সূরা আল মুমিনূন

بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ 
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে




১.) নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা


২.) যারাঃ নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়,


৩.) বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে,


৪.) যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে,


৫.) নিজেদের লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে,


৬.) নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদিদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবে না,


৭.) তবে যারা এর বাইরে আরও কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী,


৮.) নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে


৯.) এবং নিজেদের নামায গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে,


১০.) তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে ফিরদাউস, লাভ করবে


১১.) এবং সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।


১২.) আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে,


১৩.) তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্‌কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তিত করেছি,


১৪.) এরপর সেই ফোঁটাকে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিন্ডকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর মাংসপিন্ডে অস্থি-পঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি রূপে। কাজেই আল্লাহ বড়ই বরকত সম্পন্ন, সকল কারিগরের চাইতে উত্তম কারিগর তিনি।


১৫.) এরপর তোমাদের অবশ্যই মরতে হবে,


১৬.) তারপর কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই তোমাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে।


১৭.) আর তোমাদের ওপর আমি সাতটি পথ নির্মাণ করেছি, সৃষ্টিকর্ম আমার মোটেই অজানা ছিল না।


১৮.) আর আকাশ থেকে আমি ঠিক হিসেব মতো একটি বিশেষ পরিমাণ অনুযায়ী পানি বর্ষণ করেছি এবং তাকে ভূমিতে সংরক্ষণ করেছি। আমি তাকে যেভাবে ইচ্ছা অদৃশ্য করে দিতে পারি।


১৯.) তারপর এ পানির মাধ্যমে আমি তোমাদের জন্য খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যই এ বাগানগুলোয় রয়েছে প্রচুর সুস্বাদু ফল এবং সেগুলো থেকে তোমরা জীবিকা লাভ করে থাকো।


২০.) আর সিনাই পাহাড়ে যে গাছ জন্মায় তাও আমি সৃষ্টি করেছি তা তেল উৎপাদন করে এবং আহারকারীদের জন্য তরকারীও।


২১.) আর প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য গবাদী পশুদের মধ্যেও একটি শিক্ষা রয়েছে। তাদের পেটের মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে একটি জিনিস আমি তোমাদের পান করাই এবং তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে আরো অনেক উপকারিতাও আছে, তাদেরকে তোমরা খেয়ে থাকো


২২.) এবং তাদের ওপর ও নৌযানে আরোহণও করে থাকো।


২৩.) আমি নূহকে পাঠালাম তার সম্প্রদায়ের কাছে। সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?


২৪.) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, “এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ। এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। আল্লাহ পাঠাতে চাইলে ফেরেশতা পাঠাতেন। একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি (যে, মানুষ রসূল হয়ে আসে) ।


২৫.) কিছুই নয়, শুধুমাত্র এ লোকটিকে একটু পাগলামিতে পেয়ে বসেছে, কিছু দিন আরো দেখে নাও (হয়তো পাগলামি ছেড়ে যাবে) ।”


২৬.) নূহ বললো, “হে পরওয়ারদিগার! এরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে এ জন্য তুমিই আমাকে সাহায্য করো।”


২৭.) আমি তার কাছে অহী করলাম, “আমার তত্বাবধানে এবং আমার অহী মোতাবেক নৌকা তৈরী করো। তারপর যখন আমার হুকুম এসে যাবে এবং চুলা উথলে উঠবে তখন তুমি সব ধরনের প্রাণীদের এক একটি জোড়া নিয়ে এতে আরোহণ করো এবং পরিবার পরিজনদেরকেও সঙ্গে নাও, তাদের ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে আগেই ফায়সালা হয়ে গেছে এবং জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলো না, তারা এখন ডুবতে যাচ্ছে।


২৮.) তারপর যখন তুমি নিজের সাথীদের নিয়ে নৌকায় আরোহণ করবে তখন বলবে, আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন জালেমদের হাত থেকে।


২৯.) আর বলো, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী।”


৩০.) এ কাহিনীতে বিরাট নিদর্শনাবলী রয়েছে, আর পরীক্ষা তো আমি করেই থাকি।


৩১.) তাদের পরে আমি অন্য এক যুগের জাতির উত্থান ঘটালাম।


৩২.) তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের সম্প্রদায়ের একজন রসূল পাঠালাম (যে তাদেরকে দাওয়াত দিল এ মর্মে যে, ) আল্লাহর বন্দেগী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?


৩৩.) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল এবং আখেরাতের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছিল, যাদেরকে আমি দুনিয়ার জীবনে প্রাচুর্য দান করেছিলাম, তারাবলতে লাগলো, “এ ব্যক্তি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমরা যা কিছু খাও তা-ই সে খায় এবং তোমরা যা কিছু পান করো তা-ই সে পান করে।


৩৪.) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


৩৫.) সে কি তোমাদেরকে একথা জানায় যে, যখন তোমরা সবার পরে মাটিতে মিশে যাবে এবং হাড়গোড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে?


৩৬.) অসম্ভব, তোমাদের সাথে এই যে অঙ্গীকার করা হচ্ছে এটা একেবারেই অসম্ভব।


৩৭.) জীবন কিছুই নয়, ব্যস এ পার্থিব জীবনটি ছাড়া, এখানেই আমরা মরি-বাঁচি এবং আমাদের কখ্‌খনো পুরুজ্জীবিত করা হবে না।


৩৮.) এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে নিছক মিথ্যা তৈরী করছে এবং আমরা কখনো তার কথা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।”


৩৯.) রসূল বললো, “হে আমার রব! এ লোকেরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো এ ব্যাপারে এখন তুমিই আমাকে সাহায্য করো।”


৪০.) জবাবে বলা হলো, “অচিরেই তারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করবে।”


৪১.) শেষ পর্যন্ত যথাযথ সত্য অনুযায়ী একটি মহা গোলযোগ তাদেরকে ধরে ফেললো এবং আমি তাদেরকে কাদা বানিয়ে নিক্ষেপ করলাম-দূর হয়ে যাও জালেম জাতি!


৪২.) তারপর আমি তাদের পরে অন্য জাতিদের উঠিয়েছি।


৪৩.) কোন জাতি তার সময়ের পূর্বে শেষ হয়নি এবং তার পরে টিকে থাকতে পারেনি।


৪৪.) তারপর আমি একের পর এক নিজের রসূল পাঠিয়েছি। যে জাতির কাছেই তার রসূল এসেছে সে-ই তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, আর আমি একেরপর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি এমনকি তাদেরকে স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি,--অভিসম্পাত তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না।


৪৫.) তারপর আমি মূসা ও তার ভাই হারুনকে নিজের নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে ফেরাউন ও তার রাজ পারিষদদের কাছে পাঠালাম।


৪৬.) কিন্তু তারা অহংকার করলো এবং তারা ছিল বড়ই আস্ফালনকারী।


৪৭.) তারা বলতে লাগলো, “আমরা কি আমাদেরই মতো দু’জন লোকের প্রতি ঈমান আনবো? আর তারা আবার এমন লোক যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস।”


৪৮.) কাজেই তারা উভয়কে প্রত্যাখ্যান করলো এবং ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হলো।


৪৯.) আর মুসাকে আমি কিতাব দান করেছি যাতে লোকেরা তার সাহায্যে পথের দিশা পায়।


৫০.) আর মারয়ামপুত্রও তার মাকে আমি একটি নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম এবং তাদেরকে রেখেছিলাম একটি সুউচ্চ ভূমিতে, সে স্থানটি ছিল নিরাপদ এবং সেখানে স্রোতম্বিনী প্রবহমান ছিল।


৫১.) হে রসূল! পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো। তোমারা যা কিছুই করো না কেন আমি তা ভালোভাবেই জানি।


৫২.) আর তোমাদের এ উম্মত হচ্ছে একই উম্মত এবং আমি তোমাদের রব, কাজেই আমাকেই তোমরা ভয় করো।


৫৩.) কিন্তু পরে লোকেরা নিজেদের দ্বীনকে পরস্পরের মধ্যে টুকরো করে নিয়েছে। প্রত্যেক দলের কাছে যা কিছু আছে তার মধ্যেই নিমগ্ন হয়ে গেছে।


৫৪.) ----বেশ, তাহলে ছেড়ে দাও তাদেরকে, ডুবে থাকুক নিজেদের গাফিলতির মধ্যে একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত।


৫৫.) তারা কি মনে করে, আমি যে তাদেরকে অর্থ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি,


৫৬.) তা দ্বারা আমি তাদেরকে কল্যাণ দানে তৎপর রয়েছি? না, আসল ব্যাপার সম্পর্কে তাদের কোন চেতনাই নেই।


৫৭.) আসলে কল্যাণের দিকে দৌড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হয়ে তা অর্জনকারী লোক তো তারাই যারা নিজেদের রবের ভয়ে ভীত,


৫৮.) যারা নিজেদের রবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে,


৫৯.) যারা নিজেদের রবের সাথে কাউকে শরীক করে না


৬০.) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে,


৬১.) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে।


৬২.) আমি কোন ব্যক্তির ওপর, তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পণ করি না এবং আমার কাছে একটি কিতাব আছে যা (প্রত্যেকের অবস্থা) ঠিকমতো জানিয়ে দেয় আর কোনোক্রমেই লোকদের প্রতি জুলুম করা হবে না।


৬৩.) কিন্তু তারা এ ব্যাপারে অচেতন। আর তাদের কার্যাবলীও এ পদ্ধতির (যা ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে) বিপরীত। তারা নিজেদের এসব কাজ করে যেতে থাকবে,


৬৪.) অবশেষে যখন আমি তাদের বিলাসপ্রিয়দেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করবো তখন তারা আবার চিৎকার করতে থাকবে


৬৫.) এখন বন্ধ করো তোমাদের আর্তচিৎকার আমার পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না।


৬৬.) আমার আয়াত তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই) পিছন ফিরে কেটে পড়তে,


৬৭.) অহংকারের সাথে তা অগ্রাহ্য করতে, নিজেদের আড্ডায় বসে তার সম্পর্কে গল্প দিতে ও আজেবাজে কথা বলতে।


৬৮.) তারা কি কখনো এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা করেনি? অথবা সে এমন কথা নিয়ে এসেছে যা কখনো তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি?


৬৯.) কিংবা তারা নিজেদের রসূলকে কখনো চিনতো না বলেই (অপরিচিত ব্যক্তি হবার কারণে) তাকে অস্বীকার করে?


৭০.) অথবা তারাকি একথা বলে যে, সে উন্মাদ? না, বরং সে সত্য নিয়ে এসেছে এবং সত্যই তাদের অধিকাংশের কাছে অপছন্দনীয়।


৭১.) আর সত্যযদি কখনো তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো তাহলে আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ওলট-পালট হয়ে যেতোনা, বরং আমি তাদের নিজেদের কথাই তাদের কাছে এনেছি এবং তারা নিজেদের কথা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। 


৭২.) তুমি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছো? তোমার জন্য তোমার রব যা দিয়েছেন, সেটাই ভালো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা।


৭৩.) তুমি তো তাদেরকে সহজ সরল পথের দিকে ডাকছো,


৭৪.) কিন্তু যারা পরকাল স্বীকার করে না তারা সঠিক পথ থেকে সরে ভিন্ন পথে চলতে চায়।


৭৫.) যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে।


৭৬.) তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের দুঃখ-কষ্টে ফেলে দিয়েছি, তারপরও তারা নিজেদের রবের সামনে নত হয়নি এবং বিনয় ও দ্বীনতাও অবলম্বন করে না।


৭৭.) তবে যখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, আমি তাদের জন্য কঠিন আযাবের দরজা খুলে দেবো তখন অকস্মাত তোমরা দেখবে যে, এ অবস্থায় তারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে।


৭৮.) তিনিই আল্লাহ‌ যিনি তোমাদের শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন এবং চিন্তা করার জন্য অন্তঃকরণ দিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কমই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকো।


৭৯.) তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা একত্র হবে।


৮০.) তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন, রাতের আবর্তন তাঁরই শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন। একথা কি তোমাদের বোধগম্য হয় না?


৮১.) কিন্তু তারা সে একই কথা বলে যা তাদের পূর্বের লোকেরা বলেছিল।


৮২.) তারা বলে, “যখন আমরা মরে মাটি হয়ে যাবো এবং অস্থি পঞ্জরে পরিণত হবো তখন কি আমাদের পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে?


৮৩.) আমরা এ প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি এবং আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারাও শুনে এসেছে। এগুলো নিছক পুরাতন কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।


৮৪.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করোঃ যদি তোমরা জানো তাহলে বলো এ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা বাস করে তারা কারা?


৮৫.) তারা নিশ্চয় বলবে, আল্লাহর। বলো, তাহলে তোমরা সচেতন হচ্ছো না কেন?


৮৬.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, সাত আসমান ও মহান আরশের অধিপতি কে?


৮৭.) তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বলো, তাহলে তোমরা ভয় করো না কেন?


৮৮.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো, কার কর্তৃত্ব চলছে প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর? আর কে তিনি যিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারে না?


৮৯.) তারা নিশ্চয়ই বলবে, এ বিষয়টি তো আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত। বলো, তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছো কোথায় থেকে?


৯০.) যা সত্য তা আমি তাদের সামনে এনেছি এবং এরা যে মিথ্যেবাদী এতে কোন সন্দেহ নেই।


৯১.) আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো। এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ‌ পাক-পবিত্র।


৯২.) প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু তিনি জানেন। এরা যে শিরক নির্ধারণ করে তিনি তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।


৯৩.) হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! দোয়া করো, “হে আমার রব! এদেরকে যে আযাবের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তুমি যদি আমার উপস্থিতিতে সে আযাব আনো


৯৪.) তাহলে হে পরওয়ারদিগার! আমাকে এ জালেমদের অন্তর্ভুক্ত করো না।


৯৫.) আর আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা চোখের সামনে আমার সে জিনিস আনার পূর্ণ শক্তি আছে যার হুমকি আমি তাদেরকে দিচ্ছি।


৯৬.) হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! মন্দকে দূর করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে। তারা তোমার সম্পর্কে যেসব কথা বলে তা আমি খুব ভালো করেই জানি।


৯৭.) আর দোয়া করো, “হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই।


৯৮.) এমনকি হে! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই।”


৯৯.) (এরা নিজেদের কৃতকর্ম থেকে বিরত হবে না) এমনকি যখন এদের কারোর মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন বলতে থাকবে, “হে আমার রব! যে দুনিয়াটা আমি ছেড়ে চলে এসেছি সেখানেই আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও,


১০০.) আশা করি এখন আমি সৎকাজ করবো। কখনোই নয়, এটা তার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু আর নয়। এখন এ মৃতদের পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে একটি অন্তরবর্তীকালীন যুগ—বরযখ যা পরবর্তী জীবনের দিন পর্যন্ত থাকবে।


১০১.) তারপর যখনই শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্কে থাকবে না এবং তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করবে না।


১০২.) সে সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে।


১০৩.) আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে এমনসব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল।


১০৪.) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে।


১০৫.)“তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?”


১০৬.) তারা বলবে, “‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌হে আমাদের রব! আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ওপর ছেয়ে গিয়েছিল, আমরা সত্যিই ছিলাম বিভ্রান্ত সম্প্রদায়।


১০৭.) হে পরওয়ারদিগার! এখন আমাদের এখান থেকে বের করে দাও, আমরা যদি আবার এ ধরনের অপরাধ করি তাহলে আমরা জালেম হবো।


১০৮.) আল্লাহ জবাব দেবেন, দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে, পড়ে থাকো ওরি মধ্যে এবং কথা বলো না আমার সাথে।


১০৯.) তোমরা হচ্ছো তারাই, যখন আমার কিছু বান্দা বলতো, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের প্রতি করুণা করো, তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল,


১১০.) তখন তোমরা তাদেরকে বিদ্রূপ করতে, এমনকি তাদের প্রতি জিদ তোমাদের আমার কথাও ভুলিয়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকতে।


১১১.) আজ তাদের সে সবের ফল আমি এই দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম।


১১২.) তারপর আল্লাহ‌ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, বলো, পৃথিবীতে তোমরা কত বছর থাকলে?


১১৩.) তারা বলবে, “এক দিন বা দিনেরও কিছু অংশে আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন।”


১১৪.) বলবেন, “অল্পক্ষণই অবস্থান করেছিলে, হায়! যদি তোমরা একথা সে সময় জানতে।


১১৫.) তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?”


১১৬.) কাজেই প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ‌ হচ্ছেন উচ্চতর ও উন্নততর, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সম্মানিত আরশের তিনিই মালিক


১১৭.) এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যার পক্ষে তার কাছে কোন যুক্তি প্রমাণ নেই, তার হিসেব রয়েছে তার রবের কাছে। এ ধরনের কাফের কখনো সফলকাম হতে পারে না।


১১৮.) হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! বলো, “হে আমার রব! ক্ষমা করো ও করুণা করো এবং তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল।”

No comments:

Post a Comment