সূরা আন নামল

بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ 
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে




১.) ত্বা-সীন। এগুলো কুরআনের ও এক সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত,


২.) পথনির্দেশ ও সুসংবাদ এমন মু’মিনদের জন্য


৩.) যারা নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং তারা এমন লোক যারা আখেরাতে পুরোপুরি বিশ্বাস করে


৪.) আসলে যারা আখেরাত বিশ্বাস করে না তাদের জন্য আমি তাদের কৃতকর্মকে সুদৃশ্য করে দিয়েছি, ফলে তারা দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ায়।


৫.) এদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট শাস্তি এবং আখেরাতে এরাই হবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।


৬.) আর (হে মুহাম্মাদ!) নিঃসন্দেহে তুমি এ কুরআন লাভ করছো এক প্রাজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ থেকে।


৭.) (তাদেরকে সেই সময়ের কথা শুনাও) যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।”


৮.) সেখানে পৌঁছবার পর আওয়াজ এলো “ধন্য সেই সত্তা যে এ আগুনের মধ্যে এবং এর চারপাশে রয়েছে, পাক-পবিত্র আল্লাহ‌ সকল বিশ্ববাসীর প্রতিপালক।


৯.) হে মূসা, এ আর কিছু নয়, স্বয়ং আমি আল্লাহ, পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী


১০.) এবং তুমি তোমার লাঠিটি একটু ছুঁড়ে দাও।” যখনই মূসা দেখলো লাঠি সাপের মত মোচড় খাচ্ছে তখনই পেছন ফিরে ছুটতে লাগলো এবং পেছন দিকে ফিরেও দেখলো না। “হে মূসা! ভয় পেয়ো না, আমার সামনে রসূলরা ভয় পায় না।


১১.) তবে হ্যাঁ, যদি কেউ ভুল-ত্রুটি করে বসে। তারপর যদি সে দুষ্কৃতির পরে সুকৃতি দিয়ে (নিজের কাজ) পরিবর্তিত করে নেয় তাহলে আমি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।


১২.) আর তোমার হাতটি একটু তোমার বক্ষস্থলের মধ্যে ঢুকাও তো, তা উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। এ (দু’টি নিদর্শন) ন’টি নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ফেরাউন ও তার জাতির কাছে (নিয়ে যাবার জন্য) তারা বড়ই বদকার।”


১৩.) কিন্তু যখন আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে এসে গেলো তখন তারা বলল, এতো সুস্পষ্ট যাদু।


১৪.) তারা একেবারেই অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্যের সাথে সেই নিদর্শনগুলো অস্বীকার করলো অথচ তাদের মন মগজ সেগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। এখন এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল দেখে নাও।


১৫.) (অন্যদিকে) আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম এবং তারা বললো, সেই আল্লাহর শোকর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দার ওপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।


১৬.) আর দাউদের উত্তরাধিকারী হলো সুলাইমান এবং সে বললো, “হে লোকেরা আমাকে শেখানো হয়েছে পাখিদের ভাষা এবং আমাকে দেয়া হয়েছে সব রকমের জিনিস। অবশ্যই এ (আল্লাহর) সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।”


১৭.) সুলাইমানের জন্য জিন, মানুষ ও পাখিদের সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল এবং তাদেরকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো।


১৮.) (একবার সে তাদের সাথে চলছিল) এমন কি যখন তারা সবাই পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছুল তখন একটি পিঁপড়ে বললো, “হে পিঁপড়েরা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো। যেন এমন না হয় যে, সুলাইমান ও তাঁর সৈন্যরা তোমাদের পিশে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না।”


১৯.) সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলো এবং বললো- “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছো এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো।”


২০.) (আর একবার) সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর নিল এবং বললো, “কি ব্যাপার, আমি অমুক হুদহুদ পাখিটিকে দেখছিনা যে! সে কি কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে?


২১.) আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেবো অথবা জবাই করে ফেলবো, নয়তো তাকে আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শাতে হবে।”


২২.) কিছুক্ষণ অতিবাহিত না হতেই সে এসে বললো, “আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি যা আপনি জানেন না। আমি সাবা সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি।


২৩.) আমি সেখানে এক মহিলাকে সে জাতির শাসকরূপে দেখেছি। তাকে সব রকম সাজ সরঞ্জাম দান করা হয়েছে এবং তার সিংহাসন খুবই জমকালো।


২৪.) আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সামনে সিজদা করতে দেখেছি” শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না।


২৫.) (শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করেছে এজন্য) যাতে তারা সেই আল্লাহকে সিজদা না করে যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন জিনিসসমূহ বের করেন এবং সেসব কিছু জানেন যা তোমরা গোপন করো ও প্রকাশ করো।


২৬.) আল্লাহ, ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের হকদার নয় তিনি মহান আরশের মালিক।


২৭.) সুলাইমান বললোঃ “এখনই আমি দেখছি তুমি সত্য বলছো অথবা মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।


২৮.) আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং এটি তাদের প্রতি নিক্ষেপ করো, তারপর সরে থেকে দেখো তাদের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয়।”


২৯.) রাণী বললো, “হে দরবারীরা! আমার প্রতি একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ পত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।


৩০.) তা সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ রহমানুর রহীমের নামে শুরু করা হয়েছে।”


৩১.) বিষয়বস্তু হচ্ছেঃ “আমার অবাধ্য হয়ো না এবং মুসলিম হয়ে আমার কাছে হাজির হয়ে যাও।”


৩২.) (পত্র শুনিয়ে) রাণী বললো, “হে জাতীয় নেতৃবৃন্দ! আমার উদ্ভূত সমস্যায় তোমরা পরামর্শ দাও। তোমাদের বাদ দিয়ে তো আমি কোন বিষয়ের ফায়সালা করি না।”


৩৩.) তারা জবাব দিল, “আমরা শক্তিশালী ও যোদ্ধা জাতি, তবে সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, আপনি নিজেই ভেবে দেখুন আপনার কি আদেশ দেয়া উচিত।


৩৪.) রাণী বললো, কোন বাদশাহ যখন কোন দেশে ঢুকে পড়ে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার মর্যাদাশালীদের লাঞ্ছিত করে এ রকম কাজ করাই তাদের রীতি।


৩৫.) আমি তাদের কাছে একটি উপঢৌকন পাঠাচ্ছি তারপর দেখছি আমার দূত কি জবাব নিয়ে ফেরে।”


৩৬.) যখন সে (রাণীর দূত) সুলইমানের কাছে পৌঁছলো, সে বললো, তোমরা কি অর্থ দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ‌ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশী। তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে তোমরাই খুশি থাকো।


৩৭.) (হে দূত!) ফিরে যাও নিজের প্রেরণকারীদের কাছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন সেনাদল নিয়ে আসবো যাদের তারা মোকাবিলা করতে পারবে না এবং আমি তাদেরকে এমন লাঞ্ছিত করে সেখান থেকে বিতাড়িত করবো যে, তারা ধিকৃত ও অপমানিত হবে।”


৩৮.) সুলাইমান বললো, “হে সভাসদগণ! তারা অনুগত হয়ে আমার কাছে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারে?”


৩৯.) এক বিশালকায় জিন বললো, আপনি নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেবো। আমি এ শক্তি রাখি এবং আমি বিশ্বস্ত।


৪০.) কিতাবের জ্ঞান সম্পন্ন অপর ব্যক্তি বললো “আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই আপনাকে তা এনে দিচ্ছি।” যখনই সুলাইমান সেই সিংহাসন নিজের কাছে রক্ষিত দেখতে পেলো, অমনি সে চিৎকার করে উঠলো, এ আমার রবের অনুগ্রহ, আমি শোকরগুযারী করি না নাশোকরী করি, তা তিনি পরীক্ষা করতে চান।” আর যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী। অন্যথায় কেউ অকৃতজ্ঞ হলে, আমার রব কারো ধার ধারেন না এবং আপন সত্তায় আপনি মহীয়ান।


৪১.) সুলাইমান বললো, “সে চিনতে না পারে এমনভাবে সিংহাসনটি তার সামনে রেখে দাও, দেখি সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় কিনা অথবা যারা সঠিক পথ পায় না তাদের অর্ন্তভুক্ত হয়।”


৪২.) রাণী যখন হাজির হলো, তাকে বলা হলো তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলতে লাগলো, “এ তো যেন সেটিই। আমরা তো আগেই জেনেছিলাম এবং আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছিলাম। (অথবা আমরা মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম। ) ”


৪৩.) আল্লাহর পরিবর্তে যেসব উপাস্যের সে পূজা করতো তাদের পূজাই তাকে ঈমান আনা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। কারণ সে ছিল একটি কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত।


৪৪.) তাকে বলা হলো, প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করো। যেই সে দেখলো মনে করলো বুঝি কোন জলাধার এবং নামার জন্য নিজের পায়ের নিম্নাংশের বস্ত্র উঠিয়ে নিল। সুলাইমান বললো, এতো কাঁচের মসৃণ মেঝে। এ কথায় সে বলে উঠলো “হে আমার রব! (আজ পর্যন্ত) আমি নিজের ওপর বড়ই জুলুম করে এসেছি এবং এখন আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আনুগত্য গ্রহণ করছি।”


৪৫.) আর আমি সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে (এ পয়গাম সহকারে) পাঠালাম যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এমন সময় সহসা তারা দু’টি বিবদমান দলে বিভক্ত হয়ে গেলো।


৪৬.) সালেহ বললো “হে আমার জাতির লোকেরা! ভালোর পূর্বে তোমরা মন্দকে ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছো কেন? আল্লাহর কাছে মাগফেরাত চাচ্ছো না কেন? হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা যেতে পারে।”


৪৭.) তারা বললো “আমরা তো তোমাদেরকে ও তোমার সাথীদেরকে অমঙ্গলের নিদর্শন হিসেবে পেয়েছি।” সালেহ জবাব দিল, “তোমাদের মঙ্গল অমঙ্গলের উৎস তো আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ, আসলে তোমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।”


৪৮.) সে শহরে ছিল ন’জন দল নায়ক যারা দেশের বিপর্যয় সৃষ্টি করতো এবং কোন গঠনমূলক কাজ করতো না।


৪৯.) তারা পরস্পর বললো “আল্লাহর কসম খেয়ে শপথ করে নাও, আমরা সালেহ ও তার পরিবার পরিজনদের উপর নৈশ আক্রমণ চালাবো এবং তারপর তার অভিভাবককে বলে দেবো আমরা তার পরিবারের ধ্বংসের সময় উপস্থিত ছিলাম না, আমরা একদম সত্য কথা বলছি।”


৫০.) এ চক্রান্ত তো তারা করলো এবং তারপর আমি একটি কৌশল অবলম্বন করলাম, যার কোন খবর তারা রাখতো না।


৫১.) অবশেষে তাদের চক্রান্তের পরিণাম কি হলো দেখে নাও। আমি তাদেরকে এবং তাদের সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করে দিলাম।


৫২.) ঐ যে তাদের গৃহ তাদের জুলুমের কারণে শূন্য পড়ে আছে, তার মধ্যে রয়েছে একটি শিক্ষণীয় নিদর্শন যারা জ্ঞানবান তাদের জন্য।


৫৩.) আর যারা ঈমান এনেছিল এবং নাফরমানী থেকে দূরে অবস্থান করতো তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি।


৫৪.) আর লূতকে আমি পাঠালাম। স্মরণ করো তখনকার কথা যখন সে তার জাতিকে বলল “তোমরা জেনে বুঝে বদকাম করছো?


৫৫.) তোমাদের কি এটাই রীতি, কাম-তৃপ্তির জন্য তোমরা মেয়েদের বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে যাও? আসলে তোমরা ভয়ানক মূর্খতায় লিপ্ত হয়েছো।”


৫৬.) কিন্তু সে জাতির এছাড়া আর কোন জবাব ছিল না যে, তারা বলল “লূতের পরিবারবর্গকে তাদের নিজেদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা বড় পাক-পবিত্র সাজতে চাচ্ছে।”


৫৭.) শেষ পর্যন্ত আমরা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারবর্গকে বাঁচিয়ে নিলাম তবে তাঁর স্ত্রীকে নয়। কারণ তার পেছনে থেকে যাওয়াটাই আমি স্থির করে দিয়েছিলাম।


৫৮.) আর বর্ষণ করলাম তাদের উপর একটি বৃষ্টি, বড়ই নিকৃষ্ট ছিল সেই বৃষ্টি যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের জন্য।


৫৯.) (হে নবী!) বলো, প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাম তার এমন সব বান্দাদের প্রতি যাদেরকে তিনি নির্বাচিত করেছেন। (তাদেরকে জিজ্ঞাস কর) আল্লাহ‌ ভাল অথবা সেই সব মাবুদরা ভাল যাদেরকে তারা তার শরিক করেছে?


৬০.) কে তিনি যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন তারপর তার সাহায্যে সুদৃশ্য বাগান উৎপাদন করেছেন, যার গাছপালা উৎপন্ন করাও তোমাদের আয়াত্বধীন ছিল না? আল্লাহর সাথে কি (এসব কাজে অংশীদার) অন্য ইলাহও আছে? (না, ) বরং এরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে এগিয়ে চলছে।


৬১.) আর তিনি কে, যিনি পৃথিবীকে করেছেন অবস্থানলাভের উপযোগী এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদ নদী এবং তার মধ্যেই গড়ে দিয়েছেন (পর্বত মালার) পেরেক, আর পানির দুটি ভান্ডারের মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আল্লাহর সাথে (এসব কাজের শরিক) অন্য কোন ইলাহ আছে কি? না, বরং এদের অধিকাংশই অজ্ঞ।


৬২.) কে তিনি যিনি আর্তের ডাক শোনেন যখন সে তাঁকে ডাকে কাতরভাবে এবং কে তার দুঃখ দূর করেন? আর (কে) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন? আল্লাহর সাথে কি আর কোন ইলাহও কি (এ কাজ করছে)? তোমরা সামান্যই চিন্তা করে থাকো।


৬৩.) আর কে জল-স্থলের অন্ধকারে তোমাদের পথ দেখান এবং কে নিজের অনুগ্রহের পূর্বাহ্নে বাতাস কে সুসংবাদ দিয়ে পাঠান? আল্লাহর সাথে কি অন্য ইলাহও (একাজ করে)? আল্লাহ‌ অনেক উর্ধ্বে এ শিরক থেকে যা এরা করে।


৬৪.) আর তিনি কে যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তারপর আবার এর পূনরাবৃত্তি করেন? আর কে তোমাদের জীবিকা দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহও কি (একাজে অংশীদার) আছে? বলো, আনো তোমাদের যুক্তি, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।


৬৫.) তাদেরকে বলো, আল্লাহ‌ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না। এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে।


৬৬.) বরং আখেরাতের জ্ঞানই তাদের থেকে হারিয়ে গেছে। উপরন্তু তারা সে ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। আসলে তারা সে ব্যাপারে অন্ধ।


৬৭.) এ অস্বীকারকারীরা বলে থাকে “যখন আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা মাটি হয়ে যাবো তখন আমাদের সত্যিই কবর থেকে বের করা হবে নাকি?


৬৮.) এ খবর আমাদেরও অনেক দেয়া হয়েছে এবং ইতিপূর্বে আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও অনেক দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এসব নিছক কল্প-কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আগের জামানা থেকে শুনে আসছি।”


৬৯.) বলো, পৃথিবী পরিভ্রমন করে দেখো অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে।


৭০.) হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুন্নও হয়ো না।


৭১.) ---তারা বলে, “যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে এ হুমকি কবে সত্য হবে?”


৭২.) বলো বিচিত্র কি যে, আযাবের ব্যাপারে তোমরা ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছো তার একটি অংশ তোমাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে।


৭৩.) আসলে তোমার রব তো মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহকারী কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি করে না।


৭৪.) নিঃসন্দেহে তোমার রব ভালোভাবেই জানেন যা কিছু তাদের অন্তর নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে এবং যা কিছু তারা প্রকাশ করে।


৭৫.) আকাশ ও পৃথিবীর এমন কোন গোপন জিনিস নেই যা একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আকারে নেই।


৭৬.) যথার্থই এ কোরআন বনী ইসরাঈলকে বেশির ভাগ এমন সব কথার স্বরূপ বর্ণনা করে যেগুলোতে তারা মতভেদ করে।


৭৭.) আর এ হচ্ছে পথ নির্দেশনা ও রহমত মু’মিনদের জন্য।


৭৮.) নিশ্চয়ই (এভাবে) তোমার রব তাদের মধ্যেও নিজের হুকুমের মাধ্যমে ফায়সালা করে দেবেন, তিনি পরাক্রমশালী ও সবকিছু জানেন।


৭৯.) কাজেই হে নবী! আল্লাহর উপর ভরসা করো, নিশ্চয়ই তুমি সুস্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছো।


৮০.) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না। যেসব বধির পেছন ফিরে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে নিজের আহবান পৌঁছাতে পারো না


৮১.) এবং অন্ধদেরকে পথ বাতলে দিয়ে বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারো না। তুমি তো নিজের কথা তাদেরকে শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং তারপর অনুগত হয়ে যায়।


৮২.) আর যখন আমার কথা সত্য হবার সময় তাদের কাছে এসে যাবে তখন আমি তাদের জন্য মৃত্তিকা গর্ভ থেকে একটি জীব বের করবো। সে তাদের সাথে কথা বলবে যে, লোকেরা আমাদের আয়াত বিশ্বাস করতো না।


৮৩.) আর সেদিনের কথা একবার চিন্তা করো, যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে এমন সব লোকদের এক একটি দলকে ঘেরাও করে আনবো যারা আমার আয়াত অস্বীকার করতো। তারপর তাদেরকে (তাদের শ্রেণী অনুসারে স্তরে স্তরে) বিন্যস্ত করা হবে।


৮৪.) অবশেষে যখন সবাই এসে যাবে তখন (তাদের রব তাদেরকে) জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা আমার আয়াত অস্বীকার করেছো অথচ তোমরা জ্ঞানগতভাবে তা আয়ত্ত করো নি? যদি এ না হয়ে থাকে তাহলে তোমরা আর কি করেছিলে।”


৮৫.) আর তাদের জুলুমের কারণে আযাবের প্রতিশ্রুতি তাদের ওপর পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন তারা কিছুই বলতে পারবে না।


৮৬.) তারা কি অনুধাবন করতে পারেনি, আমি তাদের প্রশান্তি অর্জন করার জন্য রাত তৈরী করেছিলাম এবং দিনকে উজ্জ্বল করেছিলাম? এরই মধ্যে ছিল অনেকগুলি নিদর্শন যারা ঈমান আনতো তাদের জন্য।


৮৭.) আর কি হবে সেদিন যেদিন সিংঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ‌ এ ভীতি-বিহবলতা থেকে রক্ষা করতে চাইবেন আর সবাই তাঁর সামনে হাজির হবে কান চেপে ধরে।


৮৮.) আজ তুমি দেখছো পাহাড়গুলোকে এবং মনে করছো ভালই জমাটবদ্ধ হয়ে আছে, কিন্তু সে সময় এগুলো মেঘের মতো উড়তে থাকবে। এ হবে আল্লাহর কুদরতের মূর্ত প্রকাশ, যিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে বিজ্ঞতা সহকারে সুসংঙ্গবদ্ধ করেছেন? তিনি ভালোভাবেই জানেন তোমরা কি করছো।


৮৯.) যে ব্যক্তি সৎকাজ নিয়ে আসবে সে তার চেয়ে বেশী ভালো প্রতিদান পাবে এবং এ ধরণের লোকেরা সেদিনের ভীতি-বিহবলতা থেকে নিরাপদ থাকবে।


৯০.) আর যারা অসৎকাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা কি যেমন কর্ম তেমন ফল ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান পেতে পারো?


৯১.) (“হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো) আমাকে তো হুকুম দেয়া হয়েছে, আমি এ শহরের রবের বন্দেগী করবো, যিনি একে হারামে পরিণত করেছেন এবং যিনি সব জিনিসের মালিক। আমাকে মুসলিম হয়ে থাকার


৯২.) এবং এ কুরআন পড়ে শুনাবার হুকুম দেয়া হয়েছে।” এখন যে হেদায়াত অবলম্বন করবে সে নিজেরই ভালোর জন্য হেদায়েত অলম্বন করবে এবং যে গোমরাহ হবে তাকে বলে দাও, আমি তো কেবলমাত্র একজন লোকজন সতর্ককারী।


৯৩.) তাদেরকে বলো, প্রসংশা আল্লাহরই জন্য, শিগগির তিনি তোমাদেরকে তাঁর নির্দশনাবলী দেখিয়ে দেবেন এবং তোমরা তা চিনে নেবে। আর তোমরা যেসব কাজ করো তা থেকে তোমার রব বেখবর নন।

No comments:

Post a Comment