সূরা আশ্-শু’আরা

بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ 

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে




১.) তা-সীন-মীম।


২.) এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।


৩.) হে মুহাম্মাদ! এ লোকেরা ঈমান আনছে না বলে তুমি যেন দুঃখে নিজের প্রাণ বিনষ্ট করে দিতে বসেছ।


৪.) আমি চাইলে আকাশ থেকে এমন নিদর্শন অবতীর্ণ করতে পারতাম যার ফলে তাদের ঘাড় তার সামনে নত হয়ে যেতো।


৫.) তাদের কাছে দয়াময়ের পক্ষ থেকে যে নতুন নসীহতই আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।


৬.) এখন যখন তারা মিথ্যা আরোপ করেছে, তখন তারা যে জিনিসের প্রতি বিদ্রূপ করে চলেছে, অচিরেই তার প্রকৃত স্বরূপ (বিভিন্ন পদ্ধতিতে) তারা অবগত হবে।


৭.) আর তারা কি কখনো পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি? আমি কত রকমের কত বিপুল পরিমাণ উৎকৃষ্ট উদ্ভিদ তার মধ্যে সৃষ্টি করেছি?


৮.) নিশ্চয়ই তার মধ্যে একটি নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মু’মিন নয়।


৯.) আর যথার্থই তোমার রব পরাক্রান্ত এবং অনুগ্রহশীলও।


১০.) তাদেরকে সে সময়ের কথা শুনাও যখন তোমার রব মূসাকে ডেকে বলেছিলেন, “জালেম সম্প্রদায়ের কাছে যাও-


১১.) ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কাছে  তারা কি ভয় করে না?”


১২.) সে বললো, “হে আমার রব! আমার ভয় হয় তারা আমাকে মিথ্যা বলবে,


১৩.) আমার বক্ষ সংকুচিত হচ্ছে এবং আমার জিহ্বা সঞ্চালিত হচ্ছে না। আপনি হারুনের প্রতি রিসালাত পাঠান।


১৪.) আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের একটি অভিযোগও আছে। তাই আমার আশঙ্কা হয় তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে।”


১৫.) আল্লাহ্ বললেন, “কখখনো না, তোমরা দু’জন যাও আমার নিদর্শনগুলো নিয়ে, আমি তোমাদের সাথে সবকিছু শুনতে থাকবো।


১৬.) ফেরাউনের কাছে যাও এবং তাকে বলো, রব্বুল আলামীন আমাদের পাঠিয়েছেন,


১৭.) যাতে তুমি বনী ইসরাঈলকে আমাদের সাথে পাঠিয়ে দাও সে জন্য।”


১৮.) ফেরাউন বললো, “আমরা কি তোমাকে আমাদের এখানে প্রতিপালন করিনি যখন ছোট্ট শিশুটি ছিলে? বেশ ক’টি বছর আমাদের এখানে কাটিয়েছো,


১৯.) এবং তারপর তুমি যে কর্মটি করেছ তাতো করেছোই; তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ।”


২০.) মূসা জবাব দিল, “সে সময় অজ্ঞতার মধ্যে আমি সে কাজ করেছিলাম।


২১.) তারপর তোমাদের ভয়ে আমি পালিয়ে গেলাম। এরপর আমার রব আমাকে “হুকুম” দান করলেন এবং আমাকে রসূলদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।


২২.) আর তোমার অনুগ্রহের কথা যা তুমি আমার প্রতি দেখিয়েছো, তার আসল কথা হচ্ছে এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করেছিলে।” 


২৩.) ফেরাউন বললো, “রব্বুল আলামীন আবার কে?”


২৪.) মূসা জবাব দিল, “আকাশসমূহ ও পৃথিবীর রব এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে যা কিছু আছে তাদেরও রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস স্থাপনকারী হও।”


২৫.) ফেরাউন তার আশপাশের লোকদের বললো, “তোমরা শুনছো তো?”


২৬.) মূসা বললো, “তোমাদেরও রব এবং তোমাদের বাপ-দাদাদেরও রব যারা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।”


২৭.) ফেরাউন (উপস্থিত লোকদের) বললো, “তোমাদের কাছে প্রেরিত তোমাদের এ রসূল সাহেবটি তো দেখছি একেবারেই পাগল।”


২৮.) মূসা বললো, “পূর্ব ও পশ্চিম এবং যা কিছু তার মাঝখানে আছে সবার রব, যদি তোমরা কিছু বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী হতে।”


২৯.) ফেরাউন বললো, “যদি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে মেনে নাও, তাহলে কারাগারে যারা পচে মরছে তোমাকেও তাদের দলে ভিড়িয়ে দেবো।”


৩০.) মূসা বললো, “আমি যদি তোমার সামনে একটি সুস্পষ্ট জিনিস আনি তবুও?"


৩১.) ফেরাউন বললো, “বেশ তুমি আনো যদি তুমি সত্যবাদী হও।”


৩২.) (তার মুখ থেকে একথা বের হতেই) মূসা নিজের লাঠিটি ছুঁড়ে মারলো। তৎক্ষনাৎ সেটি হলো একটি সাক্ষাত অজগর।


৩৩.) তারপর সে নিজের হাত (বগলের ভেতর থেকে) টেনে বের করলো এবং তা সকল প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে চকমক্ করছিল।


৩৪.) ফেরাউন তার চারপাশে উপস্থিত সরদারদেরকে বললো, “এ ব্যক্তি নিশ্চয়ই একজন দক্ষ যাদুকর।


৩৫.) নিজের যাদুর জোরে সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এখন বলো তোমরা কী হুকুম দিচ্ছো?”


৩৬.) তারা বললো, “তাঁকে ও তাঁর ভাইকে আটক করো এবং শহরে শহরে হরকরা পাঠাও।


৩৭.) তারা প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে তোমার কাছে নিয়ে আসুক।”


৩৮.) তাই একদিন নির্দিষ্ট সময়ে যাদুকরদেরকে একত্র করা হলো।


৩৯.) এবং লোকদেরকে বলা হলো, “তোমরাও কি সমাবেশে যাবে?


৪০.) হয়তো আমরা যাদুকরদের ধর্মের অনুসরণের ওপরই বহাল থাকবো, যদি তারা বিজয়ী হয়।”


৪১.) যখন যাদুকররা ময়দানে এলো, তারা ফেরাউনকে বললো, “আমরা কি পুরস্কার পাবো, যদি আমরা বিজয়ী হই?”


৪২.) সে বললো, “হ্যাঁ,, আর তোমরা তো সে সময় নিকটবর্তীদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে।”


৪৩.) মূসা বললো, “তোমাদের যা নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ কর।”


৪৪.) তারা তখনই নিজেদের দড়িদড়া ও লাঠিসোঁটা নিক্ষেপ করলো এবং বললো, “ফেরাউনের ইজ্জতের কসম, আমরাই বিজয়ী হবো।”


৪৫.) তারপর মূসা নিজের লাঠিটি নিক্ষেপ করলো। অকস্মাত সে তাদের কৃত্রিম কীর্তিগুলো গ্রাস করতে থাকলো।


৪৬.) তখন সকল যাদুকর স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিজদাবনত হয়ে পড়লো


৪৭.) এবং বলে উঠলো, “মেনে নিলাম আমরা রব্বুল আলামীনকে


৪৮.) মূসা ও হারুনের রবকে।”


৪৯.) ফেরাউন বললো, “তোমরা মূসার কথা মেনে নিলে আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই! নিশ্চয়ই এ তোমাদের প্রধান, যে তোমাদের যাদু শিখিয়েছে। বেশ, এখনই তোমরা জানবে। আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কর্তন করাবো এবং তোমাদের সবাইকে শূলবিদ্ধ করবো।”


৫০.) তারা বলল, “কোন পরোয়া নেই, আমরা নিজেদের রবের কাছে পৌঁছে যাবো।


৫১.) আর আমরা আশা করি আমাদের রব আমাদের গোনাহ্ মাফ করে দেবেন, কেননা, সবার আগে আমরা ঈমান এনেছি।”


৫২.) আমি মূসার কাছে ওহী পাঠিয়েছি এই মর্মেঃ “রাতারাতি আমার বান্দাদের নিয়ে বের হয়ে যাও, তোমাদের পিছু নেয়া হবে।”


৫৩.) এর ফলে ফেরাউন (সৈন্য একত্র করার জন্য) নগরে নগরে নকীব পাঠালো (এবং বলে পাঠালোঃ)


৫৪.) এরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক,


৫৫.) এরা আমাদের নারাজ করেছে


৫৬.) এবং আমরা একটি দল, সদা-সতর্ক থাকাই আমাদের রীতি।”


৫৭.) এভাবে আমি তাদেরকে বের করে এনেছি তাদের বাগ-বাগীচা, নদী-নির্ঝরিনী,


৫৮.) ধন-ভাণ্ডার ও সুরম্য আবাসগৃহসমূহ থেকে।


৫৯.) এসব ঘটেছে তাদের সাথে আর (অন্যদিকে) আমি বনী ইসরাঈলকে ঐ সব জিনিসের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছি।


৬০.) সকাল হতেই তারা এদের পিছু নিয়ে বের হয়ে পড়লো।


৬১.) দু’দল যখন পরস্পরকে দেখতে পেলো তখন মূসার সাথীরা চিৎকার করে উঠলো, “আমরা তো পাকড়াও হয়ে গেলাম।”


৬২.) মূসা বললো, “কখখনো না, আমার সাথে আছেন আমার রব, তিনি নিশ্চয়ই আমাকে পথ দেখাবেন।”


৬৩.) আমি মূসাকে ওহীর মাধ্যমে হুকুম দিলাম, “মারো তোমার লাঠি সাগরের বুকে।” সহসাই সাগর দীর্ণ হয়ে গেলো এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা হয়ে গেলো এক একটি বিশাল পাহাড়ের মতো।


৬৪.) এ জায়গায়ই আমি দ্বিতীয় দলটিকেও নিকটে আনলাম। 


৬৫.) মূসা ও তাঁর সমস্ত লোককে যারা তার সঙ্গে ছিল আমি উদ্ধার করলাম


৬৬.) এবং অন্যদেরকে ডুবিয়ে দিলাম।


৬৭.) এ ঘটনার মধ্যে আছে একটি নিদর্শন। কিন্তু এদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়।


৬৮.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালীও আবার দয়াময়ও।


৬৯.) আর তাদেরকে ইবরাহীমের কাহিনী শুনিয়ে দাও,


৭০.) যখন সে তার বাপ ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমরা কিসের পূজা করো?”


৭১.) তারা বললো, “আমরা কতিপয় মূর্তির পূজা করি এবং তাদের সেবায় আমরা নিমগ্ন থাকি।”


৭২.) সে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা যখন তাদেরকে ডাকো তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে?


৭৩.) অথবা তোমাদের কি কিছু উপকার বা ক্ষতি করে?”


৭৪.) তারা জবাব দিল, “না, বরং আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমনটিই করতে দেখেছি।”


৭৫.) এ কথায় ইবরাহীম বললো, “কখনো কি তোমরা (চোখ মেলে)


৭৬.) সেই জিনিসগুলো দেখেছো যাদের বন্দেগী তোমরা এবং তোমাদের অতীত পূর্বপুরুষেরা করতে অভ্যস্ত?


৭৭.) এরা তো সবাই আমার দুশমন একমাত্র রব্বুল আলামীন ছাড়া,


৭৮.) যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনিই আমাকে পথ দেখিয়েছেন।


৭৯.) তিনি আমাকে খাওয়ান ও পান করান


৮০.) এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন।


৮১.) তিনি আমাকে মৃত্যু দান করবেন এবং পুনর্বার আমাকে জীবন দান করবেন।


৮২.) তাঁর কাছে আমি আশা করি, প্রতিদান দিবসে তিনি আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন।”


৮৩.) (এরপর ইবরাহীম দোয়া করলোঃ) “হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করো এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে শামিল করো।


৮৪.) আর পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আমার সত্যিকার খ্যাতি ছড়িয়ে দিও


৮৫.) এবং আমাকে নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো।


৮৬.) আর আমার বাপকে মাফ করে দিও, নিঃসন্দেহে তিনি পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত ছিলেন


৮৭.) এবং সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না যেদিন সবাইকে জীবিত করে উঠানো হবে,


৮৮.) যেদিন অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে লাগবে না,


৮৯.) তবে যে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে।”


৯০.) (সেদিন) জান্নাত মুত্তাকীদের কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে


৯১.) এবং জাহান্নাম পথভ্রষ্টদের সামনে খুলে দেয়া হবে। 


৯২.) আর তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ইবাদাত করতে তারা এখন কোথায়?


৯৩.) তারা কি এখন তোমাদের কিছু সাহায্য করছে অথবা আত্মরক্ষা করতে পারে?”


৯৪.) তারপর সেই উপাস্যদেরকে এবং


৯৫.) এই পথভ্রষ্টদেরকে আর ইবলীসের বাহিনীর সবাইকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে।


৯৬.) সেখানে এরা সবাই পরস্পর ঝগড়া করবে এবং পথভ্রষ্টরা (নিজেদের উপাস্যদেরকে) বলবে,


৯৭.) “আল্লাহর কসম আমরা তো স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে ছিলাম,


৯৮.) যখন তোমাদের দিচ্ছিলাম রব্বুল আলামীনের সমকক্ষের মর্যাদা।


৯৯.) আর এ অপরাধীরাই আমাদেরকে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করেছে।


১০০.) এখন আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই


১০১.) এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই।


১০২.) হায় যদি আমাদের আবার একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ মিলতো, তাহলে আমরা মু’মিন হয়ে যেতাম।”


১০৩.) নিঃসন্দেহে এর মধ্যে একটি বড় নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু এদের অধিকাংশ মুমিন নয়।


১০৪.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালীও এবং করুণাময়ও।


১০৫.) নূহের সম্প্রদায় রসূলদেরকে মিথ্যুক বললো।


১০৬.) স্মরণ কর যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিল, “তোমরা কি ভয় কর না?


১০৭.) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।


১০৮.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১০৯.) এ কাজে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই। আমাকে প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।


১১০.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং (নির্দ্বিধায়) আমার আনুগত্য করো।”


১১১.) তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?”


১১২.) নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো।


১১৩.) তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ।


১১৪.) হায়! যদি তোমরা একটু সচেতন হতে। যে ঈমান আনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।


১১৫.) আমি তো মূলত একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।


১১৬.) তারা বললো, “হে নূহ! যদি তুমি বিরত না হও, তাহলে তুমি অবশ্যই বিপর্যস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।”


১১৭.) নূহ দোয়া করলো, “হে আমার রব! আমার জাতি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে।


১১৮.) এখন আমার ও তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ফায়সালা করে দাও এবং আমার সাথে যেসব মু’মিন আছে তাদেরকে রক্ষা করো।”


১১৯.) শেষ পর্যন্ত আমি একটি বোঝাই করা নৌযানে তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম,


১২০.) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে ডুবিয়ে দিলাম।


১২১.) নিশ্চিতভাবে এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়।


১২২.) আর আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমার রব পরাক্রমশালী এবং করুণাময়ও।


১২৩.) আদ জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো।


১২৪.) স্মরণ করো যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বলেছিলো, “তোমরা ভয় করছো না?


১২৫.) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।


১২৬.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১২৭.) আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।


১২৮.) তোমাদের এ কী অবস্থা, প্রত্যেক উঁচু জায়গায় অনর্থক একটি ইমারত বানিয়ে ফেলছো


১২৯.) এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছো, যেন তোমরা চিরকাল থাকবে?


১৩০.) আর যখন কারো ওপর হাত ওঠাও প্রবল একনায়ক হয়ে হাত ওঠাও।


১৩১.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১৩২.) তাঁকে ভয় করো যিনি এমন কিছু তোমাদের দিয়েছেন যা তোমরা জানো।


১৩৩.) তোমাদের দিয়েছেন পশু,


১৩৪.) সন্তান-সন্ততি, উদ্যান ও পানির প্রস্রবনসমূহ।


১৩৫.) আমি ভয় করছি তোমাদের ওপর একটি বড় দিনের আযাবের।”


১৩৬.) তারা জবাব দিল, “তুমি উপদেশ দাও বা না দাও, আমাদের জন্য এ সবই সমান।


১৩৭.) এ ব্যাপারগুলো তো এমনিই ঘটে চলে আসছে


 
১৩৮.) এবং আমরা আযাবের শিকার হবো না।”


১৩৯.) শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম।নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে আছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মেনে নেয়নি।


১৪০.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব যেমন পরাক্রমশালী তেমন করুণাময়ও।


১৪১.) সামূদ জাতি রসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো।


১৪২.) স্মরণ করো যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বললোঃ “তোমরা কি ভয় করো না?


১৪৩.) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল। 


১৪৪.) কাজেই তোমার আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১৪৫.) এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।


১৪৬.) এখানে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর মাঝখানে কি তোমাদের এমনিই নিশ্চিন্তে থাকতে দেয়া হবে?


১৪৭.) এসব উদ্যান ও প্রস্রবনের মধ্যে?


১৪৮.) এসব শস্যক্ষেত ও রসালো গুচ্ছ বিশিষ্ট খেজুর বাগানের মধ্যে?


১৪৯.) তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।


১৫০.) আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১৫১.) যেসব লাগামহীন লোক পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে


১৫২.) এবং কোন সংস্কার সাধন করে না তাদের আনুগত্য করো না।”


১৫৩.) তারা জবাব দিল, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।


১৫৪.) তুমি আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কি? কোন নিদর্শন আনো, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো।”


১৫৫.) সালেহ বললো, “এ উটনীটি রইলো। এর পানি পান করার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট এবং তোমাদের সবার পানি পান করার জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট রইলো।


১৫৬.) একে কখনো পীড়ন করো না, অন্যথায় একটি মহাদিবসের আযাব তোমাদের উপর আপতিত হবে।”


১৫৭.) তারা তার পায়ের গিঁঠের রগ কেটে দিল এবং শেষে অনুতপ্ত হতে থাকলো।


১৫৮.) আযাব তাদেরকে গ্রাস করলো। নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মান্যকারী নয়।


১৫৯.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব হচ্ছেন পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও।


১৬০.) লূতের জাতি রসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো।


১৬১.) স্মরন করো যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি ভয় করো না?


১৬২.) আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল।


১৬৩.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১৬৪.) এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।


১৬৫.) তোমরা কি গোটা দুনিয়ার মধ্যে পুরুষদের কাছে যাও


১৬৬.) এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে তোমাদের রব তোমাদের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা পরিহার করে থাকো? বরং তোমরা তো সীমা-ই অতিক্রম করে গেছো।”


১৬৭.) তারা বললো, “হে লূত! যদি তুমি এসব কথা থেকে বিরত না হও, তাহলে আমাদের জনপদগুলো থেকে যেসব লোককে বের করে দেয়া হয়েছে তুমিও নির্ঘাত তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।”


১৬৮.) সে বললো, “তোমাদের এসব কৃতকর্মের জন্য যারা দুঃখবোধ করে আমি তাদের অন্তর্ভূক্ত।


১৬৯.) হে আমার রব! আমাকে ও আমার পরিবার-পরিজনকে এদের কুকর্ম থেকে মুক্তি দাও।”


১৭০.) শেষে আমি তাঁকে ও তাঁর সমস্ত পরিবার পরিজনকে রক্ষা করলাম,


১৭১.) এক বৃদ্ধ ছাড়া, যে পেছনে অবস্থানকারীদের দলভূক্ত ছিল।


১৭২.) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম


১৭৩.) এবং তাদের ওপর বর্ষণ করলাম একটি বৃষ্টিধারা, যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের ওপর বর্ষিত এ বৃষ্টি ছিল বড়ই নিকৃষ্ট।


১৭৪.) নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই মান্যকারী নয়।


১৭৫.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং করুণাময়ও।


১৭৬.) আইকাবাসীরা রসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো।


১৭৭.) যখন শো’আইব তাদেরকে বলেছিল, “তোমরা কি ভয় করো না?


১৭৮.) আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।


১৭৯.) কাজেই তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।


১৮০.) আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।


১৮১.) তোমরা মাপ পূর্ণ করে দাও এবং কাউকে কম দিয়ো না।


১৮২.) সঠিক পাল্লায় ওজন করো


১৮৩.) এবং লোকদেরকে তাদের জিনিস কম দিয়ো না। যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে বেড়িও না


১৮৪.) এবং সেই সত্ত্বাকে ভয় করো যিনি তোমাদের ও অতীতের প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছেন।”


১৮৫.) তারা বললো, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি


১৮৬.) এবং তুমি আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও। আর আমরা তো তোমাকে একেবারেই মিথ্যুক মনে করি।


১৮৭.) যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে আকাশের একটি টুকরো ভেঙ্গে আমাদের ওপর ফেলে দাও।”


১৮৮.) শো’আইব বললো, আমার রব জানেন তোমরা যা কিছু করছো।”


১৮৯.) তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো। শেষ পর্যন্ত ছাতার দিনের আযাব তাদের ওপর এসে পড়লো এবং তা ছিল বড়ই ভয়াবহ দিনের আযাব।


১৯০.) নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন। কিন্তু তাদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়।


১৯১.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও।


১৯২.) এটি রব্বুল আলামীনের নাযিল করা জিনিস। 


১৯৩.) একে নিয়ে আমানতদার রূহ


১৯৪.) অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও যারা (আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর সৃষ্টির জন্য) সতর্ককারী হয়,


১৯৫.) পরিষ্কার আরবী ভাষায়।


১৯৬.) আর আগের লোকদের কিতাবেও এ কথা আছে।


১৯৭.) এটা কি এদের (মক্কাবাসীদের) জন্য কোন নিদর্শন নয় যে, বনী ইসরাইলের আলেম সমাজ একে জানে?


১৯৮.) (কিন্তু এদের হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমি এতদূর গড়িয়েছে যে) যদি আমি এটা কোন অনারব ব্যক্তির উপর নাযিল করে দিতাম


১৯৯.) এবং সে এই (প্রাঞ্জল আরবীয় বাণী) তাদেরকে পড়ে শোনাত তবুও এরা মেনে নিতো না।


২০০.) অনুরূপভাবে একে (কথা) আমি অপরাধীদের হৃদয়ে বিদ্ধ করে দিয়েছি।


২০১.) তারা এর প্রতি ঈমান আনে না যতক্ষণ না কঠিন শাস্তি দেখে নেয়।


২০২.) তারপর যখন তা অসচেতন অবস্থায় তাদের ওপর এসে পড়ে


২০৩.) তখন তারা বলে, “এখন আমরা কি অবকাশ পেতে পারি?”


২০৪.) এরা কি আমার আযাব ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছে?


২০৫.) তুমি কি কিছু ভেবে দেখেছো, যদি আমি তাদেরকে বছরের পর বছর ভোগ বিলাসের অবকাশও দিই


২০৬.) এবং তারপর আবার সেই একই জিনিস তাদের ওপর এসে পড়ে যার ভয় তাদেরকে দেখানো হচ্ছে,


২০৭.) তাহলে জীবন যাপনের এ উপকরণগুলো যা তারা এ যাবত পেয়ে আসছে এগুলো তাদের কোন্ কাজে লাগবে?


২০৮.) (দেখো) আমি কখনো কোন জনপদকে তার জন্য উপদেশ


২০৯.) দেয়ার যোগ্য সতর্ককারী না পাঠিয়ে ধ্বংস করিনি এবং আমি জালেম ছিলাম না। 


২১০.) এ (সুস্পষ্ট কিতাবটি) নিয়ে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়নি।


২১১.) এ কাজটি তাদের শোভাও পায় না। এবং তারা এমনটি করতেই পারে না।


২১২.) তাদেরকে তো এর শ্রবণ থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।


২১৩.) কাজেই হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডেকো না, নয়তো তুমিও শাস্তি লাভকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।


২১৪.) নিজের নিকটতম আত্নীয়-পরিজনদেরকে ভয় দেখাও


২১৫.) এবং মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের সাথে বিনম্র ব্যবহার করো।


২১৬.) কিন্তু যদি তারা তোমার নাফরমানী করে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, তোমরা যা কিছু করো আমি তা থেকে দায়মুক্ত।


২১৭.) আর সেই পরাক্রান্ত ও দয়াময়ের উপর নির্ভর করো


২১৮.) যিনি তোমাকে দেখতে থাকেন যখন তুমি ওঠো


২১৯.) এবং সিজ্‌দাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা ও নড়া-চড়ার প্রতি দৃষ্টি রাখেন।


২২০.) তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন।


২২১.) হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার ওপর অবতীর্ণ হয়?


২২২.) তারা তো প্রত্যেক জালিয়াত বদকারের উপর অবতীর্ণ হয়।


২২৩.) শোনা কথা কানে ঢুকিয়ে দেয় এবং এর বেশির ভাগই হয় মিথ্যা।


২২৪.) আর কবিরা! তাদের পেছনে চলে পথভ্রান্ত যারা।


২২৫.) তুমি কি দেখো না তারা উপত্যকায় উপত্যকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়


২২৬.) এবং এমনসব কথা বলে যা তারা করে না?


২২৭.) তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করে আর তাদের প্রতি জুলুম করা হলে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়। আর জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের পরিণাম কি!

No comments:

Post a Comment