بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
الٓرؕ تِلۡكَ اٰيٰتُ الۡكِتٰبِ الۡحَكِيۡمِ
১.) আলিফ-লাম-রা। এগুলো এমন একটি কিতাবের আয়াত যা হিকমত ও জ্ঞানে পরিপূর্ণ।
اَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا اَنۡ اَوۡحَيۡنَاۤ اِلٰى رَجُلٍ مِّنۡهُمۡ اَنۡ اَنۡذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنَّ لَهُمۡ قَدَمَ صِدۡقٍ عِنۡدَ رَبِّهِمۡؕ قَالَ الۡكٰفِرُوۡنَ اِنَّ هٰذَا لَسٰحِرٌ مُّبِيۡنٌ
২.) মানুষের জন্য এটা কি একটা আশ্চর্যের ব্যাপার হয়ে গেছে যে, আমি তাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে নির্দেশ দিয়েছি, (গাফিলতিতে ডুবে থাকা) লোকদেরকে সজাগ করে দাও এবং যারা মেনে নেবে তাদেরকে এ মর্মে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা? (একথার ভিত্তিতেই কি) অস্বীকারকারীরা বলেছে, এ ব্যক্তি তো একজন সুস্পষ্ট যাদুকর?
اِنَّ رَبَّكُمُ اللّٰهُ الَّذِىۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ فِىۡ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰى عَلَى الۡعَرۡشِؕ يُدَبِّرُ الۡاَمۡرَؕ مَا مِنۡ شَفِيۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِهٖؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ
৩.) আসলে তোমাদের রব সেই আল্লাহই, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর শাসন কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং বিশ্ব-জগতের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করছেন। কোন শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী) এমন নেই, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারে। এ আল্লাহই হচ্ছেন তোমাদের রব। কাজেই তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। এরপরও কি তোমাদের চৈতন্য হবে না?
اِلَيۡهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِيۡعًاؕ وَّعۡدَ اللّٰهِ حَقًّاؕ اِنَّهٗ يَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيۡدُهٗ لِيَجۡزِىَ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ بِالۡقِسۡطِؕ وَالَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا لَهُمۡ شَرَابٌ مِّنۡ حَمِيۡمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيۡمٌۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡفُرُوۡنَ
৪.) তাঁরই দিকে তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে। এটা আল্লাহর পাকাপোক্ত ওয়াদা। নিঃসন্দেহে সৃষ্টির সূচনা তিনিই করেন তারপর তিনিই দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করবেন, যাতে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদেরকে পূর্ণ ইনসাফ সহকারে প্রতিদান দেয়া যায় এবং যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তারা পান করে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি নিজেদের সত্য অস্বীকৃতির প্রতিফল হিসেবে।
هُوَ الَّذِىۡ جَعَلَ الشَّمۡسَ ضِيَآءً وَّالۡقَمَرَ نُوۡرًا وَّقَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعۡلَمُوۡا عَدَدَ السِّنِيۡنَ وَالۡحِسَابَؕ مَا خَلَقَ اللّٰهُ ذٰلِكَ اِلَّا بِالۡحَقِّؕ يُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ
৫.) তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিশালী ও চন্দ্রকে আলোকময় এবং তার মঞ্জিলও ঠিকমত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যাতে তোমরা তার সাহায্যে বছর গণনা ও তারিখ হিসেব করতে পারো। আল্লাহ এসব কিছু (খেলাচ্ছলে নয় বরং) উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজের নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে পেশ করেছেন যারা জ্ঞানবান তাদের জন্য।
اِنَّ فِىۡ اخۡتِلَافِ الَّيۡلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللّٰهُ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ لَاَيٰتٍ لِّقَوۡمٍ يَّتَّقُوۡنَ
৬.) অবশ্য দিন ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা (ভুল দেখা ও ভুল আচরণ করা থেকে) আত্মরক্ষা করতে চায়।
اِنَّ الَّذِيۡنَ لَا يَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوۡا بِالۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَاطۡمَاَنُّوۡا بِهَا وَالَّذِيۡنَ هُمۡ عَنۡ اٰيٰتِنَا غٰفِلُوۡنَۙ
৭.) এ কথা সত্য, যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই পরিতৃপ্ত ও নিশ্চিন্তে থাকে আর যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে গাফেল,
اُولٰٓٮِٕكَ مَاۡوٰٮهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
৮.) তাদের শেষ আবাস হবে জাহান্নাম এমন সব অসৎ কাজের কর্মফল হিসেবে যেগুলো তারা (নিজেদের ভুল আকীদা ও ভুল কার্যধারার কারণে) ক্রমাগতভাবে আহরণ করতো।
اِنَّ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ يَهۡدِيۡهِمۡ رَبُّهُمۡ بِاِيۡمَانِهِمۡۚ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهِمُ الۡاَنۡهٰرُ فِىۡ جَنّٰتِ النَّعِيۡمِ
৯.) আবার একথাও সত্য, যারা ইমান আনে (অর্থাৎ যারা এ কিতাবে পেশকৃত সত্যগুলো গ্রহণ করে) এবং সৎকাজ করতে থাকে, তাদেরকে তাদের রব তাদের ঈমানের কারণে সোজা পথে চালাবেন। নিয়ামত ভরা জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত হবে।
دَعۡوٰٮهُمۡ فِيۡهَا سُبۡحٰنَكَ اللّٰهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمۡ فِيۡهَا سَلٰمٌؕ وَاٰخِرُ دَعۡوٰٮهُمۡ اَنِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ
১০.) সেখানে তাদের ধ্বনি হবে “পবিত্র তুমি যে আল্লাহ”! তাদের দোয়া হবে, “শান্তি ও নিরাপত্তা হোক”! এবং তাদের সবকথার শেষ হবে এভাবে, “সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব-জাহানের রব আল্লাহর জন্য।”
وَلَوۡ يُعَجِّلُ اللّٰهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسۡتِعۡجَالَهُمۡ بِالۡخَيۡرِ لَقُضِىَ اِلَيۡهِمۡ اَجَلُهُمۡۚ فَنَذَرُ الَّذِيۡنَ لَا يَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا فِىۡ طُغۡيَانِهِمۡ يَعۡمَهُوۡنَ
১১.) আল্লাহ যদি১৫ লোকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার ব্যাপারে অতটাই তাড়াহুড়া করতেন যতটা দুনিয়ার ভালো চাওয়ার ব্যাপারে তারা তাড়াহুড়া করে থাকে, তাহলে তাদের কাজ করার অবকাশ কবেই খতম করে দেয়া হতো (কিন্তু আমার নিয়ম এটা নয়)। তাই যারা আমার সাথে সাক্ষাৎ করার আশা পোষণ করে না তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতার মধ্যে দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াবার জন্য ছেড়ে দেই।
وَاِذَا مَسَّ الۡاِنۡسٰنَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۡۢبِهٖۤ اَوۡ قَاعِدًا اَوۡ قَآٮِٕمًا فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُ ضُرَّهٗ مَرَّ كَاَنۡ لَّمۡ يَدۡعُنَاۤ اِلٰى ضُرٍّ مَّسَّهٗؕ كَذٰلِكَ زُيِّنَ لِلۡمُسۡرِفِيۡنَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
১২.) মানুষের অবস্থা হচ্ছে, যখন সে কোন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়, তখন সে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আমাকে ডাকে। কিন্তু যখন আমি তার বিপদ হটিয়ে দেই তখন সে এমনভাবে চলতে থাকে যেন সে কখনো নিজের কোন খারাপ সময়ে আমাকে ডাকেইনি। ঠিক তেমনিভাবে সীমা অতিক্রমকারীদের জন্য তাদের কার্যক্রমকে সুশোভন করে দেয়া হয়েছে।
وَلَقَدۡ اَهۡلَكۡنَا الۡقُرُوۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ لَمَّا ظَلَمُوۡاۙ وَجَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِ وَمَا كَانُوۡا لِيُؤۡمِنُوۡاؕ كَذٰلِكَ نَجۡزِىۡ الۡقَوۡمَ الۡمُجۡرِمِيۡنَ
১৩.) হে মানব জাতি! তোমাদের আগের জাতিদেরকে (যারা তাদের নিজেদের যুগে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল) আমি ধ্বংস করে দিয়েছি-যখন তারা জুলুমের নীতি অবলম্বন করলো এবং তাদের রসূলগণ তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিশানী নিয়ে এলেন, কিন্তু তারা আদৌ ঈমান আনলো না। এভাবে আমি অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধের প্রতিফল দিয়ে থাকি।
ثُمَّ جَعَلۡنٰكُمۡ خَلٰٓٮِٕفَ فِىۡ الۡاَرۡضِ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ لِنَنۡظُرَ كَيۡفَ تَعۡمَلُوۡنَ
১৪.) এখন তাদের পরে আমি পৃথিবীতে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছি, তোমরা কেমন আচরণ করো তা দেখার জন্য।
وَاِذَا تُتۡلٰى عَلَيۡهِمۡ اٰيَاتُنَا بَيِّنٰتٍۙ قَالَ الَّذِيۡنَ لَا يَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا ائۡتِ بِقُرۡاٰنٍ غَيۡرِ هٰذَاۤ اَوۡ بَدِّلۡهُؕ قُلۡ مَا يَكُوۡنُ لِىۡۤ اَنۡ اُبَدِّلَهٗ مِنۡ تِلۡقَآىِٕ نَفۡسِىۡۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا يُوۡحٰىۤ اِلَىَّۚ اِنِّىۡۤ اَخَافُ اِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّىۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيۡمٍ
১৫.) যখন তাদেরকে আমার সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার কথা শুনানো হয় তখন যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তারা বলে, "এটার পরিবর্তে অন্য কোন কুরআন আনো অথবা এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন করো। হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, “নিজের পক্ষ থেকে এর মধ্যে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করা আমার কাজ নয়। আমি তো শুধুমাত্র আমার কাছে যে অহী পাঠানো হয়, তার অনুসারী। যদি আমি আমার রবের নাফরমানী করি তাহলে আমার একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশঙ্কা হয়।”
قُل لَّوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا تَلَوۡتُهٗ عَلَيۡكُمۡ وَلَاۤ اَدۡرٰٮكُمۡ بِهٖۚ فَقَدۡ لَبِثۡتُ فِيۡكُمۡ عُمُرًا مِّنۡ قَبۡلِهٖؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
১৬.) আর বলো, যদি এটিই হতো আল্লাহর ইচ্ছা তাহলে আমি এ কুরআন তোমাদের কখনো শুনাতাম না এবং আল্লাহ তোমাদেরকে এর খবরও দিতেন না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছি, তবুও কি তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে কাজ করতে পার না?
فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰيٰتِهٖؕ اِنَّهٗ لَا يُفۡلِحُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ
১৭.) তারপর যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বানিয়ে তাকে আল্লাহর কথা বলে প্রচার করে অথবা আল্লাহর যথার্থ আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে? নিঃসন্দেহে অপরাধী কোন দিন সফলকাম হতে পারে না।
وَيَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنۡفَعُهُمۡ وَيَقُوۡلُوۡنَ هٰٓؤُلَآءِ شُفَعٰٓؤُنَا عِنۡدَ اللّٰهِؕ قُلۡ اَتُنَبِّـُٔوۡنَ اللّٰهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَلَا فِىۡ الۡاَرۡضِؕ سُبۡحٰنَهٗ وَتَعٰلٰى عَمَّا يُشۡرِكُوۡنَ
১৮.) এ লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করছে তারা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, “তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্বের কথা তিনি আকাশেও জানেন না এবং যমিনেও না!” তারা যে শিরক্ করে তা থেকে তিনি পাক-পবিত্র এবং তার উর্ধ্বে।
وَمَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَاخۡتَلَفُوۡاؕ وَلَوۡلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّكَ لَقُضِىَ بَيۡنَهُمۡ فِيۡمَا فِيۡهِ يَخۡتَلِفُوۡنَ
১৯.) শুরুতে সমস্ত মানুষ ছিল একই জাতি। পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস ও মত-পথ তৈরী করে নেয়। আর যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে আগেভাগেই একটি কথা স্থিরীকৃত না হতো তাহলো যে বিষয়ে তারা পরস্পর মতবিরোধ করছে তার মীমাংসা হয়ে যেতো
وَيَقُوۡلُوۡنَ لَوۡلَاۤ اُنۡزِلَ عَلَيۡهِ اٰيَةٌ مِّنۡ رَّبِّهٖۚ فَقُلۡ اِنَّمَا الۡغَيۡبُ لِلّٰهِ فَانتَظِرُوۡاۚ اِنِّىۡ مَعَكُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِيۡنَ
২০.) আর এই যে তারা বলে যে, এ নবীর প্রতি তার রবের পক্ষ থেকে কোন নির্দশন অবতীর্ণ করা হয়নি কেন? এর জবাবে তুমি তাদেরকে বলে দাও, “গায়েবের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ, ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করবো।”
وَاِذَاۤ اَذَقۡنَا النَّاسَ رَحۡمَةً مِّنۡۢ بَعۡدِ ضَرَّآءَ مَسَّتۡهُمۡ اِذَا لَهُمۡ مَّكۡرٌ فِىۡۤ اٰيَاتِنَاؕ قُلِ اللّٰهُ اَسۡرَعُ مَكۡرًاؕ اِنَّ رُسُلَنَا يَكۡتُبُوۡنَ مَا تَمۡكُرُوۡنَ
২১.) লোকদের অবস্থা হচ্ছে, বিপদের পরে যখন আমি তাদের রহমতের স্বাদ ভোগ করতে দেই তখনই তারা আমার নিদর্শনের ব্যাপারে ধড়িবাজী শুরু করে দেয়। তাদেরকে বলো, আল্লাহ তার চালাকিতে তোমাদের চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন। তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের সমস্ত চালাকী লিখে রাখছে।"
هُوَ الَّذِىۡ يُسَيِّرُكُمۡ فِىۡ الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِؕ حَتّٰۤى اِذَا كُنۡتُمۡ فِىۡ الۡفُلۡكِ وَجَرَيۡنَ بِهِمۡ بِرِيۡحٍ طَيِّبَةٍ وَّفَرِحُوۡا بِهَا جَآءَتۡهَا رِيۡحٌ عَاصِفٌ وَّجَآءَهُمُ الۡمَوۡجُ مِنۡ كُلِّ مَكَانٍ وَّظَنُّوۡۤا اَنَّهُمۡ اُحِيۡطَ بِهِمۡۙ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِيۡنَ لَهُ الدِّيۡنَ لَٮِٕنۡ اَنۡجَيۡتَنَا مِنۡ هٰذِهٖ لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِيۡنَ
২২.) তিনিই তোমাদের জলে-স্থলে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। কাজেই যখন তোমরা নৌকায় চড়ে অনুকূল বাতাসে আনন্দে সফর করতে থাকো, তারপর অকস্মাত বিরুদ্ধ বাতাস প্রবল হয়ে ওঠে, চারদিক থেকে ঢেউয়ের আঘাত লাগতে থাকে এবং আরোহীরা মনে করতে থাকে তারা তরঙ্গ বেষ্টিতে হয়ে গেছে তখন সবাই নিজের আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তার কাছে দোয়া করতে থাকে এবং বলতে থাকে, “যদি তুমি আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো তাহলে আমরা শোকরগুজার বান্দা হয়ে যাবো।”
فَلَمَّاۤ اَنۡجٰٮهُمۡ اِذَا هُمۡ يَبۡغُوۡنَ فِىۡ الۡاَرۡضِ بِغَيۡرِ الۡحَقِّؕ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اِنَّمَا بَغۡيُكُمۡ عَلٰٓى اَنۡفُسِكُمۡۚ مَّتٰعَ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَاۚ ثُمَّ اِلَيۡنَا مَرۡجِعُكُمۡ فَنُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
২৩.) কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারাই সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পৃথিবীতে বিদ্রোহ করতে থাকে। হে মানুষ! তোমাদের এ বিদ্রোহ উল্টা তোমাদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে। দুনিয়ার কয়েকদিনের আরাম আয়েশ (ভোগ করে নাও) , তারপর আমার দিকেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে। তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে তা তখন তোমাদের আমি জানিয়ে দেবো।
اِنَّمَا مَثَلُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا كَمَآءٍ اَنۡزَلۡنٰهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخۡتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الۡاَرۡضِ مِمَّا يَاۡكُلُ النَّاسُ وَالۡاَنۡعٰمُ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَخَذَتِ الۡاَرۡضُ زُخۡرُفَهَا وَازَّيَّنَتۡ وَظَنَّ اَهۡلُهَاۤ اَنَّهُمۡ قٰدِرُوۡنَ عَلَيۡهَاۤ ۙاَتٰٮهَاۤ اَمۡرُنَا لَيۡلاً اَوۡ نَهَارًا فَجَعَلۡنٰهَا حَصِيۡدًا كَاَنۡ لَّمۡ تَغۡنَ بِالۡاَمۡسِؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّتَفَكَّرُوۡنَ
২৪.) দুনিয়ার এ জীবন (যার নেশায় মাতাল হয়ে তোমরা আমার নিশানীগুলোর প্রতি উদাসীন হয়ে যাচ্ছো) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন আকাশ থেকে আমি পানি বর্ষণ করলাম, তার ফলে যমীনের উৎপাদন, যা মানুষ ও জীব-জন্তু খায়, ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে গেল। তারপর ঠিক এমন সময় যখন যমীন তার ভরা বসন্তে পৌঁছে গেল এবং ক্ষেতগুলো শস্যশ্যামল হয়ে উঠলো। আর তার মালিকরা মনে করলো এবার তারা এগুলো ভোগ করতে সক্ষম হবে, এমন সময় অকস্মাত রাতে বা দিনে আমার হুকুম এসে গেলো। আমি তাকে এমনভাবে ধ্বংস করলাম যেন কাল সেখানে কিছুই ছিল না। এভাবে আমি বিশদভাবে নিদর্শনাবলী বর্ণনা করে থাকি তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে।
وَاللّٰهُ يَدۡعُوۡۤا اِلٰى دَارِ السَّلٰمِ وَيَهۡدِىۡ مَنۡ يَّشَآءُ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ
২৫.) (তোমরা এ অস্থায়ী জীবনের প্রতারণা জালে আবদ্ধ হচ্ছো) আর আল্লাহ তোমাদের শান্তির ভুবনের দিকে আহবান জানাচ্ছেন। (হেদায়াত তার ইখতিয়ারভুক্ত) যাকে তিনি চান সোজা পথ দেখান।
لِّلَّذِيۡنَ اَحۡسَنُوۡا الۡحُسۡنٰى وَزِيَادَةٌۚ وَّلَا يَرۡهَقُ وُجُوۡهَهُمۡ قَتَرٌ وَّلَا ذِلَّةٌؕ اُولٰٓٮِٕكَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّةِۚ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ
২৬.) যারা কল্যাণের পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আছে কল্যাণ এবং আরো বেশী। কলঙ্ক কালিম বা লাঞ্ছনা তাদের চেহারাকে আবৃত করবে না। তারা জান্নাতের হকদার, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল।
وَالَّذِيۡنَ كَسَبُوۡا السَّيِّاٰتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۭ بِمِثۡلِهَاۙ وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٌۚ مَّا لَهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ مِنۡ عَاصِمٍۚكَاَنَّمَاۤ اُغۡشِيَتۡ وُجُوۡهُهُمۡ قِطَعًا مِّنَ الَّيۡلِ مُظۡلِمًاؕ اُولٰٓٮِٕكَ اَصۡحٰبُ النَّارِؕ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ
২৭.) আর যারা খারাপ কাজ করেছে, তারা তাদের খারাপ কাজ অনুযায়ীই প্রতিফল পাবে। লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। আল্লাহর হাত থেকে তাদেরকে বাঁচাবার কেউ থাকবে না। তাদের চেহারা যেন আঁধার রাতের কালো আবরণে আচ্ছাদিত হবে। তারা দোজখের হকদার, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
وَيَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِيۡعًا ثُمَّ نَقُوۡلُ لِلَّذِيۡنَ اَشۡرَكُوۡا مَكَانَكُمۡ اَنۡتُمۡ وَشُرَكَآؤُكُمۡۚ فَزَيَّلۡنَا بَيۡنَهُمۡ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُمۡ مَّا كُنۡتُمۡ اِيَّانَا تَعۡبُدُوۡنَ
২৮.) যেদিন আমি তাদের সবাইকে এক সাথে (আমার আদালতে) একত্র করবো তারপর যারা শিরক করেছে তাদেরকে বলবো, থেমে যাও, তোমরাও এবং তোমাদের তৈরী করা শরীকরাও। তারপর আমি তাদের মাঝখান থেকে অপরিচিতির আচরণ সরিয়ে নেবো। তখন তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, “তোমরা তো আমাদের ইবাদত করতে না।
فَكَفٰى بِاللّٰهِ شَهِيۡدَۢا بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ اِنۡ كُنَّا عَنۡ عِبَادَتِكُمۡ لَغٰفِلِيۡنَ
২৯.) আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহর সাক্ষ যথেষ্ট, (তোমরা আমাদের ইবাদত, করতে থাকলেও) আমরা তোমাদের এ ইবাদত সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।”
هُنَالِكَ تَبۡلُوۡا كُلُّ نَفۡسٍ مَّاۤ اَسۡلَفَتۡؕ وَرُدُّوۡۤا اِلَى اللّٰهِ مَوۡلٰٮهُمُ الۡحَقِّؕ وَضَلَّ عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ
৩০.) সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কৃতকর্মের স্বাদ নেবে। সবাইকে তার প্রকৃত মালিক আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তারা যে সমস্ত মিথ্যা তৈরী করে রেখেছিল। তা সব উদাও হয়ে যাবে।
قُلۡ مَنۡ يَّرۡزُقُكُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ اَمَّنۡ يَّمۡلِكُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَمَنۡ يُّخۡرِجُ الۡحَىَّ مِنَ الۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ الۡمَيِّتَ مِنَ الۡحَىِّ وَمَنۡ يُّدَبِّرُ الۡاَمۡرَؕ فَسَيَقُوۡلُوۡنَ اللّٰهُۚ فَقُلۡ اَفَلَا تَتَّقُوۡنَ
৩১.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? এই শুনার ও দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে? কে প্রাণহীন থেকে সজীবকে এবং সজীব থেকে প্রাণহীনকে বের করে? কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা?” তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ। বলো, তবুও কি তোমরা (সত্যের বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে। ) সতর্ক হচ্ছো না?
فَذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمُ الۡحَقُّۚ فَمَاذَا بَعۡدَ الۡحَقِّ اِلَّا الضَّلٰلُۖۚ فَاَنّٰى تُصۡرَفُوۡنَ
৩২.) তাহলে তো এ আল্লাহই তোমাদের আসল রব। কাজেই সত্যের পরে গোমরাহী ও বিভ্রান্তি ছাড়া আর কি বাকি আছে? সুতরাং তোমরা কোন দিকে চালিত হচ্ছো?
كَذٰلِكَ حَقَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى الَّذِيۡنَ فَسَقُوۡۤا اَنَّهُمۡ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ
৩৩.) (হে নবী! দেখো) এভাবে নাফরমানীর পথ অবলম্বনকারীদের ওপর তোমরা রবের কথা সত্য প্রতিপন্ন হয়েছে যে, তারা ঈমান আনবে না।
قُلۡ هَلۡ مِنۡ شُرَكَآٮِٕكُمۡ مَّنۡ يَّبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيۡدُهٗؕ قُلِ اللّٰهُ يَبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيۡدُهٗؕ فَاَنّٰى تُؤۡفَكُوۡنَ
৩৪.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমাদের তৈরী করা, শরীকদের মধ্যে কেউ আছে কি যে সৃষ্টির সূচনা করে আবার তার পুনরাবৃত্তিও করে?-বলো, একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করে এবং তার পুনরাবৃত্তির ঘটনা, কাজেই তোমরা কোন উল্টো পথে চলে যাচ্ছো?
قُلۡ هَلۡ مِنۡ شُرَكَآٮِٕكُمۡ مَّنۡ يَّهۡدِىۡۤ اِلَى الۡحَقِّؕ قُلِ اللّٰهُ يَهۡدِىۡ لِلۡحَقِّؕ اَفَمَنۡ يَّهۡدِىۡۤ اِلَى الۡحَقِّ اَحَقُّ اَنۡ يُّتَّبَعَ اَمَّنۡ لَّا يَهِدِّىۡۤ اِلَّاۤ اَنۡ يُّهۡدٰىۚ فَمَا لَكُمۡ كَيۡفَ تَحۡكُمُوۡنَ
৩৫.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমাদের তৈরী করা শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সত্যের দিকে পথনির্দেশ করে? বলো, একমাত্র আল্লাহই সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তাহলে বলো, যিনি সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তাহলে বলো, যিনি সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তিনি আনুগত্য লাভের বেশী হকদার না যাকে পথ না দেখলে পথ পায় না- সে বেশী হকদার? তোমাদের হয়েছে কি? কেমন উল্টো সিদ্ধান্ত করে বসছো?
وَمَا يَتَّبِعُ اَكۡثَرُهُمۡ اِلَّا ظَنًّاؕ اِنَّ الظَّنَّ لَا يُغۡنِىۡ مِنَ الۡحَقِّ شَيۡـًٔاؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌۢ بِمَا يَفۡعَلُوۡنَ
৩৬.) আসলে তাদের বেশীরভাগ লোকই নিছক আন্দাজ-অনুমানের পেছনে চলছে। অথচ আন্দাজ-অনুমান দ্বারা সত্যের প্রয়োজন কিছুমাত্র মেটে না। তারা যা কিছু করছে তা আল্লাহ ভালভাবেই জানেন।
وَمَا كَانَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ يُّفۡتَرٰى مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلٰكِنۡ تَصۡدِيۡقَ الَّذِىۡ بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيۡلَ الۡكِتٰبِ لَا رَيۡبَ فِيۡهِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِيۡنَ
৩৭.) আর এ কুরআন আল্লাহর অহী ও শিক্ষা ছাড়া রচনা করা যায় না। বরং এ হচ্ছে যা কিছু আগে এসেছিল তার সত্যায়ন এবং আল কিতাবের বিশদ বিবরণ। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি বিশ্বজাহানের অধিকর্তার পক্ষ থেকে এসেছে।
اَمۡ يَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰٮهُؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَةٍ مِّثۡلِهٖ وَادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ
৩৮.) তারা কি একথা বলে, পয়গম্বর নিজেই এটা রচনা করেছে? বলো, “তোমাদের এ দোষারোপের ব্যাপারে তোমরা যতি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে এরই মতো একটি সূরা রচনা করে আনো এবং এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাকে ডাকতে পারো সাহায্যের জন্য ডেকে নাও”
بَلۡ كَذَّبُوۡا بِمَا لَمۡ يُحِيۡطُوۡا بِعِلۡمِهٖ وَلَمَّا يَاۡتِهِمۡ تَاۡوِيۡلُهٗؕ كَذٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡۚ فَانظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظّٰلِمِيۡنَ
৩৯.) আসল ব্যাপার হচ্ছে, যে জিনিসটি এদের জ্ঞানের আওতায় আসেনি এবং যার পরিমাণও এদের সামনে নেই তাকে এরা (অনর্থক আন্দাজে) মিথ্যা বলে। এমনি ভাবে এদের আগের লোকেরাও মিথ্যা আরোপ করেছে। কাজেই দেখো জালেমদের পরিণাম কী হয়েছে!
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يُّؤۡمِنُ بِهٖ وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ لَّا يُؤۡمِنُ بِهٖؕ وَرَبُّكَ اَعۡلَمُ بِالۡمُفۡسِدِيۡنَ
৪০.) তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক ঈমান আনবে এবং কিছু লোক ঈমান আনবে না। আর তোমার রব এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদেরকে ভালভাবেই জানেন।
وَاِنۡ كَذَّبُوۡكَ فَقُل لِّىۡ عَمَلِىۡ وَلَكُمۡ عَمَلُكُمۡۚ اَنۡتُمۡ بَرِيۡٓـُٔوۡنَ مِمَّاۤ اَعۡمَلُ وَاَنَا۟ بَرِىۡٓءٌ مِّمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
৪১.) যদি তারা তোমরা প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তাহলে তুমি বলে দাও, আমার আমল আমার জন্য এবং তোমাদের আমল তোমাদের জন্য। আমি যা কিছু করি তার দায়িত্ব থেকে তোমরা মুক্ত এবং তোমরা যা কিছু করছো তার দায়িত্ব থেকে আমি মুক্ত।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّسۡتَمِعُوۡنَ اِلَيۡكَؕ اَفَاَنۡتَ تُسۡمِعُ الصُّمَّ وَلَوۡ كَانُوۡا لَا يَعۡقِلُوۡنَ
৪২.) তাদের মধ্যে বহু লোক আছে যারা তোমার কথা শোনে। কিন্তু তুমি কি বধিরদের শুনাবে তারা কিছু না বুঝলেও?
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّنۡظُرُ اِلَيۡكَؕ اَفَاَنۡتَ تَهۡدِىۡ الۡعُمۡىَ وَلَوۡ كَانُوۡا لَا يُبۡصِرُوۡنَ
৪৩.) তাদের মধ্যে বহু লোক আছে যারা তোমাকে দেখে। কিন্তু তুমি কি অন্ধদের পথ দেখাবে, তারা কিছু না দেখতে পেলেও?
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَظۡلِمُ النَّاسَ شَيۡـًٔا وَّلٰكِنَّ النَّاسَ اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ
৪৪.) আসলে আল্লাহ মানুষের প্রতি জুলুম করেন না, মানুষ নিজেই নিজের প্রতি জুলুম করে।
وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ كَاَنۡ لَّمۡ يَلۡبَثُوۡۤا اِلَّا سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُوۡنَ بَيۡنَهُمۡؕ قَدۡ خَسِرَ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ اللّٰهِ وَمَا كَانُوۡا مُهۡتَدِيۡنَ
৪৫.) ((আজ তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে মত্ত হয়ে আছে। ) আর যেদিন আল্লাহ তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন। (এ দুনিয়ার জীবন তাদের কাছে এমন ঠেকাবে) যেন মনে হবে তারা পরস্পরের মধ্যে পরিচয় লাভের উদ্দেশ্য নিছক একদণ্ডের জন্য অবস্থান করেছিল। (সে সময় নিশ্চিতভাবে জানা যাবে) প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে মিথ্যা বলেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা মোটেই সঠিক পথে ছিল না।
وَاِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعۡضَ الَّذِىۡ نَعِدُهُمۡ اَوۡ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَاِلَيۡنَا مَرۡجِعُهُمۡ ثُمَّ اللّٰهُ شَهِيۡدٌ عَلٰى مَا يَفۡعَلُوۡنَ
৪৬.) তাদেরকে যেসব খারাপ পরিণামের ভয় দেখাচ্ছি সেগুলোর কোন অংশ যদি তোমার জীবদ্দশায় দেখিয়ে দেই অথবা এর আগেই তোমাকে উঠিয়ে নেই, সর্বাবস্থায় তাদের আমারই দিকে ফিরে আসতে হবে এবং তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তার সাক্ষী।
وَلِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوۡلٌۚ فَاِذَا جَآءَ رَسُوۡلُهُمۡ قُضِىَ بَيۡنَهُمۡ بِالۡقِسۡطِ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُوۡنَ
৪৭.) প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে।৫৫ যখন কোন উম্মতের কাছে তাদের রসূল এসে যায় তখন পূর্ণ ইনসাফ সহকারে তাদের বিষয়ের ফায়সালা করে দেয়া হয় এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হয় না।
وَيَقُوۡلُوۡنَ مَتٰى هٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ
৪৮.) তারা বলে যদি তোমরা এ হুমকি সত্য হয় তাহলে এটা কবে কার্যকারী হবে?
قُل لَّاۤ اَمۡلِكُ لِنَفۡسِىۡ ضَرًّا وَّلَا نَفۡعًا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُؕ لِكُلِّ اُمَّةٍ اَجَلٌؕ اِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ فَلَا يَسۡتَـٔۡخِرُوۡنَ سَاعَةً وَّلَا يَسۡتَقۡدِمُوۡنَ
৪৯.) বলো, “নিজের লাভ-ক্ষতিও আমার ইখতিয়ার নেই। সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।” প্রত্যেক জাতির জন্য অবকাশের একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, এ সময় পূর্ণ হয়ে গেলে তারা মুহূর্তকালও সামনে পেছনে করতে পারবে না।
قُلۡ اَرَءَيۡتُمۡ اِنۡ اَتٰٮكُمۡ عَذَابُهٗ بَيٰتًا اَوۡ نَهَارًا مَّاذَا يَسۡتَعۡجِلُ مِنۡهُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ
৫০.) তাদেরকে বলো, তোমরা কি কখনো একথাও চিন্তা করেছো যে, যদি আল্লাহর আযাব অকম্মাত রাতে বা দিনে এসে যায় (তাহলে তোমরা কি করতে পারো?) এটা এমন কি জিনিস যে জন্য অপরাধীরা তাড়াহুড়া করতে চায়?
اَثُمَّ اِذَا مَا وَقَعَ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖؕ آٰلۡـٰٔنَ وَقَدۡ كُنۡتُمۡ بِهٖ تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ
৫১.) সেটা যখন তোমাদের ওপর এসে পড়বে তখন কি তোমরা ঈমান আনবে? এখন বাঁচতে চাও? অথচ তোমরাইতো তাগাদা দিচ্ছিলে যে, ওটা শিগগির এসে পড়ুক।
ثُمَّ قِيۡلَ لِلَّذِيۡنَ ظَلَمُوۡا ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡخُلۡدِۚ هَلۡ تُجۡزَوۡنَ اِلَّا بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡسِبُوۡنَ
৫২.) তারপর জালেমদেরকে বলা, হবে এখন অনন্ত আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো, তোমরা যা কিছু উপার্জন করতে তার শাস্তি ছাড়া তোমাদের আর কি বিনিময় দেয়া যেতে পারে?
وَيَسۡتَنۡۢبِـُٔوۡنَكَ اَحَقٌّ هُوَؕ قُلۡ اِىۡ وَرَبِّىۡۤ اِنَّهٗ لَحَقٌّ ۚؕ وَّمَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِيۡنَ
৫৩.) তারপর তারা জিজ্ঞেস করে যে, তুমি যা বলছো তা কি যথার্থই সত্য? বলো, “আমার রবের কসম, এটা যথার্থই সত্য এবং এর প্রকাশ হবার পথে বাধা দেবার মতো শক্তি তোমাদের নেই।”
وَلَوۡ اَنَّ لِكُلِّ نَفۡسٍ ظَلَمَتۡ مَا فِىۡ الۡاَرۡضِ لَافۡتَدَتۡ بِهٖؕ وَاَسَرُّوۡا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الۡعَذَابَۚ وَقُضِىَ بَيۡنَهُمۡ بِالۡقِسۡطِ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُوۡنَ
৫৪.) আল্লাহর নাফরমানী করেছে এমন প্রতিটি ব্যক্তির কাছে যদি সারা দুনিয়ার ধন-দৌলত থাকতো তাহলে সেই আযাব থেকে বাঁচার বিনিময়ে সে তা দিতে উদ্যত হতো। যখন তারা এ আযাব দেখবে তখন তারা মনে মনে পস্তাতে থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ সহকারে ফায়সালা করা হবে, তাদের প্রতি কোন জুলুম হবে না। শোনো, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই।
اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰهِ مَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ اَلَاۤ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّلٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ
৫৫.) শুনে রাখো, আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।
هُوَ يُحۡىٖ وَيُمِيۡتُ وَاِلَيۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ
৫৬.) তিনিই জীবন দেন, তিনিই মৃত্যু দেন এবং তারই দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَتۡكُمۡ مَّوۡعِظَةٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِىۡ الصُّدُوۡرِ ۙ وَهُدًى وَرَحۡمَةٌ لِّلۡمُؤۡمِنِيۡنَ
৫৭.) হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসীহত এসে গেছে। এটি এমন জিনিস যা অন্তরের রোগের নিরাময় এবং যে তা গ্রহণ করে নেয় তার জন্য পথনির্দেশনা ও রহমত।
قُلۡ بِفَضۡلِ اللّٰهِ وَبِرَحۡمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُوۡا هُوَ خَيۡرٌ مِّمَّا يَجۡمَعُوۡنَ
৫৮.) হে নবী! বলো, “এ জিনিসটি যে, তিনি পাঠিয়েছেন এটি আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তার মেহেরবানী। এ জন্য তো লোকদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যা কিছু জমা করছে সে সবের চেয়ে এটি অনেক ভাল।”
قُلۡ اَرَءَيۡتُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ لَكُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ فَجَعَلۡتُمۡ مِّنۡهُ حَرَامًا وَّحَلٰلاًؕ قُلۡ آٰللّٰهُ اَذِنَ لَكُمۡۚ اَمۡ عَلَى اللّٰهِ تَفۡتَرُوۡنَ
৫৯.) হে নবী! তাদেরকে বলো, তোমরা কি কখনো একথাও চিন্তা করেছো যে আল্লাহ তোমাদের জন্য যে রিযিক অবতীর্ণ করেছিলেন তার মধ্য থেকে তোমরা নিজেরাই কোনটাকে হারাম ও কোনটাকে হালাল করে নিয়েছো? তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এর অনুমতি দিয়েছিলেন? নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছো?
وَمَا ظَنُّ الَّذِيۡنَ يَفۡتَرُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ الۡكَذِبَ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ اِنَّ اللّٰهَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَى النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكۡثَرَهُمۡ لَا يَشۡكُرُوۡنَ
৬০.) যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে তারা কি মনে করে, কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে? আল্লাহ তো লোকদের প্রতি অনুগ্রহ পরায়ণ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শোকর গুজারী করে না।
وَمَا تَكُوۡنُ فِىۡ شَاۡنٍ وَّمَا تَتۡلُوۡا مِنۡهُ مِنۡ قُرۡاٰنٍ وَّلَا تَعۡمَلُوۡنَ مِنۡ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَيۡكُمۡ شُهُوۡدًا اِذۡ تُفِيۡضُوۡنَ فِيۡهِؕ وَمَا يَعۡزُبُ عَنۡ رَّبِّكَ مِنۡ مِّثۡقَالِ ذَرَّةٍ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا فِىۡ السَّمَآءِ وَلَاۤ اَصۡغَرَ مِنۡ ذٰلِكَ وَلَاۤ اَكۡبَرَ اِلَّا فِىۡ كِتٰبٍ مُّبِيۡنٍ
৬১.) হে নবী! তুমি যে অবস্থায়ই থাকো এবং কুরআন থেকে যা কিছুই শুনাতে থাকো। আর হে লোকরা, তোমরাও যা কিছু করো সে সবের মধ্যে আমি তোমাদের দেখতে থাকি। আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে কোন অণু পরিমাণ বস্তুও এমন নেই এবং তার চেয়ে ছোট্ট বা বড় কোন জিনিস ও নেই, যা তোমাদের রবের দৃষ্টিতে অগোচরে আছে এবং যা একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই।
اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِيَآءَ اللّٰهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَۖۚ
৬২.) শোনো, যারা আল্লাহর বন্ধু, ঈমান এনেছে এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে
الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَكَانُوۡا يَتَّقُوۡنَؕ
৬৩.) , তাদের কোন ভয় ও মর্ম যাতনার অবকাশ নেই।
لَهُمُ الۡبُشۡرٰى فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَفِىۡ الۡاٰخِرَةِؕ لَا تَبۡدِيۡلَ لِكَلِمٰتِ اللّٰهِؕ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُؕ
৬৪.) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনে তাদের জন্য শুধু সুসংবাদই রয়েছে। আল্লাহর কথার পরিবর্তন নেই। এটিই মহাসাফল্য।
وَلَا يَحۡزُنۡكَ قَوۡلُهُمۡۘ اِنَّ الۡعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيۡعًاؕ هُوَ السَّمِيۡعُ الۡعَلِيۡمُ
৬৫.) হে নবী! এরা তোমাকে যেসব কথা বলেছে তা যেন তোমাকে মর্মাহত না করে। সমস্ত মর্যাদা আল্লাহর হাতে এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰهِ مَنۡ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَمَنۡ فِىۡ الۡاَرۡضِؕ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِيۡنَ يَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ شُرَكَآءَؕ اِنۡ يَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَاِنۡ هُمۡ اِلَّا يَخۡرُصُوۡنَ
৬৬.) জেনে রেখো, আকাশের অধিবাসী, হোক বা পৃথিবীর, সবাই আল্লাহর মালিকানাধীন। আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে (নিজেদের মনগড়া) কিছু শরীকদের ডাকছে তারা নিছক আন্দাজ ও ধারণার অনুগামী এবং তারা শুধু অনুমানই করে।
هُوَ الَّذِىۡ جَعَلَ لَكُمُ الَّيۡلَ لِتَسۡكُنُوۡا فِيۡهِ وَالنَّهَارَ مُبۡصِرًاؕ اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَاَيٰتٍ لِّقَوۡمٍ يَّسۡمَعُوۡنَ
৬৭.) তিনিই তোমাদের জন্য রাত তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং দিনকে উজ্জ্বল করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষা আছে এমন লোকদের জন্য যারা (খোলা কানে নবীর দাওয়াত) শোনে।
قَالُوۡا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا سُبۡحٰنَهٗؕ هُوَ الۡغَنِىُّؕ لَهٗ مَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَمَا فِىۡ الۡاَرۡضِؕ اِنۡ عِنۡدَكُمۡ مِّنۡ سُلۡطٰنِۭ بِهٰذَاؕ اَتَقُوۡلُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ
৬৮.) লোকেরা বলে, আল্লাহ কাউকে পুত্র বানিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ-তিনি মহান-পবিত্র! তিনি তো অভাবমুক্ত। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার মালিকানাধীন। একথার সপক্ষে তোমাদের কাছে কি প্রমাণ আছে? তোমরা কি আল্লাহর সপক্ষে এমন সব কথা বলো যা তোমাদের জানা নেই?
قُلۡ اِنَّ الَّذِيۡنَ يَفۡتَرُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ الۡكَذِبَ لَا يُفۡلِحُوۡنَؕ
৬৯.) হে মুহাম্মাদ! বলো, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না।
مَتٰعٌ فِىۡ الدُّنۡيَا ثُمَّ اِلَيۡنَا مَرۡجِعُهُمۡ ثُمَّ نُذِيۡقُهُمُ الۡعَذَابَ الشَّدِيۡدَ بِمَا كَانُوۡا يَكۡفُرُوۡنَ
৭০.) দুনিয়ার দুদিনের জীবন ভোগ করে নাও, তারপর আমার দিকে তাদের ফিরে আসতে হবে, তখন তারা যে কুফরী করছে তার প্রতিফল স্বরূপ তাদেরকে কঠোর শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।
وَاتۡلُ عَلَيۡهِمۡ نَبَاَ نُوۡحٍۘ اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهٖ يٰقَوۡمِ اِنۡ كَانَ كَبُرَ عَلَيۡكُمۡ مَّقَامِىۡ وَتَذۡكِيۡرِىۡ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ فَعَلَى اللّٰهِ تَوَكَّلۡتُ فَاَجۡمِعُوۡۤا اَمۡرَكُمۡ وَشُرَكَآءَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُنۡ اَمۡرُكُمۡ عَلَيۡكُمۡ غُمَّةً ثُمَّ اقۡضُوۡۤا اِلَىَّ وَلَا تُنۡظِرُوۡنِ
৭১.) তাদেরকে নূহের কথা শুনাও। সেই সময়ের কথা যখন সে তার কওমকে বলেছিল হে আমার কওমের লোকেরা! যদি তোমাদের মধ্যে আমার অবস্থান ও বসবাস এবং আল্লাহর আয়াত শুনিয়ে শুনিয়ে তোমাদের গাফলতি থেকে জাগিয়ে তোলা তোমাদের কাছে অসহনীয় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করি, তোমরা নিজেদের তৈরী করা শরীকদের সঙ্গে নিয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত করে নাও এবং তোমাদের সামনে যে পরিকল্পনা আছে সে সম্পর্কে খুব ভালোভাবে চিন্তা করে নাও, যাতে করে কোন একটি দিকও তোমাদের দৃষ্টির আড়ালে না থেকে যায়। তারপর আমার বিরুদ্ধে তাকে সক্রিয় করো এবং আমাকে মোটিই অবকাশ দিয়ো না
فَاِنۡ تَوَلَّيۡتُمۡ فَمَا سَاَلۡتُكُمۡ مِّنۡ اَجۡرٍؕاِنۡ اَجۡرِىَ اِلَّا عَلَى اللّٰهِۙ وَاُمِرۡتُ اَنۡ اَكُوۡنَ مِنَ الۡمُسۡلِمِيۡنَ
৭২.) তোমরা আমার নসীহত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। (এতে আমার কি ক্ষতি করছো) , আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি। আমার প্রতিদান তো আল্লাহর কাছে। আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে (কেউ স্বীকার করুক বা না করুক) আমি যেন মুসলিম হিসেবে থাকি।
فَكَذَّبُوۡهُ فَنَجَّيۡنٰهُ وَمَنۡ مَّعَهٗ فِىۡ الۡفُلۡكِ وَجَعَلۡنٰهُمۡ خَلٰٓٮِٕفَ وَاَغۡرَقۡنَا الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَاۚ فَانظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُنۡذَرِيۡنَ
৭৩.) তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, ফলে আমি তাকে এবং তার সাথে যারা নৌকায় ছিল সবাইকে রক্ষা করেছি এবং তাদেরকেই পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত করেছি আর যার আমার আয়াতকে মিথ্যা বলেছিল তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছে। কাজেই যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল (এবং তারপরও তারা মেনে নেয়নি) তাদের পরিণাম কি দেখো!
ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ رُسُلاً اِلٰى قَوۡمِهِمۡ فَجَآءُوۡهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِ فَمَا كَانُوۡا لِيُؤۡمِنُوۡا بِمَا كَذَّبُوۡا بِهٖ مِنۡ قَبۡلُؕ كَذٰلِكَ نَطۡبَعُ عَلٰى قُلُوۡبِ الۡمُعۡتَدِيۡنَ
৭৪.) তারপর নূহের পর আমি বিভিন্ন পয়গম্বরকে তাদের কওমের কাছে পাঠাই এবং তারা সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে তাদের কাছে আসে। কিন্তু যে জিনিসকে তারা আগেই মিথ্যা বলেছিল তাকে আর মেনে নিতে প্রস্তুত হলো না। এভাবে আমি সীমা অতিক্রমকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই।
ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ مُّوۡسَىٰ وَهٰرُوۡنَ اِلٰى فِرۡعَوۡنَ وَمَلَاِ۫يهٖ بِاٰيٰتِنَا فَاسۡتَكۡبَرُوۡا وَكَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِيۡنَ
৭৫.) তারপর মুসা ও হারুনকে আমি তাদের পরে আমার নিদর্শনসহ ফেরাউন ও তার সরদারদের কাছে পাঠাই। কিন্তু তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয় এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়।
﴿ فَلَمَّا جَآءَهُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡۤا اِنَّ هٰذَا لَسِحۡرٌ مُّبِيۡنٌ﴾
৭৬.) পরে যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের সামনে আসে, তারা বলে দেয়, এ তো সুস্পষ্ট যাদু।
قَالَ مُوۡسٰٓى اَتَقُوۡلُوۡنَ لِلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَكُمۡؕ اَسِحۡرٌ هٰذَا وَلَا يُفۡلِحُ السّٰحِرُوۡنَ
৭৭.) মুসা বললো, সত্য, যখন তোমাদের সামনে এলো তখন তোমরা তার সম্পর্কে এমন (কথা) বলছো? এ কি যাদু? অথচ যাদুকর সফলকাম হয় না।
قَالُوۡۤا اَجِئۡتَنَا لِتَلۡفِتَنَا عَمَّا وَجَدۡنَا عَلَيۡهِ اٰبَآءَنَا وَتَكُوۡنَ لَكُمَا الۡكِبۡرِيَآءُ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَمَا نَحۡنُ لَكُمَا بِمُؤۡمِنِيۡنَ
৭৮.) তারা জবাবে বললো, “তুমি কি যে পথে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি সে পথ থেকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে এবং যাতে যমীনে তোমাদের দু’জনের প্রাধান্য কায়েম হয়ে যায়, সেজন্য এসেছো? তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই।”
وَقَالَ فِرۡعَوۡنُ ائۡتُوۡنِىۡ بِكُلِّ سٰحِرٍ عَلِيۡمٍ
৭৯.) আর ফেরাউন (নিজের লোকদের) বললো, সকল দক্ষ ও অভিজ্ঞ যাদুকরকে আমার কাছে হাযির করো।
فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمۡ مُّوۡسٰىۤ اَلۡقُوۡا مَاۤ اَنۡتُمۡ مُّلۡقُوۡنَ
৮০.) -যখন যাদুকররা সে গেলো, মুসা তাদেরকে বললো, যা কিছু তোমাদের নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ করো।
فَلَمَّاۤ اَلۡقَوۡا قَالَ مُوۡسٰى مَا جِئۡتُمۡ بِهِۙ السِّحۡرُؕ اِنَّ اللّٰهَ سَيُبۡطِلُهٗؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُصۡلِحُ عَمَلَ الۡمُفۡسِدِيۡنَ
৮১.) তারপর যখন তারা নিজেদের ভোজবাজি, নিক্ষেপ করলো, মুসা, বললো, তোমরা এই যা কিছু নিক্ষেপ করেছো এগুলো যাদু। আল্লাহ এখনই একে ব্যর্থ করে দেবেন। ফাসাদ সৃষ্টিকরীদের কাজকে আল্লাহ সার্থক হতে দেন না।
وَيُحِقُّ اللّٰهُ الۡحَقَّ بِكَلِمٰتِهٖ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُجۡرِمُوۡنَ
৮২.) আর অপরাধীদের কাছে যতই বিরক্তিকর হোক না কেন আল্লাহ তার ফরমানের সাহায্যে সত্যকে সত্য করেই দেখিয়ে দেন।
فَمَاۤ اٰمَنَ لِمُوۡسٰٓى اِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّنۡ قَوۡمِهٖ عَلٰى خَوۡفٍ مِّنۡ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَاِيهِمۡ اَنۡ يَّفۡتِنَهُمۡؕ وَاِنَّ فِرۡعَوۡنَ لَعَالٍ فِىۡ الۡاَرۡضِۚ وَاِنَّهٗ لَمِنَ الۡمُسۡرِفِيۡنَ
৮৩.) (তারপর দেখো) মুসাকে তার কওমের কতিপয় নওজোয়ান ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি, ফেরাউনের ভয়ে এবং তাদের নিজেদেরই কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদের ভয়ে। (তাদের আশঙ্কা ছিল) ফেরাউন তাদের ওপর নির্যাতন চালাবে। আর প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ফেরাউন দুনিয়ায় পরাক্রমশালী ছিল এবং সে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা কোন সীমানা মানে না।
وَقَالَ مُوۡسٰى يٰقَوۡمِ اِنۡ كُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰهِ فَعَلَيۡهِ تَوَكَّلُوۡۤا اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّسۡلِمِيۡنَ
৮৪.) মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম-আত্মসর্ম্পণনকারী হও।
فَقَالُوۡا عَلَى اللّٰهِ تَوَكَّلۡنَاۚ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَةً لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَۙ
৮৫.) তারা জবাব দিল, আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না।
وَنَجِّنَا بِرَحۡمَتِكَ مِنَ الۡقَوۡمِ الۡكٰفِرِيۡنَ
৮৬.) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো।"
وَاَوۡحَيۡنَاۤ اِلَىٰ مُوۡسٰى وَاَخِيۡهِ اَنۡ تَبَوَّاٰ لِقَوۡمِكُمَا بِمِصۡرَ بُيُوۡتًا وَّاجۡعَلُوۡا بُيُوۡتَكُمۡ قِبۡلَةً وَّاَقِيۡمُوۡا الصَّلٰوةَؕ وَبَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
৮৭.) আর আমি মূসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, "মিসরে নিজের কওমের জন্য কতিপয় গৃহের সংস্থান করো, নিজেদের ঐ গৃহগুলোকে কিবলায় পরিণত করো এবং নামায কায়েম করো। আর ঈমানদারদেরকে সুখবর দাও।"
وَقَالَ مُوۡسٰى رَبَّنَاۤ اِنَّكَ اٰتَيۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَاَهٗ زِيۡنَةً وَّاَمۡوَالاً فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوۡا عَنۡ سَبِيۡلِكَۚ رَبَّنَا اطۡمِسۡ عَلٰٓى اَمۡوَالِهِمۡ وَاشۡدُدۡ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُوۡا حَتّٰى يَرَوُا الۡعَذَابَ الۡاٰلِيۡمَ
৮৮.) মুসা দোয়া করলো, "হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা-সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছো। হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মানুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে।"
قَالَ قَدۡ اُجِيۡبَتۡ دَّعۡوَتُكُمَا فَاسۡتَقِيۡمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيۡلَ الَّذِيۡنَ لَا يَعۡلَمُوۡنَ
৮৯.) আল্লাহ জবাবে বললেন, "তোমাদের দু’জনের দোয়া কবুল করা হলো। তোমরা দু’জন অবিচল থাকো এবং মূর্খদের পথ কখনো অনুসরণ করো না।"
وَجٰوَزۡنَا بِبَنِىۡۤ اِسۡرآءِيۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ وَجُنُوۡدُهٗ بَغۡيًا وَّعَدۡوًاؕ حَتّٰۤى اِذَاۤ اَدۡرَكَهُ الۡغَرَقُۙ قَالَ اٰمَنۡتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِىۡۤ اٰمَنَتۡ بِهٖ بَنُوۡۤا اِسۡرآءِيۡلَ وَاَنَا۟ مِنَ الۡمُسۡلِمِيۡنَ
৯০.) আর আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করে নিয়ে গেলাম। তারপর ফেরাউন ও তার সেনাদল জুলুম নির্যাতন ও সীমালঙ্ঘন করার উদ্দেশ্য তাদের পেছনে চললো। অবশেষে যখন ফেরাউন ডুবতে থাকলো তখন বলে উঠলো, আমি মেনে নিলাম, নবী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং আমিও আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
آٰلۡـٰٔنَ وَقَدۡ عَصَيۡتَ قَبۡلُ وَكُنۡتَ مِنَ الۡمُفۡسِدِيۡنَ
৯১.) (জবাব দেয়া হলো) "এখন ঈমান আনছো! অথচ এর আগে পর্যন্ত তুমি নাফরমানী চালিয়ে এসেছো এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন ছিলে।
فَالۡيَوۡمَ نُنَجِّيۡكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوۡنَ لِمَنۡ خَلۡفَكَ اٰيَةًؕ وَاِنَّ كَثِيۡرًا مِّنَ النَّاسِ عَنۡ اٰيٰتِنَا لَغٰفِلُوۡنَ
৯২.) এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন হয়ে থাকো। যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন।"
وَلَقَدۡ بَوَّاۡنَا بَنِىۡۤ اِسۡرٰٓءِيۡلَ مُبَوَّاَ صِدۡقٍ وَّرَزَقۡنٰهُمۡ مِّنَ الطَّيِّبٰتِۚ فَمَا اخۡتَلَفُوۡا حَتّٰى جَآءَهُمُ الۡعِلۡمُؕ اِنَّ رَبَّكَ يَقۡضِىۡ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ فِيۡمَا كَانُوۡا فِيۡهِ يَخۡتَلِفُوۡنَ
৯৩.) বনী ইসরাঈলকে আমি খুব ভালো আবাসভূমি দিয়েছি এবং অতি উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ তাদেরকে দান করেছি। তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তখনই তারা পরস্পরে মতভেদ করলো নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল।
فَاِنۡ كُنۡتَ فِىۡ شَكٍّ مِّمَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَيۡكَ فَسۡـَٔلِ الَّذِيۡنَ يَقۡرَءُوۡنَ الۡكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِكَۚ لَقَدۡ جَآءَكَ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِيۡنَۙ
৯৪.) এখন যদি তোমার সেই হিদায়াতের ব্যাপারে সমান্যও সন্দেহ থেকে থাকে যা আমি তোমার ওপর নাযিল করেছি তাহলে যারা আগে থেকেই কিতাব পড়ছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। প্রকৃতপক্ষে তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ কিতাব মহাসত্য হয়েই এসেছে।
وَلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الَّذِيۡنَ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِ اللّٰهِ فَتَكُوۡنَ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ
৯৫.) কাজেই তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না এবং যারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলেছে তাদের মধ্যেও শামিল হয়ো না, তাহলে তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হবে।
اِنَّ الَّذِيۡنَ حَقَّتۡ عَلَيۡهِمۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَۙ
৯৬.) আসলে যাদের ব্যাপারে তোমার রবের কথা সত্য সাব্যস্ত হয়েছে
وَلَوۡ جَآءَتۡهُمۡ كُلُّ اٰيَةٍ حَتّٰى يَرَوُا الۡعَذَابَ الۡاٰلِيۡمَ
৯৭.) তাদের সামনে যতই নিদর্শন এসে যাক না কেন তারা কখনই ঈমান আনবে না যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব চাক্ষুস দেখে নেবে।
فَلَوۡلَا كَانَتۡ قَرۡيَةٌ اٰمَنَتۡ فَنَفَعَهَاۤ اِيۡمَانُهَاۤ اِلَّا قَوۡمَ يُوۡنُسَؕ لَمَّاۤ اٰمَنُوۡا كَشَفۡنَا عَنۡهُمۡ عَذَابَ الۡخِزۡىِ فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَمَتَّعۡنٰهُمۡ اِلٰى حِيۡنٍ
৯৮.) এমন কোন দৃষ্টান্ত আছে কি যে, একটি জনবসতি চাক্ষুষ আযাব দেখে ঈমান এনেছে এবং তার ঈমান তার জন্য সুফলদায়ক প্রমাণিত হয়েছে? ইউনুসের কওম ছাড়া (এর কোন নজির নেই) তারা যখন ঈমান এনেছিল তখন অবশ্যই আমি তাদের ওপর থেকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনার আযাব হটিয়ে দিয়েছিলাম এবং তাদেরকে একটি সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম।
وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ لَاَمَنَ مَنۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ كُلُّهُمۡ جَمِيۡعًاؕ اَفَاَنۡتَ تُكۡرِهُ النَّاسَ حَتّٰى يَكُوۡنُوۡا مُؤۡمِنِيۡنَ
৯৯.) যদি তোমার রবের ইচ্ছা হতো (যে, যমীনে সবাই হবে মুমিন ও অনুগত) তাহলে সারা দুনিয়াবাসী ঈমান আনতো। তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের ওপর জবরদস্তি করবে?
وَمَا كَانَ لِنَفۡسٍ اَنۡ تُؤۡمِنَ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِؕ وَيَجۡعَلُ الرِّجۡسَ عَلَى الَّذِيۡنَ لَا يَعۡقِلُوۡنَ
১০০.) আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না। আর আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তাদের ওপর কলুষতা চাপিয়ে দেন।
قُلِ انْظُرُوۡا مَاذَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ وَمَا تُغۡنِىۡ الۡاٰيٰتُ وَالنُّذُرُ عَنۡ قَوۡمٍ لَّا يُؤۡمِنُوۡنَ
১০১.) তাদেরকে বলো, “পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে চোখ মেলে দেখো।” আর যারা ঈমান আনতেই চায় না তাদের জন্য নির্দশন ও উপদেশ তিরস্কার কীইবা উপকারে আসতে পারে।
فَهَلۡ يَنۡتَظِرُوۡنَ اِلَّا مِثۡلَ اَيَّامِ الَّذِيۡنَ خَلَوۡا مِنۡ قَبۡلِهِمۡؕ قُلۡ فَانتَظِرُوۡۤا اِنِّىۡ مَعَكُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِيۡنَ
১০২.) এখন তারা এছাড়া আর কিসের প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের আগে চলে যাওয়া লোকেরা যে দুঃসময় দেখেছে তারাও তাই দেখবে? তাদেরকে বলো, “ঠিক আছে, অপেক্ষা করো আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।”
ثُمَّ نُنَجِّىۡ رُسُلَنَا وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كَذٰلِكَۚ حَقًّا عَلَيۡنَا نُنۡجِ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
১০৩.) তারপর (যখন এমন সময় আসে তখন) আমি নিজের রসূলদের এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে রক্ষা করি। এটিই আমার রীতি। মুমিনদের রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।
قُلۡ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ اِنۡ كُنۡتُمۡ فِىۡ شَكٍّ مِّنۡ دِيۡنِىۡ فَلَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِيۡنَ تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلٰكِنۡ اَعۡبُدُ اللّٰهَ الَّذِىۡ يَتَوَفّٰٮكُمۡۖۚ وَاُمِرۡتُ اَنۡ اَكُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَۙ
১০৪.) হে নবী! বলে দাও, "হে লোকেরা! যদি তোমরা এখনো পর্যন্ত আমার দ্বীনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে শুনে রাখো, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের বন্দেগী করো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু।
وَاَنۡ اَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّيۡنِ حَنِيۡفًاۚ وَّلَا تَكُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ
১০৫.) আমাকে মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে। আর আমাকে বলা হয়েছে, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করো। এবং কখখোনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
وَلَا تَدۡعُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا يَنۡفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۚ فَاِنۡ فَعَلۡتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِيۡنَ
১০৬.) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোন সত্তাকে ডেকো না, যে তোমার না কোন উপকার করতে না ক্ষতি করতে পারে। যদি তুমি এমনটি করো তাহলে জালেমদের দলভুক্ত হবে।
وَاِنۡ يَّمۡسَسۡكَ اللّٰهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَۚ وَاِنۡ يُّرِدۡكَ بِخَيۡرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضۡلِهٖؕ يُصِيۡبُ بِهٖ مَنۡ يَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖؕ وَهُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُ
১০৭.) যদি আল্লাহ তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যে, এ বিপদ দুর করতে পারে। আর যদি তিনি তোমার কোন মঙ্গল চান তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করেন এবং তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
قُلۡ يٰۤاَيُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَكُمُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكُمۡۚ فَمَنِ اهۡتَدٰى فَاِنَّمَا يَهۡتَدِىۡ لِنَفۡسِهٖۚ وَمَنۡ ضَلَّ فَاِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيۡهَاۚ وَمَاۤ اَنَا۟ عَلَيۡكُمۡ بِوَكِيۡلٍ
১০৮.) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এসে গেছে। এখন যারা সোজা পথ অবলম্বন করবে তাদের সোজা পথ অবলম্ব তাদের জন্যই কল্যাণকর হবে। এবং যারা ভুল পথ অবলম্বন করবে তাদের ভুল পথ অবলম্বন তাদের জন্যই ধ্বংস কর হবে। আর “আমি তোমাদের ওপর হাবিলদার হয়ে আসেনি।"
وَاتَّبِعۡ مَا يُوۡحٰىۤ اِلَيۡكَ وَاصۡبِرۡ حَتّٰى يَحۡكُمَ اللّٰهُۖۚ وَهُوَ خَيۡرُ الۡحٰكِمِيۡنَ
১০৯.) হে নবী! তোমার কাছে অহীর মাধ্যমে যে হেদায়াত পাঠানো হচ্ছে তুমি তার অনুসরণ করো। আর আল্লাহ ফায়সালা দান করা পর্যন্ত সবর করো এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো ফায়সালাকারী।
No comments:
Post a Comment