকি। এ জন্য বর্ণনা করি যাতে এরা বলে, তুমি কারোর কাছ শিখে এসেছো এবং যারা জ্ঞানের অধিকারী তাদের কাছে প্রকৃত সত্যকে উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে চাই।

اِتَّبِعۡ مَاۤ اُوۡحِىَ اِلَيۡكَ مِنۡ رَّبِّكَ‌‌ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ‌ۚ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡمُشۡرِكِيۡنَ

১০৬.) হে মুহাম্মাদ! সে অহীর অনুসরণ করো, যা তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, কারণ সে একক রব ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং এ মুশরিকদের পেছনে লেগে থেকো না।

وَلَوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَاۤ اَشۡرَكُوۡا‌ؕ وَمَا جَعَلۡنٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيۡظًا‌ۚ وَّمَاۤ اَنۡتَ عَلَيۡهِمۡ بِوَكِيۡلٍ

১০৭.) যদি আল্লাহর ইচ্ছা হতো, তাহলে (তিনি নিজেই এমন ব্যবস্থা করতে পারতেন যাতে) এরা শিরক করতো না। তোমাকে এদের ওপর পাহারাদার নিযুক্ত করিনি এবং তুমি এদের অভিভাবকও নও।

وَلَا تَسُبُّوۡا الَّذِيۡنَ يَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ فَيَسُبُّوۡا اللّٰهَ عَدۡوًۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٍ‌ؕ كَذٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ اُمَّةٍ عَمَلَهُمۡ ثُمَّ اِلٰى رَبِّهِمۡ مَّرۡجِعُهُمۡ فَيُنَبِّئُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

১০৮.) আর (হে ঈমানদারগণ!) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিয়ো না। কেননা, এরা শিরক থেকে আরো খানিকটা অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত যেন আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। আমি তো এভাবে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের কার্যক্রমকে সুশোভন করে দিয়েছি। তারপর তাদের ফিরে আসতে হবে তাদের রবের দিকে। তখন তিনি তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদেরকে জানিয়ে দেবেন।

وَاَقۡسَمُوۡا بِاللّٰهِ جَهۡدَ اَيۡمَانِهِمۡ لَٮِٕنۡ جَآءَتۡهُمۡ اٰيَةٌ لَّيُؤۡمِنُنَّ بِهَا‌ؕ قُلۡ اِنَّمَا الۡاٰيٰتُ عِنۡدَ اللّٰهِ‌ وَمَا يُشۡعِرُكُمۙۡ اَنَّهَاۤ اِذَا جَآءَتۡ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ

১০৯.) এরা শক্ত কসম খেয়ে বলছে, যদি কোন নিদর্শন আমাদের সামনে এসে যায় তাহলে আমরা তার প্রতি ঈমান আনবো। হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলে দাও, “নিদর্শন তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।” আর তোমাদের কিভাবে বুঝানো যাবে যে, নিদর্শন এসে গেলেও এরা বিশ্বাস করবে না।

وَنُقَلِّبُ اَفۡـِٕدَتَهُمۡ وَاَبۡصَارَهُمۡ كَمَا لَمۡ يُؤۡمِنُوۡا بِهٖۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّنَذَرُهُمۡ فِىۡ طُغۡيٰنِهِمۡ يَعۡمَهُوۡنَ

১১০.) প্রথমবারে যেমন তারা এর প্রতি ঈমান আনেনি ঠিক তেমনিভাবেই আমি তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি এদেরকে এদের বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।

وَلَوۡ اَنَّنَا نَزَّلۡنَاۤ اِلَيۡهِمُ الۡمَلٰٓٮِٕكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الۡمَوۡتٰى وَحَشَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ كُلَّ شَىۡءٍ قُبُلاً مَّا كَانُوۡا لِيُؤۡمِنُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ يَّشَآءَ اللّٰهُ وَلٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ يَجۡهَلُوۡنَ‏

১১১.) যদি আমি তাদের কাছে ফেরেশতাও নাযিল করতাম, মৃতেরাও তাদের সাথে কথা বলতে থাকতো এবং সারা দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও তাদের চোখের সামনে একসাথে তুলে ধরতাম, তাহলেও তারা ঈমান আনতো না। তবে তারা ঈমান আনুক এটা যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়, তাহলে অবশ্যি অন্য কথা কিন্তু বেশীর ভাগ লোক অজ্ঞের মতো কথা বলে থাকে।

وَكَذٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِىٍّ عَدُوًّا شَيٰطِيۡنَ الۡاِنۡسِ وَالۡجِنِّ يُوۡحِىۡ بَعۡضُهُمۡ اِلٰى بَعۡضٍ زُخۡرُفَ الۡقَوۡلِ غُرُوۡرًا‌ؕ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوۡهُ‌ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُوۡنَ

১১২.) আর এভাবে আমি সবসময় মনুষ্য জাতীয় শয়তান ও জিন জাতীয় শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর দুশমনে পরিণত করেছি, তারা ধোঁকা ও প্রতারণার ছলে পরস্পরকে চমকপ্রদ কথা বলতো। তোমার রব চাইলে তারা এমনটি কখনো করতো না। কাজেই তারদেরকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও, তারা মিথ্যা রচনা করতে থাকুক।

وَلِتَصۡغٰٓى اِلَيۡهِ اَفۡـِٕدَةُ الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَةِ وَلِيَرۡضَوۡهُ وَلِيَقۡتَرِفُوۡا مَا هُمۡ مُّقۡتَرِفُوۡنَ

১১৩.) (এসব কিছু আমি তাদেরকে এ জন্য করতে দিচ্ছি যে) যারা আখেরাত বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর এ (সুদৃশ্য) প্রতারণার প্রতি ঝুঁকে পড়ুক, তারা এর প্রতি তুষ্ট থাকুক এবং যেসব দুষ্কর্ম তারা করতে চায় সেগুলো করতে থাকুক।

اَفَغَيۡرَ اللّٰهِ اَبۡتَغِىۡ حَكَمًا وَّهُوَ الَّذِىۡۤ اَنۡزَلَ اِلَيۡكُمُ الۡكِتٰبَ مُفَصَّلاً‌ؕ وَالَّذِيۡنَ اٰتَيۡنٰهُمُ الۡكِتٰبَ يَعۡلَمُوۡنَ اَنَّهٗ مُنَزَّلٌ مِّنۡ رَّبِّكَ بِالۡحَقِّ‌ فَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِيۡنَ

১১৪.) এমতাবস্থায় আমি কি আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কোন মীমাংসাকারীর সন্ধান করবো? অথচ তিনি পূর্ণ বিস্তারিত বিবরণসহ তোমাদের কিতাব নাযিল করেছেন। আর যাদেরকে আমি (তোমার আগে) কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে এ কিতাবটি তোমার রবেরই পক্ষ থেকে সত্য সহকারে নাযিল হয়েছে। কাজেই তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدۡقًا وَّعَدۡلاً‌ؕ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِهٖ‌ۚ وَهُوَ السَّمِيۡعُ الۡعَلِيۡمُ

১১৫.) সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে তোমার রবের কথা পূর্ণাংগ, তাঁর ফরমানসমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই এবং তিনি সবকিছু শুনেন ও জানেন।

وَاِنۡ تُطِعۡ اَكۡثَرَ مَنۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ يُضِلُّوۡكَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ‌ؕ اِنۡ يَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنۡ هُمۡ اِلَّا يَخۡرُصُوۡنَ

১১৬.) আর হে মুহাম্মাদ! যদি তুমি দুনিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের কথায় চলো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। তারা তো চলে নিছক আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে এবং তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানই করে থাকে।

اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعۡلَمُ مَنۡ يَّضِلُّ عَنۡ سَبِيۡلِهٖ‌ۚ وَهُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُهۡتَدِيۡنَ

১১৭.) আসলে তোমার রবই ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে আছে আর কে সত্য-সরল পথে অবিচল রয়েছে।

فَكُلُوۡا مِمَّا ذُكِرَ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَيۡهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ بِاٰيٰتِهٖ مُؤۡمِنِيۡنَ

১১৮.) এখন যদি তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে থাকো, তাহলে যে পশুর ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তার গোশ্‌ত খাও।

وَمَا لَكُمۡ اَلَّا تَاۡكُلُوۡا مِمَّا ذُكِرَ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَيۡهِ وَقَدۡ فَصَّلَ لَكُمۡ مَّا حَرَّمَ عَلَيۡكُمۡ اِلَّا مَا اضۡطُرِرۡتُمۡ اِلَيۡهِؕ وَاِنَّ كَثِيۡرًا لَّيُضِلُّوۡنَ بِاَهۡوَآٮِٕهِمۡ بِغَيۡرِ عِلۡمٍ‌ؕ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُعۡتَدِيۡنَ‏

১১৯.) যে জিনিসের ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে সেটি না খাওয়ার তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে? অথচ যেসব জিনিসের ব্যবহার আল্লাহ‌ নিরূপায় অবস্থা ছাড়া অন্য সব অবস্থায় হারাম করে দিয়েছেন সেগুলোর বিশদ বিবরণ ও তিনি তোমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ লোকের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা জ্ঞান ছাড়া নিছক নিজেদের খেয়াল খুশী অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলে থাকে। তোমার রব এ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে খুব ভাল করেই জানেন।

وَذَرُوۡا ظَاهِرَ الۡاِثۡمِ وَبَاطِنَهٗ‌ؕ اِنَّ الَّذِيۡنَ يَكۡسِبُوۡنَ الۡاِثۡمَ سَيُجۡزَوۡنَ بِمَا كَانُوۡا يَقۡتَرِفُوۡنَ

১২০.) তোমরা প্রকাশ্য গোনাহসমূহ থেকে বাঁচো এবং গোপন গোনাহসমূহ থেকেও। যারা গোনাহে লিপ্ত হয়, তাদেরকে নিজেদের সব কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ করতেই হবে।

وَلَا تَاۡكُلُوۡا مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَيۡهِ وَاِنَّهٗ لَفِسۡقٌؕ وَاِنَّ الشَّيٰطِيۡنَ لَيُوۡحُوۡنَ اِلٰٓى اَوۡلِيَآٮِٕهِمۡ لِيُجَادِلُوۡكُمۡ‌ۚ وَاِنۡ اَطَعۡتُمُوۡهُمۡ اِنَّكُمۡ لَمُشۡرِكُوۡنَ‏

১২১.) আর যে পশুকে আল্লাহর নামে যবেই করা হয়নি তার গোশ্‌ত খেয়ো না। এটা অবশ্যি মহাপাপ। শয়তানরা তাদের সাথীদের অন্তরে সন্দেহ ও আপত্তির উদ্ভব ঘটায়, যাতে তারা তোমাদের সাথে ঝগড়া করতে পারে।৮৬ কিন্তু যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তাহলে অবশ্যি তোমরা মুশরিক হবে।

اَوَمَنۡ كَانَ مَيۡتًا فَاَحۡيَيۡنٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهٗ نُوۡرًا يَّمۡشِىۡ بِهٖ فِىۡ النَّاسِ كَمَنۡ مَّثَلُهٗ فِىۡ الظُّلُمٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٍ مِّنۡهَا‌ؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلۡكٰفِرِيۡنَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

১২২.) যে ব্যক্তি প্রথমে মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তাকে এমন আলো দিয়েছি যার উজ্জ্বল আভায় সে মানুষের মধ্যে জীবন পথে চলতে পারে, সে কি এমন ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারের বুকে পড়ে আছে এবং কোনক্রমেই সেখানে বের হয় না?

وَكَذٰلِكَ جَعَلۡنَا فِىۡ كُلِّ قَرۡيَةٍ اَكٰبِرَ مُجۡرِمِيۡهَا لِيَمۡكُرُوۡا فِيۡهَا‌ؕ وَمَا يَمۡكُرُوۡنَ اِلَّا بِاَنۡفُسِهِمۡ وَمَا يَشۡعُرُوۡنَ

১২৩.) কাফেরদের জন্য তো এভাবেই তাদের কর্মকাণ্ডকে সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এভাবে প্রতিটি লোকালয়ে আমি অপরাধীদের লাগিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা নিজেদের প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার জাল ছাড়তে পারে। আসলে নিজেদের প্রতারণার জালে তারা নিজেরাই আবদ্ধ হয় কিন্তু তারা এর চেতনা রাখে না।

وَاِذَا جَآءَتۡهُمۡ اٰيَةٌ قَالُوۡا لَنۡ نُّؤۡمِنَ حَتَّىٰ نُؤۡتٰى مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِىَ رُسُلُ اللّٰهِ‌ۘ اللّٰهُ اَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسٰلَتَهٗ‌ؕ سَيُصِيۡبُ الَّذِيۡنَ اَجۡرَمُوۡا صَغَارٌ عِنۡدَ اللّٰهِ وَعَذَابٌ شَدِيۡدٌۢ بِمَا كَانُوۡا يَمۡكُرُوۡنَ

১২৪.) তাদের সামনে কোন আয়াত এলে তারা বলে, “আল্লাহর রসূলদেরকে যে জিনিস দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তা আমাদের দেয়া হয় ততক্ষণ আমরা মানবো না।” আল্লাহ নিজের রিসালাতের কাজ কাকে দিয়ে কিভাবে নেবেন তা তিনি নিজেই ভাল জানেন। এ অপরাধীরা নিজেদের প্রতারণা ও কূট কৌশলের অপরাধে আল্লাহর কাছে অচিরেই লাঞ্ছনা ও কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে।

فَمَنۡ يُّرِدِ اللّٰهُ اَنۡ يَّهۡدِيَهٗ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهٗ لِلۡاِسۡلَامِ‌ۚ وَمَنۡ يُّرِدۡ اَنۡ يُّضِلَّهٗ يَجۡعَلۡ صَدۡرَهٗ ضَيِّقًا حَرَجًا كَاَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِىۡ السَّمَآءِ‌ؕ كَذٰلِكَ يَجۡعَلُ اللّٰهُ الرِّجۡسَ عَلَى الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ

১২৫.) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ যাকে সত্যপথ দেখাবার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহীতে নিক্ষেপ করার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ সংকীর্ণ করে দেন এবং এমনভাবে তাকে সংকুচিত করতে থাকেন যে, (ইসলামের কথা চিন্তা করতেই) তার মনে হতে থাকে যেন তার আত্মা আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। এভাবে আল্লাহ্‌ (সত্য থেকে দূরে পলায়ন ও সত্যের প্রতি ঘৃণার) আবিলতা ও অপবিত্রতা বেঈমানদের ওপর চাপিয়ে দেন।

وَهٰذَا صِرٰطُ رَبِّكَ مُسۡتَقِيۡمًا‌ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّذَّكَّرُوۡنَ‏

১২৬.) অথচ এ পথটিই তোমাদের রবের সোজা পথ। আর তার নিদর্শনগুলো তাদের জন্য সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যারা উপদেশ গ্রহণ করে।

لَهُمۡ دَارُ السَّلٰمِ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ‌ وَهُوَ وَلِيُّهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

১২৭.) তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে শান্তির আবাস এবং তিনি তাদের অভিভাবক। কারণ, তারা সঠিক কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে।

وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيۡعًا‌ۚ يٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ قَدِ اسۡتَكۡثَرۡتُمۡ مِّنَ الۡاِنۡسِ‌ۚ وَقَالَ اَوۡلِيَآؤُهُمۡ مِّنَ الۡاِنۡسِ رَبَّنَا اسۡتَمۡتَعَ بَعۡضُنَا بِبَعۡضٍ وَّبَلَغۡنَاۤ اَجَلَنَا الَّذِىۡۤ اَجَّلۡتَ لَنَا‌‌ؕ قَالَ النَّارُ مَثۡوٰٮكُمۡ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۤ اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُؕ اِنَّ رَبَّكَ حَكِيۡمٌ عَلِيۡمٌ‏

১২৮.) যেদিন আল্লাহ‌ তাদের সবাইকে ঘেরাও করে একত্র করবেন সেদিন তিনি জিনদের সম্বোধন করে বলবেন, “হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা তো মানুষদেরকে অনেক বেশী তোমাদের অনুগামী করেছো।” মানুষদের মধ্য থেকে যারা তাদের বন্ধু ছিল তারা বলবে, “হে আমাদের রব! আমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে প্রত্যেককে খুব বেশী ব্যবহার করেছে এবং তুমি আমাদের জন্য যে সময় নির্ধারিত করেছিলে এখন আমরা সেখানে পৌঁছে গেছি।” আল্লাহ্‌ বলবেন, “বেশ, এখন আগুনই তোমাদের আবাস। সেখানে তোমরা থাকবে চিরকাল।” তা থেকে রক্ষা পাবে একমাত্র তারাই যাদেরকে আল্লাহ্‌ রক্ষা করতে চাইবেন। নিঃসন্দেহে তোমাদের রব জ্ঞানময় ও সবকিছু জানেন।

وَكَذٰلِكَ نُوَلِّىۡ بَعۡضَ الظّٰلِمِيۡنَ بَعۡضًۢا بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ‏

১২৯.) দেখো এভাবে আমি (আখেরাতে) জালেমদেরকে পরস্পরের সাথী বানিয়ে দেবো (দুনিয়ায় তারা এক সাথে মিলে) যা কিছু উপার্জন করেছিল তার কারণে। 

يٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ اَلَمۡ يَاۡتِكُمۡ رُسُلٌ مِّنۡكُمۡ يَقُصُّوۡنَ عَلَيۡكُمۡ اٰيٰتِىۡ وَيُنۡذِرُوۡنَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هٰذَا‌ؕ قَالُوۡا شَهِدۡنَا عَلٰٓى اَنۡفُسِنَا‌ وَغَرَّتۡهُمُ الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَا وَشَهِدُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ اَنَّهُمۡ كَانُوۡا كٰفِرِيۡنَ‏

১৩০.) (এ সময় আল্লাহ তাদেরকে একথাও জিজ্ঞেস করবেন) “হে জ্বীন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে কি রসূলরা আসেনি, যারা তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনাতো এবং এ দিনটির পরিণাম সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করতো?” তারা বলবে, “হ্যাঁ, আমরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি।” আজ দুনিয়ার জীবন এদেরকে প্রতারণা জালে আবদ্ধ করে রেখেছে কিন্তু সেদিন এরা কাফের ছিল বলে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।

ذٰلِكَ اَنۡ لَّمۡ يَكُنۡ رَّبُّكَ مُهۡلِكَ الۡقُرٰى بِظُلۡمٍ وَّاَهۡلُهَا غٰفِلُوۡنَ‏

১৩১.) (একথা প্রমাণ করার জন্য তাদের কাছ থেকে এ সাক্ষ্য নেয়া হবে যে,) তোমাদের রব জনপদগুলোকে জুলুম সহকারে ধ্বংস করতেন না যখন সেখানকার অধিবাসীরা প্রকৃত সত্য অবগত নয়।

وَلِكُلٍّ دَرَجٰتٌ مِّمَّا عَمِلُوۡا‌ؕ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعۡمَلُوۡنَ

১৩২.) প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা তার কার্য অনুযায়ী হয়। আর তোমার রব মানুষের কাজের ব্যাপারে বেখবর নন।

وَرَبُّكَ الۡغَنِىُّ ذُوۡ الرَّحۡمَةِ‌ؕ اِنۡ يَّشَاۡ يُذۡهِبۡكُمۡ وَيَسۡتَخۡلِفۡ مِنۡۢ بَعۡدِكُمۡ مَّا يَشَآءُ كَمَاۤ اَنۡشَاَكُمۡ مِّنۡ ذُرِّيَّةِ قَوۡمٍ اٰخَرِيۡنَؕ‏

১৩৩.) তোমার রব কারোর মুখাপেক্ষী নন এবং দয়া ও করুণা তাঁর রীতি। তিনি চাইলে তোমাদের সরিয়ে দিতে এবং তোমাদের জায়গায় তাঁর পছন্দমত অন্য লোকদের এনে বসাতে পারেন, যেমন তিনি তোমাদের আবির্ভূত করেছেন অন্য কিছু লোকের বংশধারা থেকে।

اِنَّ مَا تُوۡعَدُوۡنَ لَاٰتٍ‌ ۙوَّمَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِيۡنَ

১৩৪.) তোমাদের কাছে যে জিনিসের ওয়াদা করা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবেই আসবে।  আর তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করে দেবার ক্ষমতা রাখো না।

قُلۡ يٰقَوۡمِ اعۡمَلُوۡا عَلٰى مَكَانَتِكُمۡ اِنِّىۡ عَامِلٌ‌ۚ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَۙ مَنۡ تَكُوۡنُ لَهٗ عَاقِبَةُ الدَّارِ‌ؕ اِنَّهٗ لَا يُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ

১৩৫.) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, হে লোকেরা, তোমরা নিজেদের জায়গায় কাজ করে যেতে থাকো এবং আমিও নিজের জায়গায় কাজ করে যেতে থাকি, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে পরিণাম কার জন্য মঙ্গলজনক হবে। তবে জালেম কখনো সফলকাম হতে পারে না, এটি একটি চিরন্তন সত্য।

وَجَعَلُوۡا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَاَ مِنَ الۡحَرۡثِ وَالۡاَنۡعٰمِ نَصِيۡبًا فَقَالُوۡا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعۡمِهِمۡ وَهٰذَا لِشُرَكَآٮِٕنَا‌ۚ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآٮِٕهِمۡ فَلَا يَصِلُ اِلَى اللّٰهِ‌ۚ وَمَا كَانَ لِلّٰهِ فَهُوَ يَصِلُ اِلٰى شُرَكَآٮِٕهِمۡ‌ؕ سَآءَ مَا يَحۡكُمُوۡنَ

১৩৬.) এ লোকেরা আল্লাহর জন্য তাঁরই সৃষ্ট ক্ষেত-খামার ও গবাদি পশুর মধ্য থেকে একটি অংশ নির্দিষ্ট করেছে আর নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলছে, এটি আল্লাহর জন্য এবং এটি আমাদের বানানো আল্লাহর শরীকদের জন্য। তারপর যে অংশ তাদের বানানো শরীকদের জন্য, তা তো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না কিন্তু যে অংশ আল্লাহর জন্য তা তাদের বানানো শরীকদের কাছে পৌঁছে যায়। কতই না খারাপ ফায়সালা করে এরা!

وَكَذٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيۡرٍ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ قَتۡلَ اَوۡلَادِهِمۡ شُرَكَآؤُهُمۡ لِيُرۡدُوۡهُمۡ وَلِيَلۡبِسُوۡا عَلَيۡهِمۡ دِيۡنَهُمۡ‌ۚ وَلَوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا فَعَلُوۡهُ‌ؕ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُوۡنَ

১৩৭.) আর এভাবেই বহু মুশরিকের জন্য তাদের শরীকরা নিজেদের সন্তান হত্যা করাকে সুশোভন করে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে ধ্বংসের আবর্তে নিক্ষেপ করতে এবং তাদের দ্বীনকে তাদের কাছে সংশয়িত করে তুলতে পারে। আল্লাহ চাইলে তারা এমনটি করতো না। কাজেই তাদেরকে দাও, তারা নিজেদের মিথ্যা রচনায় ডুবে থাক।

وَقَالُوۡا هٰذِهٖۤ اَنۡعَامٌ وَّحَرۡثٌ حِجۡرٌ‌ۖ لَّا يَطۡعَمُهَاۤ اِلَّا مَنۡ نَّشَآءُ بِزَعۡمِهِمۡ وَاَنۡعَامٌ حُرِّمَتۡ ظُهُوۡرُهَا وَاَنۡعَامٌ لَّا يَذۡكُرُوۡنَ اسۡمَ اللّٰهِ عَلَيۡهَا افۡتِرَآءً عَلَيۡهِ‌ؕ سَيَجۡزِيۡهِمۡ بِمَا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ‏

১৩৮.) তারা বলে, এ পশু ও এ ক্ষেত-খামার সুরক্ষিত। এগুলো একমাত্র তারাই খেতে পারে যাদেরকে আমরা খাওয়াতে চাই। অথচ এ বিধি-নিষেধ তাদের মনগড়া। তারপর কিছু পশুর পিঠে চড়া ও তাদের পিঠে মাল বহন করা হারাম করে দেয়া হয়েছে আবার কিছু পশুর ওপর তারা আল্লাহর নাম নেয় না। আর এসব কিছু আল্লাহ‌ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা রটনা।  শীঘ্রই আল্লাহ‌ তাদেরকে এ মিথ্যা রটনার প্রতিফল দেবেন।

وَقَالُوۡا مَا فِىۡ بُطُوۡنِ هٰذِهِ الۡاَنۡعَامِ خَالِصَةٌ لِّذُكُوۡرِنَا وَمُحَرَّمٌ عَلٰٓى اَزۡوٰجِنَا‌ۚ وَاِنۡ يَّكُنۡ مَّيۡتَةً فَهُمۡ فِيۡهِ شُرَكَآءُ‌ؕ سَيَجۡزِيۡهِمۡ وَصۡفَهُمۡ‌ؕ اِنَّهٗ حَكِيۡمٌ عَلِيۡمٌ‏

১৩৯.) আর তারা বলে, এ পশুদের পেটে যা কিছু আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট এবং আমাদের স্ত্রীদের জন্য সেগুলো হারাম। কিন্তু যদি তা মৃত হয় তাহলে উভয়েই তা খাবার ব্যাপারে শরীক হতে পারে।  তাদের এ মনগড়া কথার প্রতিফল আল্লাহ‌ তাদেরকে অবশ্যি দেবেন। অবশ্যি তিনি প্রজ্ঞাময় ও সবকিছু জানেন।

قَدۡ خَسِرَ الَّذِيۡنَ قَتَلُوۡۤا اَوۡلَادَهُمۡ سَفَهًۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٍ وَّحَرَّمُوۡا مَا رَزَقَهُمُ اللّٰهُ افۡتِرَآءً عَلَى اللّٰهِ‌ؕ قَدۡ ضَلُّوۡا وَمَا كَانُوۡا مُهۡتَدِيۡنَ

১৪০.) নিঃসন্দেহে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজেদের সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতাবশত হত্যা করেছে এবং আল্লাহর দেয়া জীবিকাকে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা ধারণাবশত হারাম গণ্য করেছে নিঃসন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা কখনোই সত্য পথ লাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

وَهُوَ الَّذِىۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّغَيۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّالنَّخۡلَ وَالزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيۡتُوۡنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيۡرَ مُتَشٰبِهٍ‌ؕ كُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَاٰتُوۡا حَقَّهٗ يَوۡمَ حَصَادِهٖ‌‌ۖ وَلَا تُسۡرِفُوۡا‌ؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الۡمُسۡرِفِيۡنَۙ

১৪১.) তিনি আল্লাহই নানা প্রকার লতাগুল্ম ও বাগান সৃষ্টি করেছেন। খেজুর বীথি সৃষ্টি করেছেন। শস্য উৎপাদন করেছেন, তা থেকে নানা প্রকার খাদ্য সংগৃহীত হয়। যাইতুন ও ডালিম বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন, এদের ফলের মধ্যে বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকলেও স্বাদ বিভিন্ন। এগুলোর ফল খাও যখন ফলবান হয় এবং এগুলোর ফসল কাটার সময় আল্লাহর হক আদায় করো আর সীমা অতিক্রম করো না। কারণ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে আল্লাহ‌ পছ্ন্দ করেন না।

وَمِنَ الۡاَنۡعَامِ حَمُوۡلَةً وَّفَرۡشًا‌ؕ كُلُوۡا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ وَلَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّيۡطٰنِ‌ؕ اِنَّهٗ لَكُمۡ عَدُوٌّ مُّبِيۡنٌۙ

১৪২.) আবার তিনিই গবাদী পশুর মধ্যে এমন পশুও সৃষ্টি করেছেন, যাদের সাহায্যে যাত্রী ও ভারবহনের কাজ নেয়া হয় এবং যাদেরকে খাদ্য ও বিছানার কাজেও ব্যবহার করা হয়। খাও এ জিনিসগুলো থেকে, যা আল্লাহ‌ তোমাদের দান করেছেন এবং শয়তানের অনুসরণ করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

ثَمٰنِيَةَ اَزۡوٰجٍ‌ۚ مِّنَ الضَّاۡنِ اثۡنَيۡنِ وَمِنَ الۡمَعۡزِ اثۡنَيۡنِ‌ؕ قُلۡ اٴٰلذَّكَرَيۡنِ حَرَّمَ اَمِ الۡاُنۡثَيَيۡنِ اَمَّا اشۡتَمَلَتۡ عَلَيۡهِ اَرۡحَامُ الۡاُنۡثَيَيۡنِ‌ؕ نَبِّـُٔوۡنِىۡ بِعِلۡمٍ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَۙ

১৪৩.) এ আটটি নর ও মাদী, দু’টি মেষ শ্রেণীর ও দু’টি ছাগল শ্রেণীর। হে মুহাম্মাদ! এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ এদের নর দু’টি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি অথবা মেষ ও ছাগলের পেটে যে বাচ্চা আছে সেগুলো? যথার্থ জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাকে জানাও যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।

وَمِنَ الۡاِبِلِ اثۡنَيۡنِ وَمِنَ الۡبَقَرِ اثۡنَيۡنِ‌ؕ قُلۡ اٴٰلذَّكَرَيۡنِ حَرَّمَ اَمِ الۡاُنۡثَيَيۡنِ اَمَّا اشۡتَمَلَتۡ عَلَيۡهِ اَرۡحَامُ الۡاُنۡثَيَيۡنِ‌ؕ اَمۡ كُنۡتُمۡ شُهَدَآءَ اِذۡ وَصّٰٮكُمُ اللّٰهُ بِهٰذَا‌ۚ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيۡرِ عِلۡمٍ‌ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ

১৪৪.) আর এভাবে দু’টি উট শ্রেণীর ও দু’টি গাভী শ্রেণীর মধ্য থেকে। জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ এদের নর দু’টি হারাম করেছেন, না মাদী দু’টি, না সেই বাচ্চা যা উটনী ও গাভীর পেটে রয়েছে? তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে যখন আল্লাহ‌ তোমাদেরকে এদের হারাম হুকুম দিয়েছিলেন? কাজেই তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে যে আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা বলে? তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সঠিক জ্ঞান ছাড়াই মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ‌ এহেন জালেমদের সত্য-সঠিক পথ দেখান না।

قُل لَّاۤ اَجِدُ فِىۡ مَاۤ اُوۡحِىَ اِلَىَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَّطۡعَمُهٗۤ اِلَّاۤ اَنۡ يَّكُوۡنَ مَيۡتَةً اَوۡ دَمًا مَّسۡفُوۡحًا اَوۡ لَحۡمَ خِنۡزِيۡرٍ فَاِنَّهٗ رِجۡسٌ اَوۡ فِسۡقًا اُهِلَّ لِغَيۡرِ اللّٰهِ بِهٖ‌‌ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَيۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَاِنَّ رَبَّكَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ

১৪৫.) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলে দাও, যে ওহী আমার কাছে এসেছে তার মধ্যে তো আমি এমন কিছু পাই না যা খাওয়া কারো ওপর হারাম হতে পারে, তবে মরা, বহমান রক্ত বা শুয়োরের গোশ্‌ত ছাড়া। কারণ তা নাপাক। অথবা যদি অবৈধ হয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহ করার কারণে। তবে অক্ষম অবস্থায় যে ব্যক্তি (তার মধ্য থেকে কোন জিনিস খেয়ে নেবে) নাফরমানীর ইচ্ছা না করে এবং প্রয়োজনের সীমা না পেরিয়ে, সেক্ষেত্রে অবশ্যি তোমার রব ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।

وَعَلَى الَّذِيۡنَ هَادُوۡا حَرَّمۡنَا كُلَّ ذِىۡ ظُفُرٍ‌‌ۚ وَّمِنَ الۡبَقَرِ وَالۡغَنَمِ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ شُحُوۡمَهُمَاۤ اِلَّا مَا حَمَلَتۡ ظُهُوۡرُهُمَاۤ اَوِ الۡحَوَايَاۤ اَوۡ مَا اخۡتَلَطَ بِعَظۡمٍ‌ؕ ذٰلِكَ جَزَيۡنٰهُمۡ بِبَغۡيِهِمۡ‌‌ۖ وَاِنَّا لَصٰدِقُوۡنَ

১৪৬.) আর যারা ইহুদীবাদ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য নখরধারী প্রাণী হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগলের চর্বিও, তবে যা তাদের পিঠ, অন্ত্র বা হাড়ের সাথে লেগে থাকে তা ছাড়া। তাদের সীমালংঘনের দরুন তাদেরকে এ শাস্তিটি দিয়েছিলাম। আর এই যা কিছু আমি বলছি সবই সত্য।

فَاِنۡ كَذَّبُوۡكَ فَقُل رَّبُّكُمۡ ذُوۡ رَحۡمَةٍ وَّاسِعَةٍ‌ۚ وَّلَا يُرَدُّ بَاۡسُهٗ عَنِ الۡقَوۡمِ الۡمُجۡرِمِيۡنَ

১৪৭.) এখন তারা যদি তোমার কথা না মানে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, তোমাদের রবের অনুগ্রহ সর্বব্যাপী এবং অপরাধীদের ওপর থেকে তাঁর আযাব রদ করা যেতে পারে না। 

سَيَقُوۡلُ الَّذِيۡنَ اَشۡرَكُوۡا لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَاۤ اَشۡرَكۡنَا وَلَاۤ اٰبَآؤُنَا وَلَا حَرَّمۡنَا مِنۡ شَىۡءٍ‌ؕ كَذٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ حَتّٰى ذَاقُوۡا بَاۡسَنَا‌ؕ قُلۡ هَلۡ عِنۡدَكُمۡ مِّنۡ عِلۡمٍ فَتُخۡرِجُوۡهُ لَنَاؕ اِنۡ تَتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا تَخۡرُصُوۡنَ

১৪৮.) এ মুশরিকরা (তোমাদের এসব কথার জবাবে) নিশ্চয়ই বলবে, “যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে আমরা শিরকও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও শিরক করতো না। আর আমরা কোন জিনিসকে হারামও গণ্য করতাম না।” এ ধরনের উদ্ভট কথা তৈরী করে করে এদের পূর্ববর্তী লোকেরাও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এভাবে তারা অবশেষে আমার আযাবের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এদেরকে বলে দাও, “তোমাদের কাছে কোন জ্ঞান আছে কি? থাকলে আমার কাছে পেশ করো। তোমরা তো নিছক অনুমানের ওপর চলছো এবং শুধুমাত্র ধারণা ও আন্দাজ করা ছাড়া তোমাদের কাছে আর কিছুই নেই।”

قُلۡ فَلِلّٰهِ الۡحُجَّةُ الۡبَالِغَةُ‌ۚ فَلَوۡ شَآءَ لَهَدٰٮكُمۡ اَجۡمَعِيۡنَ‏

১৪৯.) তাহলে বলো, (তোমাদের এ যুক্তির মোকাবিলায়) প্রকৃত সত্যে উপনীত অকাট্য যুক্তি তো আল্লাহর কাছে আছে। অবশ্যি যদি আল্লাহ‌ চাইতেন তাহলে তোমাদের সবাইকে সঠিক পথ দেখাতেন।

قُلۡ هَلُمَّ شُهَدَآءَكُمُ الَّذِيۡنَ يَشۡهَدُوۡنَ اَنَّ اللّٰهَ حَرَّمَ هٰذَا‌ۚ فَاِنۡ شَهِدُوۡا فَلَا تَشۡهَدۡ مَعَهُمۡ‌‌ۚ وَلَا تَتَّبِعۡ اَهۡوَآءَ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَالَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَةِ وَهُمۡ بِرَبِّهِمۡ يَعۡدِلُوۡنَ

১৫০.) এদেরকে বলে দাও, “আনো তোমাদের সাক্ষী, যে এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহই এ জিনিসগুলো হারাম করেছেন।” তারপর যদি তারা সাক্ষ্য দিয়ে দেয় তাহলে তুমি তাদের সাথে সাক্ষ্য দিয়ো না এবং যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে, যারা আখেরাত অস্বীকারকারী এবং অন্যদেরকে নিজেদের রবের সমকক্ষ দাঁড় করায় কখ্‌খনো তাদের খেয়াল খুশী অনুযায়ী চলো না।

قُلۡ تَعَالَوۡا اَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡ‌ اَلَّا تُشۡرِكُوۡا بِهٖ شَيۡـًٔا وَّبِالۡوَالِدَيۡنِ اِحۡسَانًا‌ۚ وَّلَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَكُمۡ مِّنۡ اِمۡلَاقٍ‌ؕ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَاِيَّاهُمۡ‌ۚ وَلَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ‌ۚ وَلَا تَقۡتُلُوۡا النَّفۡسَ الَّتِىۡ حَرَّمَ اللّٰهُ اِلَّا بِالۡحَقِّ‌ؕ ذٰلِكُمۡ وَصّٰٮكُمۡ بِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ

১৫১.) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। 
(১) তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। 
(২) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।  
(৩) দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো। 
(৪) প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না। 
(৫) আল্লাহ‌ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায় সঙ্গতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না। 
তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে।

وَلَا تَقۡرَبُوۡا مَالَ الۡيَتِيۡمِ اِلَّا بِالَّتِىۡ هِىَ اَحۡسَنُ حَتّٰى يَبۡلُغَ اَشُدَّهٗ‌ۚ وَاَوۡفُوۡا الۡكَيۡلَ وَالۡمِيۡزَانَ بِالۡقِسۡطِ‌ۚ لَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا‌ۚ وَاِذَا قُلۡتُمۡ فَاعۡدِلُوۡا وَلَوۡ كَانَ ذَا قُرۡبٰى‌‌ۚ وَبِعَهۡدِ اللّٰهِ اَوۡفُوۡا‌ؕ ذٰلِكُمۡ وَصّٰٮكُمۡ بِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُوۡنَۙ

১৫২.) (৬) আর তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো। 
(৭) ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা রাখি যতটুকু তার সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে। 
(৮) যখন কথা বলো, ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারই হোক না কেন। 
(৯) আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। 
এ বিষয়গুলোর নির্দেশ আল্লাহ‌ তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহণ করবে।

وَاَنَّ هٰذَا صِرَاطِىۡ مُسۡتَقِيۡمًا فَاتَّبِعُوۡهُ‌ۚ وَلَا تَتَّبِعُوۡا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَنۡ سَبِيۡلِهٖ‌ؕ ذٰلِكُمۡ وَصّٰٮكُمۡ بِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ‏

১৫৩.)  (১০) এছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এইঃ এটিই আমার সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে।

ثُمَّ اٰتَيۡنَا مُوۡسَى الۡكِتٰبَ تَمَامًا عَلَى الَّذِىۡۤ اَحۡسَنَ وَتَفۡصِيۡلاً لِّكُلِّ شَىۡءٍ وَّهُدًى وَرَحۡمَةً لَّعَلَّهُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّهِمۡ يُؤۡمِنُوۡنَ

১৫৪.) তারপর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যা সৎকর্মশীল মানুষের প্রতি নিয়ামতের পূর্ণতা এবং প্রত্যেকটি জিনিসের বিশদ বিবরণ, সরাসরি পথ নির্দেশ ও রহমত ছিল, (এবং তা এ জন্য বনী ইসরাঈলকে দেয়া হয়েছিল যে,) সম্ভবত লোকেরা নিজেদের রবের সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান আনবে।

وَهٰذَا كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ مُبٰرَكٌ فَاتَّبِعُوۡهُ وَاتَّقُوۡا لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُوۡنَۙ

১৫৫.) আর এভাবেই এ কিতাব আমি নাযিল করেছি একটি বরকতপূর্ণ কিতাব হিসেবে। কাজেই তোমরা এর অনুসরণ করো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করো, হয়তো তোমাদের প্রতি রহম করা হবে।

اَنۡ تَقُوۡلُوۡۤا اِنَّمَاۤ اُنۡزِلَ الۡكِتٰبُ عَلٰى طَآٮِٕفَتَيۡنِ مِنۡ قَبۡلِنَا وَاِنۡ كُنَّا عَنۡ دِرَاسَتِهِمۡ لَغٰفِلِيۡنَۙ

১৫৬.) এখন তোমরা আর একথা বলতে পারো না যে, কিতাব তো দেয়া হয়েছিল আমাদের পূর্বের দু’টি দলকে এবং তারা কি পড়তো পড়াতো তাতো আমরা কিছুই জানি না।

اَوۡ تَقُوۡلُوۡا لَوۡ اَنَّاۤ اُنۡزِلَ عَلَيۡنَا الۡكِتٰبُ لَكُنَّاۤ اَهۡدٰى مِنۡهُمۡ‌ۚ فَقَدۡ جَآءَكُمۡ بَيِّنَةٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَهُدًى وَرَحۡمَةٌ‌ۚ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ كَذَّبَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ وَصَدَفَ عَنۡهَا‌ؕ سَنَجۡزِىۡ الَّذِيۡنَ يَصۡدِفُوۡنَ عَنۡ اٰيٰتِنَا سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ بِمَا كَانُوۡا يَصۡدِفُوۡنَ‏

১৫৭.) আর এখন তোমরা এ অজুহাতও দিতে পারো না যে, যদি আমাদের ওপর কিতাব নাযিল করা হতো তাহলে আমরা তাদের চাইতে বেশী সত্য পথানুসারী প্রমাণিত হতাম। তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ, পথ নির্দেশ ও রহমত এসে গেছে। এখন তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে, যে আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলে এবং তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? যারা আমার আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের এ সত্য বিমুখতার কারণে তাদেরকে আমি নিকৃষ্টতম শাস্তি দেবো।

هَلۡ يَنۡظُرُوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ تَاۡتِيَهُمُ الۡمَلٰۤٮِٕكَةُ اَوۡ يَاۡتِىَ رَبُّكَ اَوۡ يَاۡتِىَ بَعۡضُ اٰيٰتِ رَبِّكَؕ يَوۡمَ يَاۡتِىۡ بَعۡضُ اٰيٰتِ رَبِّكَ لَا يَنۡفَعُ نَفۡسًا اِيۡمَانُهَا لَمۡ تَكُنۡ اٰمَنَتۡ مِنۡ قَبۡلُ اَوۡ كَسَبَتۡ فِىۡۤ اِيۡمَانِهَا خَيۡرًا‌ؕ قُلِ انتَظِرُوۡۤا اِنَّا مُنۡتَظِرُوۡنَ

১৫৮.) লোকেরা কি এখন এ জন্য অপেক্ষা করছে যে, তাদের সামনে ফেরেশতারা এসে দাঁড়াবে অথবা তোমার রব নিজেই এসে যাবেন বা তোমার রবের কোন কোন সুস্পষ্ট নিশানী প্রকাশিত হবে? যেদিন তোমরা বিশেষ কোন নিশানী প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন এমন কোন ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে লাগবে না যে প্রথমে ঈমান আনেনি অথবা যে তার ঈমানের সাহায্যে কোন কল্যাণ অর্জন করতে পারেনি। হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলে দাও, তোমরা অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষা করছি।

اِنَّ الَّذِيۡنَ فَرَّقُوۡا دِيۡنَهُمۡ وَكَانُوۡا شِيَعًا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِىۡ شَىۡءٍ‌ؕ اِنَّمَاۤ اَمۡرُهُمۡ اِلَى اللّٰهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَفۡعَلُوۡنَ

১৫৯.) যারা নিজেদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে নিঃসন্দেহে তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর ন্যস্ত রয়েছে। তারা কি করেছে, সে কথা তিনিই তাদেরকে জানাবেন।

مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَةِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَا‌ۚ وَمَنۡ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجۡزٰٓى اِلَّا مِثۡلَهَا وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُوۡنَ‏

১৬০.) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে হাযির হবে সৎকাজ নিয়ে তার জন্য রয়েছে দশগুণ প্রতিফল আর যে ব্যক্তি অসৎকাজ নিয়ে আসবে সে ততটুকু প্রতিফল পাবে যতটুকু অপরাধ সে করেছে এবং কারোর ওপর জুলুম করা হবে না।

قُلۡ اِنَّنِىۡ هَدٰٮنِىۡ رَبِّىۡۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ ‌ۚ دِيۡنًا قِيَمًا مِّلَّةَ اِبۡرٰهِيۡمَ حَنِيۡفًا‌ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ

১৬১.) হে মুহাম্মাদ! বলো, আমার রব নিশ্চিতভাবেই আমাকে সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। একদম সঠিক নির্ভুল দ্বীন, যার মধ্যে কোন বক্রতা নেই, ইবরাহীমের পদ্ধতি, যাকে সে একাগ্রচিত্তে একমুখী হয়ে গ্রহণ করেছিল এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

قُلۡ اِنَّ صَلَاتِىۡ وَنُسُكِىۡ وَمَحۡيَاىَ وَمَمَاتِىۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَۙ

১৬২.) বলো, আমার নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীনের জন্য,

لَا شَرِيۡكَ لَهٗ‌ۚ وَبِذٰلِكَ اُمِرۡتُ وَاَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِيۡنَ

১৬৩.) যার কোন শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী।

قُلۡ اَغَيۡرَ اللّٰهِ اَبۡغِىۡ رَبًّا وَّهُوَ رَبُّ كُلِّ شَىۡءٍ‌ؕ وَلَا تَكۡسِبُ كُلُّ نَفۡسٍ اِلَّا عَلَيۡهَا‌ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰى‌ۚ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمۡ مَّرۡجِعُكُمۡ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ فِيۡهِ تَخۡتَلِفُوۡنَ

১৬৪.) বলো, আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন রবের সন্ধান করবো অথচ তিনিই সকল কিছুর মালিক?১৪৪ প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু উপার্জন করে সেজন্য সে নিজে দায়ী, কেউ কারো বোঝা বহন করবে না ১৪৫ তারপর তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে। সে সময় তোমাদের মত বিরোধের প্রকৃত স্বরূপ তিনি তোমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন।

وَهُوَ الَّذِىۡ جَعَلَكُمۡ خَلٰٓٮِٕفَ الۡاَرۡضِ وَرَفَعَ بَعۡضَكُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٍ دَرَجٰتٍ لِّيَبۡلُوَكُمۡ فِىۡ مَاۤ اٰتٰٮكُمۡ‌ؕ اِنَّ رَبَّكَ سَرِيۡعُ الۡعِقَابِ‌ۖ‌ۖ وَاِنَّهٗ لَغَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ

১৬৫.) তিনিই তোমাদের করেছেন দুনিয়ার প্রতিনিধি এবং যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন তাতে তোমাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাউকে অন্যের ওপর অধিক মর্যাদা দান করেছেন।  নিঃসন্দেহে তোমার রব শাস্তি দেবার ব্যাপারে অতি তৎপর এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

No comments:

Post a Comment