Surah Al Araf (সূরাহ আল আরাফ)

নামকরণঃ

এ সূরার ৪৬ ও ৪৭নং আয়াতে (পঞ্চম রুকূ’তে) “আসহাবে আ'রাফ” বা আরাফবাসীদের উল্লেখ করা হয়েছে। সেই জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে “আল আ'রাফ।” অন্য কথায় বলা যায়, এ সূরাকে সূরা আল আরাফ বলার তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, যে সূরার মধ্যে আ’রাফের কথা বলা হয়েছে, এটা সেই সূরা।

নাযিলের সময়-কালঃ

এ সূরার আলোচ্য বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সুস্পষ্টভাবে অনুভূত হয় যে, এ সূরাটি সূরা আন’আমের প্রায় সমসময়ে নাযিল হয়। অবশ্য এটি আগে না আন’আম আগে নাযিল হয় তা নিশ্চয়তার সাথে চিহ্নিত করা যাবে না। তবে এ সূরায় প্রদত্ত ভাষণের বাচনভংগী থেকে এটি যে ঐ সময়ের সাথে সম্পর্কিত তা পরিষ্কার বুঝা যায়। কাজেই এর ঐতিহাসিক পটভূমি অনুধাবন করার জন্য সূরা আন’আমের শুরুতে যে ভূমিকা লেখা হয়েছে তার ওপর একবার নজর বুলিয়ে নেয়া যথেষ্ট হবে।
আলোচ্য বিষয়

এ সূরার ভাষণের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হচ্ছে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত। আল্লাহ প্রেরিত রসূলের আনুগত্য করার জন্য শ্রোতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করাই এর সমগ্র আলোচনার মৌল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। কিন্তু এ দাওয়াত সতর্ক করার ও ভয় দেখানোর ভাবধারাই ফুটে উঠেছে বেশী করে। কারণ এখানে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে (অর্থাৎ মক্কাবাসী) তাদেরকে বুঝাতে বুঝাতে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তাদের স্থুল শ্রবণ ও অনুধাবন শক্তি, হঠকারিতা, গোয়ার্তুমী ও একগুঁয়ে মনোভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। যার ফলে রসূলের প্রতি তাদেরকে সম্বোধন করা বন্ধ করে দিয়ে অন্যদেরকে সম্বোধন করার হুকুম অচিরেই নাযিল হতে যাচ্ছিল। তাই বুঝাবার ভংগীতে নবুয়াত ও রিসালাতের দাওয়াত পেশ করার সাথে সাথে তাদেরকে একথাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, নবীর মোকাবিলায় তোমরা যে কর্মনীতি অবলম্বন করেছো তোমাদের আগের বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ও নিজেদের নবীদের সাথে অনুরূপ আচরণ অবলম্বন করে অত্যন্ত মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হয়েছিল। তারপর বর্তমানে যেহেতু তাদেরকে যুক্তি প্রমাণ সহকারে দাওয়াত দেবার প্রচেষ্টা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হতে চলেছে। তাই ভাষণের শেষ অংশে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আহলি কিতাবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। আর এক জায়গায় সারা দুনিয়ার মানুষকে সাধারণভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকে এরূপ আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, এখন হিজরত নিকটবর্তী এবং নবীর জন্য তার নিটকতর লোকদেরকে সম্বোধন করার যুগ শেষ হয়ে আসছে।
এ ভাষণের এক পর্যায়ে ইহুদিদেরকেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এই সাথে রিসালাত ও নবুয়াতের দাওয়াতের আর একটি দিকও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। নবীর প্রতি ঈমান আনার পর তাঁর সাথে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করার, আনুগত্য ও অনুসৃতির অঙ্গীকার করার পর তা ভংগ করার এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে যাওয়ার পর মিথ্যার প্রতি সাহায্য সহযোগিতা দানের কাজে আপাদমস্তক ডুবে থাকার পরিনাম কি, তাও এতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।


الۤمّۤصۤ

১.) আলিফ, লাম, মীম, সোয়াদ।

كِتٰبٌ اُنۡزِلَ اِلَيۡكَ فَلَا يَكُنۡ فِىۡ صَدۡرِكَ حَرَجٌ مِّنۡهُ لِتُنۡذِرَ بِهٖ وَذِكۡرٰى لِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ‏

২.) এটি তোমার প্রতি নাযিল করা একটি কিতাব।  কাজেই তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে। এটি নাযিল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে তুমি (অস্বীকারকারীদেরকে) ভয় দেখাবে এবং মুমিনদের জন্য এটি হবে একটি স্মারক। 

 اتَّبِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَيۡكُمۡ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُوۡا مِنۡ دُوۡنِهٖۤ اَوۡلِيَآءَ‌ؕ قَلِيۡلاً مَّا تَذَكَّرُوۡنَ‏

৩.) হে মানব সমাজ! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করো এবং নিজেদের রবকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। কিন্তু তোমরা খুব কমই উপদেশ মেনে থাকো।

 وَكَمۡ مِّنۡ قَرۡيَةٍ اَهۡلَكۡنٰهَا فَجَآءَهَا بَاۡسُنَا بَيٰتًا اَوۡ هُمۡ قَآٮِٕلُوۡنَ‏

৪.) কত জনপদ আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের ওপর আমার আযাব অকস্মাত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাতের বেলা অথবা দিনের বেলা যখন তারা বিশ্রামরত ছিল।

 فَمَا كَانَ دَعۡوٰٮهُمۡ اِذۡ جَآءَهُمۡ بَاۡسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡۤا اِنَّا كُنَّا ظٰلِمِيۡنَ

৫.) আর যখন আমার আযাব তাদের ওপর আপতিত হয়েছিল তখন তাদের মুখে এছাড়া আর কোন কথাই ছিল না যে, “সত্যিই আমরা জালেম ছিলাম।”

 فَلَنَسۡـَٔلَنَّ الَّذِيۡنَ اُرۡسِلَ اِلَيۡهِمۡ وَلَنَسۡـَٔلَنَّ الۡمُرۡسَلِيۡنَۙ

৬.) কাজেই যাদের কাছে আমি রসূল পাঠিয়েছি তাদেরকে অবশ্যি জিজ্ঞাসাবাদ করবো৬ এবং রসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করবো (তারা পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্ব কতটুকু সম্পাদন করেছে এবং এর কি জবাব পেয়েছে) । 

 فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيۡهِمۡ بِعِلۡمٍ وَّمَا كُنَّا غَآٮِٕبِيۡنَ

৭.) তারপর আমি নিজেই পূর্ণ জ্ঞান সহকারে সমুদয় কার্যবিবরণী তাদের সামনে পেশ করবো। আমি তো আর সেখানে অনুপস্থিত ছিলাম না!

 وَالۡوَزۡنُ يَوۡمَٮِٕذِ ۨالۡحَقُّ‌ۚ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِيۡنُهٗ فَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

৮.) আর ওজন হবে সেদিন যথার্থ সত্য। 

 وَمَنۡ خَفَّتۡ مٰوزِيۡنُهٗ فَاُولٰۤٮِٕكَ الَّذِيۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ بِمَا كَانُوۡا بِاٰيٰتِنَا يَظۡلِمُوۡنَ‏

৯.) যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেরাই হবে নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী। কারণ তারা আমার আয়াতের সাথে জালেম সুলভ আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল।

 وَلَقَدۡ مَكَّنّٰكُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِيۡهَا مَعَايِشَؕ قَلِيۡلاً مَّا تَشۡكُرُوۡنَ‏

১০.) তোমাদেরকে আমি ক্ষমতা-ইখতিয়ার সহকারে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য এখানে জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করেছি। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর গুজারী করে থাকো।

 وَلَقَدۡ خَلَقۡنٰكُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنٰكُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اسۡجُدُوۡا لِاَدَمَ‌ۖ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِيۡسَؕ لَمۡ يَكُنۡ مِّنَ السّٰجِدِيۡنَ‏

১১.) আমি তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করলাম তারপর তোমাদের আকৃতি দান করলাম অতঃপর ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো। এ নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সিজদা করলো। কিন্তু ইবলীস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।

 ‌قَالَ مَا مَنَعَكَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُكَ‌ؕ قَالَ اَنَا خَيۡرٌ مِّنۡهُ‌ۚ خَلَقۡتَنِىۡ مِنۡ نَّارٍ وَّخَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِيۡنٍ

১২.) আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যখন তোকে হুকুম দিয়েছিলাম তখন সিজদা করতে তোকে বাধা দিয়েছিল কিসে?” সে জবাব দিলঃ “আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছো এবং ওকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে।”

 قَالَ فَاهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا يَكُوۡنُ لَكَ اَنۡ تَتَكَبَّرَ فِيۡهَا فَاخۡرُجۡ اِنَّكَ مِنَ الصّٰغِرِيۡنَ‏

১৩.) তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, তুই এখান থেকে নীচে নেমে যা। এখানে অহংকার করার অধিকার তোর নেই। বের হয়ে যা। আসলে তুই এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে লাঞ্ছিত করতে চায়।”

 قَالَ اَنۡظِرۡنِىۡۤ اِلٰى يَوۡمِ يُبۡعَثُوۡنَ

১৪.) সে বললঃ “আমাকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও যখন এদের সবাইকে পুনর্বার ওঠানো হবে।”

قَالَ اِنَّكَ مِنَ الۡمُنۡظَرِيۡنَ

১৫.) তিনি বললেনঃ “তোকে অবকাশ দেয়া হলো।”

 قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَيۡتَنِىۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَكَ الۡمُسۡتَقِيۡمَۙ

১৬.) সে বললোঃ “তুমি যেমন আমাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেছো তেমনি আমিও এখন তোমার সরল-সত্য পথে এ লোকদের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকবো,

 ثُمَّ لَاَتِيَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَيۡنِ اَيۡدِيۡهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ اَيۡمَانِهِمۡ وَعَنۡ شَمَآٮِٕلِهِمۡ‌ؕ وَلَا تَجِدُ اَكۡثَرَهُمۡ شٰكِرِيۡنَ‏

১৭.) সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে, সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না।”

 قَالَ اخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا‌ؕ لَمَنۡ تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ لَاَمۡلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنۡكُمۡ اَجۡمَعِيۡنَ

১৮.) আল্লাহ বললেনঃ “বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত অবস্থায়। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখিস, এদের মধ্য থেকে যারাই তোর অনুসরণ করবে তাদেরকে এবং তোকে দিয়ে আমি জাহান্নাম ভরে দেবো।

 وَيٰۤاٰدَمُ اسۡكُنۡ اَنۡتَ وَزَوۡجُكَ الۡجَنَّةَ فَكُلَا مِنۡ حَيۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوۡنَا مِنَ الظّٰلِمِيۡنَ

১৯.) আর হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী তোমরা দু'জনাই এ জান্নাতে থাকো। যেখানে যা তোমাদের ইচ্ছা হয় খাও, কিন্তু এ গাছটির কাছে যেয়ো না, অন্যথায় তোমরা জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।”

 فَوَسۡوَسَ لَهُمَا الشَّيۡطٰنُ لِيُبۡدِىَ لَهُمَا مَا وٗرِىَ عَنۡهُمَا مِنۡ سَوۡاٰتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهٰٮكُمَا رَبُّكُمَا عَنۡ هٰذِهِ الشَّجَرَةِ اِلَّاۤ اَنۡ تَكُوۡنَا مَلَكَيۡنِ اَوۡ تَكُوۡنَا مِنَ الۡخٰلِدِيۡنَ

২০.) তারপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের পরস্পর থেকে গোপন রাখা হয়েছিল, তাদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল। সে তাদেরকে বললোঃ “তোমাদের রব যে, তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করেছেন তার পেছনে এছাড়া আর কোন কারণই নেই যে, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাও অথবা তোমরা চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়ে পড়ো।”

 وَقَاسَمَهُمَاۤ اِنِّىۡ لَكُمَا لَمِنَ النّٰصِحِيۡنَ

২১.) আর সে কসম খেয়ে তাদেরকে বললো, আমি তোমাদের যথার্থ কল্যাণকামী।

 فَدَلّٰٮهُمَا بِغُرُوۡرٍ‌ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡءٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخۡصِفَانِ عَلَيۡهِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّةِ‌ؕ وَنَادٰٮهُمَا رَبُّهُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡهَكُمَا عَنۡ تِلۡكُمَا الشَّجَرَةِ وَاَقُل لَّكُمَاۤ اِنَّ الشَّيۡطٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِيۡنٌ‏

২২.) এভাবে প্রতারণা করে সে তাদের দু'জনকে ধীরে ধীরে নিজের পথে নিয়ে এলো। অবশেষে যখন তারা সেই গাছের ফল আস্বাদন করলো, তাদের লজ্জা স্থান পরস্পরের সামনে খুলে গেলো এবং তারা নিজেদের শরীর ঢাকতে লাগলো জান্নাতের পাতা দিয়ে। তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললোঃ “আমি কি তোমাদের এ গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করিনি এবং তোমাদের বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?”

 قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَاِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ

২৩.) তারা দু'জন বলে উঠলোঃ “হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি রহম না করো, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।”

 قَالَ اهۡبِطُوۡا بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ‌ۚ وَلَكُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ مُسۡتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ اِلٰى حِيۡنٍ‏

২৪.) তিনি বললেনঃ “নেমে যাও,  তোমরা পরস্পরের শত্রু এবং তোমাদের জন্য একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত পৃথিবীতেই রয়েছে বসবাসের জায়গা ও জীবন যাপনের উপকরণ।”

 قَالَ فِيۡهَا تَحۡيَوۡنَ وَفِيۡهَا تَمُوۡتُوۡنَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُوۡنَ‏

২৫.) আর বললেনঃ “সেখানেই তোমাদের জীবনযাপন করতে এবং সেখানেই মরতে হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদের সবশেষে আবার বের করে আনা হবে।”

 يٰبَنِىۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسًا يُّوٰرِىۡ سَوۡاٰتِكُمۡ وَرِيۡشًا‌ؕ وَّلِبَاسُ التَّقۡوٰى ذٰلِكَ خَيۡرٌ‌ؕ ذٰلِكَ مِنۡ اٰيٰتِ اللّٰهِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُوۡنَ

২৬.) হে বনী আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।

 يٰبَنِىۡۤ اٰدَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ الشَّيۡطٰنُ كَمَاۤ اَخۡرَجَ اَبَوَيۡكُمۡ مِّنَ الۡجَنَّةِ يَنۡزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءٰتِهِمَآ‌ؕ اِنَّهٗ يَرٰٮكُمۡ هُوَ وَقَبِيۡلُهٗ مِنۡ حَيۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡ‌ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا الشَّيٰطِيۡنَ اَوۡلِيَآءَ لِلَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ‏

২৭.) হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদের আবার ঠিক তেমনিভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ না করে যেমনভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল এবং তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার জন্য তাদেরকে বিবস্ত্র করেছিল। সে ও তার সাথীরা তোমাদেরকে এমন জায়গা থেকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। এ শয়তানদেরকে আমি যারা ঈমান আনে না তাদের অভিভাবক করে দিয়েছি।

 وَاِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَةً قَالُوۡا وَجَدۡنَا عَلَيۡهَاۤ اٰبَآءَنَا وَاللّٰهُ اَمَرَنَا بِهَا‌ؕ قُلۡ اِنَّ اللّٰهَ لَا يَاۡمُرُ بِالۡفَحۡشَآءِ‌ؕ اَتَقُوۡلُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ‏

২৮.) তারা যখন কোন অশ্লীল কাজ করে তখন বলে, আমাদের বাপ-দাদাদেরকে আমরা এভাবেই করতে দেখেছি এবং আল্লাহই আমাদের এমনটি করার হুকুম দিয়েছেন। তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ‌ কখনো নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার হুকুম দেন না। তোমরা কি আল্লাহর নাম নিয়ে এমন কথা বলো যাকে তোমরা আল্লাহর কথা বলে জানো না?

 قُلۡ اَمَرَ رَبِّىۡ بِالۡقِسۡطِ‌ وَاَقِيۡمُوۡا وُجُوۡهَكُمۡ عِنۡدَ كُلِّ مَسۡجِدٍ وَّادۡعُوۡهُ مُخۡلِصِيۡنَ لَهُ الدِّيۡنَ ‌ؕ كَمَا بَدَاَكُمۡ تَعُوۡدُوۡنَؕ‏

২৯.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আমার রব তো সততা ও ইনসাফের হুকুম দিয়েছেন। তাঁর হুকুম হচ্ছে, প্রত্যেক ইবাদতে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখো এবং নিজের দ্বীনকে একান্তভাবে তাঁর জন্য করে নিয়ে তাঁকেই ডাকো। যেভাবে তিনি এখন তোমাদের সৃষ্টি করেছেন ঠিক তেমনিভাবে তোমাদের আবার সৃষ্টি করা হবে।১৯

 فَرِيۡقًا هَدٰى وَفَرِيۡقًا حَقَّ عَلَيۡهِمُ الضَّلٰلَةُ‌ؕ اِنَّهُمُ اتَّخَذُوۡا الشَّيٰطِيۡنَ اَوۡلِيَآءَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَيَحۡسَبُوۡنَ اَنَّهُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ‏

৩০.) একটি দলকে তিনি সোজা পথ দেখিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অন্য দলটির ওপর গোমরাহী সত্য হয়ে চেপেই বসেছে। কারণ তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে নিজেদের অভিভাবকে পরিণত করেছে এবং তারা মনে করছে, আমরা সঠিক পথেই আছি।

 يٰبَنِىۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِيۡنَتَكُمۡ عِنۡدَ كُلِّ مَسۡجِدٍ وَّكُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا وَلَا تُسۡرِفُوۡا‌ۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الۡمُسۡرِفِيۡنَ‏

৩১.) হে বনী আদম! প্রত্যেক ইবাদাতের সময় তোমরা নিজ নিজ সুন্দর সাজে সজ্জিত হও। আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ‌ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। 

 قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِيۡنَةَ اللّٰهِ الَّتِىۡۤ اَخۡرَجَ لِعِبَادِهٖ وَالطَّيِّبٰتِ مِنَ الرِّزۡقِ‌ؕ قُلۡ هِىَ لِلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا خَالِصَةً يَّوۡمَ الۡقِيٰمَةِ‌ؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ

৩২.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ‌ তাঁর বান্দাদের জন্য যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে? আর আল্লাহর দেয়া পবিত্র জিনিসগুলো কে নিষিদ্ধ করেছে? বলো, দুনিয়ার জীবনেও এ সমস্ত জিনিস ঈমানদারদের জন্য, আর কিয়ামতের দিনে এগুলো তো একান্তভাবে তাদেরই জন্য হবে। এভাবে যারা জ্ঞানের অধিকারী তাদের জন্য আমার কথাগুলো আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বর্ণনা করে থাকি।

 قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَالۡاِثۡمَ وَالۡبَغۡىَ بِغَيۡرِ الۡحَقِّ وَاَنۡ تُشۡرِكُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًا وَّاَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

৩৩.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ‌ যেসব জিনিস হারাম করেছেন সেগুলো হচ্ছেঃ প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা,  গোনাহ, সত্যের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি, আল্লাহর সাথে তোমাদের কাউকে শরীক করা, যার স্বপক্ষে তিনি কোন সনদ পাঠাননি এবং আল্লাহর নামে তোমাদের এমন কোন কথা বলা, যা মূলত তিনি বলেছেন বলে তোমাদের জানা নেই।

 وَلِكُلِّ اُمَّةٍ اَجَلٌ‌ۚ فَاِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَةً‌ وَّلَا يَسۡتَقۡدِمُوۡنَ

৩৪.) প্রত্যেক জাতির জন্য অবকাশের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। তারপর যখন কোন জাতির সময় পূর্ণ হয়ে যাবে তখন এক মুহূর্তকালের জন্যও তাকে বিলম্বিত বা ত্বরান্বিত করা হবে না। 

 يٰبَنِىۡۤ اٰدَمَ اِمَّا يَاۡتِيَنَّكُمۡ رُسُلٌ مِّنۡكُمۡ يَقُصُّوۡنَ عَلَيۡكُمۡ اٰيٰتِىۡ‌ۙ فَمَنِ اتَّقٰى وَاَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَ‏

৩৫.) (আর সৃষ্টির সূচনাপর্বেই আল্লাহ‌ একথা পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেনঃ) হে বনী আদম! মনে রেখো, যদি তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে কোন রসূল এসে তোমাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে থাকে, তাহলে যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকবে এবং নিজের কর্মনীতির সংশোধন করে নেবে, তার কোন ভয় এবং দুঃখের কারণ নেই।

وَالَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَاسۡتَكۡبَرُوۡا عَنۡهَاۤ اُولٰۤٮِٕكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ‌ۚ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ‏

৩৬.) আর যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলবে এবং তার সাথে বিদ্রোহাত্মাক আচরণ করবে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে থাকবে তারা চিরকাল।

 فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰيٰتِهٖؕ اُولٰۤٮِٕكَ يَنَالُهُمۡ نَصِيۡبُهُمۡ مِّنَ الۡكِتٰبِ‌ؕ حَتّٰىۤ اِذَا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوۡنَهُمۡۙ قَالُوۡۤا اَيۡنَ مَا كُنۡتُمۡ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ‌ؕ قَالُوۡا ضَلُّوۡا عَنَّا وَشَهِدُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ اَنَّهُمۡ كَانُوۡا كٰفِرِيۡنَ‏

৩৭.) একথা সুস্পষ্ট, যে ব্যক্তি ডাহা মিথ্যা কথা বানিয়ে আল্লাহর কথা হিসেবে প্রচার করে অথবা আল্লাহর সত্য আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে? এ ধরনের লোকেরা নিজেদের তকদীরের লিখন অনুযায়ী তাদের অংশ পেতে থাকবে, অবশেষে সেই সময় উপস্থিত হবে যখন আমার পাঠানো ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করার জন্য তাদের কাছে এসে যাবে। সে সময় তারা (ফেরেশতারা) তাদেরকে জিজ্ঞেস করবে, বলো, এখন তোমাদের সেই মাবুদরা কোথায়, যাদেরকে তোমরা ডাকতে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে? তারা বলবে, “সবাই আমাদের কাছ থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেছে” এবং তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, বাস্তবিক পক্ষেই তারা সত্য অস্বীকারকারী ছিল।

 قَالَ ادۡخُلُوۡا فِىۡۤ اُمَمٍ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ مِّنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ فِىۡ النَّارِ‌ؕ كُلَّمَا دَخَلَتۡ اُمَّةٌ لَّعَنَتۡ اُخۡتَهَا‌ؕ حَتّٰۤى اِذَا ادَّارَكُوۡا فِيۡهَا جَمِيۡعًاۙ قَالَتۡ اُخۡرٰٮهُمۡ لِاُوۡلٰٮهُمۡ رَبَّنَا هٰٓؤُلاَۤءِ اَضَلُّوۡنَا فَاٰتِهِمۡ عَذَابًا ضِعۡفًا مِّنَ النَّارِ‌ ؕ قَالَ لِكُلٍّ ضِعۡفٌ وَّلٰكِنۡ لَّا تَعۡلَمُوۡنَ‏

৩৮.) আল্লাহ বলবেনঃ যাও, তোমরাও সেই জাহান্নামে চলে যাও, যেখানে চলে গেছে তোমাদের পূর্বের অতিক্রান্ত জ্বীন ও মানবগোষ্ঠী। প্রত্যেকটি দলই নিজের পূর্ববর্তী দলের প্রতি অভিসম্পাত করতে করতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশেষে যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন পরবর্তী প্রত্যেকটি দল পূর্ববর্তী দলের ব্যাপারে বলবে, হে আমাদের রব! এরাই আমাদের গোমরাহ করেছে, কাজেই এদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি দাও। জওয়াবে বলা হবে, প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ শাস্তিই রয়েছে কিন্তু তোমরা জানো না।

 وَقَالَتۡ اُوۡلٰٮهُمۡ لِاُخۡرٰٮهُمۡ فَمَا كَانَ لَكُمۡ عَلَيۡنَا مِنۡ فَضۡلٍ فَذُوۡقُوۡا الۡعَذَابَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡسِبُوۡنَ‏

৩৯.) প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলকে বলবেঃ (যদি আমরা দোষী হয়ে থাকি) তাহলে তোমরা কোন দিক দিয়ে আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ছিলে? এখন নিজেদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।

 اِنَّ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَاسۡتَكۡبَرُوۡا عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ اَبۡوَابُ السَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّةَ حَتّٰى يَلِجَ الۡجَمَلُ فِىۡ سَمِّ الۡخِيَاطِ‌ؕ وَكَذٰلِكَ نَجۡزِىۡ الۡمُجۡرِمِيۡنَ

৪০.) নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, তাদের জন্য কখনো আকাশের দরজা খুলবে না। তাদের জান্নাতে প্রবেশ এমনই অসম্ভব ব্যাপার যেমন সূঁচের ছিদ্রে উট প্রবেশ করানো। অপরাধীরা আমার কাছে এভাবেই বদলা পেয়ে থাকে।

 لَهُمۡ مِّنۡ جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَّمِنۡ فَوۡقِهِمۡ غَوَاشٍ‌ؕ وَكَذٰلِكَ نَجۡزِىۡ الظّٰلِمِيۡنَ‏

৪১.) তাদের জন্য বিছানাও হবে জাহান্নামের এবং ওপরের আচ্ছাদনও হবে জাহান্নামের। এ প্রতিফল আমি জালেমদেরকে দিয়ে থাকি।

 وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَاۤ اُولٰۤٮِٕكَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّةِ‌ۚ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ

৪২.) অন্যদিকে যারা আমার আয়াত মেনে নিয়েছে এবং সৎকাজ করেছে- আর এ পর্যায়ে আমি কাউকে তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করি না- তারা হচ্ছে জান্নাতবাসী। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।

 وَنَزَعۡنَا مَا فِىۡ صُدُوۡرِهِمۡ مِّنۡ غِلٍّ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهِمُ الۡاَنۡهٰرُ‌ۚ وَقَالُوۡا الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ الَّذِىۡ هَدٰٮنَا لِهٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهۡتَدِىَ لَوۡلَاۤ اَنۡ هَدٰٮنَا اللّٰهُ‌ ‌ۚ لَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِالۡحَقِّ‌ؕ وَنُوۡدُوۡۤا اَنۡ تِلۡكُمُ الۡجَنَّةُ اُوۡرِثۡتُمُوۡهَا بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ‏

৪৩.) তাদের মনে পরস্পরের বিরুদ্ধে যা কিছু গ্লানি থাকবে তা আমি বের করে দেবো। তাদের নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা বলবেঃ “প্রশংসা সব আল্লাহরই জন্য, যিনি আমাদের এ পথ দেখিয়েছেন। আমরা নিজেরা পথের সন্ধান পেতাম না যদি না আল্লাহ‌ আমাদের পথ দেখাতেন। আমাদের রবের পাঠানো রসূলগণ যথার্থ সত্য নিয়েই এসেছিলেন।” সে সময় আওয়াজ ধ্বনিত হবেঃ “তোমাদেরকে এই যে জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে, এটি তোমরা লাভ করেছো সেই সমস্ত কাজের প্রতিদানে যেগুলো তোমরা অব্যাহতভাবে করতে।”

 وَنَادٰىۤ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّةِ اَصۡحٰبَ النَّارِ اَنۡ قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلۡ وَجَدتُّمۡ مَّا وَعَدَ رَبُّكُمۡ حَقًّا‌ؕ قَالُوۡا نَعَمۡ‌ۚ فَاَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَيۡنَهُمۡ اَنۡ لَّعۡنَةُ اللّٰهِ عَلَى الظّٰلِمِيۡنَۙ

৪৪.) তারপর জান্নাতের অধিবাসীরা জাহান্নামের অধিবাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ “আমাদের রব আমাদের সাথে যে সমস্ত ওয়াদা করেছিলেন তার সবগুলোকেই আমরা সঠিক পেয়েছি, তোমাদের রব যেসব ওয়াদা করেছিলেন, তোমরাও কি সেগুলোকে সঠিক পেয়েছো?”

 الَّذِيۡنَ يَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَيَبۡغُوۡنَهَا عِوَجًا‌ۚ وَّهُمۡ بِالۡاٰخِرَةِ كٰفِرُوۡنَ‌ۘ‏

৪৫.) তারা জবাবে বলবেঃ “হ্যাঁ,”, তখন একজন ঘোষণাকারী তাদের মধ্যে ঘোষণা করবঃ “আল্লাহর লানত সেই জালেমদের ওপর, যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিতো এবং তাকে বাঁকা করে দিতে চাইতো আর তারা ছিল আখেরাত অস্বীকারকারী।”

 وَبَيۡنَهُمَا حِجَابٌ‌ۚ وَعَلَى الۡاَعۡرَافِ رِجَالٌ يَّعۡرِفُوۡنَ كُلاًّۢ بِسِيۡمٰٮهُمۡ‌ۚ وَنَادَوۡا اَصۡحٰبَ الۡجَنَّةِ اَنۡ سَلٰمٌ عَلَيۡكُمۡ‌ لَمۡ يَدۡخُلُوۡهَا وَهُمۡ يَطۡمَعُوۡنَ

৪৬.) এ উভয় দলের মাঝখানে থাকবে একটি অন্তরাল। এর উচু স্থানে (আ’রাফ) অপর কিছু লোক থাকবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি ঠিকই কিন্তু তারা হবে তার প্রার্থী।

 وَاِذَا صُرِفَتۡ اَبۡصَارُهُمۡ تِلۡقَآءَ اَصۡحٰبِ النَّارِۙ قَالُوۡا رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ‏

৪৭.) তারা প্রত্যেককে তার লক্ষণের সাহায্যে চিনে নেবে। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবেঃ “তোমাদের প্রতি শান্তি হোক!” আর যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামবাসীদের দিকে ফিরবে, তারা বলবেঃ “হে আমাদের রব! এ জালেমদের সাথে আমাদের শামিল করো না।”

 وَنَادَىٰۤ اَصۡحٰبُ الۡاَعۡرَافِ رِجَالاً يَّعۡرِفُوۡنَهُمۡ بِسِيۡمٰٮهُمۡ قَالُوۡا مَاۤ اَغۡنٰى عَنۡكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنۡتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ‏

৪৮.) আবার এ আ'রাফের লোকেরা জাহান্নামের কয়েকজন বড় বড় ব্যক্তিকে তাদের আলামত দেখে চিনে নিয়ে ডেকে বলবেঃ “দেখলে তো তোমরা, আজ তোমাদের দলবলও তোমাদের কোন কাজে লাগলো না। আর তোমাদের যেই সাজ-সরঞ্জামকে তোমরা অনেক বড় মনে করতে তাও কোন উপকারে আসলো না।

 اَهٰٓؤُلَۤاءِ الَّذِيۡنَ اَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ اللّٰهُ بِرَحۡمَةٍ‌ؕ ادۡخُلُوۡا الۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَاۤ اَنۡتُمۡ تَحۡزَنُوۡنَ‏

৪৯.) আর এ জান্নাতের অধিবাসীরা কি তারাই নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম খেয়ে বলতে, এদেরকে তো আল্লাহ‌ তাঁর রহমত থেকে কিছুই দেবেন না? আজ তাদেরকেই বলা হয়েছে, প্রবেশ করো জান্নাতে- তোমাদের কোন ভয়ও নেই, দুঃখও নেই।”

 وَنَادٰىۤ اَصۡحٰبُ النَّارِ اَصۡحٰبَ الۡجَنَّةِ اَنۡ اَفِيۡضُوۡا عَلَيۡنَا مِنَ الۡمَآءِ اَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ‌ؕ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الۡكٰفِرِيۡنَۙ‏

৫০.) আর জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ “সামান্য একটু পানি আমাদের উপর ঢেলে দাও না। অথবা আল্লাহ‌ তোমাদের যে রিযিক দান করেছেন তা থেকেই কিছু ফেলে দাও না।” তারা জবাবে বলবেঃ “আল্লাহ এ দু’টি জিনিসই সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য হারাম করেছেন,

 الَّذِيۡنَ اتَّخَذُوۡا دِيۡنَهُمۡ لَهۡوًا وَّلَعِبًا وَّغَرَّتۡهُمُ الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَا‌‌ۚ فَالۡيَوۡمَ نَنۡسٰٮهُمۡ كَمَا نَسُوۡا لِقَآءَ يَوۡمِهِمۡ هٰذَاۙ وَمَا كَانُوۡا بِاٰيٰتِنَا يَجۡحَدُوۡنَ‏

৫১.) যারা নিজেদের দ্বীনকে খেলা ও কৌতুকের ব্যাপার বানিয়ে নিয়েছিল এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারণায় নিমজ্জিত করেছিল।” আল্লাহ‌ বলেন, “আজ আমিও তাদেরকে ঠিক তেমনিভাবে ভুলে যাবো যেভাবে তারা এ দিনটির মুখোমুখী হওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল।”

وَلَقَدۡ جِئۡنٰهُمۡ بِكِتٰبٍ فَصَّلۡنٰهُ عَلٰى عِلۡمٍ هُدًى وَرَحۡمَةً لِّقَوۡمٍ يُّؤۡمِنُوۡنَ

৫২.) আমি এদের কাছে এমন একটি কিতাব নিয়ে এসেছি যাকে পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতে বিশদ ব্যাখ্যামূলক করেছি এবং যা ঈমানদারদের জন্য পথ নির্দেশনা ও রহমত স্বরূপ। 

 هَلۡ يَنۡظُرُوۡنَ اِلَّا تَاۡوِيۡلَهٗ‌ؕ يَوۡمَ يَاۡتِىۡ تَاۡوِيۡلُهٗ يَقُوۡلُ الَّذِيۡنَ نَسُوۡهُ مِنۡ قَبۡلُ قَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِالۡحَقِّ‌ۚ فَهَل لَّنَا مِنۡ شُفَعَآءَ فَيَشۡفَعُوۡا لَنَاۤ اَوۡ نُرَدُّ فَنَعۡمَلَ غَيۡرَ الَّذِىۡ كُنَّا نَعۡمَلُ‌ؕ قَدۡ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ وَضَلَّ عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ‏

৫৩.) এখন এরা কি এর পরিবর্তে এ কিতাব যে পরিণামের খবর দিচ্ছে তার প্রতীক্ষায় আছে? যেদিন সেই পরিণাম সামনে এসে যাবে সেদিন যারা তাকে উপেক্ষা করেছিল তারাই বলবেঃ “যথার্থই আমাদের রবের রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন। এখন কি আমরা এমন কিছু সুপারিশকারী পাবো যারা আমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে? অথবা আমাদের পুনরায় ফিরে যেতে দেয়া হবে, যাতে পূর্বে আমরা যা কিছু করতাম তার পরিবর্তে এখন অন্য পদ্ধতিতে কাজ করে দেখাতে পারি?” তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং যে মিথ্যা তারা রচনা করেছিল তার সবটুকুই আজ তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে।

 اِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِىۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ فِىۡ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰى عَلَى الۡعَرۡشِ يُغۡشِىۡ الَّيۡلَ النَّهَارَ يَطۡلُبُهٗ حَثِيۡثًاۙ وَّالشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ وَالنُّجُوۡمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمۡرِهٖۤ‌ؕ اَلَا لَهُ الۡخَلۡقُ وَالۡاَمۡرُ‌ؕ تَبَارَكَ اللّٰهُ رَبُّ الۡعٰلَمِيۡنَ

৫৪.) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদের রব, যিনি আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি নিজের কর্তৃত্বের আসনে সমাসীন হন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে ঢেকে দেন তারপর রাতের পেছনে দিন দৌড়িয়ে চলে আসে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও তারকা রাজী সৃষ্টি করেন। সবাই তাঁর নির্দেশের আনুগত। জেনে রাখো, সৃষ্টি তারই এবং নির্দেশও তাঁরই। আল্লাহ বড়ই বরকতের অধিকারী। তিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক ও প্রতিপালক।

 اُدۡعُوۡا رَبَّكُمۡ تَضَرُّعًا وَّخُفۡيَةً‌ؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الۡمُعۡتَدِيۡنَ

৫৫.) তোমাদের রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে ও চুপে চুপে। অবশ্যি তিনি সীমা লংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

 وَلَا تُفۡسِدُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِهَا وَادۡعُوۡهُ خَوۡفًا وَّطَمَعًا‌ؕ اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰهِ قَرِيۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِيۡنَ‏

৫৬.) দুনিয়ায় সুস্থ পরিবেশ বহাল করার পর আর সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। আল্লাহকেই ডাকো ভীতি ও আশা সহকারে। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকদের নিকবর্তী।

 وَهُوَ الَّذِىۡ يُرۡسِلُ الرِّيٰحَ بُشۡرًۢا بَيۡنَ يَدَىۡ رَحۡمَتِهٖ‌ؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَقَلَّتۡ سَحَابًا ثِقَالاً سُقۡنٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَاَنۡزَلۡنَا بِهِ الۡمَآءَ فَاَخۡرَجۡنَا بِهٖ مِنۡ كُلِّ الثَّمَرٰتِ‌ؕ كَذٰلِكَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰى لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُوۡنَ

৫৭.) আর আল্লাহই বায়ুকে নিজের অনুগ্রহের পূর্বাহ্নে সুসংবাদবাহীরূপে পাঠান। তারপর যখন সে পানি ভরা মেঘ বহন করে তখন কোন মৃত ভূখণ্ডের দিকে তাকে চালিয়ে দেন এবং সেখানে বারি বর্ষণ করে(সেই মৃত ভূখণ্ড থেকে) নানা প্রকার ফল উৎপাদন করেন। দেখো, এভাবে আমি মৃতদেরকে মৃত্যুর অবস্থা থেকে বের করে আনি। হয়তো এ চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ থেকে তোমরা শিক্ষা লাভ করবে।

 وَالۡبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخۡرُجُ نَبَاتُهٗ بِاِذۡنِ رَبِّهٖ‌ۚ وَالَّذِىۡ خَبُثَ لَا يَخۡرُجُ اِلَّا نَكِدًا‌ؕ كَذٰلِكَ نُصَرِّفُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّشۡكُرُوۡنَ‏

৫৮.) উৎকৃষ্ট ভুমি নিজের রবের নির্দেশে প্রচুর ফসল উৎপন্ন করে এবং নিকৃষ্ট ভুমি থেকে নিকৃষ্ট ধরনের ফসল ছাড়া আর কিছুই ফলে না। এভাবেই আমি কৃতজ্ঞ জনগোষ্ঠির জন্য বারবার নিদর্শনসমূহ পেশ করে থাকি।

 لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا نُوۡحًا اِلٰى قَوۡمِهٖ فَقَالَ يٰقَوۡمِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرُهٗؕ اِنِّىۡۤ اَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيۡمٍ‏

৫৯.) নুহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই। সে বলেঃ “হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশঙ্কা করছি।”

 قَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِهٖۤ اِنَّا لَنَرٰٮكَ فِىۡ ضَلٰلٍ مُّبِيۡنٍ

৬০.) তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা জবাব দেয়ঃ “আমরা তো দেখতে পাচ্ছি তুমি সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়েছো।

 قَالَ يٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِىۡ ضَلٰلَةٌ وَّلٰكِنِّىۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ

৬১.) নূহ বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! আমি কোন গোমরাহীতে লিপ্ত হইনি বরং আমি রব্বুল আলামীনের রসূল।

 اُبَلِّغُكُمۡ رِسٰلٰتِ رَبِّىۡ وَاَنۡصَحُ لَكُمۡ وَاَعۡلَمُ مِنَ اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

৬২.) তোমাদের কাছে আমার রবের বাণী পৌঁছে দিচ্ছি। আমি তোমাদের কল্যাণকামী। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি এমন সব কিছু জানি যা তোমার জান না।

اَوَعَجِبۡتُمۡ اَنۡ جَآءَكُمۡ ذِكۡرٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ عَلٰى رَجُلٍ مِّنۡكُمۡ لِيُنۡذِرَكُمۡ وَلِتَتَّقُوۡا وَلَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ‏

৬৩.) তোমরা কি এ জন্য অবাক হচ্ছো যে, তোমাদের কাছে তোমাদের স্বীয় সম্প্রদায়েরই এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের রবের স্মারক এসেছে, তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য যাতে তোমরা ভুল পথে চলা থেকে রক্ষা পাও এবং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়?

 فَكَذَّبُوۡهُ فَاَنۡجَيۡنٰهُ وَالَّذِيۡنَ مَعَهٗ فِىۡ الۡفُلۡكِ وَاَغۡرَقۡنَا الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا‌ؕ اِنَّهُمۡ كَانُوۡا قَوۡمًا عَمِيۡنَ‏

৬৪.) কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলো। অবশেষে আমি তাকে ও তার সাথীদেরকে একটি নৌকায় (আরোহণ করিয়ে) রক্ষা করি এবং আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দেই। নিঃসন্দেহে তারা ছিল দৃষ্টিশক্তিহীন জনগোষ্ঠি।

 وَاِلٰى عَادٍ اَخَاهُمۡ هُوۡدًا‌ؕ قَالَ يٰقَوۡمِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرُهٗؕ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ

৬৫.) আর 'আদ' (জাতি) র কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই হূদকে। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। এরপরও কি তোমরা ভুল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?”

 قَالَ الۡمَلَاُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖۤ اِنَّا لَنَرٰٮكَ فِىۡ سَفَاهَةٍ وَّاِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الۡكٰذِبِيۡنَ‏

৬৬.) তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা তার কথা মানতে অস্বীকার করছিল, তারা বললোঃ “আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি এবং আমাদের ধারণা তুমি মিথ্যুক।”

 قَالَ يٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِىۡ سَفَاهَةٌ وَّلٰكِنِّىۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ

৬৭.) সে বললোঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আমি নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত নই। বরং আমি রব্বুল আলামীনের রসূল,

 اُبَلِّغُكُمۡ رِسٰلٰتِ رَبِّىۡ وَاَنَا۟ لَكُمۡ نَاصِحٌ اَمِيۡنٌ‏

৬৮.) আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের এমন হিতাকাংখী যার ওপর ভরসা করা যেতে পারে।”

 اَوَعَجِبۡتُمۡ اَنۡ جَآءَكُمۡ ذِكۡرٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ عَلٰى رَجُلٍ مِّنۡكُمۡ لِيُنۡذِرَكُمۡ‌ؕ وَاذۡكُرُوۡۤا اِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۡۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّزَادَكُمۡ فِىۡ الۡخَلۡقِ بَصۜۡطَةً‌‌ۚ فَاذۡكُرُوۡۤا اٰلَۤاءَ اللّٰهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

৬৯.) তোমরা কি এ জন্য অবাক হচ্ছো যে, তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তোমাদেরই স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে তোমাদের রবের স্মারক তোমাদের কাছে এসেছে? ভুলে যেয়ো না, তোমাদের রব নূহের সম্প্রদায়ের পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং অত্যন্ত স্বাস্থ্যবান ও সুঠামদেহের অধিকারী করেন। কাজেই আল্লাহর অপরিসীম শক্তির কথা স্মরণ রাখো,  আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।

 قَالُوۡۤا اَجِئۡتَنَا لِنَعۡبُدَ اللّٰهَ وَحۡدَهٗ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعۡبُدُ اٰبَآؤُنَا‌ۚ فَاۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنۡ كُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِيۡنَ‏

৭০.) তারা জবাব দিলোঃ “তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, আমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবো এবং আমাদের বাপ-দাদারা যাদের ইবাদত করে এসেছে তাদেরকে পরিহার করবো? বেশ, যদি তুমি সত্যবাদী হও, তাহলে আমাদের যে আযাবের হুমকি দিচ্ছো, তা নিয়ে এসো।”

 قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَيۡكُمۡ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ رِجۡسٌ وَّغَضَبٌ‌ؕ اَتُجَادِلُوۡنَنِىۡ فِىۡۤ اَسۡمَآءٍ سَمَّيۡتُمُوۡهَاۤ اَنۡتُمۡ وَاٰبَآؤُكُمۡ مَّا نَزَّلَ اللّٰهُ بِهَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ‌ؕ فَانتَظِرُوۡۤا اِنِّىۡ مَعَكُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِيۡنَ‏

৭১.) সে বললোঃ “তোমাদের রবের অভিসম্পাত পড়েছে তোমাদের ওপর এবং তাঁর গযবও। তোমরা কি আমার সাথে এমন কিছু নাম নিয়ে বিতর্ক করছো, যেগুলো তৈরী করেছো তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা এবং যেগুলোর স্বপক্ষে আল্লাহ‌ কোন সনদ নাযিল করেননি? ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।”

 فَاَنۡجَيۡنٰهُ وَالَّذِيۡنَ مَعَهٗ بِرَحۡمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعۡنَا دَابِرَ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا‌ وَمَا كَانُوۡا مُؤۡمِنِيۡنَ‏

৭২.) অবশেষে নিজ অনুগ্রহে আমি হূদ ও তার সাথীদেরকে উদ্ধার করি এবং আমার আয়াতকে যারা মিথ্যা বলেছিল এবং যারা ঈমান আনেনি তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেই।

 وَاِلٰى ثَمُوۡدَ اَخَاهُمۡ صٰلِحًا‌ۘ قَالَ يٰقَوۡمِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرُهٗ‌ؕ قَدۡ جَآءَتۡكُمۡ بَيِّنَةٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ‌ هٰذِهٖ نَاقَةُ اللّٰهِ لَكُمۡ اٰيَةً‌ فَذَرُوۡهَا تَاۡكُلۡ فِىۡۤ اَرۡضِ اللّٰهِ‌ وَلَا تَمَسُّوۡهَا بِسُوۡٓءٍ فَيَاۡخُذَكُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ

৭৩.) আর সামূদের কাছে পাঠাই তাদের ভাই সালেহকে। সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে। আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন। কাজেই তাকে আল্লাহর জমিতে চরে খাবার জন্য ছেড়ে দাও। কোন অসদুদ্দেশ্যে এর গায়ে হাত দিয়ো না। অন্যথায় একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাব তোমাদের ওপর আপতিত হবে।

 وَاذۡكُرُوۡۤا اِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۡۢ بَعۡدِ عَادٍ وَّبَوَّاَكُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ تَتَّخِذُوۡنَ مِنۡ سُهُوۡلِهَا قُصُوۡرًا وَّتَنۡحِتُوۡنَ الۡجِبَالَ بُيُوۡتًا‌ۚ فَاذۡكُرُوۡۤا اٰلَۤاءَ اللّٰهِ وَلَا تَعۡثَوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِيۡنَ

৭৪.) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আল্লাহ‌ আদ জাতির পর তোমাদেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন, যার ফলে আজ তোমরা তাদের সমতলভূমিতে বিপুলায়তন প্রাসাদ ও তার পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছো। কাজেই তাঁর সর্বময় ক্ষমতার স্মরণ থেকে গাফেল হয়ে যেয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।

 قَالَ الۡمَلَاُ الَّذِيۡنَ اسۡتَكۡبَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖ لِلَّذِيۡنَ اسۡتُضۡعِفُوۡا لِمَنۡ اٰمَنَ مِنۡهُمۡ اَتَعۡلَمُوۡنَ اَنَّ صٰلِحًا مُّرۡسَلٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ‌ؕ قَالُوۡۤا اِنَّا بِمَاۤ اُرۡسِلَ بِهٖ مُؤۡمِنُوۡنَ

৭৫.) তার সম্প্রদায়ের স্বঘোষিত প্রতাপশালী নেতারা দুর্বল শ্রেণীর মুমিনদেরকে বললোঃ “তোমরা কি সত্যিই জানো, সালেহ তার রবের প্রেরিত নবী?” তারা জবাব দিলোঃ “নিশ্চয়ই, যে বাণী সহকারে তাঁকে পাঠানো হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি।”

 قَالَ الَّذِيۡنَ اسۡتَكۡبَرُوۡۤا اِنَّا بِالَّذِىۡۤ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ كٰفِرُوۡنَ‏

৭৬.) ঐ শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদাররা বললো, “তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অস্বীকার করি।”

 فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوۡا عَنۡ اَمۡرِ رَبِّهِمۡ وَقَالُوۡا يٰصٰلِحُ ائۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ اِنۡ كُنۡتَ مِنَ الۡمُرۡسَلِيۡنَ‏

৭৭.) তারপর তারা সেই উটনীটিকে মেরে ফেললো,  পূর্ণদাম্ভিকতা সহকারে নিজেদের রবের হুকুম অমান্য করলো এবং সালেহকে বললোঃ “নিয়ে এসো সেই আযাব, যার হুমকি তুমি আমাদের দিয়ে থাকো, যদি সত্যিই তুমি নবী হয়ে থাকো।”

 فَاَخَذَتۡهُمُ الرَّجۡفَةُ فَاَصۡبَحُوۡا فِىۡ دَارِهِمۡ جٰثِمِيۡنَ‏

৭৮.) অবশেষে একটি প্রলয়ংকর দুর্যোগ তাদেরকে গ্রাস করলো এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।

فَتَوَلّٰى عَنۡهُمۡ وَقَالَ يٰقَوۡمِ لَقَدۡ اَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَالَةَ رَبِّىۡ وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلٰكِنۡ لَّا تُحِبُّوۡنَ النّٰصِحِيۡنَ

৭৯.) আর সালেহ একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেলোঃ “হে আমার সম্প্রদায়! আমার রবের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণ কামনা করেছি। কিন্তু আমি কি করবো, তোমরা তো নিজেদের হিতাকাংখীকে পছন্দই কর না।”

 وَلُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهٖۤ اَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمۡ بِهَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنَ الۡعٰلَمِيۡنَ‏

৮০.) আর লূতকে আমি পয়গম্বর করে পাঠাই। তারপর স্মরণ করো, যখন সে নিজের সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বললোঃ “তোমরা কি এতই নির্লজ্জ হয়ে গেলে যে, দুনিয়ার ইতিপূর্বে কেউ কখনো করেনি এমন অশ্লীল কাজ করে চলেছো?

 اِنَّكُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ شَهۡوَةً مِّنۡ دُوۡنِ النِّسَآءِ‌ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ مُّسۡرِفُوۡنَ

৮১.) তোমরা মেয়েদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করছো? প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী গোষ্ঠী।”

وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡۤا اَخۡرِجُوۡهُمۡ مِّنۡ قَرۡيَتِكُمۡ‌ۚ اِنَّهُمۡ اُنَاسٌ يَّتَطَهَّرُوۡنَ

৮২.) কিন্তু তার সম্প্রদায়ের জওয়াব এছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, “এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা বড়ই পবিত্রতার ধ্বজাধারী হয়েছে।”

 فَاَنۡجَيۡنٰهُ وَاَهۡلَهٗۤ اِلَّا امۡرَاَتَهٗ‌ۖ كَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِيۡنَ

৮৩.) শেষ পর্যন্ত আমি লুতের স্ত্রীকে ছাড়া-যে পেছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি

 وَاَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ مَّطَرًا‌ؕ فَانْظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عٰقِبَةُ الۡمُجۡرِمِيۡنَ‏ 

৮৪.) এবং এ সম্প্রদায়ের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করি।  তারপর সেই অপরাধীদের কী পরিণাম হয়েছিল দেখো।

 وَاِلٰى مَدۡيَنَ اَخَاهُمۡ شُعَيۡبًا‌ؕ قَالَ يٰقَوۡمِ اعۡبُدُوۡا اللّٰهَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ اِلٰهٍ غَيۡرُهٗ‌ؕ قَدۡ جَآءَتۡكُمۡ بَيِّنَةٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ‌ فَاَوۡفُوۡا الۡكَيۡلَ وَالۡمِيۡزَانَ وَلَا تَبۡخَسُوۡا النَّاسَ اَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِهَا‌ؕ ذٰلِكُمۡ خَيۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ‌ۚ‏

৮৫.) আর মাদইয়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শো'আইবকে পাঠাই। সে বলেঃ “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা এসে গেছে। কাজেই ওজন ও পরিমাপ পুরোপুরি দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিয়ো না এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ, যদি তোমরা যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো।”

 وَلَا تَقۡعُدُوۡا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوۡعِدُوۡنَ وَتَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِهٖ وَتَبۡغُوۡنَهَا عِوَجًا‌ۚ وَاذۡكُرُوۡۤا اِذۡ كُنۡتُمۡ قَلِيۡلاً فَكَثَّرَكُمۡ‌ وَانْظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُفۡسِدِيۡنَ

৮৬.) আর লোকদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করার, ঈমানদারদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেবার এবং সোজা পথকে বাঁকা করার জন্য (জীবনের) প্রতিটি পথে লুটেরা হয়ে বসে থেকো না। স্মরণ করো, সেই সময়ের কথা যখন তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক। তারপর আল্লাহ‌ তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। আর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হয়েছে তা একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো।

 وَاِنۡ كَانَ طَآٮِٕفَةٌ مِّنۡكُمۡ اٰمَنُوۡا بِالَّذِىۡۤ اُرۡسِلۡتُ بِهٖ وَطَآٮِٕفَةٌ لَّمۡ يُؤۡمِنُوۡا فَاصۡبِرُوۡا حَتّٰى يَحۡكُمَ اللّٰهُ بَيۡنَنَا‌ۚ وَهُوَ خَيۡرُ الۡحٰكِمِيۡنَ‏

৮৭.) যে শিক্ষা সহকারে আমাকে পাঠানো হয়েছে, তোমাদের মধ্য থেকে কোন একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান আনে এবং অন্য একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান না আনে তাহলে ধৈর্যসহকারে দেখতে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহ‌ আমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন। আর তিনিই সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।

 قَالَ الۡمَلَاُ الَّذِيۡنَ اسۡتَكۡبَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖ لَنُخۡرِجَنَّكَ يٰشُعَيۡبُ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَكَ مِنۡ قَرۡيَتِنَاۤ اَوۡ لَتَعُوۡدُنَّ فِىۡ مِلَّتِنَا‌ؕ قَالَ اَوَلَوۡ كُنَّا كٰرِهِيۡنَ‌‏

৮৮.) নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত গোত্রপতিরা তাকে বললোঃ “হে শো'আইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবো। অন্যথায় তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের ধর্মে।” শো'আইব জবাব দিলোঃ “আমরা রাজি না হলেও কি আমাদের জোর করে ফিরিয়ে আনা হবে? তোমাদের ধর্ম থেকে আল্লাহ‌ আমাদের উদ্ধার করার পর আবার যদি আমরা তাতে ফিরে আসি তাহলে

 قَدِ افۡتَرَيۡنَا عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا اِنۡ عُدۡنَا فِىۡ مِلَّتِكُمۡ بَعۡدَ اِذۡ نَجّٰٮنَا اللّٰهُ مِنۡهَا‌ؕ وَمَا يَكُوۡنُ لَنَاۤ اَنۡ نَّعُوۡدَ فِيۡهَاۤ اِلَّاۤ اَنۡ يَّشَآءَ اللّٰهُ رَبُّنَا‌ؕ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَىۡءٍ عِلۡمًا‌ؕ عَلَى اللّٰهِ تَوَكَّلۡنَا‌ؕ رَبَّنَا افۡتَحۡ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَ قَوۡمِنَا بِالۡحَقِّ وَاَنۡتَ خَيۡرُ الۡفٰتِحِيۡنَ

৮৯.) আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী বিবেচিত হবো। আমাদের রব আল্লাহ‌ যদি না চান, তাহলে আমাদের পক্ষে সে দিকে ফিরে যাওয়া আর কোনক্রমেই সম্ভব নয়। আমাদের রবের জ্ঞান সমস্ত জিনিসকে ঘিরে আছে। আমরা তাঁরই ওপর নির্ভর করি। হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যথাযথভাবে ফায়সালা করে দাও এবং তুমি সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী।”

 وَقَالَ الۡمَلَاُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَوۡمِهٖ لَٮِٕنِ اتَّبَعۡتُمۡ شُعَيۡبًا اِنَّكُمۡ اِذًا لَّخٰسِرُوۡنَ

৯০.) তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা, যারা তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল, পরস্পরকে বললোঃ “যদি তোমরা শো'আইবের আনুগত্য মেনে নাও, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে।”

 فَاَخَذَتۡهُمُ الرَّجۡفَةُ فَاَصۡبَحُوۡا فِىۡ دَارِهِمۡ جٰثِمِيۡنَ‌ۛ‌ۚ ‌ ۖ‏

৯১.) কিন্তু সহসা একটি প্রলয়ংকরী বিপদ তাদেরকে পাকড়াও করে এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।

 الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا شُعَيۡبًا كَاَنۡ لَّمۡ يَغۡنَوۡا فِيۡهَا‌‌ ۛ‌ۚ اَلَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا شُعَيۡبًا كَانُوۡا هُمُ الۡخٰسِرِيۡنَ‌‌‏

৯২.) যারা শো'আইবকে মিথ্যা বলেছিল তারা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় যেন সেই সব গৃহে কোনদিন তার বসবাসই করতো না। শো'আইবকে যারা মিথ্যা বলেছিল অবশেষে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।

 فَتَوَلّٰى عَنۡهُمۡ وَقَالَ يٰقَوۡمِ لَقَدۡ اَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسٰلٰتِ رَبِّىۡ وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ‌ۚ فَكَيۡفَ اٰسَىٰ عَلٰى قَوۡمٍ كٰفِرِيۡنَ‏

৯৩.) আর শো'আইব একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে যায়-“হে আমাদের জাতির লোকেরা! আমি আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের কল্যাণ কামনার হক আদায় করেছি। এখন আমি এমন জাতির জন্য দুঃখ করবো কেন, যারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করে?”

 وَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا فِىۡ قَرۡيَةٍ مِّنۡ نَّبِىٍّ اِلَّاۤ اَخَذۡنَاۤ اَهۡلَهَا بِالۡبَاۡسَآءِ وَالضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمۡ يَضَّرَّعُوۡنَ

৯৪.) আমি যখনই কোন জনপদে নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার লোকদেরকে প্রথমে অর্থকষ্ট ও দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন করেছি, একথা ভেবে যে, হয়তো তারা বিনম্র হবে ও নতি স্বীকার করবে।

 ثُمَّ بَدَّلۡنَا مَكَانَ السَّيِّئَةِ الۡحَسَنَةَ حَتّٰى عَفَوا وَّقَالُوۡا قَدۡ مَسَّ اٰبَآءَنَا الضَّرَّآءُ وَالسَّرَّآءُ فَاَخَذۡنٰهُمۡ بَغۡتَةً وَّهُمۡ لَا يَشۡعُرُوۡنَ‏

৯৫.) তারপর তাদের দুরবস্থাকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিয়েছি। ফলে তারা প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং বলতে শুরু করেছে “আমাদের পূর্বপুরুষদের ওপরও দুর্দিন ও সুদিনের আনাগোনা চলতো।” অবশেষে আমি তাদেরকে সহসাই পাকড়াও করেছি। অথচ তারা জানতেও পারেনি।

 وَلَوۡ اَنَّ اَهۡلَ الۡقُرٰٓى اٰمَنُوۡا وَاتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ وَلٰكِنۡ كَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ‏

৯৬.) যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর রবকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি।

 اَفَاَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰٓى اَنۡ يَّاۡتِيَهُمۡ بَاۡسُنَا بَيَاتًا وَّهُمۡ نَآٮِٕمُوۡنَؕ‏

৯৭.) জনপদের লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন?

 اَوَاَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰٓى اَنۡ يَّاۡتِيَهُمۡ بَاۡسُنَا ضُحًى وَهُمۡ يَلۡعَبُوۡنَ‏

৯৮.) অথবা তারা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, আমাদের মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে?

 اَفَاَمِنُوۡا مَكۡرَ اللّٰهِ‌ۚ فَلَا يَاۡمَنُ مَكۡرَ اللّٰهِ اِلَّا الۡقَوۡمُ الۡخٰسِرُوۡنَ‏

৯৯.) এরা কি আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে? অথচ যে সব সম্প্রদায়ের ধ্বংস অবধারিত তারা ছাড়া আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে আর কেউ নির্ভীক হয় না।

 اَوَلَمۡ يَهۡدِ لِلَّذِيۡنَ يَرِثُوۡنَ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِ اَهۡلِهَاۤ اَنۡ لَّوۡ نَشَآءُ اَصَبۡنٰهُمۡ بِذُنُوۡبِهِمۡ‌ۚ وَنَطۡبَعُ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَسۡمَعُوۡنَ‏

১০০.) পৃথিবীর পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে ততটুকুও শেখেনি যে, আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি। (কিন্তু তারা শিক্ষণীয় বিষয়াবলীর ব্যাপারে অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করে থাকে। ) আর আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই। ফলে তারা কিছুই শোনে না।

 تِلۡكَ الۡقُرٰى نَقُصُّ عَلَيۡكَ مِنۡ اَنۡۢبَآٮِٕهَا‌ۚ وَلَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِ‌ۚ فَمَا كَانُوۡا لِيُؤۡمِنُوۡا بِمَا كَذَّبُوۡا مِنۡ قَبۡلُ‌ؕ كَذٰلِكَ يَطۡبَعُ اللّٰهُ عَلٰى قُلُوۡبِ الۡكٰفِرِيۡنَ‏

১০১.) যেসব জাতির কাহিনী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি (যাদের দৃষ্টান্ত তোমাদের সামনে রয়েছে) তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তাদের কাছে আসে, কিন্তু যে জিনিসকে তারা একবার মিথ্যা বলেছিল তাকে আবার মেনে নেবার পাত্র তারা ছিল না। দেখো, এভাবে আমি সত্য অস্বীকারকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই।

 وَمَا وَجَدۡنَا لِاَكۡثَرِهِمۡ مِّنۡ عَهۡدٍ‌ۚ وَاِنۡ وَّجَدۡنَاۤ اَكۡثَرَهُمۡ لَفٰسِقِيۡنَ‏

১০২.) তাদের অধিকাংশের মধ্যে আমি অঙ্গীকার পালনের মনোভাব পাইনি। বরং অধিকাংশকেই পেয়েছি ফাসেক ও নাফরমান।

ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ مُّوۡسَىٰ بِاٰيٰتِنَاۤ اِلٰى فِرۡعَوۡنَ وَمَلَاْئِهٖ فَظَلَمُوۡا بِهَا‌ۚ فَانْظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عٰقِبَةُ الۡمُفۡسِدِيۡنَ

১০৩.) তারপর এ জাতিগুলোর পর (যাদের কথা ওপরে বলা হয়েছে) আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে।  কিন্তু তারাও আমার নিদর্শনসমূহের ওপর জুলুম করে। ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল একবার দেখো।

 وَقَالَ مُوۡسٰى يٰفِرۡعَوۡنُ اِنِّىۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِيۡنَۙ‏

১০৪.) মূসা বললোঃ “হে ফেরাউন! আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত।

حَقِيۡقٌ عَلٰٓى اَنۡ لَّاۤ اَقُوۡلَ عَلَى اللّٰهِ اِلَّا الۡحَقَّ‌ؕ قَدۡ جِئۡتُكُمۡ بِبَيِّنَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ فَاَرۡسِلۡ مَعِىَ بَنِىۡۤ اِسۡرٰٓءِيۡلَ

১০৫.) আমার দায়িত্বই হচ্ছে, আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না। আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি। কাজেই তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।”

 قَالَ اِنۡ كُنۡتَ جِئۡتَ بِاٰيَةٍ فَاۡتِ بِهَاۤ اِنۡ كُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِيۡنَ

১০৬.) ফেরাউন বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো।”

 فَاَلۡقٰى عَصَاهُ فَاِذَا هِىَ ثُعۡبَانٌ مُّبِيۡنٌ

১০৭.) মূসা নিজের লাঠিটি ছুড়ে দিল। অমনি তা একটি জ্বলজ্যান্ত অজগরের রূপ ধারণ করলো।

 وَّنَزَعَ يَدَهٗ فَاِذَا هِىَ بَيۡضَآءُ لِلنّٰظِرِيۡنَ‏

১০৮.) সে নিজের হাত বের করলো, তৎক্ষণাত দেখা গেলো সেটি দর্শকদের সামনে চমকাচ্ছে। 

 قَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ اِنَّ هٰذَا لَسٰحِرٌ عَلِيۡمٌۙ

১০৯.) এ দৃশ্য দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরস্পরকে বললোঃ “নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন অত্যন্ত দক্ষ যাদুকর,

 يُّرِيۡدُ اَنۡ يُّخۡرِجَكُمۡ مِّنۡ اَرۡضِكُمۡ‌ۚ فَمَاذَا تَاۡمُرُوۡنَ‏

১১০.) তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়। এখন তোমরা কি বলবে বলো?"

 قَالُوۡۤا اَرۡجِهۡ وَاَخَاهُ وَاَرۡسِلۡ فِىۡ الۡمَدَآٮِٕنِ حٰشِرِيۡنَۙ‏

১১১.) তখন তারা সবাই ফেরউনকে পরামর্শ দিলো, তাকে ও তার ভাইকে অপেক্ষারত রাখুন এবং নগরে নগরে সংগ্রাহক পাঠান।

يَاۡتُوۡكَ بِكُلِّ سٰحِرٍ عَلِيۡمٍ‏

১১২.) তারা প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে আপনার কাছে নিয়ে আসবে। 

﴿ وَجَآءَ السَّحَرَةُ فِرۡعَوۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ لَنَا لَاَجۡرًا اِنۡ كُنَّا نَحۡنُ الۡغٰلِبِيۡنَ‏﴾

১১৩.) অবশেষে যাদুকরেরা ফেরাউনের কাছে এলো। তারা বললোঃ “যদি আমরা বিজয়ী হই, তাহলে অবশ্যি এর প্রতিদান পাবো তো?”

 قَالَ نَعَمۡ وَاِنَّكُمۡ لَمِنَ الۡمُقَرَّبِيۡنَ

১১৪.) ফেরাউন জবাব দিলোঃ “হ্যাঁ, তাছাড়া তোমরা আমার দরবারের ঘনিষ্ঠ জনেও পরিণত হবে।”

قَالُوۡا يٰمُوۡسٰٓى اِمَّاۤ اَنۡ تُلۡقِىَ وَاِمَّاۤ اَنۡ نَّكُوۡنَ نَحۡنُ الۡمُلۡقِيۡنَ

১১৫.) তখন তারা মূসাকে বললোঃ “তুমি ছুড়ঁবে না, না আমরা ছুঁড়বো?”

 قَالَ اَلۡقُوۡا‌ۚ فَلَمَّاۤ اَلۡقَوۡا سَحَرُوۡۤا اَعۡيُنَ النَّاسِ وَاسۡتَرۡهَبُوۡهُمۡ وَجَآءُوۡ بِسِحۡرٍ عَظِيۡمٍ

১১৬.) মূসা জবাব দিলোঃ “তোমরাই ছোঁড়ো।” তারা যখনই নিজেদের যাদুর বাণ ছুঁড়লো তখনই তা লোকদের চোখে যাদু করলো, মনে আতঙ্ক ছড়ালো এবং তারা বড়ই জবরদস্ত যাদু দেখালো।

 وَاَوۡحَيۡنَاۤ اِلٰى مُوۡسٰٓى اَنۡ اَلۡقِ عَصَاكَ‌ۚ فَاِذَا هِىَ تَلۡقَفُ مَا يَاۡفِكُوۡنَ‌ۚ‏

১১৭.) মূসাকে আমি ইঙ্গিত করলাম, তোমর লাঠিটা ছুঁড়ে দাও। তার লাঠি ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা যাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে লাগলো। 

 فَوَقَعَ الۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ‌ۚ‏


১১৮.) এভাবে যা সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো।

 فَغُلِبُوۡا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوۡا صٰغِرِيۡنَ‌ۚ‏

১১৯.) ফেরাউন ও তার সাথীরা মোকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং (বিজয়ী হবার পরিবর্তে) উল্টো তারা লাঞ্ছিত হলো।

 وَاُلۡقِىَ السَّحَرَةُ سٰجِدِيۡنَ‌ۖ‌ۚ‏

১২০.) আর যাদুকরদের অবস্থা হলো এই-যেন কোন জিনিস ভিতর থেকে তাদেরকে সিজদাবনত করে দিলো।

 قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِرَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَۙ‏

১২১.) তারা বলতে লাগলোঃ “আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজাহানের রবের প্রতি,

 رَبِّ مُوۡسٰى وَهٰرُوۡنَ‏

১২২.) যিনি মূসা ও হারুণেরও রব।”

 قَالَ فِرۡعَوۡنُ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ قَبۡلَ اَنۡ اٰذَنَ لَكُمۡ‌ۚ اِنَّ هٰذَا لَمَكۡرٌ مَّكَرۡتُمُوۡهُ فِىۡ الۡمَدِيۡنَةِ لِتُخۡرِجُوۡا مِنۡهَاۤ اَهۡلَهَا‌ۚ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ‏

১২৩.) ফেরাউন বললোঃ “আমার অনুমতি দেবার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা কোন গোপন চক্রান্ত ছিল। তোমরা এ রাজধানীতে বসে এ চক্রান্ত এঁটেছো এর মালিকদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। বেশ, এখন এর পরিণাম তোমরা জানতে পারবে।

 لَاُقَطِّعَنَّ اَيۡدِيَكُمۡ وَاَرۡجُلَكُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ ثُمَّ لَاُصَلِّبَنَّكُمۡ اَجۡمَعِيۡنَ

১২৪.) তোমাদের হাত-পা আমি কেটে ফেলবো বিপরীত দিক থেকে এবং তারপর তোমাদের সবাইকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করবো।”

 قَالُوۡۤا اِنَّاۤ اِلٰى رَبِّنَا مُنۡقَلِبُوۡنَ‌ۚ‏

১২৫.) তারা জবাব দিলোঃ “সে যাই হোক আমাদের রবের দিকেই তো আমাদের ফিরতে হবে।

 وَمَا تَنۡقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنۡ اٰمَنَّا بِاٰيٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَا‌ؕ رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَيۡنَا صَبۡرًا وَّتَوَفَّنَا مُسۡلِمِيۡنَ‏

১২৬.) তুমি যে ব্যাপারে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো, তা এছাড়া আর কিছুই নয় যে, আমাদের রবের নিদর্শসমূহ যখন আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা তা মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো এবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও।”

 وَقَالَ الۡمَلَاُ مِنۡ قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ اَتَذَرُ مُوۡسٰى وَقَوۡمَهٗ لِيُفۡسِدُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ وَيَذَرَكَ وَاٰلِهَتَكَ‌ؕ قَالَ سَنُقَتِّلُ اَبۡنَآءَهُمۡ وَنَسۡتَحۡىٖ نِسَآءَهُمۡ‌ۚ وَاِنَّا فَوۡقَهُمۡ قَاهِرُوۡنَ‏

১২৭.) ফেরাউনকে তার জাতির প্রধানরা বললোঃ “তুমি কি মূসা ও তার জাতিকে এমনিই ছেড়ে দেবে যে, তারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়াক এবং তোমার ও তোমার মাবুদের বন্দেগী পরিত্যাগ করুক?” ফেরআউন জবাব দিলঃ “আমি তাদের পুত্রদের হত্যা করবো এবং তাদের কন্যাদের জীবিত রাখবো। আমরা তাদের ওপর প্রবল কর্তৃত্বের অধিকারী।”

 قَالَ مُوۡسٰى لِقَوۡمِهِ اسۡتَعِيۡنُوۡا بِاللّٰهِ وَاصۡبِرُوۡا‌ۚ اِنَّ الۡاَرۡضَ لِلّٰهِۙ يُوۡرِثُهَا مَنۡ يَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ‌ؕ وَالۡعٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِيۡنَ‏

১২৮.) মূসা তার জাতিকে বললোঃ “আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সবর করো। এ পৃথিবী তো আল্লাহরই। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন। আর যারা তাঁকে ভয় করে কাজ করে চূড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্য নির্ধারিত।”

 قَالُوۡۤا اُوۡذِيۡنَا مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَاۡتِيَنَا وَمِنۡۢ بَعۡدِ مَا جِئۡتَنَا‌ؕ قَالَ عَسٰى رَبُّكُمۡ اَنۡ يُّهۡلِكَ عَدُوَّكُمۡ وَيَسۡتَخۡلِفَكُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ فَيَنۡظُرَ كَيۡفَ تَعۡمَلُوۡنَ‏

১২৯.) তার জাতির লোকেরা বললোঃ “তোমার আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং এখন তোমার আসার পরেও নির্যাতিত হচ্ছি।” সে জবাব দিলঃ “শীঘ্রই তোমাদের রব তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দেবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে খলীফা করবেন, তারপর তোমরা কেমন কাজ করো তা তিনি দেখবেন।”

 وَلَقَدۡ اَخَذۡنَاۤ اٰلَ فِرۡعَوۡنَ بِالسِّنِيۡنَ وَنَقۡصٍ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُوۡنَ

১৩০.) ফেরাউনের লোকদেরকে আমি কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানিতে আক্রান্ত করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, হয়তো তাদের চেতনা ফিরে আসবে।

 فَاِذَا جَآءَتۡهُمُ الۡحَسَنَةُ قَالُوۡا لَنَا هٰذِهٖ‌ۚ وَاِنۡ تُصِبۡهُمۡ سَيِّئَةٌ يَّطَّيَّرُوۡا بِمُوۡسٰى وَمَنۡ مَّعَهٗۤ‌ؕ اَلَاۤ اِنَّمَا طٰٓٮِٕرُهُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ وَلٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ

১৩১.) কিন্তু তাদের এমনি অবস্থা ছিল যে, ভাল সময় এলে তারা বলতো এটা তো আমাদের প্রাপ্য। আর খারাপ সময় এলে মূসা ও তার সাথীদেরকে নিজেদের জন্য কূলক্ষুণে গণ্য করতো। অথচ তাদের কুলক্ষণ তো আল্লাহর কাছে ছিল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ছিল অজ্ঞ।

 وَقَالُوۡا مَهۡمَا تَاۡتِنَا بِهٖ مِنۡ اٰيَةٍ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَاۙ فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِيۡنَ‏

১৩২.) তারা মূসাকে বললোঃ আমাদের যাদু করার জন্য তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, আমরা তোমার কথা মেনে নেবো না

 فَاَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمُ الطُّوۡفَانَ وَالۡجَرَادَ وَالۡقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ اٰيٰتٍ مُّفَصَّلٰتٍ فَاسۡتَكۡبَرُوۡا وَكَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِيۡنَ‏

১৩৩.) অবশেষে আমি তাদের ওপর দুর্যোগ পাঠালাম,  পংগপাল ছেড়ে দিলাম, উকুন ছড়িয়ে দিলাম, ব্যাঙের উপদ্রব সৃষ্টি করলাম এবং রক্ত বর্ষণ করলাম। এসব নিদর্শন আলাদা আলাদা করে দেখালাম। কিন্তু তারা অহংকারে মেতে রইলো এবং তারা ছিল বড়ই অপরাধ প্রবণ সম্প্রদায়।

 وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيۡهِمُ الرِّجۡزُ قَالُوۡا يٰمُوۡسَى ادۡعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِنۡدَكَ‌ۚ لَٮِٕنۡ كَشَفۡتَ عَنَّا الرِّجۡزَ لَنُؤۡمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرۡسِلَنَّ مَعَكَ بَنِىۡۤ اِسۡرآءِيۡلَ‌ۚ‏

১৩৪.) যখনই তাদের ওপর বিপদ আসতো তারা বলতোঃ” হে মূসা! তোমার রবের কাছে তুমি যে মর্যাদার অধিকারী তার ভিত্তিতে তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো। যদি এবার তুমি আমাদের ওপর থেকে এ দুর্যোগ হটিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কথা মেনে নেবো এবং বনী ইসরাঈলকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো।

 فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُمُ الرِّجۡزَ اِلٰٓى اَجَلٍ هُمۡ بٰلِغُوۡهُ اِذَا هُمۡ يَنۡكُثُوۡنَ‏

১৩৫.) কিন্তু যখনই তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে নিতাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, অমনি তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করতো।

 فَانتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَاَغۡرَقۡنٰهُمۡ فِىۡ الۡيَمِّ بِاَنَّهُمۡ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَكَانُوۡا عَنۡهَا غٰفِلِيۡنَ

১৩৬.) তাই আমি তাদের থেকে বদলা নিয়েছি এবং তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ তারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা বলেছিল এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল।

 وَاَوۡرَثۡنَا الۡقَوۡمَ الَّذِيۡنَ كَانُوۡا يُسۡتَضۡعَفُوۡنَ مَشَارِقَ الۡاَرۡضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِىۡ بٰرَكۡنَا فِيۡهَا‌ؕ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ الۡحُسۡنَىٰ عَلٰى بَنِىۡۤ اِسۡرٰۤءِيۡلَ ۙ بِمَا صَبَرُوۡا‌ؕ وَدَمَّرۡنَا مَا كَانَ يَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَقَوۡمُهٗ وَمَا كَانُوۡا يَعۡرِشُوۡنَ‏

১৩৭.) আর তাদের জায়গায় আমি প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম দুর্বল ও অধোপতিত করে রাখা মানব গোষ্ঠীকে। অতঃপর যে ভূখণ্ডে আমি প্রাচুর্যে ভরে দিয়েছিলাম, তার পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে তাদেরই করতল গত করে দিয়েছিলাম। এভাবে বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার রবের কল্যানের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে। কারণ তারা সবর করেছিল। আর ফেরাউন ও তার জাতি যা কিছু তৈরী করেছিলও উচূ করছিল তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

 وَجَاوَزۡنَا بِبَنِىۡۤ اِسۡرٰۤءِيۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتَوۡا عَلٰى قَوۡمٍ يَّعۡكُفُوۡنَ عَلٰٓى اَصۡنَامٍ لَّهُمۡ‌ۚ قَالُوۡا يٰمُوۡسَى اجۡعَل لَّنَاۤ اِلٰهًا كَمَا لَهُمۡ اٰلِهَةٌ‌ؕ قَالَ اِنَّكُمۡ قَوۡمٌ تَجۡهَلُوۡنَ

১৩৮.) বনী ইসরাঈলকে আমি সাগর পার করে দিয়েছি। তারপর তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো, যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল। বনী ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ “হে মূসা! এদের মাবূদদের মত আমাদের জন্যও একটা মাবূদ বানিয়ে দাও।” মূসা বললোঃ “তোমরা বড়ই অজ্ঞের মত কথা বলছো।

 اِنَّ هٰٓؤُلَۤاءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمۡ فِيۡهِ وَبٰطِلٌ مَّا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ

১৩৯.) এরা যে পদ্ধতির অনুসরণ করছে তাতে ধ্বংস হবে এবং যে কাজ এরা করেছে তা সম্পূর্ণ বাতিল।”

 قَالَ اَغَيۡرَ اللّٰهِ اَبۡغِيۡكُمۡ اِلٰهًا وَّهُوَ فَضَّلَكُمۡ عَلَى الۡعٰلَمِيۡنَ‏

১৪০.) মূসা আরো বললোঃ “আমি কি তোমাদের জন্য আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ খুজবো? অথচ আল্লাহই সারা দুনিয়ার সমস্ত জাতি গোষ্ঠির ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

 وَاِذۡ اَنۡجَيۡنٰكُمۡ مِّنۡ اٰلِ فِرۡعَوۡنَ يَسُوۡمُوۡنَكُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ‌ۚ يُقَتِّلُوۡنَ اَبۡنَآءَكُمۡ وَيَسۡتَحۡيُوۡنَ نِسَآءَكُمۡ‌ؕ وَفِىۡ ذٰلِكُمۡ بَلَآءٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ عَظِيۡمٌ‏

১৪১.) আর (আল্লাহ বলেন) ঃ সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছিলাম, যারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতো, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করতো এবং মেয়েদের জীবিত রাখতো। আর এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য ছিল মহা পরীক্ষা।

 وٰوعَدۡنَا مُوۡسٰى ثَلٰثِيۡنَ لَيۡلَةً وَّاَتۡمَمۡنٰهَا بِعَشۡرٍ فَتَمَّ مِيۡقٰتُ رَبِّهٖۤ اَرۡبَعِيۡنَ لَيۡلَةً‌ۚ وَقَالَ مُوۡسٰى لِاَخِيۡهِ هٰرُوۡنَ اخۡلُفۡنِىۡ فِىۡ قَوۡمِىۡ وَاَصۡلِحۡ وَلَا تَتَّبِعۡ سَبِيۡلَ الۡمُفۡسِدِيۡنَ‏

১৪২.) মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশ দিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো।  যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই হারুনকে বললোঃ আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না। 

وَلَمَّا جَآءَ مُوۡسٰى لِمِيۡقَاتِنَا وَكَلَّمَهٗ رَبُّهٗۙ قَالَ رَبِّ اَرِنِىۡۤ اَنۡظُرۡ اِلَيۡكَ‌ؕ قَالَ لَنۡ تَرٰٮنِىۡ وَلٰكِنِ انْظُرۡ اِلَى الۡجَبَلِ فَاِنِ اسۡتَقَرَّ مَكَانَهٗ فَسَوۡفَ تَرٰٮنِىۡ‌ۚ فَلَمَّا تَجَلّٰى رَبُّهٗ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهٗ دَكًّا وَّخَرَّ مُوۡسٰى صَعِقًا‌ۚ فَلَمَّاۤ اَفَاقَ قَالَ سُبۡحٰنَكَ تُبۡتُ اِلَيۡكَ وَاَنَا۟ اَوَّلُ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ

১৪৩.) অতঃপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে আকূল আবেদন জানালো, “হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, “আমি তোমাকে দেখবো।” তিনি বললেনঃ “তুমি আমাকে দেখতে পারো না। হ্যাঁ,, সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে।” কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ “পাক-পবিত্র তোমার সত্তা। আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন।”

 قَالَ يٰمُوۡسٰٓى اِنِّىۡ اصۡطَفَيۡتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسٰلٰتِىۡ وَبِكَلٰمِىۡ‌ۖ فَخُذۡ مَاۤ اٰتَيۡتُكَ وَكُنۡ مِّنَ الشّٰكِرِيۡنَ

১৪৪.) বললেনঃ “হে মূসা! আমি সমস্ত লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তোমাকে নির্বাচিত করেছি, যেন আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারো এবং আমার সাথে কথা বলতে পারো। কাজেই আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

 وَكَتَبۡنَا لَهٗ فِىۡ الۡاَلۡوَاحِ مِنۡ كُلِّ شَىۡءٍ مَّوۡعِظَةً وَّتَفۡصِيۡلاً لِّكُلِّ شَىۡءٍ‌ۚ فَخُذۡهَا بِقُوَّةٍ وَّاۡمُرۡ قَوۡمَكَ يَاۡخُذُوۡا بِاَحۡسَنِهَا‌ؕ سَاُورِيۡكُمۡ دَارَ الۡفٰسِقِيۡنَ‏

১৪৫.) এরপর আমি মূসাকে কতকগুলো ফলকে জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কে উপদেশ এবং প্রত্যেকটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ লিখে দিলাম এবং তাকে বললামঃ “এগুলো শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতিকে এর উত্তম তাৎপর্যের অনুসরণ করার হুকুম দাও। শীঘ্রই আমি তোমাদের দেখাবো ফাসেকদের গৃহ।”

 سَاَصۡرِفُ عَنۡ اٰيٰتِىَ الَّذِيۡنَ يَتَكَبَّرُوۡنَ فِىۡ الۡاَرۡضِ بِغَيۡرِ الۡحَقِّؕ وَاِنۡ يَّرَوۡا كُلَّ اٰيَةٍ لَّا يُؤۡمِنُوۡا بِهَا‌ۚ وَاِنۡ يَّرَوۡا سَبِيۡلَ الرُّشۡدِ لَا يَتَّخِذُوۡهُ سَبِيۡلاً‌ۚ وَّاِنۡ يَّرَوۡا سَبِيۡلَ الۡغَىِّ يَتَّخِذُوۡهُ سَبِيۡلاً‌ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَكَانُوۡا عَنۡهَا غٰفِلِيۡنَ

১৪৬.) কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়,  শীঘ্রই আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো। তারা আমার যে কোন নিদর্শন দেখলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না। তাদের সামনে যদি সোজা পথ এসে যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবেনা। আর যদি বাঁকা পথ দেখতে পায় তাহলে তার ওপর চলতে আরম্ভ করবে। কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া থেকেছে।

 وَالَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَلِقَآءِ الۡاٰخِرَةِ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ‌ؕ هَلۡ يُجۡزَوۡنَ اِلَّا مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ‏

১৪৭.) আমার নিদর্শনসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে, তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে। যেমন কর্ম তেমন ফল-এছাড়া লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে?

 وَاتَّخَذَ قَوۡمُ مُوۡسٰى مِنۡۢ بَعۡدِهٖ مِنۡ حُلِيِّهِمۡ عِجۡلاً جَسَدًا لَّهٗ خُوَارٌ‌ؕ اَلَمۡ يَرَوۡا اَنَّهٗ لَا يُكَلِّمُهُمۡ وَلَا يَهۡدِيۡهِمۡ سَبِيۡلاً‌ۘ اِتَّخَذُوۡهُ وَكَانُوۡا ظٰلِمِيۡنَ‏

১৪৮.) মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত 'হাম্বা' রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম।

 وَلَمَّا سُقِطَ فِىۡۤ اَيۡدِيۡهِمۡ وَرَاَوۡا اَنَّهُمۡ قَدۡ ضَلُّوۡاۙ قَالُوۡا لَٮِٕنۡ لَّمۡ يَرۡحَمۡنَا رَبُّنَا وَيَغۡفِرۡ لَنَا لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ‏

১৪৯.) তারপর যখন তাদের প্রতারণার জাল ছিন্ন হয়ে গেলো এবং তারা দেখতে পেলো যে, আসলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলোঃ “যদি আমাদের রব আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন এবং আমাদের ক্ষমা না করেন, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।”

 وَلَمَّا رَجَعَ مُوۡسَىٰۤ اِلٰى قَوۡمِهٖ غَضۡبَانَ اَسِفًاۙ قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُوۡنِىۡ مِنۡۢ بَعۡدِىۡٓ‌ۚ اَعَجِلۡتُمۡ اَمۡرَ رَبِّكُمۡ‌ۚ وَاَلۡقَى الۡاَلۡوَاحَ وَاَخَذَ بِرَاۡسِ اَخِيۡهِ يَجُرُّهٗۤ اِلَيۡهِ‌ؕ قَالَ ابۡنَ اُمَّ اِنَّ الۡقَوۡمَ اسۡتَضۡعَفُوۡنِىۡ وَكَادُوۡا يَقۡتُلُوۡنَنِىۡ‌ۖ فَلَا تُشۡمِتۡ بِىَ الۡاَعۡدَآءَ وَلَا تَجۡعَلۡنِىۡ مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ

১৫০.) ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। এসেই বললেনঃ “আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না?” সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের (হারুন) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো। হারুন বললোঃ “হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যাম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না। 

 قَالَ رَبِّ اغۡفِرۡ لِىۡ وَلِاَخِىۡ وَاَدۡخِلۡنَا فِىۡ رَحۡمَتِكَ‌ۖ وَاَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِيۡنَ‏

১৫১.) তখন মূসা বললোঃ “হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী অনুগ্রহকারী।”

 اِنَّ الَّذِيۡنَ اتَّخَذُوۡا الۡعِجۡلَ سَيَنَالُهُمۡ غَضَبٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَذِلَّةٌ فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا‌ؕ وَكَذٰلِكَ نَجۡزِىۡ الۡمُفۡتَرِيۡنَ‏

১৫২.) (জওয়াবে বলা হলো) “যারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়েছে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের রবের ক্রোধের শিকার হবেই এবং দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত হবে। মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এমনি ধরনের শাস্তিই দিয়ে থাকি।

وَالَّذِيۡنَ عَمِلُوۡا السَّيِّاٰتِ ثُمَّ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِهَا وَاٰمَنُوۡۤا اِنَّ رَبَّكَ مِنۡۢ بَعۡدِهَا لَغَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ‏

১৫৩.) আর যারা খারাপ কাজ করে তারপর তাওবা করে নেয় এবং ঈমান আনে, এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে এ তাওবা ও ঈমানের পর তোমার রব ক্ষমাশীল ও করুণাময়।

 وَلَمَّا سَكَتَ عَنۡ مُّوۡسَى الۡغَضَبُ اَخَذَ الۡاَلۡوَاحَ‌ۖ وَفِىۡ نُسۡخَتِهَا هُدًى وَرَحۡمَةٌ لِّلَّذِيۡنَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ يَرۡهَبُوۡنَ‏

১৫৪.) তারপর মূসার ক্রোধ প্রশমিত হলে সে ফলকগুলি উঠিয়ে নিল। যারা নিজেদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য ঐ সব ফলকে ছিল পথনির্দেশ ও রহমত।

وَاخۡتَارَ مُوۡسٰى قَوۡمَهٗ سَبۡعِيۡنَ رَجُلاً لِّمِيۡقٰتِنَا‌ۚ فَلَمَّاۤ اَخَذَتۡهُمُ الرَّجۡفَةُ قَالَ رَبِّ لَوۡ شِئۡتَ اَهۡلَكۡتَهُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ وَاِيَّاىَ‌ؕ اَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَآءُ مِنَّآ‌ۚ اِنۡ هِىَ اِلَّا فِتۡنَتُكَؕ تُضِلُّ بِهَا مَنۡ تَشَآءُ وَتَهۡدِىۡ مَنۡ تَشَآءُ‌ؕ اَنۡتَ وَلِيُّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا وَارۡحَمۡنَا‌ وَاَنۡتَ خَيۡرُ الۡغٰفِرِيۡنَ‏

১৫৫.) আর মূসা (তার সাথে) আমার নির্ধারিত সময়ে হাযির হবার জন্য নিজের জাতির সত্তর জন লোককে নির্বাচিত করলো। যখন তারা একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললোঃ “হে প্রভু! তুমি চাইলে আগেই এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে। আমাদের মধ্য থেকে কিছু নির্বোধ লোক যে অপরাধ করেছিল সেজন্য কি তুমি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে? এটি তো ছিল তোমার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তুমি যাকে চাও পথভ্রষ্ট করো আবার যাকে চাও হেদায়াত দান করো। তুমিই তো আমাদের অভিভাবক। কাজেই আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ।

 وَاكۡتُبۡ لَنَا فِىۡ هٰذِهِ الدُّنۡيَا حَسَنَةً وَّفِىۡ الۡاٰخِرَةِ اِنَّا هُدۡنَاۤ اِلَيۡكَ‌ؕ قَالَ عَذَابِىۡۤ اُصِيۡبُ بِهٖ مَنۡ اَشَآءُ‌ۚ وَرَحۡمَتِىۡ وَسِعَتۡ كُلَّ شَىۡءٍ‌ؕ فَسَاَكۡتُبُهَا لِلَّذِيۡنَ يَتَّقُوۡنَ وَيُؤۡتُوۡنَ الزَّكٰوةَ وَالَّذِيۡنَ هُمۡ بِاٰيٰتِنَا يُؤۡمِنُوۡنَ

১৫৬.) আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখেরাতেরও, আমরা তোমার দিকে ফিরেছি।” জওয়াবে বলা হলোঃ “শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসের ওপর পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। কাজেই তা আমি এমন লোকদের নামে লিখবো যারা নাফরমানী থেকে দূরে থাকবে, যাকাত দেবে এবং আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনবে।

 الَّذِيۡنَ يَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِىَّ الۡاُمِّىَّ الَّذِىۡ يَجِدُوۡنَهٗ مَكۡتُوۡبًا عِنۡدَهُمۡ فِىۡ التَّوۡرٰٮةِ وَالۡاِنۡجِيۡلِ يَاۡمُرُهُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهٰٮهُمۡ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ الۡخَبٰۤٮِٕثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ اِصۡرَهُمۡ وَالۡاَغۡلٰلَ الَّتِىۡ كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡ‌ؕ فَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا بِهٖ وَعَزَّرُوۡهُ وَنَصَرُوۡهُ وَاتَّبَعُوۡا النُّوۡرَ الَّذِىۡۤ اُنۡزِلَ مَعَهٗۤ‌ ۙ اُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ‏

১৫৭.) (আজ তারাই এ রহমতের অংশীদার) যারা এ প্রেরিত উম্মী নবীর আনুগত্য করে, যার উল্লেখ নিকট এখানে তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে তাদের সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য পাক পবিত্র জিনিসগুলো হালাল ও নাপাক জিনিসগুলো হারাম করে এবং তাদের ওপর থেকে এমন সব বোঝা নামিয়ে দেয়। যা তাদের ওপর চাপানো ছিল আর এমন সব বাঁধন থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যাতে তারা আবদ্ধ ছিল। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সাহায্য সহায়তা দান করে এবং তার সাথে অবতীর্ণ আলোক রশ্মির অনুসরণ করে তারাই সফলতা লাভের অধিকারী।

 قُلۡ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اِنِّىۡ رَسُوۡلُ اللّٰهِ اِلَيۡكُمۡ جَمِيۡعَا اۨلَّذِىۡ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ‌ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ يُحۡىٖ وَيُمِيۡتُ‌ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهِ النَّبِىِّ الۡاُمِّىِّ الَّذِىۡ يُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَكَلِمٰتِهٖ وَاتَّبِعُوۡهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ‏

১৫৮.) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের জন্য সেই আল্লাহর রসূল হিসেবে এসেছি, যিনি পৃথিবী ও আকাশ মণ্ডলীর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। কাজেই ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তার প্রেরিত সেই নিরক্ষর নবীর প্রতি, যে আল্লাহ‌ ও তাঁর বাণীর প্রতি ঈমান আনে এবং তার আনুগত্য করে। আশা করা যায়, এভাবে তোমরা সঠিক পথ পেয়ে যাবে।

 وَمِنۡ قَوۡمِ مُوۡسٰىۤ اُمَّةٌ يَّهۡدُوۡنَ بِالۡحَقِّ وَبِهٖ يَعۡدِلُوۡنَ‏

১৫৯.) মূসার জাতির মধ্যে এমন একটি দলও ছিল, যারা সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দিতো এবং সত্য অনুযায়ী ইনসাফ করতো।

 وَقَطَّعۡنٰهُمُ اثۡنَتَىۡ عَشۡرَةَ اَسۡبَاطًا اُمَمًا‌ؕ وَاَوۡحَيۡنَاۤ اِلٰى مُوۡسٰٓى اِذِ اسۡتَسۡقٰٮهُ قَوۡمُهٗۤ اَنِ اضۡرِب بِّعَصَاكَ الۡحَجَرَ‌ۚ فَانۢبَجَسَتۡ مِنۡهُ اثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَيۡنًا‌ؕ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ اُنَاسٍ مَّشۡرَبَهُمۡ‌ؕ وَظَلَّلۡنَا عَلَيۡهِمُ الۡغَمَامَ وَاَنۡزَلۡنَا عَلَيۡهِمُ الۡمَنَّ وَالسَّلۡوٰىؕ كُلُوۡا مِنۡ طَيِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰكُمۡ‌ؕ وَمَا ظَلَمُوۡنَا وَلٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ

১৬০.) আর তার জাতিকে আমি বারোটি পরিবারে বিভক্ত করে তাদেরকে স্বতন্ত্র গোত্রের রূপ দিয়েছিলাম। আর যখন মূসার কাছে তার জাতি পানি চাইলো তখন আমি তাকে ইঙ্গিত করলাম, অমুক পাথরে তোমরা লাঠি দিয়ে আঘাত করো। ফলে সেই পাথরটি থেকে অকস্মাত বারোটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো এবং প্রত্যেকটি দল তাদের পানি গ্রহণ করার জায়গা নির্দিষ্ট করে নিল। আমি তাদের ওপর মেঘমালার ছায়া দান করলাম এবং তাদের ওপর অবতীর্ণ করলাম মান্না ও সালওয়া -যেসব ভাল ও পাক জিনিস তোমাদের দিয়েছি সেগুলো খাও। কিন্তু এরপর তারা যা কিছু করেছে তাতে আমার ওপর জুলুম করেনি বরং নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে।

 وَاِذۡ قِيۡلَ لَهُمُ اسۡكُنُوۡا هٰذِهِ الۡقَرۡيَةَ وَكُلُوۡا مِنۡهَا حَيۡثُ شِئۡتُمۡ وَقُوۡلُوۡا حِطَّةٌ وَّادۡخُلُوۡا الۡبَابَ سُجَّدًا نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطِيۤٓـٰٔتِكُمۡ‌ؕ سَنَزِيۡدُ الۡمُحۡسِنِيۡنَ‏

১৬১.) স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, এ জনপদে গিয়ে বসবাস করো, সেখানে উৎপাদিত ফসল থেকে নিজেদের ইচ্ছামত আহার্য সংগ্রহ করো, ‘হিত্তাতুন’ ‘হিত্তাতুন’ বলতে বলতে যাও এবং শহরের দরজা দিয়ে সিজদাবনত হয়ে প্রবেশ করতে থাকো। তাহলে আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সৎকর্মপরায়ণদেরকে অতিরিক্ত অনুগ্রহ দান করবো।

 فَبَدَّلَ الَّذِيۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡهُمۡ قَوۡلاً غَيۡرَ الَّذِىۡ قِيۡلَ لَهُمۡ فَاَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمۡ رِجۡزًا مِّنَ السَّمَآءِ بِمَا كَانُوۡا يَظۡلِمُوۡنَ‏

১৬২.) কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জালেম ছিল তারা তাদেরকে যে কথা বলা হয়েছিল তা পরিবর্তিত করে ফেললো। এর ফলে তাদের জুলুমের বদলায় আমি আকাশ থেকে তাদের প্রতি আযাব পাঠিয়ে দিলাম। 

 وَسۡـَٔلۡهُمۡ عَنِ الۡقَرۡيَةِ الَّتِىۡ كَانَتۡ حَاضِرَةَ الۡبَحۡرِ‌ۘ اِذۡ يَعۡدُوۡنَ فِىۡ السَّبۡتِ اِذۡ تَاۡتِيۡهِمۡ حِيۡتَانُهُمۡ يَوۡمَ سَبۡتِهِمۡ شُرَّعًا وَّيَوۡمَ لَا يَسۡبِتُوۡنَ‌ۙ لَا تَاۡتِيۡهِمۡ‌‌ ۛ‌ۚ كَذٰلِكَ ‌ۛ‌ۚ نَبۡلُوۡهُمۡ بِمَا كَانُوۡا يَفۡسُقُوۡنَ‏

১৬৩.) আর সমুদ্রের তীরে যে জনপদটি অবস্থিত ছিল তার অবস্থা সম্পর্কেও তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করো। তাদের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দাও যে, সেখানকার লোকেরা শনিবারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতো এবং শনিবারেই মাছেরা পানিতে ভেসে ভেসে তাদের সামনে আসতো।  অথচ শনিবার ছাড়া অন্য দিন আসতো না। তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে আমি ক্রমাগত পরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিলাম বলেই এমনটি হতো। 

 وَاِذۡ قَالَتۡ اُمَّةٌ مِّنۡهُمۡ لِمَ تَعِظُوۡنَ قَوۡمَا‌ۙ اۨللّٰهُ مُهۡلِكُهُمۡ اَوۡ مُعَذِّبُهُمۡ عَذَابًا شَدِيۡدًا‌ؕ قَالُوۡا مَعۡذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَّقُوۡنَ

১৬৪.) আর তাদের একথাও স্মরণ করিয়ে দাও, যখন তাদের একটি দল অন্য দলকে বলেছিল, “তোমরা এমন লোকদের উপদেশ দিচ্ছো কেন যাদেরকে আল্লাহ‌ ধ্বংস করবেন বা কঠোর শাস্তি দেবেন?” জবাবে তারা বলেছিল, “এসব কিছু এ জন্যই করছি যেন আমরা তোমাদের রবের সামনে নিজেদের ওযর পেশ করতে পারি এবং এ আশায় করছি যে, হয়তো এ লোকেরা তাঁর নাফরমানী করা ছেড়ে দেবে।”

 فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُكِّرُوۡا بِهٖۤ اَنۡجَيۡنَا الَّذِيۡنَ يَنۡهَوۡنَ عَنِ السُّوۡۤءِ وَاَخَذۡنَا الَّذِيۡنَ ظَلَمُوۡا بِعَذَابِۭ بَـِٕيۡسٍۢ بِمَا كَانُوۡا يَفۡسُقُوۡنَ‏

১৬৫.) শেষ পর্যন্ত তাদেরকে যে সমস্ত হেদায়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল তারা যখন সেগুলো সম্পূর্ণ ভুলে গেলো, তখন যারা খারাপ কাজে বাধা দিতো তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নিলাম এবং বাকি সমস্ত লোক যারা দোষী ছিল তাদের নাফরমানীর জন্য তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিলাম।

 فَلَمَّا عَتَوۡا عَنۡ مَّا نُهُوۡا عَنۡهُ قُلۡنَا لَهُمۡ كُوۡنُوۡا قِرَدَةً خٰسِـِٕيۡنَ‏

১৬৬.) তারপর যে কাজ থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছিল, তাই যখন তারা পূর্ণ ঔদ্ধত্যসহকারে করে যেতে লাগলো তখন আমি বললাম, তোমরা লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।

 وَاِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبۡعَثَنَّ عَلَيۡهِمۡ اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِ مَنۡ يَّسُوۡمُهُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ‌ؕ اِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيۡعُ الۡعِقَابِ‌‌ۖ‌ۚ وَاِنَّهٗ لَغَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ‏

১৬৭.) আর স্মরণ করো যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সবসময় বনী ইসরাঈলীদের ওপর এমন সব লোককে চাপিয়ে দিয়ে যেতে থাকবেন যারা তাদেরকে দেবে কঠিনতম শাস্তি।” নিঃসন্দেহে তোমাদের রব দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং নিশ্চিতভাবেই তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়ও।

 وَقَطَّعۡنٰهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ اُمَمًا‌ۚ مِّنۡهُمُ الصّٰلِحُوۡنَ وَمِنۡهُمۡ دُوۡنَ ذٰلِكَ‌ وَبَلَوۡنٰهُمۡ بِالۡحَسَنٰتِ وَالسَّيِّاٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُوۡنَ‏

১৬৮.) আমি তাদেরকে পৃথিবীতে খন্ড বিখন্ড করে বহু সংখ্যক জাতিতে বিভক্ত করে দিয়েছি। তাদের মধ্যে কিছু লোক ছিল সৎ এবং কিছু লোক অন্য রকম। আর আমি ভাল ও খারাপ অবস্থায় নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করতে থাকি, হয়তো তারা ফিরে আসবে।

 فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ وَّرِثُوۡا الۡكِتٰبَ يَاۡخُذُوۡنَ عَرَضَ هٰذَا الۡاَدۡنٰى وَيَقُوۡلُوۡنَ سَيُغۡفَرُ لَنَا‌ۚ وَاِنۡ يَّاۡتِهِمۡ عَرَضٌ مِّثۡلُهٗ يَاۡخُذُوۡهُ‌ؕ اَلَمۡ يُؤۡخَذۡ عَلَيۡهِمۡ مِّيۡثَاقُ الۡكِتٰبِ اَنۡ لَّا يَقُوۡلُوۡا عَلَى اللّٰهِ اِلَّا الۡحَقَّ وَدَرَسُوۡا مَا فِيۡهِ‌ؕ وَالدَّارُ الۡاٰخِرَةُ خَيۡرٌ لِّلَّذِيۡنَ يَتَّقُوۡنَ‌ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ

১৬৯.) তারপর পরবর্তী বংশধরদের পর এমন কিছু অযোগ্য লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়, যারা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়ে এ তুচ্ছ দুনিয়ার স্বার্থ আহরণে লিপ্ত হয় এবং বলতে থাকে আশা করা যায়, আমাদের ক্ষমা করা হবে। পরক্ষনেই সেই ধরনের পার্থিব সামগ্রী যদি আবার তাদের সামনে এসে যায়, তাহলে তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গিয়ে তা লুফে নেয়। তাদের কাছ থেকে কি কিতাবের অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর নামে কেবলমাত্র সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবে না? আর কিতাবে যা লেখা আছে তাতো তারা নিজেরাই পড়ে নিয়েছে। আখেরাতের আবাস তো আল্লাহর ভয়ে ভীত লোকদেরই জন্য ভাল -এতটুকু কথাও কি তোমরা বুঝো না?

 وَالَّذِيۡنَ يُمَسِّكُوۡنَ بِالۡكِتٰبِ وَاَقَامُوۡا الصَّلٰوةَؕ اِنَّا لَا نُضِيۡعُ اَجۡرَ الۡمُصۡلِحِيۡنَ

১৭০.) যারা কিতাবের বিধান যথাযথভাবে মেনে চলে এবং নামায কায়েম করে, নিঃসন্দেহে এহেন সৎকর্মশীল লোকদের কর্মফল আমি নষ্ট করবো না।

 وَاِذۡ نَتَقۡنَا الۡجَبَلَ فَوۡقَهُمۡ كَاَنَّهٗ ظُلَّةٌ وَّظَنُّوۡۤا اَنَّهٗ وَاقِعٌۢ بِهِمۡ‌ۚ خُذُوۡا مَاۤ اٰتَيۡنٰكُمۡ بِقُوَّةٍ وَّاذۡكُرُوۡا مَا فِيۡهِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَ‏


১৭১.) তাদের কি সেই সময়টার কথা কিছু মনে আছে যখন আমি পাহাড়কে হেলিয়ে তাদের ওপর ছাতার মত এমনভাবে বিস্তৃত করে দিয়ে ছিলাম, যে তারা ধারণা করেছিল, তা বুঝি তাদের ওপর পতিত হবে? সে সময় আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমাদেরকে আমি যে কিতাব দিচ্ছি তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তাতে যা কিছু লেখা আছে তা স্মরণ রাখো, আশা করা যায়, তোমরা ভুল পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে।

 وَاِذۡ اَخَذَ رَبُّكَ مِنۡۢ بَنِىۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُهُوۡرِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَاَشۡهَدَهُمۡ عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ‌ۚ اَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡ‌ؕ قَالُوۡا بَلٰى‌ ۛ‌ۚ شَهِدۡنَا ‌ۛ‌ۚ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ اِنَّا كُنَّا عَنۡ هٰذَا غٰفِلِيۡنَۙ‏

১৭২.) আর হে নবী! লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা, যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমি কি তোমাদের রব নই?” তারা বলেছিল, “নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব, আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি।” এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, “আমরা তো একথা জানতাম না।”

 اَوۡ تَقُوۡلُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَشۡرَكَ اٰبَآؤُنَا مِنۡ قَبۡلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّنۡۢ بَعۡدِهِمۡ‌ۚ اَفَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الۡمُبۡطِلُوۡنَ

১৭৩.) অথবা না বলে ওঠো, “শিরকের সূচনা তো আমাদের বাপ-দাদারা আমাদের পূর্বেই করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাদের বংশে আমাদের জন্ম হয়েছে। তবে কি ভ্রষ্টাচারী লোকেরা যে অপরাধ করেছিল সেজন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করছো?"

 وَكَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ وَلَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُوۡنَ‏

১৭৪.) দেখো, এভাবে আমি নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করে থাকি। আর এ জন্য করে থাকি যাতে তারা ফিরে আসে। 

 وَاتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَاَ الَّذِىۡۤ اٰتَيۡنٰهُ اٰيٰتِنَا فَانسَلَخَ مِنۡهَا فَاَتۡبَعَهُ الشَّيۡطٰنُ فَكَانَ مِنَ الۡغٰوِيۡنَ‏

১৭৫.) আর হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে সেই ব্যক্তির অবস্থা বর্ণনা করো, যাকে আমি দান করেছিলাম আমার আয়াতের জ্ঞান। কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মেনে চলা থেকে দূরে সরে যায়। অবশেষে শয়তান তার পিছনে লাগে। শেষ পর্যন্ত সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েই যায়।

 وَلَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنٰهُ بِهَا وَلٰكِنَّهٗۤ اَخۡلَدَ اِلَى الۡاَرۡضِ وَاتَّبَعَ هٰوٮهُ‌ۚ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ الۡكَلۡبِ‌ۚ اِنۡ تَحۡمِلۡ عَلَيۡهِ يَلۡهَثۡ اَوۡ تَتۡرُكۡهُ يَلۡهَث‌ؕ ذٰلِكَ مَثَلُ الۡقَوۡمِ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا‌ۚ فَاقۡصُصِ الۡقَصَصَ لَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُوۡنَ‏

১৭৬.) আমি চাইলে ঐ আয়াতগুলোর সাহায্যে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম কিন্তু সে তো দুনিয়ার প্রতিই ঝুঁকে রইল এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। কাজেই তার অবস্থা হয়ে গেল কুকুরের মত, তার ওপর আক্রমণ করলেও সে জিভ ঝুলিয়ে রাখে আর আক্রমণ না করলেও জিভ ঝুলিয়ে রাখে। যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাদের দৃষ্টান্ত এটাই। তুমি এ কাহিনী তাদেরকে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা কিছু চিন্তা-ভাবনা করবে।

 سَآءَ مَثَلَاَ ۨالۡقَوۡمُ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا وَاَنۡفُسَهُمۡ كَانُوۡا يَظۡلِمُوۡنَ‏

১৭৭.) যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছে, তাদের দৃষ্টান্ত বড়ই খারাপ এবং তার নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম চালিয়ে গেছে।

 مَنۡ يَّهۡدِ اللّٰهُ فَهُوَ الۡمُهۡتَدِىۡ‌ۚ وَمَنۡ يُّضۡلِلۡ فَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ

১৭৮.) আল্লাহ যাকে সুপথ দেখান, সে-ই সঠিক পথ পেয়ে যায় এবং যাকে আল্লাহ‌ নিজের পথনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত করেন, সে-ই ব্যর্থ-ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।

 َلَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ‌‌ۖ لَهُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا يَفۡقَهُوۡنَ بِهَا وَلَهُمۡ اَعۡيُنٌ لَّا يُبۡصِرُوۡنَ بِهَا وَلَهُمۡ اٰذَانٌ لَّا يَسۡمَعُوۡنَ بِهَاؕاُولٰۤٮِٕكَ كَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ‌ؕ اُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ

১৭৯.) আর এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জ্বীন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা পশুর মত, বরং তাদের চাইতেও অধম। তারা চরম গাফলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে।

 وَلِلّٰهِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰى فَادۡعُوۡهُ بِهَا‌ وَذَرُوۡا الَّذِيۡنَ يُلۡحِدُوۡنَ فِىۡۤ اَسۡمَآٮِٕهٖ‌ؕ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ‏

১৮০.) ভাল নামগুলো আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং ভাল নামেই তাঁকে ডাকো এবং তাঁর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন কর। তারা যা কিছু করে এসেছে, তার ফল অবশ্যি পাবে।

 وَمِمَّنۡ خَلَقۡنَاۤ اُمَّةٌ يَّهۡدُوۡنَ بِالۡحَقِّ وَبِهٖ يَعۡدِلُوۡنَ‏

১৮১.) আমার সৃষ্টির মধ্যে একটি দল এমনও আছে যে, যথার্থ সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দেয় এবং সত্য অনুযায়ী বিচার করে।

 وَالَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُمۡ مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُوۡنَ‌ۖ‌ۚ‏

১৮২.) আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে তাদেরকে আমি এমন পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো যে, তারা জানতেও পারবে না।

 وَاُمۡلِىۡ لَهُمۡ‌ؕ اِنَّ كَيۡدِىۡ مَتِيۡنٌ‏

১৮৩.) আমি তাদেরকে ঢিল দিচ্ছি। আমার কৌশল অব্যর্থ।

 اَوَلَمۡ يَتَفَكَّرُوۡا‌--سکتہ-- مَا بِصَاحِبِهِمۡ مِّنۡ جِنَّةٍ‌ؕ اِنۡ هُوَ اِلَّا نَذِيۡرٌ مُّبِيۡنٌ

১৮৪.) তারা কি কখনো চিন্তা করে না, তাদের সাথীর ওপর উন্মাদনার কোন প্রভাব নেই? সে তো একজন সতর্ককারী মাত্র, (অশুভ পরিণতির উদ্ভব হবার আগেই) সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি।

 اَوَلَمۡ يَنۡظُرُوۡا فِىۡ مَلَكُوۡتِ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَمَا خَلَقَ اللّٰهُ مِنۡ شَىۡءٍۙ وَّاَنۡ عَسٰٓى اَنۡ يَّكُوۡنَ قَدِ اقۡتَرَبَ اَجَلُهُمۡ‌ۚ فَبِاَىِّ حَدِيۡثٍۢ بَعۡدَهٗ يُؤۡمِنُوۡنَ‏

১৮৫.) তারা কি কখনো আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চিন্তা করেনি এবং আল্লাহর সৃষ্ট কোন জিনিসের দিকে চোখ মেলে তাকায়নি? আর তারা কি এটাও ভেবে দেখেনি যে, সম্ভবত তাদের জীবনের অবকাশকাল পূর্ণ হবার সময় ঘনিয়ে এসেছে?

 مَنۡ يُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَلَا هَادِىَ لَهٗ‌ؕ وَيَذَرُهُمۡ فِىۡ طُغۡيٰنِهِمۡ يَعۡمَهُوۡنَ‏

১৮৬.) তাহলে নবীর এ সতর্কীকরণের পর আর এমন কি কথা থাকতে পারে যার প্রতি তারা ঈমান আনবে? আল্লাহ‌ যাকে পথনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত করেন, তার জন্য আর কোন পথ নির্দেশক নেই। আর আল্লাহ‌ তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দেন।

 يَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنِ السَّاعَةِ اَيَّانَ مُرۡسٰٮهَا‌ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ رَبِّىۡ‌ۚ لَا يُجَلِّيۡهَا لِوَقۡتِهَاۤ اِلَّا هُوَ‌ؕ ثَقُلَتۡ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ‌ؕ لَا تَاۡتِيۡكُمۡ اِلَّا بَغۡتَةً‌ؕ يَسۡـَٔلُوۡنَكَ كَاَنَّكَ حَفِىٌّ عَنۡهَاؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ اللّٰهِ وَلٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا يَعۡلَمُوۡنَ‏

১৮৭.) তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিয়ামত কবে ও কখন হবে? বলে দাও, “একমাত্র আমার রবই এর জ্ঞান রাখেন। সঠিক সময়ে তিনিই তা প্রকাশ করবেন। আকাশ ও পৃথিবীতে তা হবে ভয়ংকর কঠিন সময়। সহসাই তা তোমাদের ওপর এসে পড়বে।” তারা তোমার কাছে এ ব্যাপারে এমনভাবে জিজ্ঞেস করছে যেন তুমি তার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছ? বলে দাও, “একমাত্র আল্লাহই এর জ্ঞান রাখেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক এ সত্যটি জানে না।”

 قُل لَّاۤ اَمۡلِكُ لِنَفۡسِىۡ نَفۡعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُ‌ؕ وَلَوۡ كُنۡتُ اَعۡلَمُ الۡغَيۡبَ لَاسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ الۡخَيۡرِ‌ۛ‌ۚ وَمَا مَسَّنِىَ السُّۤوۡءُ‌ ‌ۛ‌ۚ اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِيۡرٌ وَّبَشِيۡرٌ لِّقَوۡمٍ يُّؤۡمِنُوۡنَ‏

১৮৮.) হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলো, নিজের জন্য লাভ-ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই। একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়। আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্য অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না। আমি তো যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদের জন্য নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র।”

هُوَ الَّذِىۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَةٍ وَّجَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا لِيَسۡكُنَ اِلَيۡهَا‌ۚ فَلَمَّا تَغَشّٰٮهَا حَمَلَتۡ حَمۡلاً خَفِيۡفًا فَمَرَّتۡ بِهٖ‌ۚ فَلَمَّاۤ اَثۡقَلَتۡ دَّعَوَا اللّٰهَ رَبَّهُمَا لَٮِٕنۡ اٰتَيۡتَنَا صٰلِحًا لَّنَكُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِيۡنَ

১৮৯.) আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র প্রাণ থেকে এবং তারই প্রজাতি থেকে তার জুড়ি বানিয়েছেন, যাতে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। তারপর যখন পুরুষ নারীকে ঢেকে ফেলে, তখন সে হালকা গর্ভধারণ করে। তাকে বহন করে সে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দু'জনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও, তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।

فَلَمَّاۤ اٰتٰٮهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهٗ شُرَكَآءَ فِيۡمَاۤ اٰتٰٮهُمَا‌ۚ فَتَعٰلَى اللّٰهُ عَمَّا يُشۡرِكُوۡنَ

১৯০.) কিন্তু যখন আল্লাহ‌ তাদেরকে একটি সুস্থ-নিখুঁত সন্তান দান করেন, তখন তারা তাঁর এ দান ও অনুগ্রহে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করতে থাকে। তারা যেসব মুশরিকী কথাবার্তা বলে, আল্লাহ‌ তার অনেক উর্ধ্বে।

اَيُشۡرِكُوۡنَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡـًٔا وَّهُمۡ يُخۡلَقُوۡنَ‌‌ۖ‏

১৯১.) কি ধরনের নির্বোধ লোক এরা! আল্লাহর শরীক গণ্য করে তাদেরকে, যা কোন জিনিস সৃষ্টি করেনি বরং নিজেরাই সৃষ্ট।

 وَلَا يَسۡتَطِيۡعُوۡنَ لَهُمۡ نَصۡرًا وَّلَاۤ اَنۡفُسَهُمۡ يَنۡصُرُوۡنَ‏

১৯২.) যারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেরাও নিজেদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না।

 وَاِنۡ تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَى الۡهُدٰى لَا يَتَّبِعُوۡكُمۡ‌ؕ سَوَآءٌ عَلَيۡكُمۡ اَدَعَوۡتُمُوۡهُمۡ اَمۡ اَنۡتُمۡ صَامِتُوۡنَ

১৯৩.) যদি তোমরা তাদেরকে সত্য-সরল পথে আসার দাওয়াত দাও, তাহলে তারা তোমাদের পেছনে আসবে না, তোমরা তাদেরকে ডাকো বা চুপ করে থাকো উভয় অবস্থায়ই ফল তোমাদের জন্য সমানই থাকবে।

اِنَّ الَّذِيۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ عِبَادٌ اَمۡثَالُكُمۡ‌ فَادۡعُوۡهُمۡ فَلۡيَسۡتَجِيۡبُوۡا لَكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ‏

১৯৪.) তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো তারা তো তোমাদের মতই বান্দা। তাদের কাছে দোয়া চেয়ে দেখো, তাদের সম্পর্কে তোমাদের ধারণা যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে তারা তোমাদের দোয়ায় সাড়া দিক। তাদের কি পা আছে, যা দিয়ে তারা চলতে পারে?

 اَلَهُمۡ اَرۡجُلٌ يَّمۡشُوۡنَ بِهَٓا اَمۡ لَهُمۡ اَيۡدٍ يَّبۡطِشُوۡنَ بِهَٓا اَمۡ لَهُمۡ اَعۡيُنٌ يُّبۡصِرُوۡنَ بِهَٓا اَمۡ لَهُمۡ اٰذَانٌ يَّسۡمَعُوۡنَ بِهَا‌ؕ قُلِ ادۡعُوۡا شُرَكَآءَكُمۡ ثُمَّ كِيۡدُوۡنِ فَلَا تُنۡظِرُوۡنِ

১৯৫.) তাদের কি হাত আছে, যা দিয়ে তারা ধরতে পারে? তাদের কি চোখ আছে, যার সাহায্যে তারা দেখতে পারে? তাদের কি কান আছে, যা দিয়ে তারা শুনতে পারে? হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, “তোমাদের বানানো শরীকদেরকে ডেকে নাও, তারপর তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করো এবং আমাকে একদম অবকাশ দিয়ো না।

 اِنَّ وَلّىَۦۤ اللّٰهُ الَّذِىۡ نَزَّلَ الۡكِتٰبَ‌ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصّٰلِحِيۡنَ

১৯৬.) আমার সহায় ও সাহায্যকারী সেই আল্লাহ, যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনি সৎ লোকদের সহায়তা দান করে থাকেন।

 وَالَّذِيۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ لَا يَسۡتَطِيۡعُوۡنَ نَصۡرَكُمۡ وَلَاۤ اَنۡفُسَهُمۡ يَنۡصُرُوۡنَ

১৯৭.) অন্যদিকে তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডেকে থাকো, তারা তোমাদেরও সাহায্য করতে পারে না এবং নিজেরাও নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না।

 وَاِنۡ تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَى الۡهُدٰى لَا يَسۡمَعُوۡا‌ؕ وَتَرٰٮهُمۡ يَنۡظُرُوۡنَ اِلَيۡكَ وَهُمۡ لَا يُبۡصِرُوۡنَ

১৯৮.) বরং তোমরা যদি তাদেরকে সত্য-সঠিক পথে আসতে বলো, তাহলে তারা তোমাদের কথা শুনতেও পাবে না। বাহ্যত তোমরা দেখছো, তারা তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু আসলে তারা কিছুই দেখছে না।

 خُذِ الۡعَفۡوَ وَاۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِيۡنَ‏

১৯৯.) হে নবী! কোমলতা ও ক্ষমার পথ অবলম্বন করো। সৎকাজের উপদেশ দিতে থাকো এবং মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িও না।

 وَاِمَّا يَنۡزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ‌ؕ اِنَّهٗ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ‏

২০০.) যদি কখনো শয়তান তোমাকে উত্তেজিত করে, তাহলে আল্লাহর আশ্রয় চাও। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।

 اِنَّ الَّذِيۡنَ اتَّقَوۡا اِذَا مَسَّهُمۡ طٰۤٮِٕفٌ مِّنَ الشَّيۡطٰنِ تَذَكَّرُوۡا فَاِذَا هُمۡ مُّبۡصِرُوۡنَ‌ۚ‏

২০১.) প্রকৃতপক্ষে যারা মুত্তাকী, তাদেরকে যদি কখনো শয়তানের প্রভাবে অসৎচিন্তা স্পর্শও করে যায়, তাহলে তারা তখনই সতর্ক হয়ে ওঠে, তারপর তারা নিজেদের সঠিক কর্মপদ্ধতি পরিষ্কার দেখতে পায়।

 وَاِخۡوَانُهُمۡ يَمُدُّوۡنَهُمۡ فِىۡ الۡغَىِّ ثُمَّ لَا يُقۡصِرُوۡنَ‏

২০২.) আর তাদের অর্থাৎ (শয়তানদের) ভাই-বন্ধুরা তো তাদেরকে তাদের বাঁকা পথেই টেনে নিয়ে যেতে থাকে এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তারা কোন ত্রুটি করে না।

 وَاِذَا لَمۡ تَاۡتِهِمۡ بِاٰيَةٍ قَالُوۡا لَوۡلَا اجۡتَبَيۡتَهَا‌ؕ قُلۡ اِنَّمَاۤ اَتَّبِعُ مَا يُوۡحٰٓى اِلَىَّ مِنۡ رَّبِّىۡ‌ۚ هٰذَا بَصَآٮِٕرُ مِنۡ رَّبِّكُمۡ وَهُدًى وَرَحۡمَةٌ لِّقَوۡمٍ يُّؤۡمِنُوۡنَ‏

২০৩.) হে নবী! যখন তুমি তাদের সামনে কোন নিদর্শন (অর্থাৎ মুজিযা) পেশ করো না তখন তারা বলে, তুমি নিজের জন্য কোন নিদর্শন বেছে নাওনি কেন? তাদেরকে বলে দাও, আমি তো কেবল সেই অহীরই আনুগত্য করি যা আমার রব আমার কাছে পাঠান। এটি তো অন্তরদৃষ্টির আলো তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং হেদায়াত ও রহমত তাদের জন্য যারা একে গ্রহণ করে।

 وَاِذَا قُرِئَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ وَاَنۡصِتُوۡا لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ‏

২০৪.) যখন কুরআন তোমাদের সামনে পড়া হয়, তা শোনো মনোযোগ সহকারে এবং নীরব থাকো, হয়তো তোমাদের প্রতিও রহমত বর্ষিত হবে।

 وَاذۡكُر رَّبَّكَ فِىۡ نَفۡسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيۡفَةً وَّدُوۡنَ الۡجَهۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَالۡاٰصَالِ وَلَا تَكُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِيۡنَ


২০৫.) হে নবী!তোমার রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা গাফিলতির মধ্যে ডুবে আছে।

 اِنَّ الَّذِيۡنَ عِنۡدَ رَبِّكَ لَا يَسۡتَكۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِهٖ وَيُسَبِّحُوۡنَهٗ وَلَهٗ يَسۡجُدُوۡنَ ۩‏

২০৬.) তোমার রবের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ কখনো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে তাঁর ইবাদতে বিরত হয় না,  বরঞ্চ তারা তাঁরই মহিমা ঘোষণা করে এবং তাঁর সামনে বিনত থাকে।

No comments:

Post a Comment