সূরা "আল মুজাদালাহ"

بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ 
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে




১.) আল্লাহ অবশ্যই সে মহিলার কথা শুনেছেন যে তার স্বামীর ব্যাপারে তোমার কাছে কাকুতি মিনতি করেছে এবং আল্লাহর কাছে অভিযোগ করছে। আল্লাহ‌ তোমাদের দু’জনের কথা শুনছেন তিনি সবকিছু শুনে ও দেখে থাকেন।


২.) তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে “যিহার” করে তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়। তাদের মা কেবল তারাই যারা তাদেরকে প্রসব করেছে। এসব লোক একটা অতি অপছন্দনীয় ও মিথ্যা কথাই বলে থাকে। প্রকৃত ব্যাপার হলো, আল্লাহ‌ মাফ করেন, তিনি অতীব ক্ষমাশীল।


৩.) যারা নিজের স্ত্রীর সাথে “যিহার” করে বসে এবং তারপর নিজের বলা সে কথা প্রত্যাহার করে এমতাবস্থায় তারা পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি ক্রীতদাসকে মুক্ত করতে হবে। এর দ্বারা তোমাদের উপদেশ দেয়া হচ্ছে। তোমরা যা করো আল্লাহ‌ সে সম্পর্কে অবহিত।


৪.) যে মুক্ত করার জন্য কোন ক্রীতদাস পাবে না সে বিরতিহীনভাবে দুই মাস রোযা রাখবে- উভয়ে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বেই। যে তাও পারবে না সে ষাট জন মিসকীনকে খাবার দেবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এজন্য যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান আনো। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত ‘হদ’। কাফেরদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।


৫.) যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে তাদেরকে ঠিক সেইভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হবে যেভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে। আমি পরিষ্কার ও স্পষ্টভাবে সব নির্দেশ নাযিল করেছি। কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি।


৬.) (এই অপমানকর শাস্তি হবে) সেই দিন যেদিন আল্লাহ‌ তাদের সবাইকে জীবিত করে উঠাবেন এবং তারা কি কাজ করে এসেছে তা জানিয়ে দেবেন। তারা ভুলে গিয়েছে কিন্তু আল্লাহ‌ তাদের সব কৃতকর্ম সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বাধিক অবহিত।


৭.) আল্লাহ যে আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে অবগত, সে ব্যাপারে তুমি কি সচেতন নও? যখনই তিন ব্যক্তির মধ্যে কোন গোপন কানাঘুষা হয়, তখন সেখানে আল্লাহ অবশ্যই চতুর্থ জন হিসেবে উপস্থিত থাকেন। যখনই পাঁচজনের মধ্যে গোপন সলাপরামর্শ হয় তখন সেখানে ষষ্ঠ জন হিসেবে আল্লাহ অবশ্যই বিদ্যমান থাকেন। গোপন সলাপরামর্শকারীরা সংখ্যায় এর চেয়ে কম হোক বা বেশী হোক এবং তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ‌ তাদের সাথে থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তারা কে কি করেছে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।


৮.) তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কানাঘুষা করতে নিষেধ করা হয়েছিল, তথাপি তারা সে নিষিদ্ধ কাজ করে চলেছে? তারা লুকিয়ে লুকিয়ে পরস্পরে গোনাহ, বাড়াবাড়ি এবং রসূলের অবাধ্যতার কথাবার্তা বলাবলি করে, আর যখন তোমার কাছে আসে, তখন তোমাকে এমনভাবে সালাম করে যেভাবে আল্লাহ তোমাকে ছালাম করেনি। আর মনে মনে বলে যে, আমাদের এসব কথাবার্তার জন্য আল্লাহ‌ আমাদেরকে শাস্তি দেয় না কেন? তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। তারা তাতেই দগ্ধ হবে। তাদের পরিণাম অত্যন্ত শোচনীয়।


৯.) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন পরস্পরে গোপন আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হও তখন পাপ, জুলুম ও রসূলের অবাধ্যতার কথা বলাবলি করো না, বরং সততা ও আল্লাহভীতির কথাবার্তা বল এবং যে আল্লাহর কাছে হাশরের দিন তোমাদের উপস্থিত হতে হবে, তাঁকে ভয় কর।


১০.) কানাঘুষা একটা শয়তানী কাজ এবং ঈমানদার লোকদের মনে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেই তা করা হয়। অবশ্য আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়। আর মু’মিনদের কর্তব্য হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করা।


১১.) হে ঈমানদারগণ! মজলিসে জায়গা করে দিতে বলা হলে জায়গা করে দিও, আল্লাহ‌ তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন। আর যখন চলে যেতে বলা হবে, তখন চলে যেও। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা আল্লাহ‌ উন্নীত করবেন। বস্তুত আল্লাহ‌ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত।


১২.) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন রসুলের সাথে গোপন আলাপ কর তখন আলাপ করার আগে কিছু সাদকা দিয়ে নাও। এটা তোমাদের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো ও পবিত্র। তবে যদি সদকা দিতে কিছু না পাও তবে আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।


১৩.) গোপন আলাপ-আলোচনা করার আগে সাদকা দিতে হবে ভেবে তোমরা ঘাবড়ে গেলে না কি? ঠিক আছে, সেটা যদি না করতে চাও, বস্তুত আল্লাহ তোমাদেরকে তা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিয়েছেন। ---তাহলে নামায কায়েম করতে ও যাকাত দিতে থাকো এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ নিষেধ মেনে চলতে থাকো। মনে রোখো তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ ওয়াকিফহাল।


১৪.) তুমি কি তাদের দেখনি যারা এমন এক গোষ্ঠীকে বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত।  তারা তোমাদেরও নয়, তাদেরও নয়। তারা জেনে ও বুঝে মিথ্যা বিষয়ে কসম করে।


১৫.) আল্লাহ তাদের জন্য কঠিন শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। তারা যা করেছে তা অত্যন্ত মন্দ কাজ।


১৬.) তারা নিজেদের কসমকে ঢাল বানিয়ে রেখেছে। এর আড়ালে থেকে তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বাঁধা দেয়। এ কারণে তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।


১৭.) আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের অর্থ-সম্পদ যেমন কাজে আসবে না, তেমনি সন্তান-সন্ততিও কোন কাজে আসবে না। তারা দোযখের উপযুক্ত, সেখানেই তারা চিরদিন থাকবে।


১৮.) যেদিন আল্লাহ‌ তাদের সবাইকে জীবিত করে উঠাবেন সেদিন তাঁর সামনেও তারা ঠিক সেভাবে কসম করবে যেমন তোমাদের সামনে কসম করে থাকে এবং মনে করবে এভাবে তাদের কিছু কাজ অন্তত হবে। ভাল করে জেনে রাখো, তারা যারপরনাই মিথ্যাবাদী।


১৯.) শয়তান তাদের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ মুছে দিয়েছে। তারা শয়তানের দলভুক্ত লোক। সাবধান! শয়তানের দলভুক্ত লোকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


২০.) যারা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের মোকাবিলা করে নিঃসন্দেহে তারা নিকৃষ্টতর সৃষ্টি।


২১.) আল্লাহ লিখে দিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর রসূল অবশ্যই বিজয়ী হবেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মহাশক্তিমান ও পরাক্রমশালী।


২২.) তোমরা কখনো এমন দেখতে পাবে না যে, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণ করে তারা এমন লোকদের ভালবাসছে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করেছে। তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র অথবা ভাই অথবা গোষ্ঠীভুক্ত হলেও তাতে কিছু এসে যায় না। আল্লাহ‌ এসব লোকদের হৃদয়-মনে ঈমান বদ্ধমূল করে দিয়েছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে একটি ‘রূহ’ দান করে তাদের শক্তি যুগিয়েছেন। তিনি তাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। তারা সেখানে চিরদিন অবস্থান করবে। আল্লাহ‌ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। তারা আল্লাহর দলের লোক। জেনে রেখো আল্লাহর দলের লোকেরাই সফলকাম।

No comments:

Post a Comment