নামকরণঃ
এ সূরাটি দু'টি নামে পরিচিতঃ আত্ তাওবাহ ও আল বারাআতু। তাওবা নামকরণের কারণ, এ সূরার এক জায়গায় কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করার কথা বলা হয়েছে। আর এর শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বলে একে বারাআত (অর্থাৎ সম্পর্কচ্ছেদ) নামে অভিহিত করা হয়েছে।
বিসমিল্লাহ না লেখার কারণঃ
এ সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা হয় না। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মতভেদ ঘটেছে। তবে এ প্রসংগে ইমাম রাযীর বক্তব্যই সঠিক। তিনি লিখেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখাননি, কাজেই সাহাবায়ে কেরামও লেখেননি এবং পরবর্তী লোকেরাও এ রীতির অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন। পবিত্র কুরআন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হুবহু ও সামান্যতম পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল এবং যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষণ করার জন্য যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।
নাযিলের সময়কাল ও সূরার অংশসমূহঃ
এ সূরাটি তিনটি ভাষণের সমষ্টি। প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে পঞ্চম রুকূর শেষ অবধি চলেছে। এর নাযিলের সময় হচ্ছে ৯ হিজরীর যিলকাদ মাস বা তার কাছাকাছি সময়। নবী (স) সে বছর হযরত আবু বকরকে (রা.) আমীরুল হজ্জ নিযুক্ত করে মক্কায় রওয়ানা করে দিয়েছিলেন। এমন সময় এ ভাষণটি নাযিল হয়। তিনি সংগে সংগেই হযরত আলীকে (রা.) তার পিছে পিছে পাঠিয়ে দিলেন, যাতে হজ্জের সময় সারা আরবের প্রতিনিধিত্বশীল সমাবেশে তা শুনানো হয় এবং সে অনুযায়ী যে কর্মপদ্ধতি হয়েছিল তা ঘোষনা করা যায়।
দ্বিতীয় ভাষণটি ৬ রুকূর শুরু থেকে ৯ রুকূর শেষ পর্যন্ত চলেছে। এটি ৯ হিজরীর রজব মাসে বা তার কিছু আগে নাযিল হয়। সে সময় নবী (সা.) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখানে মুমিনদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর যারা মুনাফিকী বা দুর্বল ঈমান অথবা কুড়েমি ও অলসতার কারণে আল্লাহর পথে ধন-প্রাণের ক্ষতি বরদাশত করার ব্যাপারে টালবাহানা করছিল তাদেরকে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করা হয়েছে।
তৃতীয় ভাষণটি ১০ রুকু’ থেকে শুরু হয়ে সুরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর এ অংশটি নাযিল হয়। এর মধ্যে এমনও অনেকগুলো খণ্ডিত অংশ রয়েছে যেগুলো ঐ দিনগুলোতে বিভিন্ন পরিবেশে নাযিল হয় এবং পরে নবী (সা.) আল্লাহর ইঙ্গিতে সেগুলো সব একত্র করে একই ধারাবাহিক ভাষণের সাথে সংযুক্ত করে দেন। কিন্তু যেহেতু সেগুলো একই বিষয়বস্তু ও একই ঘটনাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট তাই ভাষণের ধারাবাহিকতা কোথাও ব্যাহত হতে দেখা যায় না। এখানে মুনাফিকদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। তাবুক যুদ্ধে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন তাদেরকে ভৎর্সনা ও তিরস্কার করা হয়েছে। আর যে সাচ্চা ঈমানদার লোকেরা নিজেদের ঈমানের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান ছিলেন ঠিকই কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন তিরস্কার করার সাথে সাথে তাদের ক্ষমার কথাও ঘোষনা করা হয়েছে।
আয়াতগুলো যে পর্যায়ক্রমিক ধারায় নাযিল হয়েছে তার প্রোক্ষিতে প্রথম ভাষণটি সবশেষে বসানো উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়বস্তু গুরুত্বের দিক দিয়ে সেটিই ছিল সবার আগে। এ জন্য কিতাব আকারে সাজাবার ক্ষেত্রে নবী (সা.) তাকে প্রথমে রাখেন এবং অন্য ভাষণ দুটিকে তার পরে রাখেন।
ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
নাযিলের সময়-কাল নির্ধারিত হবার পর এ সূরার ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর একটু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ সুরার বিষয়বস্তুর সাথে যে ঘটনা পরম্পরার সম্পর্ক রয়েছে, তার সূত্রপাত ঘটেছে হোদাইবিয়ার সন্ধি থেকে। হোদাবিয়া পর্যন্ত ছ' বছরের অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ফলে আরবের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এলাকায় ইসলাম একটি সুসংঘটিত ও সংঘবদ্ধ সমাজের ধর্ম, একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। হোদায়বিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর এ ধর্ম বা দ্বীন আরো বেশী নিরাপদ ও নির্ঝঞ্চাট পরিবেশে চারদিকে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পেয়ে যায়। ১ এরপর ঘটনার গতিধারা দু’টি বড় বড় খাতে প্রবাহিত হয়। আরো সামনে অগ্রসর হয়ে ঐ দু’টি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে একটির সম্পর্ক ছিল আরবের সাথে এবং অন্যটির রোম সাম্রাজ্যের সাথে।
১.বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা মায়েদা ও সূরা ফাতাহ এর ভূমিকা।
আরব বিজয়ঃ
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর আরবে ইসলামের প্রচার, প্রসারের জন্য এবং ইসলামী শক্তি সুসংহত করার জন্য যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় তার ফলে মাত্র দু'বছরের মধ্যেই ইসলামের প্রভাব বলয় এত বেড়ে যায় এবং তার শক্তি এতটা পরাক্রান্ত ও প্রতাপশালী হয়ে ওঠে যে, পুরাতন জাহেলিয়াত তার মোকাবিলায় অসহায় ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। অবশেষে কুরাইশদের অতি উৎসাহী লোকেরা নিজেদের পরাজয় আসন্ন দেখে আর সংযত থাকতে পারেনি। তারা হোদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে। এ সন্ধির বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে একটা চূড়ান্ত যুদ্ধ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু এ চুক্তি ভংগের পর নবী (সা.) তাদেরকে আর গুছিয়ে নেবার কোন সুযোগ দেননি। তিনি ৮ হিজরীর রমযান মাসে আকম্মিকভাবে মক্কা আক্রমণ করে তা দখল করে নেন। ১ এরপর প্রাচীন জাহেলী শক্তি, হোনায়েনের ময়দানে তাদের শেষ মরণকামড় দিতে চেষ্টা করে। সেখানে হাওয়াযিন, সাকীফ, নদর, জুসাম, এবং অন্যান্য কতিপয় জাহেলিয়াতপন্থী গোত্র তাদের পূর্ণ শক্তির সমাবেশ ঘটায়। এভাবে তারা মক্কা বিজয়ের পর যে সংস্কারমূলক বিপ্লবটি পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল তার পথ রোধ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা ও ব্যর্থ হয়। হোনায়েন যুদ্ধে তাদের পরাজয়ের সাথে সাথেই আরবের ভাগ্যের চূড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যায়। আর এ ফায়সালা হচ্ছে, আরবকে এখন দারুল ইসলাম হিসেবেই টিকে থাকতে হবে। এ ঘটনার পর পুরো এক বছর যেতে না যেতেই আরবের বেশীর ভাগ এলাকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে। এ অবস্থায় জাহেলী ব্যবস্থার শুধুমাত্র কতিপয় বিচ্ছিন্ন লোক দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। উত্তরে রোম সাম্রাজ্যের সীমান্তে সে সময় যেসব ঘটনা ঘটে চলছিল তা ইসলামের এ সম্প্রসারণ ও বিজয়কে পূর্ণতায় পৌঁছুতে আরো বেশী করে সাহায্য করে। সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুঃসাহসিকতার সাথে ৩০ হাজারের বিরাট বাহিনী নিয়ে যান এবং রোমীয়রা যেভাবে তাঁর মুখোমুখি হবার ঝুঁকি না নিয়ে পিঠটান দিয়ে নিজেদের দুর্বলতার প্রকাশ ঘটায় তাতে সারা আরবে তাঁর ও তাঁর দ্বীনের অপ্রতিরোধ্য প্রতাপ ও অজেয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে তাবুক থেকে ফিরে আসার সাথে সাথেই তার কাছে একের পর এক প্রতিনিধি দল আসতে থাকে আরবের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাঁর বশ্যতা ও আনুগত্য স্বীকার করে। ২ এ অবস্থাটিকেই কুরআনে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
"যখন আল্লাহর সাহায্য এসে গেলো ও বিজয় লাভ হলো এবং তুমি দেখলে লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করছে।"
তাবুক অভিযানঃ
মক্কা বিজয়ের আগেই রোম সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিল। হোদাইবিয়ার সন্ধির পর নবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আরবের বিভিন্ন অংশে যেসব প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি দল গিয়েছিল উত্তর দিকে সিরিয়া সীমান্তের লাগোয়া গোত্রগুলোর মধ্য। তাদের বেশীর ভাগ ছিল খৃষ্টান এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন। তারা “যাতুত তালাহ” (অথবা যাতু-আতলাহ) নামক স্থানে ১৫ জন মুসলমানকে হত্যা করে। কেবলমাত্র প্রতিনিধি দলের নেতা হযরত কাব ইবনে উমাইর গিফারী প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। একই সময়ে নবী (সা.) বুসরার গবর্ণর শুরাহবিল ইবনে আমরের নামেও দাওয়াত নামা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেও তাঁর দূত হারেস ইবনে উমাইরকে হত্যা করে। এ সরদারও ছিল খৃষ্টান। এবং সরাসরি রোমের কাইসারের হুকুমের আনুগত। এসব কারণে নবী (সা.) ৮ হিজরীর জমাদিউল উলা মাসে তিন হাজার মুজাহিদদের একটি সেনাবাহিনী সিরিয়া সীমান্তের দিকে পাঠান। ভবিষ্যতে এ এলাকাটি যাতে মুসলমানদের জন্য নিরাপদ হয়ে যায় এবং এখানকার লোকেরা মুসলমানদেরকে দুর্বল মনে করে তাদের ওপর জুলুম ও বাড়াবাড়ি করার সাহস না করে, এই ছিল তার উদ্দেশ্য। এ সেনাদলটি মা’আন নামক স্থানের কাছে পৌছার পর জানা যায় শুরাহবীল ইবনে আমর এক লাখ সেনার একটি বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের মোকাবিলায় আসছে। ওদিকে রোমের কাইসার হিমস নামক স্থানে সশরীরে উপস্থিত। তিনি নিজের ভাই থিয়েডরের নেতৃত্বে আরো এক লাখের একটি সেনাবাহিনী রওয়ানা করে দেন। কিন্তু এসব আতংকজনক খবরাখবর পাওয়ার পরও তিন হাজারের এ প্রাণোৎসর্গী ছোট্ট মুজাহিদ বাহিনীটি অগ্রসর হতেই থাকে। অবশেষে তারা মুতা নামক স্থানে শুরাহবিলের এক লাখের বিরাট বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ অসম সাহসিকতা দেখানোর ফলে মুসলিম মুজাহিদদের পিষ্ট হয়ে চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সারা আরব দেশ এবং সমগ্র মধ্য প্রাচ্য বিষ্ময়ে স্বম্ভিত হয়ে দেখলো যে, এক ও তেত্রিশের এ মোকাবিলায়ও কাফেররা মুসলমানদের ওপর বিজয়ী হতে পারলো না। এ জিনিসটিই সিরিয়া ও তার সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী আধা স্বাধীন আরব গোত্রগুলোকে এমনকি ইরাকের নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসকারী পারস্য সম্রাটের প্রভাবাধিন নজদী গোত্রগুলোকেও ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। তাদের হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করে। বনী সুলাইম (আব্বাস ইবনে মিরদাস সুলামী ছিলেন তাদের সরদার) আশজা, গাতফান, যুবইয়ান ও ফাযারাহ গোত্রের লোকেরা এ সময়ই ইসলাম গ্রহণ করে। এ সময়ই রোম সাম্রাজ্যের আরবীয় সৈন্য দলের একজন সেনাপতি ফারওয়া ইবনে আমর আলজুযামী মুসলমান হন। তিনি নিজের ঈমানের এমন অকাট্য প্রমাণ পেশ করেন, যা দেখে আশেপাশের সব এলাকার লোকেরা বিস্ময়ে হতচকিত হয়ে পড়ে। ফারওয়ার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে কাইসার তাকে গ্রেফতার করিয়ে নিজের দরবারে আনেন। তাঁকে দু’টি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি নির্বাচন করার ইখতিয়ার দেন। তাকে বলেন ইসলাম ত্যাগ করো। তাহলে তোমাকে শুধু মুক্তিই দেয়া হবে না বরং আগের পদমর্যাদাও বহাল করে দেয়া হবে। অথবা মুসলমান থোকো। কিন্তু এর ফলে তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। তিনি ধীর স্থিরভাবে চিন্তা করে ইসালামকে নির্বাচিত করেন এবং সত্যের পথে প্রাণ বিসর্জন দেন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কাইসার তার সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে উদ্ভূত এক ভয়াবহ হুমকির স্বরূপ উপলব্ধি করেন, যা আরবের মাটিতে সৃষ্ট হয়ে তার সাম্রাজ্যের দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছিল।
পরের বছর কাইসার মুসলমানদের মুতা যুদ্ধের শাস্তি দেবার জন্য সিরিয়া সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে দেন। তার অধীনে গাসসানী ও অন্যন্য আরব সরদাররা সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। নবী (সা.) এ ব্যাপারে বেখবর ছিলেন না। একেবারেই নগণ্য ও তুচ্ছ যেসব ব্যাপার ইসলামী আন্দোলনের ওপর সামন্যমতও অনুকূল বা প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তার প্রত্যেকেটি সম্পর্কে তিনি সর্বক্ষণ সচেতন ও সতর্ক থাকতেন। এ প্রস্তুতিগুলোর অর্থ তিনি সংগে সংগেই বুঝে ফেলেন। কোন প্রকার ইতস্তত না করেই কাইসারের বিশাল বিপুল শক্তির সাথে তিনি সংঘর্ষে লিপ্ত হবার ফায়সালা করে ফেলেন। এ সময় সামান্যতম ও দুর্বলতা দেখানো হলে এতদিনকার সমস্ত মেহনত ও কাজ বরবাদ হয়ে যেতো। একদিকে হোনায়েনে আরবের যে ক্ষয়িষ্ণু ও মুমূর্ষ জাহেলিয়াতের বুকে সর্বশেষ আঘাত হানা হয়েছিল তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো এবং অন্যদিকে মদীনার যে মুনাফিকরা আবু আমের রাহেবের মধ্যস্থতায় গাসসানের খ্রীস্টান বাদশাহ এবং স্বয়ং কাইসারের সাথে গোপন যোগসাজশে লিপ্ত হয়েছিল। উপরন্তু যারা নিজেদের দুস্কর্মের ওপর দ্বীনদারীর প্রলেপ লাগাবার জন্য মদীনার সংলগ্ন এলাকায় “মসজিদে দ্বিরার” (ইসলামী মিল্লাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে তৈরী মসজিদ) নির্মাণ করেছিল, তারা পিঠে ছুরি বসিয়ে দিতো। সামনের দিক থেকে কাইসার আক্রমণ করতে আসছিল। ইরানীদের পরাজিত করার পর দূরের ও কাছের সব এলাকায় তার দোর্দণ্ড প্রতাপ ও দাপট ছড়িয়ে পড়েছিল। এ তিনটি ভয়ংকর বিপদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইসলামের অর্জিত বিজয় অকস্মাত পরাজয়ে রূপান্তিত হয়ে যেতে পারতো। তাই, যদিও দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল, আবহাওয়া ছিল প্রচণ্ড গরম, ফসল পাকার সময় কাছে এসে গিয়েছিল, সওয়ারী ও সাজ, সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা বড়ই কঠিন ব্যাপার ছিল। অর্থের অভাব ছিল প্রকট এবং দুনিয়ার দু'টি বৃহত্তম শক্তির একটির মোকাবিলা করতে হচ্ছিল তবুও আল্লাহর নবী এটাকে সত্যের দাওয়াতের জন্য জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা করার সময় মনে করে এ অবস্থায়ই যুদ্ধ প্রস্তুতির সাধারণ ঘোষণা জারি করে দেন। এর আগের সমস্ত যুদ্ধে নবী (সা.) এর নিয়ম ছিল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কাউকে বলতেন না কোনদিকে যাবেন এবং কার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। বরং তিনি মদীনা থেকে বের হবার পরও অভীষ্ট মনযিলের দিকে যাবার সোজা পথ না ধরে তিনি অন্য বাঁকা পথ ধরতেন। কিন্তু এবার তিনি এ আবরণটুকু ও রাখলেন না। এবার পরিষ্কার বলে দিলেন যে, রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং সিরিয়ার দিকে যেতে হবে।
এ সময়টি যে অত্যন্ত নাজুক ছিল তা আরবের সবাই অনুভব করছিল। প্রাচীন জাহেলিয়াতের প্রেমিকদের মধ্যে যারা তখনো বেঁচে ছিল তাদের জন্য এটি ছিল শেষ আশার আলো। রোম ও ইসলামের এ সংঘাতের ফলাফল কি দাঁড়ায় সে দিকেই তারা অধীর আগ্রহে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিল। কারণ তারা নিজেরাও জানতো, এরপর আর কোথাও কোন দিক থেকেই আশার সামান্যতম ঝলকও দেখা দেবার কোন সম্ভবনা নেই। মুনাফিকেরাও এরই পেছনে তাদের শেষ প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিল। তারা নিজেদের মসজিদে দ্বিরার বানিয়ে নিয়েছিল। এরপর অপেক্ষা করছিল সিরিয়ার যুদ্ধে ইসলামের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটা মাত্রই তারা দেশের ভেতরে গোমরাহী ও অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেবে। এখানেই শেষ নয়, বরং তারা তাবুকের এ অভিযানকে ব্যর্থ করার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের কৌশলও অবলম্বন করে। এদিকে নিষ্ঠাবান মুসলমানরাও পুরোপুরি অনুভব করতে পেরেছিলেন, যে আন্দোলনের জন্য বিগত ২২বছর ধরে তারা প্রাণপাত করে এসেছেন বর্তমানে তার ভাগ্যের চূড়ান্ত ফায়সালা হবার সময় এসে পড়েছে। এ সময় সাহস দেখাবার অর্থ দাঁড়ায়, সারা দুনিয়ার ওপর এ আন্দোলনের দরজা খুলে যাবে অন্যদিকে এ সময় দুবর্লতা দেখাবার অর্থ দাড়ায় খোদ আরব দেশেও একে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলতে হবে। কাজেই এ অনুভূতি সহকারে সত্যের নিবেদিত প্রাণ সিপাহীরা চরম উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম যোগাড় করার ব্যাপারে প্রত্যেকেই নিজের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণে অংশগ্রহণ করেন। হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিপুল অর্থ দান করেন। হযরত উমর (রা.) তার সারা জীবনের উপার্জনের অর্ধেক এনে রেখে দেন। হযরত আবু বকর (রা.) তার সঞ্চিত সম্পদের সবটাই নবী (সা.) এর সামনে পেশ করেন। গরীব সাহাবীরা মেহনত মজদুরী করে যা কামাই করতে পেরেছিলেন তার সবটুকু উৎসর্গ করেন। মেয়েরা নিজেদের গহনা খুলে নযরানা পেশ করেন। চারদিক থেকে দলে দলে আসতে থাকে প্রাণ উৎসর্গকারী স্বেচ্ছাসেবকদের বাহিনী। তারা আবেদন জানান, বাহন ও অস্ত্র শস্ত্রের ব্যবস্থা হয়ে গেলে আমরা প্রাণ দিতে প্রস্তুত। যারা সওয়ারী পেতেন না তারা কাঁদতে থাকতেন। তারা এমনভাবে নিজেদের আন্তরিকতা মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ করতে থাকতেন যার ফলে রাসূলে পাকের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো, এ ঘটনাটি কার্যত মুমিন ও মুনাফিক চিহ্নিতকরার একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি এ সময় কোন ব্যক্তি পেছনে থেকে যাওয়ার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, ইসলামের তার সম্পর্কের দাবি সত্য কিনা সেটাই সন্দেহজনক হয়ে পড়তো। কাজেই তাবুকের পথে যাওয়ার সময় সফরের মধ্যে যেসব ব্যক্তি পেছনে থেকে যেতো সহাবায়ে কেরাম নবী (সা.) এর নিকট তাদের খবর পৌছিয়ে দিতেন। এর জবাবে তিনি সংগে সংগেই স্বতস্ফূর্তভাবে বলে ফেলতেনঃ
دعوه فان يك فيه خير فسيلحقه الله لكم , وان يك غير ذلك فقد اراحكم الله منه-
“যেতে দাও, যদি তার মধ্যে ভালো কিছু থেকে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে আবার তোমাদের সাথে মিলিয়ে দেবেন। আর যদি অন্য কোন ব্যাপার হয়ে থাকে, তাহলে শোকর করো যে, আল্লাহ তার ভণ্ডামীপূর্ণ সাহচর্য থেকে তোমাদের বাঁচিয়েছেন”।
৯ হিজরীর রজব মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩০ হাজারের মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার পথে রওয়ানা হন। তাঁর সাথে ছিল দশ হাজার সওয়ার। উটের সংখ্যা এত কম ছিল যে, এক একটি উটের পিঠে কয়েক জন পালাক্রমে সওয়ার হতেন। এর ওপর ছিল আবার গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতা। পানির স্বল্পতা সৃষ্টি করেছিল আরো এক বাড়তি সমস্যা। কিন্তু এ নাজুক সময়ে মুসলমানরা যে সাচ্চা ও দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দেন তার ফল তারা তাবুকে পৌঁছে পেয়ে যান। সেখানে পৌঁছে তারা জানতে পারেন, কাইসার ও তার অধিনস্থ সম্মুখ যুদ্ধ অবতীর্ণ হবার পরিবর্তে নিজেদের সেনা বাহিনী সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এখন এ সীমান্তে আর কোন দুশমন নেই। কাজেই এখানে যুদ্ধেরও প্রয়োজন নেই। সীরাত রচয়িতারা এ ঘটনাটিকে সাধারণত এমনভাবে লিখে গেছেন যাতে মনে হবে যেন সিরিয়া সীমান্তে রোমীয় সৈন্যদের সমাবেশ সম্পর্কে যে খবর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে তা আদতে ভুলই ছিল। অথচ আসল ঘটনা এই যে, কাইসার সৈন্য সমাবেশ ঠিকই শুরু করেছিল। কিন্তু তার প্রস্তুতি শেষ হবার আগেই যখন রসূলুল্লাহ (সা.) মোকাবিলা করার জন্য পৌঁছে যান তখন সে সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ দেখেনি। মুতার যুদ্ধে এক লাখের সাথে ৩ হাজারের মোকাবিলার যে দৃশ্য সে দেখেছিল তারপর খোদ নবী করীমের (সা.) নেতৃত্বে ৩০ হাজারের যে বাহিনী এগিয়ে আসছিল সেখানে লাখ দুলাখ সৈন্য মাঠে নামিয়ে তার সাথে মোকাবিলা করার হিম্মাত তার ছিল না।
কাইসারের এভাবে পিছু হটে যাওয়ার ফলে যে নৈতিক বিজয় লাভ হলো, এ পর্যায়ে নবী (সা.) তাকে যথেষ্ট মনে করেন। তিনি তাবুক থেকে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সিরিয়া সীমান্তে প্রবেশ করার পরিবর্তে এ বিজয় থেকে যত দুর সম্ভব রাজনৈতিক ও সামরিক ফায়দা হাসিল করাকেই অগ্রাধিকার দেন্ সে জন্যেই তিনি তাবুকে ২০ দিন অব্স্থান করে রোম সাম্রাজ্য ও দারুল ইসলামের মধ্যবর্তী এলাকায় যে বহু সংখ্যক ছোট ছোট রাজ্য এতদিন রোমানদের প্রভাবাধীনে ছিল। সামরিক চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে ইসলামী সাম্রাজ্যের অনুগত করদ রাজ্যে পরিণত করেন। এভাবে দুমাতুল জানদালের খৃষ্টান শাসক উকাইদির ইবনে আবদুল মালিক কিনদী, আইলার খৃষ্টান শাসক ইউহান্না ইবনে রুবাহ এবং অনুরূপ মাকনা, জারবা, ও আযরূহের খৃষ্টান শাসকরাও জিযিয়া দিয়ে মদীনার বশ্যতা স্বীকার করে। এর ফলে ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা সরাসরি রোম সাম্রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। রোম সম্রাটরা যেসব আরব গোত্রকে এ পর্যন্ত আরবদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছিল এখন বেশীর ভাগই রোমানদের মোকাবিলায় মুসলমানদের সহযোগী হয়ে গেল। এভাবে রোম সাম্রাজ্যের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদী সংঘর্ষে লিপ্ত হবার আগে ইসলাম সমগ্র আরবের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন ও বাঁধন মজবুত করে নেবার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। এটাই হয় এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় লাভ। এতদিন পর্যন্ত যারা প্রকাশ্যে মুশরিকদের দলভুক্ত থেকে অথবা মুসলমানদের দলে যোগদান করে পরদার অন্তরালে মুনাফিক হিসেবে অবস্থান করে প্রাচীন জাহেলিয়াতের পুনর্বহালের আশায় দিন গুণছিল তাবুকের এ বিনা যুদ্ধে বিজয় লাভের ঘটনা তাদের কোমর ভেংগে দেয়। এ সর্বশেষ ও চূড়ান্ত হতাশার ফলে তাদের অধিকাংশের জন্য ইসলামের কোলে আশ্রয় নেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আর যদি বা তাদের নিজেদের ইসলামের নিয়ামতলাভের সুযোগ নাও থেকে থাকে, তবে কমপক্ষে তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য সম্পর্ণরূপে ইসলামের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। এরপর একটি নামমাত্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তাদের শিরক ও জাহেলী কার্যক্রমে অবিচল থাকে। কিন্তু তারা এত বেশী হীনবল হয়ে পড়ে যে, ইসলামের যে সংস্কারমূলক বিপ্লবের জন্য আল্লাহ তাঁর নবীকে পাঠিয়েছিলেন তার পূর্ণতা সাধনের পথে তারা সামান্যতমও বাধা সৃষ্টি করতে সমর্থ ছিল না।
আলোচ্য বিষয় ও সমস্যাবলীঃ
এ পটভূমি সামনে রেখে আমরা সে সময় যেসব বড় বড় সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং সূরা তাওবায় যেগুলো আলোচিত হয়েছে, সেগুলো সহজেই চিহ্নিত করতে পারি। সেগুলো হচ্ছে।
১। এখন যেহেতূ সমগ্র আরবের শাসন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে মুমিনেদের হাতে এসে গিয়েছিল এবং সমস্ত প্রতিবন্ধক শক্তি নির্জীব ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল, তাই আরবদেশকে পূর্নাঙ্গ দারুল ইসলামে পরিণত করার জন্য যে নীতি অবলম্বন করা অপরিহার্য ছিল তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করতে আর বিলম্ব করা চলে না।তাই নিম্নোক্ত আকারে তা পেশ করা হয়ঃ
(ক) আরব থেকে শিরককে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করতে হবে। প্রাচীন মুশরিকী ব্যবস্থাকে পুরোপুরি খতম করে ফেলতে হবে। ইসলামের কেন্দ্র যেন চিরকালের জন্য নির্ভেজাল ইসলামী কেন্দ্রে পরিণত হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কোন অনৈসলামী উপাদান যেন সেখানকার ইসলামী মেজায ও প্রকৃতিতে অনুপ্রবেশ করতে এবং কোন বিপদের সময় আভ্যন্তরীন ফিতনার কারণ হতে না পারে। এ উদ্দেশ্যে মুশরিকদের সাথে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হয়।
(খ, কাবা ঘরের ব্যবস্থাপনা মুমিনদের হাতে এসে যাবার পর, একান্তভাবে আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য উৎসর্গীত সেই ঘরটিতে আবারো আগের মত মূর্তিপূজা হতে থাকবে এবং তার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষতার দায়িত্ব এখনো মুশরিকদের হাতে বহাল থাকবে এটা কোনক্রমেই সংগত হতে পারে না। তাই হুকুম দেয়া হয়ঃ আগামীতে কাবা ঘরের পরিচালনা ও অভিভাবকত্বের দায়িত্বেও তাওহীদদের হাতেই ন্যস্ত থাকা চাই।আর এ সংগে বায়তুল্লাহর চতুসীমানর মধ্যে শিরক ও জাহেলিয়াতের যাবতীয় রসম-রেওয়াজ বল প্রয়োগে বন্ধ করে দিতে হবে। বরং এখন থেকে মুশরিকরা আর এ ঘরের ত্রিসীমানায় ঘেঁসতে পারবে না। তাওহীদদের মহান অগ্রনী পুরুষ ইবরাহীমের হাতে গড়া এ গৃহটি আর শিরক দ্বারা কলুষিত হতে না পারে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
(গ, আরবের সাংস্কৃতিক জীবনে জাহেলী রসম-রেওয়াজের যেসব চিহ্ন এখনো অক্ষুন্ন ছিল নতুন ইসলামী যুগে সেগুলোর প্রচলন থাকা কোনক্রমেই সমিচীন ছিল না। তাই সেগুলো নিশ্চিহ্ন করার প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। নাসী (ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম মাসকে হালাল ও হালাল মাসকে হারাম নির্দিষ্ট করে নেয়া, র নিয়মটা ছিল সবচেয়ে খারাপ প্রথা। তাই তার ওপরে সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে। এ আঘাতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের অন্যান্য নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের করনীয় কী। তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
২।আরবের ইসলাম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পূর্ণতায় পৌঁছে যাবার পর সামনে যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টি ছিল সেটি হলো, আরবের বাইরে আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রভাব-বলয় বিস্তৃত করা। এ পথে রোম ও ইরানের রাজনৈতিক শক্তি ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। আরবের কার্যক্রম শেষ হবার পরই তার সাথে সংঘর্ষ বাধা ছিল অনিবার্য। তাছাড়া পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য অমুসলিম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাগুলোর সাথেও এমনি ধরনের সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হওয়া ছিল স্বাভাবিক। তাই মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়, আরবের বাইরে যারা সত্য দ্বীনের অনুসারী নয়, তারা ইসলামী কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যত ও আনুগত্যের স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগ করে তাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসন কর্তৃত্ব খতম করে দাও। অবশ্য আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপরটি তাদের ইচ্ছাধীন। তারা চাইলে ইমান আনতে পারে, চাইলে নাও আনতে পারে। কিন্তু আল্লাহর যমীনে নিজেদের হুকুম জারি করার এবং মানব সমাজের কর্তৃত্ব ও পরিচালনা ব্যবস্থা নিজেদের হাতে রেখে মানুষের ওপর এবং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের ওপর নিজেদের গোমরাহীসমূহ জোরপূর্বক চাপিলে দেবার কোন অধিকার তাদের নেই। বড় জোর তাদের কে একটুকু স্বাধীনতা দেয়া যেতে পারে যে, তারা নিজেরা চাইলে পথভ্রষ্ট হয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু সে জন্য শর্ত হচ্ছে, তাদের জিযিয়া আদায় করে ইসলামী শাসন কর্তৃত্বের অধীন থাকতে হবে।
৩।মুনাফিক সংক্রন্ত বিষয়টি ছিল তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সাময়িক বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তাদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত উপেক্ষাও এড়িয়ে যাবার নীতি অবলম্বন করা হচ্ছিল। এখন যেহেতু বাইরের বিপদের চাপ কম গিয়েছিল বরং একেবারে ছিলই না বললে চলে, তাই হুকুম দেয়া হয়, আগামীতে তাদের সাথে আর নরম ব্যবহার করা যাবে না। প্রকাশ্য সত্য অস্বীকারকারীদের সাথে যেমন কঠোর ব্যাবহার করা হয় তেমনি কঠোর ব্যবহার গোপন সত্য অস্বীকারকারীদের সাথেও করা হবে। এ নীতি অনুযায়ী নবী (সা.) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি পূর্বে সুওয়াইলিমের গৃহে আগুন লাগান্ সেখানে মুনাফিকদের একটি দল মুসলমানদেরকে যুদ্ধে যোগদান করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রচারাভিযান চালাবার জন্য জামায়েত হতো। আবার এ নীতি অনুযায়ী নবী (সা.) তাবুক থেকে ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম মসজিদে দ্বিরার ভেংগে ফেলার ও জ্বালীয়ে দেবার হুকুম দেন।
৪।নিষ্ঠাবান মুমিনদের কতকের মধ্যে এখনো পর্যন্ত যে সামান্য কিছু সংকল্পের দুর্বলতা রয়ে গিয়েছিল তার চিকিৎসারও প্রয়োজন ছিল। কারণ ইসলাম এখন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চলেছে। যে ক্ষেত্রে মুসলিম আরবেকে একাকী সারা অমুসলিম দুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে হবে সে ক্ষেত্রে ইসলামী সংগঠনের জন্য ঈমানের দুর্বলতার চাইতে বড় কোন আভ্যন্তরীণ বিপদ থাকতে পারে না। তাই তাবুক যুদ্ধের সময় যারা অলসতা ও দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছিল অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তাদের তিরস্কার ও নিন্দা করা হয়। যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের ন্যায়সংগত ওযর ছাড়াই পিছনে থেকে যাওয়াটাকে একটা মুনাফেকসূলভ আচরণ এবং সাচ্চা ঈমানদার না হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভবিষ্যতের জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানিয়ে দেয়াহয়, আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার সংগ্রাম এবং কুফর ও ইসলামের সংঘাতই হচ্ছে মুমিনদের ঈমানদের দাবি যাচাই আসল মানদণ্ড। এ সংঘর্ষে যে ব্যক্তি ইসলামের জন্য ধন-প্রাণ সময় ও শ্রম ব্যয় করতে ইতস্তত করবে তার ঈমান নির্ভরযোগ্য হবে না। অন্য কোন ধর্মীয় কাজের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রের কোন অভাব পূরণ করা যাবে না।
এসব বিষয়ের প্রতি নজর রেখে সূরা তওবা অধ্যয়ন করলে এর যাবতীয় বিষয় সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
بَرَآءَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖۤ اِلَى الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَؕ
১.) সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষনা করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে, যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছিলে তাদের সাথে।
فَسِيۡحُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ اَرۡبَعَةَ اَشۡهُرٍ وَّاعۡلَمُوۡۤا اَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِىۡ اللّٰهِۙ وَاَنَّ اللّٰهَ مُخۡزِىۡ الۡكٰفِرِيۡنَ
২.) কাজেই তোমরা দেশের মধ্যে আরো চার মাসকাল চলাফেরা করে নাও এবং জেনে রেখো তোমরা আল্লাহকে অক্ষম ও শক্তিহীন করতে পারবে না। আর আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন।
وَاَذٰنٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖۤ اِلَى النَّاسِ يَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَكۡبَرِ اَنَّ اللّٰهَ بَرِىۡۤءٌ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ ۙ وَرَسُوۡلُهٗؕ فَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَيۡرٌ لَّكُمۡۚ وَاِنۡ تَوَلَّيۡتُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِىۡ اللّٰهِؕ وَبَشِّرِ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا بِعَذَابٍ اَلِيۡمٍۙ
৩.) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে বড় হজ্জের দিনে সমস্ত মানুষের প্রতি সাধারণ ঘোষণা করা হচ্ছেঃ “আল্লাহর মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তাঁর রসূলও। এখন যদি তোমরা তওবা করে নাও তাহলে তো তোমাদেরই জন্য ভাল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে খুব ভাল করেই বুঝে নাও, তোমরা আল্লাহকে শক্তি সামর্থহীন করতে পারবে না। আর হে নবী! অস্বীকারকারীদের কঠিন আযাবের সুখবর দিয়ে দাও।
اِلَّا الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ ثُمَّ لَمۡ يَنۡقُصُوۡكُمۡ شَيۡـًٔا وَّلَمۡ يُظَاهِرُوۡا عَلَيۡكُمۡ اَحَدًا فَاَتِمُّوۡۤا اِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ اِلٰى مُدَّتِهِمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
৪.) তবে যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছো তারপর তারা তোমাদের সাথে নিজেদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি তাদের ছাড়া। এ ধরনের লোকদের সাথে তোমরাও নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন করবে। কারণ আল্লাহ তাকওয়া তথা সংযম অবলম্বনকারীদেরকে পছন্দ করেন।
فَاِذَا انسَلَخَ الۡاَشۡهُرُ الۡحُرُمُ فَاقۡتُلُوۡا الۡمُشۡرِكِيۡنَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوۡهُمۡ وَخُذُوۡهُمۡ وَاحۡصُرُوۡهُمۡ وَاقۡعُدُوۡا لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٍۚ فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوۡا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَخَلُّوۡا سَبِيۡلَهُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৫.) অতএব, হারাম মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে গেলে মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং প্রত্যেক ঘাটতি তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো। তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَاِنۡ اَحَدٌ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ اسۡتَجَارَكَ فَاَجِرۡهُ حَتّٰى يَسۡمَعَ كَلٰمَ اللّٰهِ ثُمَّ اَبۡلِغۡهُ مَاۡمَنَهٗؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا يَعۡلَمُوۡنَ
৬.) আর যদি মুশরিকদের কোন ব্যক্তি আশ্রয় প্রার্থনা করে তোমার কাছে আসতে চায় (যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে) তাহলে তাকে আল্লাহর কালাম শোনা পর্যন্ত আশ্রয় দাও, তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দাও। এরা অজ্ঞ বলেই এটা করা উচিত।
كَيۡفَ يَكُوۡنُ لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ عَهۡدٌ عِنۡدَ اللّٰهِ وَعِنۡدَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَّا الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ عِنۡدَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِۚ فَمَا اسۡتَقَامُوۡا لَكُمۡ فَاسۡتَقِيۡمُوۡا لَهُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
৭.) মুশরিকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কোন নিরাপত্তার অঙ্গীকার কেমন করে হাতে পারে? তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছিলে মসজিদে হারামের কাছে তাদের কথা স্বতন্ত্র।কাজেই যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য সোজা-সরল থাকে ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য সোজা-সরল থাকো। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন।
كَيۡفَ وَاِنۡ يَّظۡهَرُوۡا عَلَيۡكُمۡ لَا يَرۡقُبُوۡا فِيۡكُمۡ اِلاًّ وَّلَا ذِمَّةًؕ يُرۡضُوۡنَكُمۡ بِاَفۡوٰهِهِمۡ وَتَاۡبٰى قُلُوۡبُهُمۡۚ وَاَكۡثَرُهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
৮.) তবে তাদের ছাড়া অন্য মুশরিকদের জন্য নিরাপত্তা চুক্তি কেমন করে হতে পারে, যখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা তোমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পরলে তোমাদের ব্যাপারে কোন আত্মীয়তার পরোয়া করবে না এবং কোন অঙ্গীকারের দায়িত্বও নেবে না। তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে কিন্তু তাদের মন তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
اِشۡتَرَوۡا بِاٰيٰتِ اللّٰهِ ثَمَنًا قَلِيۡلاً فَصَدُّوۡا عَنۡ سَبِيۡلِهٖؕ اِنَّهُمۡ سَآءَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
৯.) তারা আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে সামান্যতম মূল্য গ্রহণ করে নিয়েছে। তারপর আল্লাহ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যা করতে অভ্যস্ত, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ।
لَا يَرۡقُبُوۡنَ فِىۡ مُؤۡمِنٍ اِلاًّ وَّلَا ذِمَّةًؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُعۡتَدُوۡنَ
১০.) কোন মুমিনের ব্যাপারে তারা না আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা করে, আর না কোন অঙ্গীকারের ধার ধারে। আগ্রাসন ও বাড়াবাড়ি সবসময় তাদের পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।
فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوۡا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَاِخۡوَانُكُمۡ فِىۡ الدِّيۡنِؕ وَنُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ
১১.) কাজেই যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। যারা জানে, তাদের জন্য আমার বিধান স্পষ্ট করে বর্ণনা করি।
وَاِنۡ نَّكَثُوۡۤا اَيۡمَانَهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ عَهۡدِهِمۡ وَطَعَنُوۡا فِىۡ دِيۡنِكُمۡ فَقٰتِلُوۡۤا اَٮِٕمَّةَ الۡكُفۡرِۙ اِنَّهُمۡ لَاۤ اَيۡمَانَ لَهُمۡ لَعَلَّهُمۡ يَنۡتَهُوۡنَ
১২.) আর যদি অঙ্গীকার করার পর তারা নিজেদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের ওর হামলা চালাতে থাকে তাহলে কুফরীর পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ তাদের কসম বিশ্বাসযোগ্য নয়। হয়তো (এরপর তরবারীর ভয়েই) তারা নিরস্ত হবে।
اَلَا تُقَاتِلُوۡنَ قَوۡمًا نَّكَثُوۡۤا اَيۡمَانَهُمۡ وَهَمُّوۡا بِاِخۡرَاجِ الرَّسُوۡلِ وَهُمۡ بَدَءُوۡكُمۡ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخۡشَوۡنَهُمۡۚ فَاللّٰهُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشَوۡهُ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ
১৩.) তোমরা কি লড়াই করবে না এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এসেছে এবং যারা রসূলকে দেশ থেকে বের করে দেবার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ি সূচনা তারাই করেছিল? তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন।
قَاتِلُوۡهُمۡ يُعَذِّبۡهُمُ اللّٰهُ بِاَيۡدِيۡكُمۡ وَيُخۡزِهِمۡ وَيَنۡصُرۡكُمۡ عَلَيۡهِمۡ وَيَشۡفِ صُدُوۡرَ قَوۡمٍ مُّؤۡمِنِيۡنَۙ
১৪.) তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন, তাদের মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন।
وَيُذۡهِبۡ غَيۡظَ قُلُوۡبِهِمۡؕ وَيَتُوۡبُ اللّٰهُ عَلٰى مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡم
১৫.) আর তাদের অন্তরের জ্বালা জুড়িয়ে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা তাওবা করার তাওফীকও দান করবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী।
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَكُوۡا وَلَمَّا يَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡكُمۡ وَلَمۡ يَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلَا رَسُوۡلِهٖ وَلَا الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَلِيۡجَةًؕ وَاللّٰهُ خَبِيۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
১৬.) তোমরা কি একথা মনে করে রেখেছো যে, তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তাঁর পথে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ, রসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো না? তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন।
مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ اَنۡ يَّعۡمُرُوۡا مَسٰجِدَ اللّٰهِ شٰهِدِيۡنَ عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ بِالۡكُفۡرِؕ اُولٰۤٮِٕكَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ ۖ وَفِىۡ النَّارِ هُمۡ خٰلِدُوۡنَ
১৭.) মুশরিক যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীর সাক্ষ্য দিচ্ছে তখন আল্লাহর মসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও খাদেম হওয়া তাদের কাজ নয়। তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং তাদেরকে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে।
اِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ وَاٰتَى الزَّكٰوةَ وَلَمۡ يَخۡشَ اِلَّا اللّٰهَ فَعَسٰىۤ اُولٰۤٮِٕكَ اَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُهۡتَدِيۡنَ
১৮.) তারাই হতে পারে আল্লাহর মসজিদ আবাদকারী (রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক) যারা আল্লাহর ও পরকালকে মানে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ কে ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনা। তাদেরই ব্যাপারে আশা করা যেতে পারে যে, তারা সঠিক সোজা পথে চলবে।
اَجَعَلۡتُمۡ سِقَايَةَ الۡحَآجِّ وَعِمَارَةَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ كَمَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ لَا يَسۡتَوٗنَ عِنۡدَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَۘ
১৯.) তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছ যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সংগ্রাম-সাধনা করেছে আল্লাহর পথে?
اَلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَهَاجَرُوۡا وَجٰهَدُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡۙ اَعۡظَمُ دَرَجَةً عِنۡدَ اللّٰهِؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡفَآٮِٕزُوۡنَ
২০.) এ উভয় দল আল্লাহর কাছে সমান নয়। আল্লাহ জালেমদের পথ দেখান না। আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা ঈমান এনেছে এবং তাঁর পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পণ করে জিহাদ করেছে। তারাই সফলকাম।
يُبَشِّرُهُمۡ رَبُّهُمۡ بِرَحۡمَةٍ مِّنۡهُ وَرِضۡوٰنٍ وَّجَنّٰتٍ لَّهُمۡ فِيۡهَا نَعِيۡمٌ مُّقِيۡمٌۙ
২১.) তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী।
خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۤ اَبَدًاؕ اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِيۡمٌ
২২.) সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। অবশ্য আল্লাহর কাছে কাজের প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡۤا اٰبَآءَكُمۡ وَاِخۡوَانَكُمۡ اَوۡلِيَآءَ اِنِ اسۡتَحَبُّوۡا الۡكُفۡرَ عَلَى الۡاِيۡمَانِؕ وَمَنۡ يَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡكُمۡ فَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
২৩.) যে ঈমানদারগণ! তোমাদের বাপ ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের ওপর কুফরীকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকেও নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই জালেম।
قُلۡ اِنۡ كَانَ اٰبَآؤُكُمۡ وَاَبۡنَآؤُكُمۡ وَاِخۡوَانُكُمۡ وَاَزۡواجُكُمۡ وَعَشِيۡرَتُكُمۡ وَاَمۡوَالُ اقۡتَرَفۡتُمُوۡهَا وَتِجَارَةٌ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيۡكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَجِهَادٍ فِىۡ سَبِيۡلِهٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰى يَاۡتِىَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِيۡنَ
২৪.) হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।
لَقَدۡ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ فِىۡ مَوَاطِنَ كَثِيۡرَةٍۙ وَّيَوۡمَ حُنَيۡنٍۙ اِذۡ اَعۡجَبَتۡكُمۡ كَثۡرَتُكُمۡ فَلَمۡ تُغۡنِ عَنۡكُمۡ شَيۡـًٔا وَّضَاقَتۡ عَلَيۡكُمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ثُمَّ وَلَّيۡتُمۡ مُّدۡبِرِيۡنَۚ
২৫.) এর আগে আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করছেন। এই তো সেদিন, হুনায়েন যুদ্ধের দিন (তাঁর সাহায্যের অভাবনীয় রূপ তোমরা দেখছো) , সেদিন তোমাদের মনে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের অহমিকা ছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর এত বড় বিশাল পৃথিবীও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তোমরা পেছনে ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে।
ثُمَّ اَنۡزَلَ اللّٰهُ سَكِيۡنَتَهٗ عَلٰى رَسُوۡلِهٖ وَعَلَى الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَاَنۡزَلَ جُنُوۡدًا لَّمۡ تَرَوۡهَاۚ وَعَذَّبَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الۡكٰفِرِيۡنَ
২৬.) তারপর আল্লাহ তার প্রশান্তি নাযিল করেন তাঁর রসূলের ওপর ও মুমিনদের ওপর এবং সেনাদল নামান যাদেরকে তোমরা চোখে দেখতে পাচ্ছিলে না এবং সত্য অস্বীকারকারীদের শাস্তি দেন। কারণ যারা সত্য অস্বীকার করে এটাই তাদের প্রতিফল।
ثُمَّ يَتُوۡبُ اللّٰهُ مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ عَلٰى مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
২৭.) তারপর (তোমরা এও দেখছো) এভাবে শাস্তি দেবার পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাওবার তাওফীকও দান করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡمُشۡرِكُوۡنَ نَجَسٌ فَلَا يَقۡرَبُوۡا الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هٰذَاۚ وَاِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةً فَسَوۡفَ يُغۡنِيۡكُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖۤ اِنۡ شَآءَؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
২৮.) হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন আর মসজিদে হারামের কাছে না আসে। আর যদি তোমাদের দারিদ্রের ভয় থাকে, তাহলে আল্লাহ চাইলে তার নিজ অনুগ্রহে শীঘ্রই তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও তিনি প্রজ্ঞাময়।
قَاتِلُوۡا الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَلَا بِالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوۡنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗ وَلَا يَدِيۡنُوۡنَ دِيۡنَ الۡحَقِّ مِنَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ حَتّٰى يُعۡطُوۡا الۡجِزۡيَةَ عَنۡ يَّدٍ وَّهُمۡ صٰغِرُوۡنَ
২৯.) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না যা কিছু আল্লাহ ও তার রসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না এবং সত্য দ্বীনকে নিজেদের দ্বীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে।
وَقَالَتِ الۡيَهُوۡدُ عُزَيۡرٌ ۨابۡنُ اللّٰهِ وَقَالَتِ النَّصٰرَى الۡمَسِيۡحُ ابۡنُ اللّٰهِؕ ذٰلِكَ قَوۡلُهُمۡ بِاَفۡوَاهِهِمۡۚ يُضَاهِـُٔوۡنَ قَوۡلَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَبۡلُؕ قَاتَلَهُمُ اللّٰهُۚ اَنّٰى يُؤۡفَكُوۡنَ
৩০.) ইহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র২৯ এবং খৃস্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র। এগুলো একেবারেই আজগুবী ও উদ্ভট কথাবার্তা। তাদের পূর্বে যারা কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল তাদের দেখাদেখি তারা এগুলো নিজেদের মুখে উচ্চারণ করে থাকে। আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তাদের ওপর, তারা কোথা থেকে ধোকা খাচ্ছে!
اِتَّخَذُوۡۤا اَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبٰنَهُمۡ اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَالۡمَسِيۡحَ ابۡنَ مَرۡيَمَۚ وَمَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِيَعۡبُدُوۡۤا اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ لَٓا اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ سُبۡحٰنَهٗ عَمَّا يُشۡرِكُوۡنَ
৩১.) তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে। এবং এভাবে মারিয়াম পুত্র মসীহকেও। অথচ তাদের মা’বুদ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়নি, এমন এক মাবুদ যিনি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন আর কেউ নেই। তারা যেসব মুশরিকী কথা বলে তা থেকে তিনি পাক পবিত্র।
يُرِيۡدُوۡنَ اَنۡ يُّطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰهِ بِاَفۡوَاهِهِمۡ وَيَاۡبَى اللّٰهُ اِلَّاۤ اَنۡ يُّتِمَّ نُوۡرَهٗ وَلَوۡ كَرِهَ الۡكٰفِرُوۡنَ
৩২.) তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পূর্ণতা দান না করে ক্ষান্ত হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন।
هُوَ الَّذِىۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰى وَدِيۡنِ الۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهٗ عَلَى الدِّيۡنِ كُلِّهٖۙ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ
৩৩.) আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ كَثِيۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَالرُّهۡبَانِ لَيَاۡكُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَيَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ وَالَّذِيۡنَ يَكۡنِزُوۡنَ الذَّهَبَ وَالۡفِضَّةَ وَلَا يُنۡفِقُوۡنَهَا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِيۡمٍۙ
৩৪.) হে ঈমানদারগণ! এ আহলে কিতাবদের অধিকাংশ আলেম ও দরবেশের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় পদ্ধতিতে খায় এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাময় আযাবের সুখবর দাও।
يَوۡمَ يُحۡمٰى عَلَيۡهَا فِىۡ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوٰى بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوۡبُهُمۡ وَظُهُوۡرُهُمۡؕ هٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِاَنۡفُسِكُمۡ فَذُوۡقُوۡا مَا كُنۡتُمۡ تَكۡنِزُوۡنَ
৩৫.) একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর।
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِىۡ كِتٰبِ اللّٰهِ يَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَةٌ حُرُمٌؕ ذٰلِكَ الدِّيۡنُ الۡقَيِّمُ ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِيۡهِنَّ اَنۡفُسَكُمۡؕ وَقَاتِلُوۡا الۡمُشۡرِكِيۡنَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُوۡنَكُمۡ كَآفَّةًؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِيۡنَ
৩৬.) আসলে যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না। আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। এবং জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথেই আছেন।
اِنَّمَا النَّسِىۡٓءُ زِيَادَةٌ فِىۡ الۡكُفۡرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا يُحِلُّوۡنَهٗ عَامًا وَّيُحَرِّمُوۡنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِـُٔوۡا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ فَيُحِلُّوۡا مَا حَرَّمَ اللّٰهُؕ زُيِّنَ لَهُمۡ سُوۡۤءُ اَعۡمَالِهِمۡؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡكٰفِرِيۡنَ
৩৭.) “নাসী” (মাসকে পিছিয়ে দেয়া) তো কুফরীর মধ্যে আরো একটি কুফরী কর্ম, যার সাহায্যে এ কাফেদের কে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করা হয়ে থাকে। কোন বছর একটি মাসকে হালাল করে নেয় এবং কোন বছর তাকে আবার হারাম করে নেয়, যাতে আল্লাহর হারাম মাসের সংখ্যাও পুরা করতে পারে এবং আল্লাহর হারাম করাকেও হালাল করতে পারে। তাদের খারাপ কাজগুলোকে তাদের জন্য শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ সত্য- অস্বীকারকারীদেরকে হেদায়াত দান করেন না।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مَا لَكُمۡ اِذَا قِيۡلَ لَكُمُ انْفِرُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اثَّاقَلۡتُمۡ اِلَى الۡاَرۡضِؕ اَرَضِيۡتُمۡ بِالۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا مِنَ الۡاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا فِىۡ الۡاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيۡلٌ
৩৮.) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো, যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হলো, অমনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছো? যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখো, দুনিয়ার জীবনের এমন সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুব সামান্য বলে প্রমাণিত হবে।
اِلَّا تَنۡفِرُوۡا يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا اَلِيۡمًا ۙ وَّيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّوۡهُ شَيۡـًٔاؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
৩৯.) তোমরা যদি না বের হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের জায়গায় আর একটি দলকে ওঠাবেন, আর তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।
اِلَّا تَنۡصُرُوۡهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ اللّٰهُ اِذۡ اَخۡرَجَهُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا ثَانِىَ اثۡنَيۡنِ اِذۡ هُمَا فِىۡ الۡغَارِ اِذۡ يَقُوۡلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحۡزَنۡ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَاۚ فَاَنۡزَلَ اللّٰهُ سَكِيۡنَتَهٗ عَلَيۡهِ وَاَيَّدَهٗ بِجُنُوۡدٍ لَّمۡ تَرَوۡهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا السُّفۡلٰىؕ وَكَلِمَةُ اللّٰهِ هِىَ الۡعُلۡيَاؕ وَاللّٰهُ عَزِيۡزٌ حَكِيۡمٌ
৪০.) তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন পরোয়া নেই। আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নিচু করে দেন। আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
ِانْفِرُوۡا خِفَافًا وَّثِقَالاً وَّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِكُمۡ وَاَنۡفُسِكُمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ ذٰلِكُمۡ خَيۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
৪১.) ---বের হও, হালকা কিংবা ভারী যাই হওনা কেন, এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে নিজের ধন-প্রাণ দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।
لَوۡ كَانَ عَرَضًا قَرِيۡبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوۡكَ وَلٰكِنۡۢ بَعُدَتۡ عَلَيۡهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَوِ اسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَكُمۡ يُهۡلِكُوۡنَ اَنۡفُسَهُمۡۚ وَاللّٰهُ يَعۡلَمُ اِنَّهُمۡ لَكٰذِبُوۡنَ
৪২.) হে নবী! যদি সহজ লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং সফর হালকা হতো, তাহলে তারা নিশ্চয়ই তোমার পেছনে চলতে উদ্যত হতো। কিন্তু তাদের জন্য তো এ পথ বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। এখন তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলবে, যদি আমরা চলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে চলতাম। তারা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহ ভালো করেই জানেন তারা মিথ্যাবাদী।
عَفَا اللّٰهُ عَنۡكَۚ لِمَ اَذِنۡتَ لَهُمۡ حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِيۡنَ صَدَقُوۡا وَتَعۡلَمَ الۡكٰذِبِيۡنَ
৪৩.) হে নবী! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন? (তোমরা নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে পারতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক।
لَا يَسۡتَـٔۡذِنُكَ الَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ اَنۡ يُّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِالۡمُتَّقِيۡنَ
৪৪.) যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা কখনো তোমার কাছে তাদের ধন ও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন জানাবে না। আল্লাহ মুত্তাকীদের খুব ভাল করেই জানেন।
اِنَّمَا يَسۡتَاْذِنُكَ الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَارۡتَابَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ فَهُمۡ فِىۡ رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُوۡنَ
৪৫.) এমন আবেদন তো একমাত্র তারাই করে; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে না, যাদের মনে রয়েছে সন্দেহ এবং এ সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান।
وَلَوۡ اَرَادُوۡا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنۡ كَرِهَ اللّٰهُ انۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِيۡنَ
৪৬.) যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সেজন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল না। তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে।
لَوۡ خَرَجُوۡا فِيۡكُمۡ مَّا زَادُوۡكُمۡ اِلَّا خَبَالاً وَّلَاَوۡضَعُوۡا خِلٰلَكُمۡ يَبۡغُوۡنَكُمُ الۡفِتۡنَةَ وَفِيۡكُمۡ سَمّٰعُوۡنَ لَهُمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِالظّٰلِمِيۡنَ
৪৭.) যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না। তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো। আর তোমাদের লোকদের অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে শোনে। আল্লাহ এ জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
لَقَدِ ابۡتَغَوُا الۡفِتۡنَةَ مِنۡ قَبۡلُ وَقَلَّبُوۡا لَكَ الۡاُمُوۡرَ حَتّٰى جَآءَ الۡحَقُّ وَظَهَرَ اَمۡرُ اللّٰهِ وَهُمۡ كٰرِهُوۡنَ
৪৮.) এর আগেও এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে। এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّقُوۡلُ ائۡذَنۡ لِّىۡ وَلَا تَفۡتِنِّىۡؕ اَلَا فِىۡ الۡفِتۡنَةِ سَقَطُوۡاؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيۡطَةٌۢ بِالۡكٰفِرِيۡنَ
৪৯.) তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে।
اِنۡ تُصِبۡكَ حَسَنَةٌ تَسُؤۡهُمۡۚ وَاِنۡ تُصِبۡكَ مُصِيۡبَةٌ يَّقُوۡلُوۡا قَدۡ اَخَذۡنَاۤ اَمۡرَنَا مِنۡ قَبۡلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمۡ فَرِحُوۡنَ
৫০.) তোমরা ভাল কিছু হলে তাতাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি।”
قُل لَّنۡ يُّصِيۡبَنَاۤ اِلَّا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَنَا هُوَ مَوۡلٰٮنَاۚ وَعَلَى اللّٰهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
৫১.) তাদের বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন (ভাল বা মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না। আল্লাহই আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং ঈমানদারদের তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত।”
قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُوۡنَ بِنَاۤ اِلَّاۤ اِحۡدَى الۡحُسۡنَيَيۡنِؕ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ اَنۡ يُّصِيۡبَكُمُ اللّٰهُ بِعَذَابٍ مِّنۡ عِنۡدِهٖۤ اَوۡ بِاَيۡدِيۡنَا ۖ فَتَرَبَّصُوۡۤا اِنَّا مَعَكُمۡ مُّتَرَبِّصُوۡنَ
৫২.) তাদের বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি? অন্যদিকে আমরা তোমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্ছে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন? তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি।”
قُلۡ اَنۡفِقُوۡا طَوۡعًا اَوۡ كَرۡهًا لَّنۡ يُّتَقَبَّلَ مِنۡكُمۡؕ اِنَّكُمۡ كُنۡتُمۡ قَوۡمًا فٰسِقِيۡنَ
৫৩.) তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ব্যয় কর, তা গৃহীত হবে না। কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী।”
وَمَا مَنَعَهُمۡ اَنۡ تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ نَفَقٰتُهُمۡ اِلَّاۤ اَنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَبِرَسُوۡلِهٖ وَلَا يَاۡتُوۡنَ الصَّلٰوةَ اِلَّا وَهُمۡ كُسَالٰى وَلَا يُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا وَهُمۡ كٰرِهُوۡنَ
৫৪.) তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে।
فَلَا تُعۡجِبۡكَ اَمۡوَالُهُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُهُمۡؕ اِنَّمَا يُرِيۡدُ اللّٰهُ لِيُعَذِّبَهُمۡ بِهَا فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ اَنۡفُسُهُمۡ وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
৫৫.) তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে। আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়।
وَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ اِنَّهُمۡ لَمِنۡكُمۡؕ وَمَا هُمۡ مِّنۡكُمۡ وَلٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٌ يَّفۡرَقُوۡنَ
৫৬.) তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা তোমাদেরই লোক। অথচ তারা মোটেই তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আসলে তারা এমন একদল লোক যারা তোমাদের ভয় করে।
لَوۡ يَجِدُوۡنَ مَلۡجَـًٔا اَوۡ مَغٰرٰتٍ اَوۡ مُدَّخَلاً لَّوَلَّوۡا اِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُوۡنَ
৫৭.) যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّلۡمِزُكَ فِىۡ الصَّدَقٰتِۚ فَاِنۡ اُعۡطُوۡا مِنۡهَا رَضُوۡا وَاِنۡ لَّمۡ يُعۡطَوۡا مِنۡهَاۤ اِذَا هُمۡ يَسۡخَطُوۡنَ
৫৮.) হে নবী! তাদের কেউ কেউ সাদকাহ বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে। এ সম্পদ থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়, আর না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে।
وَلَوۡ اَنَّهُمۡ رَضُوۡا مَاۤ اٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗۙ وَقَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ سَيُؤۡتِيۡنَا اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ وَرَسُوۡلُهٗ اِنَّاۤ اِلَى اللّٰهِ رٰغِبُوۡنَ
৫৯.) কতই না ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই তাদের দিয়েছিলেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি।”
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰكِيۡنِ وَالۡعٰمِلِيۡنَ عَلَيۡهَا وَالۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوۡبُهُمۡ وَفِىۡ الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِيۡنَ وَفِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَابۡنِ السَّبِيۡلِؕ فَرِيۡضَةً مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
৬০.) এ সাদকা গুলো তো আসলে ফকীর মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের জন্য মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহর সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ।
وَمِنۡهُمُ الَّذِيۡنَ يُؤۡذُوۡنَ النَّبِىَّ وَيَقُوۡلُوۡنَ هُوَ اُذُنٌؕ قُلۡ اُذُنُ خَيۡرٍ لَّكُمۡ يُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَيُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَرَحۡمَةٌ لِّلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡكُمۡؕ وَالَّذِيۡنَ يُؤۡذُوۡنَ رَسُوۡلَ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৬১.) তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা নিজেদের কথা দ্বারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে এ ব্যক্তি অতিশয় কর্ণপাতকারী। বলে দাও, “সে এরূপ করে কেবল তোমাদের ভালোর জন্যই। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং ঈমানদারদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সে পরিপূর্ণ রহমত। আর যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
يَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَكُمۡ لِيُرۡضُوۡكُمۡۚ وَاللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗۤ اَحَقُّ اَنۡ يُّرۡضُوۡهُ اِنۡ كَانُوۡا مُؤۡمِنِيۡنَ
৬২.) তারা তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের সামনে কসম খায়। অথচ যদি তার মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّهٗ مَنۡ يُّحَادِدِ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدًا فِيۡهَاؕ ذٰلِكَ الۡخِزۡىُ الۡعَظِيۡمُ
৬৩.) তারা কি জানে না, যারা আল্লাহ ও তার রসূলের মোকাবিলা করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তার মধ্য তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি বিরাট লাঞ্ছনার ব্যাপার।
يَحۡذَرُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ اَنۡ تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُوۡرَةٌ تُنَبِّئُهُمۡ بِمَا فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡؕ قُلِ اسۡتَهۡزِءُوۡاۚ اِنَّ اللّٰهَ مُخۡرِجٌ مَّا تَحۡذَرُوۡنَ
৬৪.) এ মুনাফিকরা ভয় করেছে, মুসলমানদের ওপর এমন একটি সূরা না নাযিল হয়ে যায়, যা তাদের মনের গোপন কথাপ্রকাশ করে দেবে। হে নবী! তাদের বলে দাও, “বেশ ঠাট্টা করতেই থাকো, তবে তোমরা যে জিনিসটির প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় করছো আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন।”
وَلَٮِٕنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَيَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوۡضُ وَنَلۡعَبُؕ قُلۡ اَبِاللّٰهِ وَاٰيٰتِهٖ وَرَسُوۡلِهٖ كُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ
৬৫.) যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কথা বলছিলে? তাহলে তারা ঝটপট বলে দেবে, আমরা তো হাসি-তামাসা ও পরিহাস করছিলাম। তাদের বলো, তোমাদের হাসি-তামাসা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলের সাথে ছিল?
لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ كَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِيۡمَانِكُمۡؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآٮِٕفَةٍ مِّنۡكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآٮِٕفَةًۢ بِاَنَّهُمۡ كَانُوۡا مُجۡرِمِيۡنَ
৬৬.) এখন আর ওযর পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছো, যদি আমরা তোমাদের একটি দলকে মাফও করে দেই তাহলে আরেকটি দলকে তো আমরা অবশ্যই শাস্তি দেবো। কারণ তারা অপারাধী।
اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍۘ يَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَيَقۡبِضُوۡنَ اَيۡدِيَهُمۡؕ نَسُوۡا اللّٰهَ فَنَسِيَهُمۡؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِيۡنَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
৬৭.) মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরের দোসর। খারাপ কাজের হুকুম দেয়, ভাল কাজের নিষেধ করে এবং কল্যাণ থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেছেন।
وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُنٰفِقِيۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتِ وَالۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاؕ هِىَ حَسۡبُهُمۡۚ وَلَعَنَهُمُ اللّٰهُۚ وَلَهُمۡ عَذَابٌ مُّقِيۡمٌۙ
৬৮.) নিশ্চিতভাবেই এ মুনাফিকরাই ফাসেক। এ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন। তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। সেটিই তাদের জন্য উপযুক্ত। আল্লাহর অভিশাপ তাদের ওপর এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।
كَالَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ كَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡكُمۡ قُوَّةً وَّاَكۡثَرَ اَمۡوَالاً وَّاَوۡلَادًا فَاسۡتَمۡتَعُوۡا بِخَلَاقِهِمۡ فَاسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِخَلَاقِكُمۡ كَمَا اسۡتَمۡتَعَ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ بِخَلَاقِهِمۡ وَخُضۡتُمۡ كَالَّذِىۡ خَاضُوۡاؕ اُولٰۤٮِٕكَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِۚ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
৬৯.) তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই। তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ ও সন্তানের মালিক। তারপর তারা দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো। যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো। কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে এই যে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
اَلَمۡ يَاۡتِهِمۡ نَبَاُ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوۡدَ ۙ وَقَوۡمِ اِبۡرٰهِيۡمَ وَاَصۡحٰبِ مَدۡيَنَ وَالۡمُؤۡتَفِكٰتِؕ اَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِۚ فَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ وَلٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ
৭০.) তাদের কাছে কি তাদের পূর্ববর্তীদের ইতিহাস পৌঁছেনি? নূহের জাতির, আদ, সামূদ ও ইবরাহীমের জাতির, মাদইয়ানের অধিবাসীদের এবং যে জনবসতিগুলো উল্টে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর? তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিশানীসহ তাদের কাছে এসেছিলেন। এরপর তাদের ওপর জুলুম করা আল্লাহর কাজ ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিলেন।
وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِيَآءُ بَعۡضٍۘ يَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَيُقِيۡمُوۡنَ الصَّلٰوةَ وَيُؤۡتُوۡنَ الزَّكٰوةَ وَيُطِيۡعُوۡنَ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗؕ اُولٰۤٮِٕكَ سَيَرۡحَمُهُمُ اللّٰهُؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِيۡزٌ حَكِيۡمٌ
৭১.) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবেই। অবশ্যই আল্লাহ সবার ওপর পরাক্রমশালী এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ।
وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَا وَمَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِىۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍؕ وَرِضۡوٰنٌ مِّنَ اللّٰهِ اَكۡبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
৭২.) এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে। এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
يٰۤاَيُّهَا النَّبِىُّ جَاهِدِ الۡكُفَّارَ وَالۡمُنٰفِقِيۡنَ وَاغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡؕ وَمَاۡوٰٮهُمۡ جَهَنَّمُؕ وَبِئۡسَ الۡمَصِيۡرُ
৭৩.) হে নবী! পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবিল করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। শেষ পর্যন্ত তাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান স্থল।
يَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ مَا قَالُوۡاؕ وَلَقَدۡ قَالُوۡا كَلِمَةَ الۡكُفۡرِ وَكَفَرُوۡا بَعۡدَ اِسۡلَامِهِمۡ وَهَمُّوۡا بِمَا لَمۡ يَنَالُوۡاۚ وَمَا نَقَمُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ اَغۡنٰٮهُمُ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗ مِنۡ فَضۡلِهٖۚ فَاِنۡ يَّتُوۡبُوۡا يَكُ خَيۡرًا لَّهُمۡۚ وَاِنۡ يَّتَوَلَّوۡا يُعَذِّبۡهُمُ اللّٰهُ عَذَابًا اَلِيۡمًا فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِۚ وَمَا لَهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ
৭৪.) তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা ও কথা বলিনি। অথচ তারা নিশ্চয়ই সেই কুফরীর কথাটা বলেছে। তারা ইসলাম গ্রহণের পর কুফরী অবলম্বন করেছে। তারা এমনসব কিছু করার সংকল্প করেছিল যা করতে পারেনি। আল্লাহ ও তাঁর রসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দিয়েছেন বলেই তাদের এত ক্রোধ ও আক্রোশ! এখন যদি তারা নিজেদের এহন আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের জন্যই ভাল। আর যদি বিরত না হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং পৃথিবীতে তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী ও সাহায্যকারী কেউ থাকবে না।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ عٰهَدَ اللّٰهَ لَٮِٕنۡ اٰتٰٮنَا مِنۡ فَضۡلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الصّٰلِحِيۡنَ
৭৫.) তাদের মধ্যে এমনও কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল, যদি তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের ধন্য করেন তাহলে আমরা দান করবো এবং সৎ হয়ে যাবো।
فَلَمَّاۤ اٰتٰٮهُمۡ مِّنۡ فَضۡلِهٖ بَخِلُوۡا بِهٖ وَتَوَلَّوا وَّهُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
৭৬.) কিন্তু যখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে বিত্তশালী করে দিলেন তখন তারা কার্পণ্য করতে লাগলো এবং নিজেদের অঙ্গীকার থেকে এমনভাবে পিছটান দিল যে, তার কোন পরোয়াই তাদের রইল না।
فَاَعۡقَبَهُمۡ نِفَاقًا فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ اِلٰى يَوۡمِ يَلۡقَوۡنَهٗ بِمَاۤ اَخۡلَفُوۡا اللّٰهَ مَا وَعَدُوۡهُ وَبِمَا كَانُوۡا يَكۡذِبُوۡنَ
৭৭.) ফলে তারা আল্লাহর সাথে এই যে অঙ্গীকার ভঙ্গ করলো এবং এই যে, মিথ্যা বলতে থাকলো, এ কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন, তার দরবারে তাদের উপস্থিতির দিন পর্যন্ত তা তাদের পিছু ছাড়বে না।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ يَعۡلَمُ سِرَّهُمۡ وَنَجۡوٰٮهُمۡ وَاَنَّ اللّٰهَ عَلّٰمُ الۡغُيُوۡبِۚ
৭৮.) তারা কি জানে না, আল্লাহ তাদের গোপন কথাও গোপন সলা-পরামর্শ পর্যন্ত জানেন এবং তিনি সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ও পুরোপুরি অবগত?
الَّذِيۡنَ يَلۡمِزُوۡنَ الۡمُطَّوِّعِيۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ فِىۡ الصَّدَقٰتِ وَالَّذِيۡنَ لَا يَجِدُوۡنَ اِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُوۡنَ مِنۡهُمۡؕ سَخِرَ اللّٰهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৭৯.) (তিনি এমন সব কৃপণ ধনীদেরকে ভাল করেই জানেন) যারা ঈমানদেরদের সন্তোষ ও আগ্রহ সহকারে আর্থিক ত্যাগ স্বীকারের প্রতি দোষ ও অপবাদ আরোপ করে এবং যাদের কাছে (আল্লাহর পথে দান করার জন্য) নিজেরা কষ্ট সহ্য করে যা কিছু দান করে তাছাড়া আর কিছুই নেই, তাদেরকে বিদ্রূপ করে। আল্লাহ এ বিদ্রূপকারীদেরকে বিদ্রূপ করেন। এদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ এ বিদ্রূপকারীদেরকে বিদ্রূপ করেন। এদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِيۡنَ مَرَّةً فَلَنۡ يَّغۡفِرَ اللّٰهُ لَهُمۡؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِيۡنَ
৮০.) হে নবী! তুমি এ ধরনের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো, তুমি যদি এদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেকদেরকে মুক্তির পথ দেখান না।
فَرِحَ الۡمُخَلَّفُوۡنَ بِمَقۡعَدِهِمۡ خِلٰفَ رَسُوۡلِ اللّٰهِ وَكَرِهُوۡۤا اَنۡ يُّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَقَالُوۡا لَا تَنۡفِرُوۡا فِىۡ الۡحَرِّؕ قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوۡ كَانُوۡا يَفۡقَهُوۡنَ
৮১.) যাদেরকে পিছনে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তারা আল্লাহর রসূলের সাথে সহযোগিতা না করারও ঘরে বসে থাকার জন্য আনন্দিত হলো এবং তারা নিজেদের ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে অপছন্দ করলো। তারা লোকদেরকে বললো, “এ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বের হয়ো না।” তাদেরকে বলে দাও, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশী গরম, হায়! যদি তাদের সেই চেতনা থাকতো!
فَلۡيَضۡحَكُوۡا قَلِيۡلاً وَّلۡيَبۡكُوۡا كَثِيۡرًاۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
৮২.) এখন তাদের কম হাসা ও বেশী কাঁদা উচিত। কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে তার প্রতিদান এ ধরনেরই হয়ে থাকে (যে, সেজন্য তাদের কাঁদা উচিত।)
فَاِنۡ رَّجَعَكَ اللّٰهُ اِلٰى طَآٮِٕفَةٍ مِّنۡهُمۡ فَاسۡتَـٔۡذَنُوۡكَ لِلۡخُرُوۡجِ فَقُل لَّنۡ تَخۡرُجُوۡا مَعِىَ اَبَدًا وَّلَنۡ تُقَاتِلُوۡا مَعِىَ عَدُوًّاؕ اِنَّكُمۡ رَضِيۡتُمۡ بِالۡقُعُوۡدِ اَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقۡعُدُوۡا مَعَ الۡخٰلِفِيۡنَ
৮৩.) যদি আল্লাহ তাদের মধ্যে তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কোন দল জিহাদ করার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় তাহলে পরিষ্কার বলে দেবে, “এখন আর তোমরা কখনো আমরা সাথে যেতে পারবে না এবং আমার সঙ্গী হয়ে কোন দুশমনের সাথে লড়াইও করতে পারবে না। তোমরা তো প্রথমে বসে থাকাই পছন্দ করেছিলে, তাহলে এখন যারা ঘরে বসে আছে তাদের সাথে তোমরাও বসে থাকো।”
وَلَا تُصَلِّ عَلٰٓى اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمۡ عَلٰى قَبۡرِهٖؕ اِنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَمَاتُوۡا وَهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
৮৪.) আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার জানাযার নামাযও তুমি কখনো পড়বে না এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাসেক অবস্থায়।
وَلَا تُعۡجِبۡكَ اَمۡوَالُهُمۡ وَاَوۡلَادُهُمۡؕ اِنَّمَا يُرِيۡدُ اللّٰهُ اَنۡ يُّعَذِّبَهُمۡ بِهَا فِىۡ الدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ اَنۡفُسُهُمۡ وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
৮৫.) তাদের ধনাঢ্যতা ও তাদের অধিক সংখ্যক সন্তান সন্ততি তোমাকে যেন প্রতারিত না করে। আল্লাহ তো তাদেরকে এ ধন ও সম্পদের সাহায্যে এ দুনিয়ায়ই সাজা দেবার সংকল্প করে ফেলেছেন এবং কাফের থাকা অবস্থায় তাদের মৃত্যু হোক-এটাই চেয়েছেন।
وَاِذَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَجَاهِدُوۡا مَعَ رَسُوۡلِهِ اسۡتَـٔۡذَنَكَ اُولُوۡا الطَّوۡلِ مِنۡهُمۡ وَقَالُوۡا ذَرۡنَا نَكُنۡ مَّعَ الۡقٰعِدِيۡنَ
৮৬.) আল্লাহকে মেনে চলো এবং তাঁর রসূলের সহযোগী হয়ে জিহাদ করো, এ মর্মে যখনই কোন সূরা নাযিল হয়েছে তোমরা দেখেছো, তাদের মধ্যে যারা সমার্থবান ছিল তারাই তোমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে, জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তাদেরকে রেহাই দেয়া হোক এবং তারা বলেছে, আমাদের ছেড়ে দাও। যারা বসে আছে তাদের সাথে আমরা বসে থাকবো।
رَضُوۡا بِاَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُوۡنَ
৮৭.) তারা গৃহবাসীনি মেয়েদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে থাকতে চেয়েছে এবং তাদের দিলে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তাই তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।
لٰكِنِ الرَّسُوۡلُ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ جَاهَدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ لَهُمُ الۡخَيۡرٰتُؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
৮৮.) অন্যদিকে রসূল ও তার ঈমানদার সাথীরা নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। সমস্ত কল্যাণ এখন তাদের জন্য এবং তারাই সফলকাম হবে।
اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
৮৯.) আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন। যার নিম্নদেশে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই মহা সাফল্য।
وَجَآءَ الۡمُعَذِّرُوۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ لِيُؤۡذَنَ لَهُمۡ وَقَعَدَ الَّذِيۡنَ كَذَبُوۡا اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗؕ سَيُصِيۡبُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৯০.) গ্রামীণ আরবের মধ্যে থেকেও অনেক লোক এলো। তারা ওযর পেশ করলো, যাতে তাদেরকেও পিছনে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। যারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে ঈমানের মিথ্যা অঙ্গীকার করেছিল তারাই এভাবে বসে রইল। এ গ্রামীণ আরবদের মধ্য থেকে যারাই কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে শীঘ্রই তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
لَّيۡسَ عَلَى الضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى الۡمَرۡضٰى وَلَا عَلَى الَّذِيۡنَ لَا يَجِدُوۡنَ مَا يُنۡفِقُوۡنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوۡا لِلّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖؕ مَا عَلَى الۡمُحۡسِنِيۡنَ مِنۡ سَبِيۡلٍؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌۙ
৯১.) দুর্বল ও রুগ্ন লোকেরা এবং যেসব লোক জিহাদে শরীক হবার জন্য পাথেয় পায় না, তারা যদি পিছনে থেকে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই, যখন তারা আন্তরিকভাবে আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত। এ ধরনের সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অবকাশই নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَّلَا عَلَى الَّذِيۡنَ اِذَا مَاۤ اَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحۡمِلُكُمۡ عَلَيۡهِ تَوَلَّوا وَّاَعۡيُنُهُمۡ تَفِيۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوۡا مَا يُنۡفِقُوۡنَؕ
৯২.) অনুরূপভাবে তাদের বিরুদ্ধে ও অভিযোগের কোন সুযোগ নেই যারা নিজেরা এসে তোমার কাছে আবেদন করেছিল, তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে কিন্তু তুমি বলেছিলে আমি তোমাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। তখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছিল। তখন তাদের অবস্থা এ ছিল যে, তাদের চোখে দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল এবং নিজেদের অর্থ ব্যয়ে জিহাদে শরীক হতে অসমর্থ হবার দরুন তাদের মনে বড়ই কষ্ট ছিল।
اِنَّمَا السَّبِيۡلُ عَلَى الَّذِيۡنَ يَسۡتَاْذِنُوۡنَكَ وَهُمۡ اَغۡنِيَآءُۚ رَضُوۡا بِاَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِۙ وَطَبَعَ اللّٰهُ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ
৯৩.) অবশ্যই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে যারা বিত্তশালী হবার পরও জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তোমার কাছে অব্যাহতি চাচ্ছে। তারা পুরবাসিনীদের সাথে থাকাই পছন্দ করেছে। আল্লাহ তাদের দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন, তাই তারা এখন কিছুই জানে না। (যে, আল্লাহর কাজে তাদের এহেন কর্মনীতি গ্রহণের ফল কী দাঁড়াবে।)
يَعۡتَذِرُوۡنَ اِلَيۡكُمۡ اِذَا رَجَعۡتُمۡ اِلَيۡهِمۡؕ قُل لَّا تَعۡتَذِرُوۡا لَنۡ نُّؤۡمِنَ لَكُمۡ قَدۡ نَبَّاَنَا اللّٰهُ مِنۡ اَخۡبَارِكُمۡؕ وَسَيَرَى اللّٰهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُوۡلُهٗ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
৯৪.) তোমরা যখন ফিরে তাদের কাছে পৌঁছবে তখন তারা নানা ধরনের ওযর পেশ করতে থাকবে। কিন্তু তুমি পরিষ্কার বলে দেবে, “বাহানাবাজী করো না, আমরা তোমাদের কোন কথাই বিশ্বাস করবো না। তোমাদের অবস্থা আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ করবেন। তারপর তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, যিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই জানেন এবং তোমরা কি কাজ করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন।”
سَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَكُمۡ اِذَا انقَلَبۡتُمۡ اِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُوۡا عَنۡهُمۡؕ فَاَعۡرِضُوۡا عَنۡهُمۡؕ اِنَّهُمۡ رِجۡسٌ وَّمَاۡوٰٮهُمۡ جَهَنَّمُۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
৯৫.) তোমরা ফিরে এলে তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। ঠিক আছে, তোমরা অবশ্যই তাদেরকে উপেক্ষা করো কারণ তারা অপবিত্র এবং তাদের আসল আবাস জাহান্নাম। তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ এটি তাদের ভাগ্যে জুটবে।
يَحۡلِفُوۡنَ لَكُمۡ لِتَرۡضَوۡا عَنۡهُمۡۚ فَاِنۡ تَرۡضَوۡا عَنۡهُمۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا يَرۡضٰى عَنِ الۡقَوۡمِ الۡفٰسِقِيۡنَ
৯৬.) তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। অথচ তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ কখনো এহেন ফাসেকদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।
اَلۡاَعۡرَابُ اَشَدُّ كُفۡرًا وَّنِفَاقًا وَّاَجۡدَرُ اَلَّا يَعۡلَمُوۡا حُدُوۡدَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ عَلٰى رَسُوۡلِهٖؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
৯৭.) এ বেদুইন আরবরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশী কঠোর এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যে দ্বীন নাযিল করেছেন তার সীমারেখা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।
وَمِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ يَّتَّخِذُ مَا يُنۡفِقُ مَغۡرَمًا وَّيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَآٮِٕرَؕ عَلَيۡهِمۡ دَآٮِٕرَةُ السَّوۡءِؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ
৯৮.) এ গ্রামীণদের মধ্যে এমন এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করলে তাকে নিজেদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো অর্থদণ্ড মনে করে এবং তোমাদের ব্যাপারে কালের আবর্তনের প্রতীক্ষা করছে (অর্থাৎ তোমরা কোন বিপদের মুখে পড়লে যে শাসন ব্যবস্থার আনুগত্যের শৃংখল তোমরা তাদের গলায় বেঁধে দিয়েছ তা তারা গলা থেকে নামিয়ে ফেলবে। ) অথচ মন্দের আবর্তন তাদের ওপরই চেপে বসেছে। আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
وَمِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ يُّؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنۡفِقُ قُرُبٰتٍ عِنۡدَ اللّٰهِ وَصَلٰوتِ الرَّسُوۡلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرۡبَةٌ لَّهُمۡؕ سَيُدۡخِلُهُمُ اللّٰهُ فِىۡ رَحۡمَتِهٖۤؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৯৯.) আবার এ গ্রামীণদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা কিছু খরচ করে তাকে আল্লাহর দরবারে নৈকট্য লাভের এবং রসূলের কাছ থেকে রহমতের দোয়া লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। হ্যাঁ,, অবশ্যি তা তাদের জন্য নৈকট্য লাভের উপায় এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অবশ্যি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَالسّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِيۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ وَالَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍۙ رَّضِىَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡهُ وَاَعَدَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ تَحۡتَهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۤ اَبَدًاؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
১০০.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যারা সবার আগে ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে এবং যারা পরে নিষ্ঠা সহকারে তাদের অনুসরণ করছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা তার মধ্যে থাকবে চিরকাল। এটাই মহা সাফল্য।
وَمِمَّنۡ حَوۡلَكُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ مُنٰفِقُوۡنَ ۛؕ وَمِنۡ اَهۡلِ الۡمَدِيۡنَةِ ۛ مَرَدُوۡا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعۡلَمُهُمۡؕ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡؕ سَنُعَذِّبُهُمۡ مَّرَّتَيۡنِ ثُمَّ يُرَدُّوۡنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيۡمٍ
১০১.) তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুইন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মুনাফিক। অনুরূপভাবে মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকীতে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। তোমরা তাদেরকে চিন না, আমি চিনি তাদেরকে। শীঘ্রই আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবো। তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
وَاٰخَرُوۡنَ اعۡتَرَفُوۡا بِذُنُوۡبِهِمۡ خَلَطُوۡا عَمَلاً صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللّٰهُ اَنۡ يَّتُوۡبَ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
১০২.) আরো কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের কাজকর্ম মিশ্র ধরনের কিছু ভাল, কিছু মন্দ। অসম্ভব নয়, আল্লাহ তাদের প্রতি আবার মেহেরবান হয়ে যাবেন। কারণ, তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
ؕخُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِهِمۡ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيۡهِمۡ بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمۡؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ
১০৩.) হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দাও এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো। তোমার দোয়া তাদের সান্তনার কারণ হবে। আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ هُوَ يَقۡبَلُ التَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهٖ وَيَاۡخُذُ الصَّدَقٰتِ وَاَنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ
১০৪.) তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়?
وَقُلِ اعۡمَلُوۡا فَسَيَرَى اللّٰهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُوۡلُهٗ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَؕ وَسَتُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَۚ
১০৫.) আর হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাকো। আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনরা তোমাদের কাজের ধারা এখন কেমন থাকে তা দেখবেন। তারপর তোমাদের তাঁর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে সবকিছু জানেন এবং তোমরা কি করতে তা তিনি তোমাদের বলে দেবেন।
وَاٰخَرُوۡنَ مُرۡجَوۡنَ لِاَمۡرِ اللّٰهِ اِمَّا يُعَذِّبُهُمۡ وَاِمَّا يَتُوۡبُ عَلَيۡهِمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
১০৬.) অপর কিছু লোকের ব্যাপার এখনো আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে, তিনি চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আবার চাইলে তাদের প্রতি নতুন করে অনুগ্রহ করবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
وَالَّذِيۡنَ اتَّخَذُوۡا مَسۡجِدًا ضِرَارًا وَّكُفۡرًا وَّتَفۡرِيۡقًۢا بَيۡنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَاِرۡصَادًا لِّمَنۡ حَارَبَ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗ مِنۡ قَبۡلُؕ وَلَيَحۡلِفُنَّ اِنۡ اَرَدۡنَاۤ اِلَّا الۡحُسۡنٰىؕ وَاللّٰهُ يَشۡهَدُ اِنَّهُمۡ لَكٰذِبُوۡنَ
১০৭.) আরো কিছু লোক আছে, যারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে (সত্যের দাওয়াতকে) ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, (আল্লাহর বন্দেগী করার পরিবর্তে) কুফরী করার জন্য মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং (এ বাহ্যিক ইবাদতগাহকে) এমন এক ব্যক্তির জন্য গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে যে ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তারা অবশই কসম খেয়ে বলবে, ভালো ছাড়া আর কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী, তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী।
لَا تَقُمۡ فِيۡهِ اَبَدًاؕ لَّمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقۡوٰى مِنۡ اَوَّلِ يَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِيۡهِؕ فِيۡهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوۡنَ اَنۡ يَّتَطَهَّرُوۡاؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِيۡنَ
১০৮.) তুমি কখনো সেই ঘরে দাঁড়াবে না। যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তেতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটি দাঁড়ানোরই (ইবাদতের জন্য) তোমার পক্ষে অধিকতর সমীচীন। সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক-পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন।
اَفَمَنۡ اَسَّسَ بُنۡيَانَهٗ عَلَىٰ تَقۡوٰى مِنَ اللّٰهِ وَرِضۡوَانٍ خَيۡرٌ اَمۡ مَّنۡ اَسَّسَ بُنۡيَانَهٗ عَلٰى شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانۡهَارَ بِهٖ فِىۡ نَارِ جَهَنَّمَؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ
১০৯.) তাহলে তুমি কি মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নিজের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করলো সে ভাল, না যে ব্যক্তি তার ইমারতের ভিত উঠালো একটি পতাকার স্থিতিহীন ফাঁপা প্রান্তের ওপর এবং তা তাকে নিয়ে সোজা জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়লো? এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ কখনো সোজা পথ দেখান না।
لَا يَزَالُ بُنۡيَانُهُمُ الَّذِىۡ بَنَوۡا رِيۡبَةً فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ اِلَّاۤ اَنۡ تَقَطَّعَ قُلُوۡبُهُمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
১১০.) তারা এই যে ইমারত নির্মাণ করেছে এটা সবসময় তাদের মনে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে (যার বের হয়ে যাওয়ার আর কোন উপায়ই এখন নেই) যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ অত্যন্তসচেতন, জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰى مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَاَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوۡنَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ فَيَقۡتُلُوۡنَ وَيُقۡتَلُوۡنَ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقًّا فِىۡ التَّوۡرٰٮةِ وَالۡاِنۡجِيۡلِ وَالۡقُرۡاٰنِؕ وَمَنۡ اَوۡفٰى بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَيۡعِكُمُ الَّذِىۡ بَايَعۡتُمۡ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
১১১.) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সেজন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
التَّاۤٮِٕبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحَامِدُوۡنَ السّٰۤٮِٕحُوۡنَ الرّٰكِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَالنَّاهُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَالۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰهِؕ وَبَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
১১২.) আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী, অসৎকাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনাবেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!
مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ يَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ وَلَوۡ كَانُوۡۤا اُولِىۡ قُرۡبٰى مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِيۡمِ
১১৩.) নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সঙ্গত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।
وَمَا كَانَ اسۡتِغۡفَارُ اِبۡرٰهِيۡمَ لِاَبِيۡهِ اِلَّا عَنۡ مَّوۡعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلَّهِ تَبَرَّاَ مِنۡهُؕ اِنَّ اِبۡرٰهِيۡمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيۡمٌ
১১৪.) ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে। যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহ ভীরু ও ধৈর্যশীল ছিল।
وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُضِلَّ قَوۡمَۢا بَعۡدَ اِذۡ هَدٰٮهُمۡ حَتّٰى يُبَيِّنَ لَهُمۡ مَّا يَتَّقُوۡنَؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيۡمٌ
১১৫.) লোকদেরকে হেদায়াত দান করার পর আবার গোমরাহীতে লিপ্ত করা আল্লাহর রীতি নয়, যতক্ষণ না তিনি তাদেরকে কোন জিনিস থেকে সংযত হয়ে চলতে হবে তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। আসলে আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন।
اِنَّ اللّٰهَ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ يُحۡىٖ وَيُمِيۡتُؕ وَمَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ
১১৬.) আর এও সত্য, আসমান ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, জীবন ও মৃত্যু তাঁরই ইখতিয়ার ভুক্ত এবং তোমাদের এমন কোন সহায় ও সাহায্যকারী নেই যে তোমাদেরকে তাঁর হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
لَّقَد تَّابَ اللّٰهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالۡمُهٰجِرِيۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ الَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُ فِىۡ سَاعَةِ الۡعُسۡرَةِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا كَادَ يَزِيۡغُ قُلُوۡبُ فَرِيۡقٍ مِّنۡهُمۡ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّهٗ بِهِمۡ رَءُوۡفٌ رَّحِيۡمٌۙ
১১৭.) আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগিতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন। যদিও তাদের মধ্য থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন। ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এলোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান।
وَّعَلَى الثَّلٰثَةِ الَّذِيۡنَ خُلِّفُوۡا حَتّٰۤى اِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ اَنۡفُسُهُمۡ وَظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّاۤ اِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوۡبُوۡٓاؕ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ
১১৮.) আর কে তিনজনের ব্যাপার মুলতবী করে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দিয়েছেন পৃথিবী তার সমগ্র ব্যাপকতা সত্ত্বেও যখন তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেলো, তাদের নিজেদের প্রাণও তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ালো এবং তারা জেনে নিল যে, আল্লাহর হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিজের রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই তখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের দিকে ফিরলেন যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। অবশ্যই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا اتَّقُوۡا اللّٰهَ وَكُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِيۡنَ
১১৯.) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও।
مَا كَانَ لِاَهۡلِ الۡمَدِيۡنَةِ وَمَنۡ حَوۡلَهُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ اَنۡ يَّتَخَلَّفُوۡا عَنۡ رَّسُوۡلِ اللّٰهِ وَلَا يَرۡغَبُوۡا بِاَنۡفُسِهِمۡ عَنۡ نَّفۡسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ لَا يُصِيۡبُهُمۡ ظَمَاٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخۡمَصَةٌ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَلَا يَطَـُٔوۡنَ مَوۡطِئًا يَّغِيۡظُ الۡكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوۡنَ مِنۡ عَدُوٍّ نَّيۡلاً اِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُضِيۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِيۡنَۙ
১২০.) মদীনাবাসী ও তাদের আশপাশে বেদুইনদের জন্য আল্লাহর রসূলকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকা এবং তার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে নিজেদের জীবনের চিন্তায় মশগুল হয়ে যাওয়া কোন ক্রমেই সমীচীন ছিল না। কারণ আল্লাহর পথে তারা যখনই ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবে, যখনই এমন পথ অবলম্বন করবে যা সত্য অমান্য কারীদের কাছে অসহনীয় এবং যখনই কোন দুশমনের ওপর (সত্যের প্রতি দুশমনির) প্রতিশোধ নেবে তৎক্ষনাৎ তার বদলে তাদের জন্য একটি সৎকাজ লেখা হবেই। এর ব্যতিক্রম কখনো হবে না। অবশ্যই আল্লাহর দরবারে সৎ কর্মশীলদের পরিশ্রম বিফল যায় না।
وَلَا يُنۡفِقُوۡنَ نَفَقَةً صَغِيۡرَةً وَّلَا كَبِيۡرَةً وَّلَا يَقۡطَعُوۡنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ لِيَجۡزِيَهُمُ اللّٰهُ اَحۡسَنَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
১২১.) অনুরূপভাবে তারা যখনই (আল্লাহর পথে) কম বা বেশী কিছু সম্পদ ব্যয় করবে এবং (সংগ্রাম সাধনায়) যখনই কোন উপত্যকা অতিক্রম করবে, অমনি তা তাদের নামে লেখা হয়ে যাবে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের এ ভাল কাজের পুরস্কার দান করেন।
وَمَا كَانَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لِيَنۡفِرُوۡا كَآفَّةًؕ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِنۡ كُلِّ فِرۡقَةٍ مِّنۡهُمۡ طَآٮِٕفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوۡا فِىۡ الدِّيۡنِ وَلِيُنۡذِرُوۡا قَوۡمَهُمۡ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُوۡنَ
১২২.) আর মুমিনদের সবার এক সাথে বের হয়ে পড়ার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু তাদের জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভাল হতো। তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতো এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদের কে সতর্ক করতো, যাতে তারা (অমুসলমানী আচরণ থেকে) বিরত থাকতো, এমনটি হলো না কেন?
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا قَاتِلُوۡا الَّذِيۡنَ يَلُوۡنَكُمۡ مِّنَ الۡكُفَّارِ وَلۡيَجِدُوۡا فِيۡكُمۡ غِلۡظَةًؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِيۡنَ
১২৩.) হে ঈমানদারগণ! সত্য অস্বীকারকারীদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তীতাদের সাথে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
وَاِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّقُوۡلُ اَيُّكُمۡ زَادَتۡهُ هٰذِهٖۤ اِيۡمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا فَزَادَتۡهُمۡ اِيۡمَانًا وَّهُمۡ يَسۡتَبۡشِرُوۡنَ
১২৪.) যখন কোন নতুন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের কেউ কেউ (ঠাট্টা করে মুসলমানদের) জিজ্ঞেস করে, বলো, এর ফলে তোমাদের কার ঈমান বেড়ে গেছে? (এর জবাব হচ্ছে) যারা ঈমান এনেছে (প্রত্যেকটি অবতীর্ণ সুরা) যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত।
وَاَمَّا الَّذِيۡنَ فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ مَّرَضٌ فَزَادَتۡهُمۡ رِجۡسًا اِلٰى رِجۡسِهِمۡ وَمَاتُوۡا وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
১২৫.) তবে যাদের অন্তরে (মুনাফিকী) রোগ বাসা বেঁধেছিল তাদের পূর্ব কলুষতার ওপর (প্রত্যেকটি নতুন সূরা) আরো একটি কলুষতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে।
اَوَلَا يَرَوۡنَ اَنَّهُمۡ يُفۡتَنُوۡنَ فِىۡ كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً اَوۡ مَرَّتَيۡنِ ثُمَّ لَا يَتُوۡبُوۡنَ وَلَا هُمۡ يَذَّكَّرُوۡنَ
১২৬.) এরা কি দেখে না, প্রতি বছর এদেরকে দুএকটি পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়? কিন্তু এরপরও এরা তাওবাও করে না কোন শিক্ষাও গ্রহণ করে না।
وَاِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ نَّظَرَ بَعۡضُهُمۡ اِلٰى بَعۡضٍ هَلۡ يَرٰٮكُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُوۡاؕ صَرَفَ اللّٰهُ قُلُوۡبَهُمۡ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا يَفۡقَهُوۡنَ
১২৭.) যখন কোন সূরা নাযিল হয়, এরা চোখের ইশারায় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের কেউ দেখতে পায়নি তো? তারপর চুপে চুপে সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের মন বিমুখ করে দিয়েছেন কারণ তারা এমন একদল লোক যাদের বোধশক্তি নেই।
لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِكُمۡ عَزِيۡزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيۡصٌ عَلَيۡكُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِيۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِيۡمٌ
১২৮.) দেখো, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল। তোমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী। মুমিনদের প্রতি সে স্নেহশীল ও করুণাসিক্ত।
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُلۡ حَسۡبِىَ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۖ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُؕ وَهُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِيۡمِ
১২৯.) - এখন যদি তারা তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আমি তার ওপরই ভরসা করেছি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।”
এ সূরাটি দু'টি নামে পরিচিতঃ আত্ তাওবাহ ও আল বারাআতু। তাওবা নামকরণের কারণ, এ সূরার এক জায়গায় কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করার কথা বলা হয়েছে। আর এর শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বলে একে বারাআত (অর্থাৎ সম্পর্কচ্ছেদ) নামে অভিহিত করা হয়েছে।
বিসমিল্লাহ না লেখার কারণঃ
এ সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম লেখা হয় না। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন কারণ বর্ণনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু মতভেদ ঘটেছে। তবে এ প্রসংগে ইমাম রাযীর বক্তব্যই সঠিক। তিনি লিখেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখাননি, কাজেই সাহাবায়ে কেরামও লেখেননি এবং পরবর্তী লোকেরাও এ রীতির অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন। পবিত্র কুরআন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হুবহু ও সামান্যতম পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছিল এবং যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষণ করার জন্য যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।
নাযিলের সময়কাল ও সূরার অংশসমূহঃ
এ সূরাটি তিনটি ভাষণের সমষ্টি। প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে পঞ্চম রুকূর শেষ অবধি চলেছে। এর নাযিলের সময় হচ্ছে ৯ হিজরীর যিলকাদ মাস বা তার কাছাকাছি সময়। নবী (স) সে বছর হযরত আবু বকরকে (রা.) আমীরুল হজ্জ নিযুক্ত করে মক্কায় রওয়ানা করে দিয়েছিলেন। এমন সময় এ ভাষণটি নাযিল হয়। তিনি সংগে সংগেই হযরত আলীকে (রা.) তার পিছে পিছে পাঠিয়ে দিলেন, যাতে হজ্জের সময় সারা আরবের প্রতিনিধিত্বশীল সমাবেশে তা শুনানো হয় এবং সে অনুযায়ী যে কর্মপদ্ধতি হয়েছিল তা ঘোষনা করা যায়।
দ্বিতীয় ভাষণটি ৬ রুকূর শুরু থেকে ৯ রুকূর শেষ পর্যন্ত চলেছে। এটি ৯ হিজরীর রজব মাসে বা তার কিছু আগে নাযিল হয়। সে সময় নবী (সা.) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখানে মুমিনদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর যারা মুনাফিকী বা দুর্বল ঈমান অথবা কুড়েমি ও অলসতার কারণে আল্লাহর পথে ধন-প্রাণের ক্ষতি বরদাশত করার ব্যাপারে টালবাহানা করছিল তাদেরকে কঠোর ভাষায় তিরষ্কার করা হয়েছে।
তৃতীয় ভাষণটি ১০ রুকু’ থেকে শুরু হয়ে সুরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর এ অংশটি নাযিল হয়। এর মধ্যে এমনও অনেকগুলো খণ্ডিত অংশ রয়েছে যেগুলো ঐ দিনগুলোতে বিভিন্ন পরিবেশে নাযিল হয় এবং পরে নবী (সা.) আল্লাহর ইঙ্গিতে সেগুলো সব একত্র করে একই ধারাবাহিক ভাষণের সাথে সংযুক্ত করে দেন। কিন্তু যেহেতু সেগুলো একই বিষয়বস্তু ও একই ঘটনাবলীর সাথে সংশ্লিষ্ট তাই ভাষণের ধারাবাহিকতা কোথাও ব্যাহত হতে দেখা যায় না। এখানে মুনাফিকদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। তাবুক যুদ্ধে যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন তাদেরকে ভৎর্সনা ও তিরস্কার করা হয়েছে। আর যে সাচ্চা ঈমানদার লোকেরা নিজেদের ঈমানের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান ছিলেন ঠিকই কিন্তু আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন তিরস্কার করার সাথে সাথে তাদের ক্ষমার কথাও ঘোষনা করা হয়েছে।
আয়াতগুলো যে পর্যায়ক্রমিক ধারায় নাযিল হয়েছে তার প্রোক্ষিতে প্রথম ভাষণটি সবশেষে বসানো উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়বস্তু গুরুত্বের দিক দিয়ে সেটিই ছিল সবার আগে। এ জন্য কিতাব আকারে সাজাবার ক্ষেত্রে নবী (সা.) তাকে প্রথমে রাখেন এবং অন্য ভাষণ দুটিকে তার পরে রাখেন।
ঐতিহাসিক পটভূমিঃ
নাযিলের সময়-কাল নির্ধারিত হবার পর এ সূরার ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর একটু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এ সুরার বিষয়বস্তুর সাথে যে ঘটনা পরম্পরার সম্পর্ক রয়েছে, তার সূত্রপাত ঘটেছে হোদাইবিয়ার সন্ধি থেকে। হোদাবিয়া পর্যন্ত ছ' বছরের অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ফলে আরবের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ এলাকায় ইসলাম একটি সুসংঘটিত ও সংঘবদ্ধ সমাজের ধর্ম, একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। হোদায়বিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর এ ধর্ম বা দ্বীন আরো বেশী নিরাপদ ও নির্ঝঞ্চাট পরিবেশে চারদিকে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পেয়ে যায়। ১ এরপর ঘটনার গতিধারা দু’টি বড় বড় খাতে প্রবাহিত হয়। আরো সামনে অগ্রসর হয়ে ঐ দু’টি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে একটির সম্পর্ক ছিল আরবের সাথে এবং অন্যটির রোম সাম্রাজ্যের সাথে।
১.বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা মায়েদা ও সূরা ফাতাহ এর ভূমিকা।
আরব বিজয়ঃ
হোদায়বিয়ার সন্ধির পর আরবে ইসলামের প্রচার, প্রসারের জন্য এবং ইসলামী শক্তি সুসংহত করার জন্য যেসব ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় তার ফলে মাত্র দু'বছরের মধ্যেই ইসলামের প্রভাব বলয় এত বেড়ে যায় এবং তার শক্তি এতটা পরাক্রান্ত ও প্রতাপশালী হয়ে ওঠে যে, পুরাতন জাহেলিয়াত তার মোকাবিলায় অসহায় ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে। অবশেষে কুরাইশদের অতি উৎসাহী লোকেরা নিজেদের পরাজয় আসন্ন দেখে আর সংযত থাকতে পারেনি। তারা হোদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে। এ সন্ধির বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে একটা চূড়ান্ত যুদ্ধ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু এ চুক্তি ভংগের পর নবী (সা.) তাদেরকে আর গুছিয়ে নেবার কোন সুযোগ দেননি। তিনি ৮ হিজরীর রমযান মাসে আকম্মিকভাবে মক্কা আক্রমণ করে তা দখল করে নেন। ১ এরপর প্রাচীন জাহেলী শক্তি, হোনায়েনের ময়দানে তাদের শেষ মরণকামড় দিতে চেষ্টা করে। সেখানে হাওয়াযিন, সাকীফ, নদর, জুসাম, এবং অন্যান্য কতিপয় জাহেলিয়াতপন্থী গোত্র তাদের পূর্ণ শক্তির সমাবেশ ঘটায়। এভাবে তারা মক্কা বিজয়ের পর যে সংস্কারমূলক বিপ্লবটি পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল তার পথ রোধ করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা ও ব্যর্থ হয়। হোনায়েন যুদ্ধে তাদের পরাজয়ের সাথে সাথেই আরবের ভাগ্যের চূড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যায়। আর এ ফায়সালা হচ্ছে, আরবকে এখন দারুল ইসলাম হিসেবেই টিকে থাকতে হবে। এ ঘটনার পর পুরো এক বছর যেতে না যেতেই আরবের বেশীর ভাগ এলাকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে। এ অবস্থায় জাহেলী ব্যবস্থার শুধুমাত্র কতিপয় বিচ্ছিন্ন লোক দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। উত্তরে রোম সাম্রাজ্যের সীমান্তে সে সময় যেসব ঘটনা ঘটে চলছিল তা ইসলামের এ সম্প্রসারণ ও বিজয়কে পূর্ণতায় পৌঁছুতে আরো বেশী করে সাহায্য করে। সেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুঃসাহসিকতার সাথে ৩০ হাজারের বিরাট বাহিনী নিয়ে যান এবং রোমীয়রা যেভাবে তাঁর মুখোমুখি হবার ঝুঁকি না নিয়ে পিঠটান দিয়ে নিজেদের দুর্বলতার প্রকাশ ঘটায় তাতে সারা আরবে তাঁর ও তাঁর দ্বীনের অপ্রতিরোধ্য প্রতাপ ও অজেয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এর ফলশ্রুতিতে তাবুক থেকে ফিরে আসার সাথে সাথেই তার কাছে একের পর এক প্রতিনিধি দল আসতে থাকে আরবের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাঁর বশ্যতা ও আনুগত্য স্বীকার করে। ২ এ অবস্থাটিকেই কুরআনে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
"যখন আল্লাহর সাহায্য এসে গেলো ও বিজয় লাভ হলো এবং তুমি দেখলে লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করছে।"
তাবুক অভিযানঃ
মক্কা বিজয়ের আগেই রোম সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিল। হোদাইবিয়ার সন্ধির পর নবী (সা.) ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আরবের বিভিন্ন অংশে যেসব প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি দল গিয়েছিল উত্তর দিকে সিরিয়া সীমান্তের লাগোয়া গোত্রগুলোর মধ্য। তাদের বেশীর ভাগ ছিল খৃষ্টান এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রভাবাধীন। তারা “যাতুত তালাহ” (অথবা যাতু-আতলাহ) নামক স্থানে ১৫ জন মুসলমানকে হত্যা করে। কেবলমাত্র প্রতিনিধি দলের নেতা হযরত কাব ইবনে উমাইর গিফারী প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। একই সময়ে নবী (সা.) বুসরার গবর্ণর শুরাহবিল ইবনে আমরের নামেও দাওয়াত নামা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেও তাঁর দূত হারেস ইবনে উমাইরকে হত্যা করে। এ সরদারও ছিল খৃষ্টান। এবং সরাসরি রোমের কাইসারের হুকুমের আনুগত। এসব কারণে নবী (সা.) ৮ হিজরীর জমাদিউল উলা মাসে তিন হাজার মুজাহিদদের একটি সেনাবাহিনী সিরিয়া সীমান্তের দিকে পাঠান। ভবিষ্যতে এ এলাকাটি যাতে মুসলমানদের জন্য নিরাপদ হয়ে যায় এবং এখানকার লোকেরা মুসলমানদেরকে দুর্বল মনে করে তাদের ওপর জুলুম ও বাড়াবাড়ি করার সাহস না করে, এই ছিল তার উদ্দেশ্য। এ সেনাদলটি মা’আন নামক স্থানের কাছে পৌছার পর জানা যায় শুরাহবীল ইবনে আমর এক লাখ সেনার একটি বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের মোকাবিলায় আসছে। ওদিকে রোমের কাইসার হিমস নামক স্থানে সশরীরে উপস্থিত। তিনি নিজের ভাই থিয়েডরের নেতৃত্বে আরো এক লাখের একটি সেনাবাহিনী রওয়ানা করে দেন। কিন্তু এসব আতংকজনক খবরাখবর পাওয়ার পরও তিন হাজারের এ প্রাণোৎসর্গী ছোট্ট মুজাহিদ বাহিনীটি অগ্রসর হতেই থাকে। অবশেষে তারা মুতা নামক স্থানে শুরাহবিলের এক লাখের বিরাট বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ অসম সাহসিকতা দেখানোর ফলে মুসলিম মুজাহিদদের পিষ্ট হয়ে চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সারা আরব দেশ এবং সমগ্র মধ্য প্রাচ্য বিষ্ময়ে স্বম্ভিত হয়ে দেখলো যে, এক ও তেত্রিশের এ মোকাবিলায়ও কাফেররা মুসলমানদের ওপর বিজয়ী হতে পারলো না। এ জিনিসটিই সিরিয়া ও তার সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী আধা স্বাধীন আরব গোত্রগুলোকে এমনকি ইরাকের নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসকারী পারস্য সম্রাটের প্রভাবাধিন নজদী গোত্রগুলোকেও ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। তাদের হাজার হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করে। বনী সুলাইম (আব্বাস ইবনে মিরদাস সুলামী ছিলেন তাদের সরদার) আশজা, গাতফান, যুবইয়ান ও ফাযারাহ গোত্রের লোকেরা এ সময়ই ইসলাম গ্রহণ করে। এ সময়ই রোম সাম্রাজ্যের আরবীয় সৈন্য দলের একজন সেনাপতি ফারওয়া ইবনে আমর আলজুযামী মুসলমান হন। তিনি নিজের ঈমানের এমন অকাট্য প্রমাণ পেশ করেন, যা দেখে আশেপাশের সব এলাকার লোকেরা বিস্ময়ে হতচকিত হয়ে পড়ে। ফারওয়ার ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে কাইসার তাকে গ্রেফতার করিয়ে নিজের দরবারে আনেন। তাঁকে দু’টি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি নির্বাচন করার ইখতিয়ার দেন। তাকে বলেন ইসলাম ত্যাগ করো। তাহলে তোমাকে শুধু মুক্তিই দেয়া হবে না বরং আগের পদমর্যাদাও বহাল করে দেয়া হবে। অথবা মুসলমান থোকো। কিন্তু এর ফলে তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। তিনি ধীর স্থিরভাবে চিন্তা করে ইসালামকে নির্বাচিত করেন এবং সত্যের পথে প্রাণ বিসর্জন দেন। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কাইসার তার সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে উদ্ভূত এক ভয়াবহ হুমকির স্বরূপ উপলব্ধি করেন, যা আরবের মাটিতে সৃষ্ট হয়ে তার সাম্রাজ্যের দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছিল।
পরের বছর কাইসার মুসলমানদের মুতা যুদ্ধের শাস্তি দেবার জন্য সিরিয়া সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে দেন। তার অধীনে গাসসানী ও অন্যন্য আরব সরদাররা সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। নবী (সা.) এ ব্যাপারে বেখবর ছিলেন না। একেবারেই নগণ্য ও তুচ্ছ যেসব ব্যাপার ইসলামী আন্দোলনের ওপর সামন্যমতও অনুকূল বা প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তার প্রত্যেকেটি সম্পর্কে তিনি সর্বক্ষণ সচেতন ও সতর্ক থাকতেন। এ প্রস্তুতিগুলোর অর্থ তিনি সংগে সংগেই বুঝে ফেলেন। কোন প্রকার ইতস্তত না করেই কাইসারের বিশাল বিপুল শক্তির সাথে তিনি সংঘর্ষে লিপ্ত হবার ফায়সালা করে ফেলেন। এ সময় সামান্যতম ও দুর্বলতা দেখানো হলে এতদিনকার সমস্ত মেহনত ও কাজ বরবাদ হয়ে যেতো। একদিকে হোনায়েনে আরবের যে ক্ষয়িষ্ণু ও মুমূর্ষ জাহেলিয়াতের বুকে সর্বশেষ আঘাত হানা হয়েছিল তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো এবং অন্যদিকে মদীনার যে মুনাফিকরা আবু আমের রাহেবের মধ্যস্থতায় গাসসানের খ্রীস্টান বাদশাহ এবং স্বয়ং কাইসারের সাথে গোপন যোগসাজশে লিপ্ত হয়েছিল। উপরন্তু যারা নিজেদের দুস্কর্মের ওপর দ্বীনদারীর প্রলেপ লাগাবার জন্য মদীনার সংলগ্ন এলাকায় “মসজিদে দ্বিরার” (ইসলামী মিল্লাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে তৈরী মসজিদ) নির্মাণ করেছিল, তারা পিঠে ছুরি বসিয়ে দিতো। সামনের দিক থেকে কাইসার আক্রমণ করতে আসছিল। ইরানীদের পরাজিত করার পর দূরের ও কাছের সব এলাকায় তার দোর্দণ্ড প্রতাপ ও দাপট ছড়িয়ে পড়েছিল। এ তিনটি ভয়ংকর বিপদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ইসলামের অর্জিত বিজয় অকস্মাত পরাজয়ে রূপান্তিত হয়ে যেতে পারতো। তাই, যদিও দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল, আবহাওয়া ছিল প্রচণ্ড গরম, ফসল পাকার সময় কাছে এসে গিয়েছিল, সওয়ারী ও সাজ, সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা বড়ই কঠিন ব্যাপার ছিল। অর্থের অভাব ছিল প্রকট এবং দুনিয়ার দু'টি বৃহত্তম শক্তির একটির মোকাবিলা করতে হচ্ছিল তবুও আল্লাহর নবী এটাকে সত্যের দাওয়াতের জন্য জীবন-মৃত্যুর ফায়সালা করার সময় মনে করে এ অবস্থায়ই যুদ্ধ প্রস্তুতির সাধারণ ঘোষণা জারি করে দেন। এর আগের সমস্ত যুদ্ধে নবী (সা.) এর নিয়ম ছিল, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কাউকে বলতেন না কোনদিকে যাবেন এবং কার সাথে মোকাবিলা করতে হবে। বরং তিনি মদীনা থেকে বের হবার পরও অভীষ্ট মনযিলের দিকে যাবার সোজা পথ না ধরে তিনি অন্য বাঁকা পথ ধরতেন। কিন্তু এবার তিনি এ আবরণটুকু ও রাখলেন না। এবার পরিষ্কার বলে দিলেন যে, রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং সিরিয়ার দিকে যেতে হবে।
এ সময়টি যে অত্যন্ত নাজুক ছিল তা আরবের সবাই অনুভব করছিল। প্রাচীন জাহেলিয়াতের প্রেমিকদের মধ্যে যারা তখনো বেঁচে ছিল তাদের জন্য এটি ছিল শেষ আশার আলো। রোম ও ইসলামের এ সংঘাতের ফলাফল কি দাঁড়ায় সে দিকেই তারা অধীর আগ্রহে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিল। কারণ তারা নিজেরাও জানতো, এরপর আর কোথাও কোন দিক থেকেই আশার সামান্যতম ঝলকও দেখা দেবার কোন সম্ভবনা নেই। মুনাফিকেরাও এরই পেছনে তাদের শেষ প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিল। তারা নিজেদের মসজিদে দ্বিরার বানিয়ে নিয়েছিল। এরপর অপেক্ষা করছিল সিরিয়ার যুদ্ধে ইসলামের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটা মাত্রই তারা দেশের ভেতরে গোমরাহী ও অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দেবে। এখানেই শেষ নয়, বরং তারা তাবুকের এ অভিযানকে ব্যর্থ করার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের কৌশলও অবলম্বন করে। এদিকে নিষ্ঠাবান মুসলমানরাও পুরোপুরি অনুভব করতে পেরেছিলেন, যে আন্দোলনের জন্য বিগত ২২বছর ধরে তারা প্রাণপাত করে এসেছেন বর্তমানে তার ভাগ্যের চূড়ান্ত ফায়সালা হবার সময় এসে পড়েছে। এ সময় সাহস দেখাবার অর্থ দাঁড়ায়, সারা দুনিয়ার ওপর এ আন্দোলনের দরজা খুলে যাবে অন্যদিকে এ সময় দুবর্লতা দেখাবার অর্থ দাড়ায় খোদ আরব দেশেও একে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলতে হবে। কাজেই এ অনুভূতি সহকারে সত্যের নিবেদিত প্রাণ সিপাহীরা চরম উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম যোগাড় করার ব্যাপারে প্রত্যেকেই নিজের সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণে অংশগ্রহণ করেন। হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিপুল অর্থ দান করেন। হযরত উমর (রা.) তার সারা জীবনের উপার্জনের অর্ধেক এনে রেখে দেন। হযরত আবু বকর (রা.) তার সঞ্চিত সম্পদের সবটাই নবী (সা.) এর সামনে পেশ করেন। গরীব সাহাবীরা মেহনত মজদুরী করে যা কামাই করতে পেরেছিলেন তার সবটুকু উৎসর্গ করেন। মেয়েরা নিজেদের গহনা খুলে নযরানা পেশ করেন। চারদিক থেকে দলে দলে আসতে থাকে প্রাণ উৎসর্গকারী স্বেচ্ছাসেবকদের বাহিনী। তারা আবেদন জানান, বাহন ও অস্ত্র শস্ত্রের ব্যবস্থা হয়ে গেলে আমরা প্রাণ দিতে প্রস্তুত। যারা সওয়ারী পেতেন না তারা কাঁদতে থাকতেন। তারা এমনভাবে নিজেদের আন্তরিকতা মানসিক অস্থিরতা প্রকাশ করতে থাকতেন যার ফলে রাসূলে পাকের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো, এ ঘটনাটি কার্যত মুমিন ও মুনাফিক চিহ্নিতকরার একটি মানদণ্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এমনকি এ সময় কোন ব্যক্তি পেছনে থেকে যাওয়ার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, ইসলামের তার সম্পর্কের দাবি সত্য কিনা সেটাই সন্দেহজনক হয়ে পড়তো। কাজেই তাবুকের পথে যাওয়ার সময় সফরের মধ্যে যেসব ব্যক্তি পেছনে থেকে যেতো সহাবায়ে কেরাম নবী (সা.) এর নিকট তাদের খবর পৌছিয়ে দিতেন। এর জবাবে তিনি সংগে সংগেই স্বতস্ফূর্তভাবে বলে ফেলতেনঃ
دعوه فان يك فيه خير فسيلحقه الله لكم , وان يك غير ذلك فقد اراحكم الله منه-
“যেতে দাও, যদি তার মধ্যে ভালো কিছু থেকে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাকে আবার তোমাদের সাথে মিলিয়ে দেবেন। আর যদি অন্য কোন ব্যাপার হয়ে থাকে, তাহলে শোকর করো যে, আল্লাহ তার ভণ্ডামীপূর্ণ সাহচর্য থেকে তোমাদের বাঁচিয়েছেন”।
৯ হিজরীর রজব মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৩০ হাজারের মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার পথে রওয়ানা হন। তাঁর সাথে ছিল দশ হাজার সওয়ার। উটের সংখ্যা এত কম ছিল যে, এক একটি উটের পিঠে কয়েক জন পালাক্রমে সওয়ার হতেন। এর ওপর ছিল আবার গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতা। পানির স্বল্পতা সৃষ্টি করেছিল আরো এক বাড়তি সমস্যা। কিন্তু এ নাজুক সময়ে মুসলমানরা যে সাচ্চা ও দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দেন তার ফল তারা তাবুকে পৌঁছে পেয়ে যান। সেখানে পৌঁছে তারা জানতে পারেন, কাইসার ও তার অধিনস্থ সম্মুখ যুদ্ধ অবতীর্ণ হবার পরিবর্তে নিজেদের সেনা বাহিনী সীমান্ত থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এখন এ সীমান্তে আর কোন দুশমন নেই। কাজেই এখানে যুদ্ধেরও প্রয়োজন নেই। সীরাত রচয়িতারা এ ঘটনাটিকে সাধারণত এমনভাবে লিখে গেছেন যাতে মনে হবে যেন সিরিয়া সীমান্তে রোমীয় সৈন্যদের সমাবেশ সম্পর্কে যে খবর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে তা আদতে ভুলই ছিল। অথচ আসল ঘটনা এই যে, কাইসার সৈন্য সমাবেশ ঠিকই শুরু করেছিল। কিন্তু তার প্রস্তুতি শেষ হবার আগেই যখন রসূলুল্লাহ (সা.) মোকাবিলা করার জন্য পৌঁছে যান তখন সে সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ দেখেনি। মুতার যুদ্ধে এক লাখের সাথে ৩ হাজারের মোকাবিলার যে দৃশ্য সে দেখেছিল তারপর খোদ নবী করীমের (সা.) নেতৃত্বে ৩০ হাজারের যে বাহিনী এগিয়ে আসছিল সেখানে লাখ দুলাখ সৈন্য মাঠে নামিয়ে তার সাথে মোকাবিলা করার হিম্মাত তার ছিল না।
কাইসারের এভাবে পিছু হটে যাওয়ার ফলে যে নৈতিক বিজয় লাভ হলো, এ পর্যায়ে নবী (সা.) তাকে যথেষ্ট মনে করেন। তিনি তাবুক থেকে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সিরিয়া সীমান্তে প্রবেশ করার পরিবর্তে এ বিজয় থেকে যত দুর সম্ভব রাজনৈতিক ও সামরিক ফায়দা হাসিল করাকেই অগ্রাধিকার দেন্ সে জন্যেই তিনি তাবুকে ২০ দিন অব্স্থান করে রোম সাম্রাজ্য ও দারুল ইসলামের মধ্যবর্তী এলাকায় যে বহু সংখ্যক ছোট ছোট রাজ্য এতদিন রোমানদের প্রভাবাধীনে ছিল। সামরিক চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে ইসলামী সাম্রাজ্যের অনুগত করদ রাজ্যে পরিণত করেন। এভাবে দুমাতুল জানদালের খৃষ্টান শাসক উকাইদির ইবনে আবদুল মালিক কিনদী, আইলার খৃষ্টান শাসক ইউহান্না ইবনে রুবাহ এবং অনুরূপ মাকনা, জারবা, ও আযরূহের খৃষ্টান শাসকরাও জিযিয়া দিয়ে মদীনার বশ্যতা স্বীকার করে। এর ফলে ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা সরাসরি রোম সাম্রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। রোম সম্রাটরা যেসব আরব গোত্রকে এ পর্যন্ত আরবদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছিল এখন বেশীর ভাগই রোমানদের মোকাবিলায় মুসলমানদের সহযোগী হয়ে গেল। এভাবে রোম সাম্রাজ্যের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদী সংঘর্ষে লিপ্ত হবার আগে ইসলাম সমগ্র আরবের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রন ও বাঁধন মজবুত করে নেবার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। এটাই হয় এ ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় লাভ। এতদিন পর্যন্ত যারা প্রকাশ্যে মুশরিকদের দলভুক্ত থেকে অথবা মুসলমানদের দলে যোগদান করে পরদার অন্তরালে মুনাফিক হিসেবে অবস্থান করে প্রাচীন জাহেলিয়াতের পুনর্বহালের আশায় দিন গুণছিল তাবুকের এ বিনা যুদ্ধে বিজয় লাভের ঘটনা তাদের কোমর ভেংগে দেয়। এ সর্বশেষ ও চূড়ান্ত হতাশার ফলে তাদের অধিকাংশের জন্য ইসলামের কোলে আশ্রয় নেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। আর যদি বা তাদের নিজেদের ইসলামের নিয়ামতলাভের সুযোগ নাও থেকে থাকে, তবে কমপক্ষে তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য সম্পর্ণরূপে ইসলামের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। এরপর একটি নামমাত্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তাদের শিরক ও জাহেলী কার্যক্রমে অবিচল থাকে। কিন্তু তারা এত বেশী হীনবল হয়ে পড়ে যে, ইসলামের যে সংস্কারমূলক বিপ্লবের জন্য আল্লাহ তাঁর নবীকে পাঠিয়েছিলেন তার পূর্ণতা সাধনের পথে তারা সামান্যতমও বাধা সৃষ্টি করতে সমর্থ ছিল না।
আলোচ্য বিষয় ও সমস্যাবলীঃ
এ পটভূমি সামনে রেখে আমরা সে সময় যেসব বড় বড় সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং সূরা তাওবায় যেগুলো আলোচিত হয়েছে, সেগুলো সহজেই চিহ্নিত করতে পারি। সেগুলো হচ্ছে।
১। এখন যেহেতূ সমগ্র আরবের শাসন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে মুমিনেদের হাতে এসে গিয়েছিল এবং সমস্ত প্রতিবন্ধক শক্তি নির্জীব ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল, তাই আরবদেশকে পূর্নাঙ্গ দারুল ইসলামে পরিণত করার জন্য যে নীতি অবলম্বন করা অপরিহার্য ছিল তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করতে আর বিলম্ব করা চলে না।তাই নিম্নোক্ত আকারে তা পেশ করা হয়ঃ
(ক) আরব থেকে শিরককে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করতে হবে। প্রাচীন মুশরিকী ব্যবস্থাকে পুরোপুরি খতম করে ফেলতে হবে। ইসলামের কেন্দ্র যেন চিরকালের জন্য নির্ভেজাল ইসলামী কেন্দ্রে পরিণত হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কোন অনৈসলামী উপাদান যেন সেখানকার ইসলামী মেজায ও প্রকৃতিতে অনুপ্রবেশ করতে এবং কোন বিপদের সময় আভ্যন্তরীন ফিতনার কারণ হতে না পারে। এ উদ্দেশ্যে মুশরিকদের সাথে সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ বাতিল করার কথা ঘোষণা করা হয়।
(খ, কাবা ঘরের ব্যবস্থাপনা মুমিনদের হাতে এসে যাবার পর, একান্তভাবে আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য উৎসর্গীত সেই ঘরটিতে আবারো আগের মত মূর্তিপূজা হতে থাকবে এবং তার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষতার দায়িত্ব এখনো মুশরিকদের হাতে বহাল থাকবে এটা কোনক্রমেই সংগত হতে পারে না। তাই হুকুম দেয়া হয়ঃ আগামীতে কাবা ঘরের পরিচালনা ও অভিভাবকত্বের দায়িত্বেও তাওহীদদের হাতেই ন্যস্ত থাকা চাই।আর এ সংগে বায়তুল্লাহর চতুসীমানর মধ্যে শিরক ও জাহেলিয়াতের যাবতীয় রসম-রেওয়াজ বল প্রয়োগে বন্ধ করে দিতে হবে। বরং এখন থেকে মুশরিকরা আর এ ঘরের ত্রিসীমানায় ঘেঁসতে পারবে না। তাওহীদদের মহান অগ্রনী পুরুষ ইবরাহীমের হাতে গড়া এ গৃহটি আর শিরক দ্বারা কলুষিত হতে না পারে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।
(গ, আরবের সাংস্কৃতিক জীবনে জাহেলী রসম-রেওয়াজের যেসব চিহ্ন এখনো অক্ষুন্ন ছিল নতুন ইসলামী যুগে সেগুলোর প্রচলন থাকা কোনক্রমেই সমিচীন ছিল না। তাই সেগুলো নিশ্চিহ্ন করার প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। নাসী (ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম মাসকে হালাল ও হালাল মাসকে হারাম নির্দিষ্ট করে নেয়া, র নিয়মটা ছিল সবচেয়ে খারাপ প্রথা। তাই তার ওপরে সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে। এ আঘাতের মাধ্যমে জাহেলিয়াতের অন্যান্য নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের করনীয় কী। তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
২।আরবের ইসলাম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পূর্ণতায় পৌঁছে যাবার পর সামনে যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টি ছিল সেটি হলো, আরবের বাইরে আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রভাব-বলয় বিস্তৃত করা। এ পথে রোম ও ইরানের রাজনৈতিক শক্তি ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। আরবের কার্যক্রম শেষ হবার পরই তার সাথে সংঘর্ষ বাধা ছিল অনিবার্য। তাছাড়া পরবর্তী পর্যায়ে অন্যান্য অমুসলিম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাগুলোর সাথেও এমনি ধরনের সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হওয়া ছিল স্বাভাবিক। তাই মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়, আরবের বাইরে যারা সত্য দ্বীনের অনুসারী নয়, তারা ইসলামী কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যত ও আনুগত্যের স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগ করে তাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসন কর্তৃত্ব খতম করে দাও। অবশ্য আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপরটি তাদের ইচ্ছাধীন। তারা চাইলে ইমান আনতে পারে, চাইলে নাও আনতে পারে। কিন্তু আল্লাহর যমীনে নিজেদের হুকুম জারি করার এবং মানব সমাজের কর্তৃত্ব ও পরিচালনা ব্যবস্থা নিজেদের হাতে রেখে মানুষের ওপর এবং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের ওপর নিজেদের গোমরাহীসমূহ জোরপূর্বক চাপিলে দেবার কোন অধিকার তাদের নেই। বড় জোর তাদের কে একটুকু স্বাধীনতা দেয়া যেতে পারে যে, তারা নিজেরা চাইলে পথভ্রষ্ট হয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু সে জন্য শর্ত হচ্ছে, তাদের জিযিয়া আদায় করে ইসলামী শাসন কর্তৃত্বের অধীন থাকতে হবে।
৩।মুনাফিক সংক্রন্ত বিষয়টি ছিল তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সাময়িক বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তাদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত উপেক্ষাও এড়িয়ে যাবার নীতি অবলম্বন করা হচ্ছিল। এখন যেহেতু বাইরের বিপদের চাপ কম গিয়েছিল বরং একেবারে ছিলই না বললে চলে, তাই হুকুম দেয়া হয়, আগামীতে তাদের সাথে আর নরম ব্যবহার করা যাবে না। প্রকাশ্য সত্য অস্বীকারকারীদের সাথে যেমন কঠোর ব্যাবহার করা হয় তেমনি কঠোর ব্যবহার গোপন সত্য অস্বীকারকারীদের সাথেও করা হবে। এ নীতি অনুযায়ী নবী (সা.) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি পূর্বে সুওয়াইলিমের গৃহে আগুন লাগান্ সেখানে মুনাফিকদের একটি দল মুসলমানদেরকে যুদ্ধে যোগদান করা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রচারাভিযান চালাবার জন্য জামায়েত হতো। আবার এ নীতি অনুযায়ী নবী (সা.) তাবুক থেকে ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম মসজিদে দ্বিরার ভেংগে ফেলার ও জ্বালীয়ে দেবার হুকুম দেন।
৪।নিষ্ঠাবান মুমিনদের কতকের মধ্যে এখনো পর্যন্ত যে সামান্য কিছু সংকল্পের দুর্বলতা রয়ে গিয়েছিল তার চিকিৎসারও প্রয়োজন ছিল। কারণ ইসলাম এখন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চলেছে। যে ক্ষেত্রে মুসলিম আরবেকে একাকী সারা অমুসলিম দুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে হবে সে ক্ষেত্রে ইসলামী সংগঠনের জন্য ঈমানের দুর্বলতার চাইতে বড় কোন আভ্যন্তরীণ বিপদ থাকতে পারে না। তাই তাবুক যুদ্ধের সময় যারা অলসতা ও দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছিল অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তাদের তিরস্কার ও নিন্দা করা হয়। যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের ন্যায়সংগত ওযর ছাড়াই পিছনে থেকে যাওয়াটাকে একটা মুনাফেকসূলভ আচরণ এবং সাচ্চা ঈমানদার না হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভবিষ্যতের জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানিয়ে দেয়াহয়, আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার সংগ্রাম এবং কুফর ও ইসলামের সংঘাতই হচ্ছে মুমিনদের ঈমানদের দাবি যাচাই আসল মানদণ্ড। এ সংঘর্ষে যে ব্যক্তি ইসলামের জন্য ধন-প্রাণ সময় ও শ্রম ব্যয় করতে ইতস্তত করবে তার ঈমান নির্ভরযোগ্য হবে না। অন্য কোন ধর্মীয় কাজের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রের কোন অভাব পূরণ করা যাবে না।
এসব বিষয়ের প্রতি নজর রেখে সূরা তওবা অধ্যয়ন করলে এর যাবতীয় বিষয় সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
بَرَآءَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖۤ اِلَى الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَؕ
১.) সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষনা করা হলো আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে, যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছিলে তাদের সাথে।
فَسِيۡحُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ اَرۡبَعَةَ اَشۡهُرٍ وَّاعۡلَمُوۡۤا اَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِىۡ اللّٰهِۙ وَاَنَّ اللّٰهَ مُخۡزِىۡ الۡكٰفِرِيۡنَ
২.) কাজেই তোমরা দেশের মধ্যে আরো চার মাসকাল চলাফেরা করে নাও এবং জেনে রেখো তোমরা আল্লাহকে অক্ষম ও শক্তিহীন করতে পারবে না। আর আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন।
وَاَذٰنٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖۤ اِلَى النَّاسِ يَوۡمَ الۡحَجِّ الۡاَكۡبَرِ اَنَّ اللّٰهَ بَرِىۡۤءٌ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ ۙ وَرَسُوۡلُهٗؕ فَاِنۡ تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَيۡرٌ لَّكُمۡۚ وَاِنۡ تَوَلَّيۡتُمۡ فَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِىۡ اللّٰهِؕ وَبَشِّرِ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا بِعَذَابٍ اَلِيۡمٍۙ
৩.) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে বড় হজ্জের দিনে সমস্ত মানুষের প্রতি সাধারণ ঘোষণা করা হচ্ছেঃ “আল্লাহর মুশরিকদের থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তাঁর রসূলও। এখন যদি তোমরা তওবা করে নাও তাহলে তো তোমাদেরই জন্য ভাল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে খুব ভাল করেই বুঝে নাও, তোমরা আল্লাহকে শক্তি সামর্থহীন করতে পারবে না। আর হে নবী! অস্বীকারকারীদের কঠিন আযাবের সুখবর দিয়ে দাও।
اِلَّا الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ ثُمَّ لَمۡ يَنۡقُصُوۡكُمۡ شَيۡـًٔا وَّلَمۡ يُظَاهِرُوۡا عَلَيۡكُمۡ اَحَدًا فَاَتِمُّوۡۤا اِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ اِلٰى مُدَّتِهِمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
৪.) তবে যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছো তারপর তারা তোমাদের সাথে নিজেদের চুক্তি রক্ষায় কোন ত্রুটি করেনি আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি তাদের ছাড়া। এ ধরনের লোকদের সাথে তোমরাও নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন করবে। কারণ আল্লাহ তাকওয়া তথা সংযম অবলম্বনকারীদেরকে পছন্দ করেন।
فَاِذَا انسَلَخَ الۡاَشۡهُرُ الۡحُرُمُ فَاقۡتُلُوۡا الۡمُشۡرِكِيۡنَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوۡهُمۡ وَخُذُوۡهُمۡ وَاحۡصُرُوۡهُمۡ وَاقۡعُدُوۡا لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٍۚ فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوۡا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَخَلُّوۡا سَبِيۡلَهُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৫.) অতএব, হারাম মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে গেলে মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং প্রত্যেক ঘাটতি তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো। তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَاِنۡ اَحَدٌ مِّنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ اسۡتَجَارَكَ فَاَجِرۡهُ حَتّٰى يَسۡمَعَ كَلٰمَ اللّٰهِ ثُمَّ اَبۡلِغۡهُ مَاۡمَنَهٗؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا يَعۡلَمُوۡنَ
৬.) আর যদি মুশরিকদের কোন ব্যক্তি আশ্রয় প্রার্থনা করে তোমার কাছে আসতে চায় (যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে) তাহলে তাকে আল্লাহর কালাম শোনা পর্যন্ত আশ্রয় দাও, তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দাও। এরা অজ্ঞ বলেই এটা করা উচিত।
كَيۡفَ يَكُوۡنُ لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ عَهۡدٌ عِنۡدَ اللّٰهِ وَعِنۡدَ رَسُوۡلِهٖۤ اِلَّا الَّذِيۡنَ عٰهَدتُّمۡ عِنۡدَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِۚ فَمَا اسۡتَقَامُوۡا لَكُمۡ فَاسۡتَقِيۡمُوۡا لَهُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
৭.) মুশরিকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কোন নিরাপত্তার অঙ্গীকার কেমন করে হাতে পারে? তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করেছিলে মসজিদে হারামের কাছে তাদের কথা স্বতন্ত্র।কাজেই যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য সোজা-সরল থাকে ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য সোজা-সরল থাকো। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন।
كَيۡفَ وَاِنۡ يَّظۡهَرُوۡا عَلَيۡكُمۡ لَا يَرۡقُبُوۡا فِيۡكُمۡ اِلاًّ وَّلَا ذِمَّةًؕ يُرۡضُوۡنَكُمۡ بِاَفۡوٰهِهِمۡ وَتَاۡبٰى قُلُوۡبُهُمۡۚ وَاَكۡثَرُهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
৮.) তবে তাদের ছাড়া অন্য মুশরিকদের জন্য নিরাপত্তা চুক্তি কেমন করে হতে পারে, যখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা তোমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পরলে তোমাদের ব্যাপারে কোন আত্মীয়তার পরোয়া করবে না এবং কোন অঙ্গীকারের দায়িত্বও নেবে না। তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে কিন্তু তাদের মন তা অস্বীকার করে। আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক।
اِشۡتَرَوۡا بِاٰيٰتِ اللّٰهِ ثَمَنًا قَلِيۡلاً فَصَدُّوۡا عَنۡ سَبِيۡلِهٖؕ اِنَّهُمۡ سَآءَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
৯.) তারা আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে সামান্যতম মূল্য গ্রহণ করে নিয়েছে। তারপর আল্লাহ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যা করতে অভ্যস্ত, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ।
لَا يَرۡقُبُوۡنَ فِىۡ مُؤۡمِنٍ اِلاًّ وَّلَا ذِمَّةًؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُعۡتَدُوۡنَ
১০.) কোন মুমিনের ব্যাপারে তারা না আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা করে, আর না কোন অঙ্গীকারের ধার ধারে। আগ্রাসন ও বাড়াবাড়ি সবসময় তাদের পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে।
فَاِنۡ تَابُوۡا وَاَقَامُوۡا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ فَاِخۡوَانُكُمۡ فِىۡ الدِّيۡنِؕ وَنُفَصِّلُ الۡاٰيٰتِ لِقَوۡمٍ يَّعۡلَمُوۡنَ
১১.) কাজেই যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং নামায কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। যারা জানে, তাদের জন্য আমার বিধান স্পষ্ট করে বর্ণনা করি।
وَاِنۡ نَّكَثُوۡۤا اَيۡمَانَهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ عَهۡدِهِمۡ وَطَعَنُوۡا فِىۡ دِيۡنِكُمۡ فَقٰتِلُوۡۤا اَٮِٕمَّةَ الۡكُفۡرِۙ اِنَّهُمۡ لَاۤ اَيۡمَانَ لَهُمۡ لَعَلَّهُمۡ يَنۡتَهُوۡنَ
১২.) আর যদি অঙ্গীকার করার পর তারা নিজেদের কসম ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের ওর হামলা চালাতে থাকে তাহলে কুফরীর পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ তাদের কসম বিশ্বাসযোগ্য নয়। হয়তো (এরপর তরবারীর ভয়েই) তারা নিরস্ত হবে।
اَلَا تُقَاتِلُوۡنَ قَوۡمًا نَّكَثُوۡۤا اَيۡمَانَهُمۡ وَهَمُّوۡا بِاِخۡرَاجِ الرَّسُوۡلِ وَهُمۡ بَدَءُوۡكُمۡ اَوَّلَ مَرَّةٍؕ اَتَخۡشَوۡنَهُمۡۚ فَاللّٰهُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشَوۡهُ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ
১৩.) তোমরা কি লড়াই করবে না এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এসেছে এবং যারা রসূলকে দেশ থেকে বের করে দেবার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ি সূচনা তারাই করেছিল? তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন।
قَاتِلُوۡهُمۡ يُعَذِّبۡهُمُ اللّٰهُ بِاَيۡدِيۡكُمۡ وَيُخۡزِهِمۡ وَيَنۡصُرۡكُمۡ عَلَيۡهِمۡ وَيَشۡفِ صُدُوۡرَ قَوۡمٍ مُّؤۡمِنِيۡنَۙ
১৪.) তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন, তাদের মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন।
وَيُذۡهِبۡ غَيۡظَ قُلُوۡبِهِمۡؕ وَيَتُوۡبُ اللّٰهُ عَلٰى مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡم
১৫.) আর তাদের অন্তরের জ্বালা জুড়িয়ে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা তাওবা করার তাওফীকও দান করবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী।
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تُتۡرَكُوۡا وَلَمَّا يَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡكُمۡ وَلَمۡ يَتَّخِذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلَا رَسُوۡلِهٖ وَلَا الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَلِيۡجَةًؕ وَاللّٰهُ خَبِيۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
১৬.) তোমরা কি একথা মনে করে রেখেছো যে, তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তাঁর পথে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ, রসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো না? তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন।
مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ اَنۡ يَّعۡمُرُوۡا مَسٰجِدَ اللّٰهِ شٰهِدِيۡنَ عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ بِالۡكُفۡرِؕ اُولٰۤٮِٕكَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ ۖ وَفِىۡ النَّارِ هُمۡ خٰلِدُوۡنَ
১৭.) মুশরিক যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীর সাক্ষ্য দিচ্ছে তখন আল্লাহর মসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও খাদেম হওয়া তাদের কাজ নয়। তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং তাদেরকে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে।
اِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ وَاٰتَى الزَّكٰوةَ وَلَمۡ يَخۡشَ اِلَّا اللّٰهَ فَعَسٰىۤ اُولٰۤٮِٕكَ اَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُهۡتَدِيۡنَ
১৮.) তারাই হতে পারে আল্লাহর মসজিদ আবাদকারী (রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক) যারা আল্লাহর ও পরকালকে মানে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ কে ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনা। তাদেরই ব্যাপারে আশা করা যেতে পারে যে, তারা সঠিক সোজা পথে চলবে।
اَجَعَلۡتُمۡ سِقَايَةَ الۡحَآجِّ وَعِمَارَةَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ كَمَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَجَاهَدَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ لَا يَسۡتَوٗنَ عِنۡدَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَۘ
১৯.) তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছ যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সংগ্রাম-সাধনা করেছে আল্লাহর পথে?
اَلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَهَاجَرُوۡا وَجٰهَدُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡۙ اَعۡظَمُ دَرَجَةً عِنۡدَ اللّٰهِؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡفَآٮِٕزُوۡنَ
২০.) এ উভয় দল আল্লাহর কাছে সমান নয়। আল্লাহ জালেমদের পথ দেখান না। আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা ঈমান এনেছে এবং তাঁর পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পণ করে জিহাদ করেছে। তারাই সফলকাম।
يُبَشِّرُهُمۡ رَبُّهُمۡ بِرَحۡمَةٍ مِّنۡهُ وَرِضۡوٰنٍ وَّجَنّٰتٍ لَّهُمۡ فِيۡهَا نَعِيۡمٌ مُّقِيۡمٌۙ
২১.) তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী।
خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۤ اَبَدًاؕ اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِيۡمٌ
২২.) সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। অবশ্য আল্লাহর কাছে কাজের প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡۤا اٰبَآءَكُمۡ وَاِخۡوَانَكُمۡ اَوۡلِيَآءَ اِنِ اسۡتَحَبُّوۡا الۡكُفۡرَ عَلَى الۡاِيۡمَانِؕ وَمَنۡ يَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡكُمۡ فَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
২৩.) যে ঈমানদারগণ! তোমাদের বাপ ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের ওপর কুফরীকে প্রাধান্য দেয় তাহলে তাদেরকেও নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই জালেম।
قُلۡ اِنۡ كَانَ اٰبَآؤُكُمۡ وَاَبۡنَآؤُكُمۡ وَاِخۡوَانُكُمۡ وَاَزۡواجُكُمۡ وَعَشِيۡرَتُكُمۡ وَاَمۡوَالُ اقۡتَرَفۡتُمُوۡهَا وَتِجَارَةٌ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَيۡكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَجِهَادٍ فِىۡ سَبِيۡلِهٖ فَتَرَبَّصُوۡا حَتّٰى يَاۡتِىَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِيۡنَ
২৪.) হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।
لَقَدۡ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ فِىۡ مَوَاطِنَ كَثِيۡرَةٍۙ وَّيَوۡمَ حُنَيۡنٍۙ اِذۡ اَعۡجَبَتۡكُمۡ كَثۡرَتُكُمۡ فَلَمۡ تُغۡنِ عَنۡكُمۡ شَيۡـًٔا وَّضَاقَتۡ عَلَيۡكُمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ثُمَّ وَلَّيۡتُمۡ مُّدۡبِرِيۡنَۚ
২৫.) এর আগে আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করছেন। এই তো সেদিন, হুনায়েন যুদ্ধের দিন (তাঁর সাহায্যের অভাবনীয় রূপ তোমরা দেখছো) , সেদিন তোমাদের মনে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের অহমিকা ছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর এত বড় বিশাল পৃথিবীও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং তোমরা পেছনে ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে।
ثُمَّ اَنۡزَلَ اللّٰهُ سَكِيۡنَتَهٗ عَلٰى رَسُوۡلِهٖ وَعَلَى الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَاَنۡزَلَ جُنُوۡدًا لَّمۡ تَرَوۡهَاۚ وَعَذَّبَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡاؕ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الۡكٰفِرِيۡنَ
২৬.) তারপর আল্লাহ তার প্রশান্তি নাযিল করেন তাঁর রসূলের ওপর ও মুমিনদের ওপর এবং সেনাদল নামান যাদেরকে তোমরা চোখে দেখতে পাচ্ছিলে না এবং সত্য অস্বীকারকারীদের শাস্তি দেন। কারণ যারা সত্য অস্বীকার করে এটাই তাদের প্রতিফল।
ثُمَّ يَتُوۡبُ اللّٰهُ مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ عَلٰى مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
২৭.) তারপর (তোমরা এও দেখছো) এভাবে শাস্তি দেবার পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাওবার তাওফীকও দান করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡمُشۡرِكُوۡنَ نَجَسٌ فَلَا يَقۡرَبُوۡا الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ بَعۡدَ عَامِهِمۡ هٰذَاۚ وَاِنۡ خِفۡتُمۡ عَيۡلَةً فَسَوۡفَ يُغۡنِيۡكُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖۤ اِنۡ شَآءَؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
২৮.) হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন আর মসজিদে হারামের কাছে না আসে। আর যদি তোমাদের দারিদ্রের ভয় থাকে, তাহলে আল্লাহ চাইলে তার নিজ অনুগ্রহে শীঘ্রই তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও তিনি প্রজ্ঞাময়।
قَاتِلُوۡا الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَلَا بِالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَلَا يُحَرِّمُوۡنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗ وَلَا يَدِيۡنُوۡنَ دِيۡنَ الۡحَقِّ مِنَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ حَتّٰى يُعۡطُوۡا الۡجِزۡيَةَ عَنۡ يَّدٍ وَّهُمۡ صٰغِرُوۡنَ
২৯.) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না যা কিছু আল্লাহ ও তার রসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না এবং সত্য দ্বীনকে নিজেদের দ্বীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে।
وَقَالَتِ الۡيَهُوۡدُ عُزَيۡرٌ ۨابۡنُ اللّٰهِ وَقَالَتِ النَّصٰرَى الۡمَسِيۡحُ ابۡنُ اللّٰهِؕ ذٰلِكَ قَوۡلُهُمۡ بِاَفۡوَاهِهِمۡۚ يُضَاهِـُٔوۡنَ قَوۡلَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡ قَبۡلُؕ قَاتَلَهُمُ اللّٰهُۚ اَنّٰى يُؤۡفَكُوۡنَ
৩০.) ইহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র২৯ এবং খৃস্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র। এগুলো একেবারেই আজগুবী ও উদ্ভট কথাবার্তা। তাদের পূর্বে যারা কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল তাদের দেখাদেখি তারা এগুলো নিজেদের মুখে উচ্চারণ করে থাকে। আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তাদের ওপর, তারা কোথা থেকে ধোকা খাচ্ছে!
اِتَّخَذُوۡۤا اَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبٰنَهُمۡ اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَالۡمَسِيۡحَ ابۡنَ مَرۡيَمَۚ وَمَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِيَعۡبُدُوۡۤا اِلٰهًا وَّاحِدًاۚ لَٓا اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ سُبۡحٰنَهٗ عَمَّا يُشۡرِكُوۡنَ
৩১.) তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে। এবং এভাবে মারিয়াম পুত্র মসীহকেও। অথচ তাদের মা’বুদ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করার হুকুম দেয়া হয়নি, এমন এক মাবুদ যিনি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন আর কেউ নেই। তারা যেসব মুশরিকী কথা বলে তা থেকে তিনি পাক পবিত্র।
يُرِيۡدُوۡنَ اَنۡ يُّطۡفِـُٔوۡا نُوۡرَ اللّٰهِ بِاَفۡوَاهِهِمۡ وَيَاۡبَى اللّٰهُ اِلَّاۤ اَنۡ يُّتِمَّ نُوۡرَهٗ وَلَوۡ كَرِهَ الۡكٰفِرُوۡنَ
৩২.) তারা চায় তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে। কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পূর্ণতা দান না করে ক্ষান্ত হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন।
هُوَ الَّذِىۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰى وَدِيۡنِ الۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهٗ عَلَى الدِّيۡنِ كُلِّهٖۙ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ
৩৩.) আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ كَثِيۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَالرُّهۡبَانِ لَيَاۡكُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَيَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ وَالَّذِيۡنَ يَكۡنِزُوۡنَ الذَّهَبَ وَالۡفِضَّةَ وَلَا يُنۡفِقُوۡنَهَا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِيۡمٍۙ
৩৪.) হে ঈমানদারগণ! এ আহলে কিতাবদের অধিকাংশ আলেম ও দরবেশের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় পদ্ধতিতে খায় এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাময় আযাবের সুখবর দাও।
يَوۡمَ يُحۡمٰى عَلَيۡهَا فِىۡ نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوٰى بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوۡبُهُمۡ وَظُهُوۡرُهُمۡؕ هٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِاَنۡفُسِكُمۡ فَذُوۡقُوۡا مَا كُنۡتُمۡ تَكۡنِزُوۡنَ
৩৫.) একদিন আসবে যখন এ সোনা ও রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তারই সাহায্যে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর।
اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِىۡ كِتٰبِ اللّٰهِ يَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَةٌ حُرُمٌؕ ذٰلِكَ الدِّيۡنُ الۡقَيِّمُ ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِيۡهِنَّ اَنۡفُسَكُمۡؕ وَقَاتِلُوۡا الۡمُشۡرِكِيۡنَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُوۡنَكُمۡ كَآفَّةًؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِيۡنَ
৩৬.) আসলে যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না। আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। এবং জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথেই আছেন।
اِنَّمَا النَّسِىۡٓءُ زِيَادَةٌ فِىۡ الۡكُفۡرِ يُضَلُّ بِهِ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا يُحِلُّوۡنَهٗ عَامًا وَّيُحَرِّمُوۡنَهٗ عَامًا لِّيُوَاطِـُٔوۡا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ فَيُحِلُّوۡا مَا حَرَّمَ اللّٰهُؕ زُيِّنَ لَهُمۡ سُوۡۤءُ اَعۡمَالِهِمۡؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡكٰفِرِيۡنَ
৩৭.) “নাসী” (মাসকে পিছিয়ে দেয়া) তো কুফরীর মধ্যে আরো একটি কুফরী কর্ম, যার সাহায্যে এ কাফেদের কে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করা হয়ে থাকে। কোন বছর একটি মাসকে হালাল করে নেয় এবং কোন বছর তাকে আবার হারাম করে নেয়, যাতে আল্লাহর হারাম মাসের সংখ্যাও পুরা করতে পারে এবং আল্লাহর হারাম করাকেও হালাল করতে পারে। তাদের খারাপ কাজগুলোকে তাদের জন্য শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ সত্য- অস্বীকারকারীদেরকে হেদায়াত দান করেন না।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مَا لَكُمۡ اِذَا قِيۡلَ لَكُمُ انْفِرُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اثَّاقَلۡتُمۡ اِلَى الۡاَرۡضِؕ اَرَضِيۡتُمۡ بِالۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا مِنَ الۡاٰخِرَةِۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا فِىۡ الۡاٰخِرَةِ اِلَّا قَلِيۡلٌ
৩৮.) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো, যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হলো, অমনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছো? যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখো, দুনিয়ার জীবনের এমন সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুব সামান্য বলে প্রমাণিত হবে।
اِلَّا تَنۡفِرُوۡا يُعَذِّبۡكُمۡ عَذَابًا اَلِيۡمًا ۙ وَّيَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّوۡهُ شَيۡـًٔاؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
৩৯.) তোমরা যদি না বের হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের জায়গায় আর একটি দলকে ওঠাবেন, আর তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।
اِلَّا تَنۡصُرُوۡهُ فَقَدۡ نَصَرَهُ اللّٰهُ اِذۡ اَخۡرَجَهُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا ثَانِىَ اثۡنَيۡنِ اِذۡ هُمَا فِىۡ الۡغَارِ اِذۡ يَقُوۡلُ لِصَاحِبِهٖ لَا تَحۡزَنۡ اِنَّ اللّٰهَ مَعَنَاۚ فَاَنۡزَلَ اللّٰهُ سَكِيۡنَتَهٗ عَلَيۡهِ وَاَيَّدَهٗ بِجُنُوۡدٍ لَّمۡ تَرَوۡهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا السُّفۡلٰىؕ وَكَلِمَةُ اللّٰهِ هِىَ الۡعُلۡيَاؕ وَاللّٰهُ عَزِيۡزٌ حَكِيۡمٌ
৪০.) তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন পরোয়া নেই। আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নিচু করে দেন। আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
ِانْفِرُوۡا خِفَافًا وَّثِقَالاً وَّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِكُمۡ وَاَنۡفُسِكُمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِؕ ذٰلِكُمۡ خَيۡرٌ لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
৪১.) ---বের হও, হালকা কিংবা ভারী যাই হওনা কেন, এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে নিজের ধন-প্রাণ দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।
لَوۡ كَانَ عَرَضًا قَرِيۡبًا وَّسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوۡكَ وَلٰكِنۡۢ بَعُدَتۡ عَلَيۡهِمُ الشُّقَّةُؕ وَسَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَوِ اسۡتَطَعۡنَا لَخَرَجۡنَا مَعَكُمۡ يُهۡلِكُوۡنَ اَنۡفُسَهُمۡۚ وَاللّٰهُ يَعۡلَمُ اِنَّهُمۡ لَكٰذِبُوۡنَ
৪২.) হে নবী! যদি সহজ লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং সফর হালকা হতো, তাহলে তারা নিশ্চয়ই তোমার পেছনে চলতে উদ্যত হতো। কিন্তু তাদের জন্য তো এ পথ বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। এখন তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলবে, যদি আমরা চলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে চলতাম। তারা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহ ভালো করেই জানেন তারা মিথ্যাবাদী।
عَفَا اللّٰهُ عَنۡكَۚ لِمَ اَذِنۡتَ لَهُمۡ حَتّٰى يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِيۡنَ صَدَقُوۡا وَتَعۡلَمَ الۡكٰذِبِيۡنَ
৪৩.) হে নবী! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন? (তোমরা নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে পারতে কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক।
لَا يَسۡتَـٔۡذِنُكَ الَّذِيۡنَ يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ اَنۡ يُّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِالۡمُتَّقِيۡنَ
৪৪.) যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা কখনো তোমার কাছে তাদের ধন ও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আবেদন জানাবে না। আল্লাহ মুত্তাকীদের খুব ভাল করেই জানেন।
اِنَّمَا يَسۡتَاْذِنُكَ الَّذِيۡنَ لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَارۡتَابَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ فَهُمۡ فِىۡ رَيۡبِهِمۡ يَتَرَدَّدُوۡنَ
৪৫.) এমন আবেদন তো একমাত্র তারাই করে; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে না, যাদের মনে রয়েছে সন্দেহ এবং এ সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান।
وَلَوۡ اَرَادُوۡا الۡخُرُوۡجَ لَاَعَدُّوۡا لَهٗ عُدَّةً وَّلٰكِنۡ كَرِهَ اللّٰهُ انۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِيۡلَ اقۡعُدُوۡا مَعَ الۡقٰعِدِيۡنَ
৪৬.) যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সেজন্য কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল না। তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে।
لَوۡ خَرَجُوۡا فِيۡكُمۡ مَّا زَادُوۡكُمۡ اِلَّا خَبَالاً وَّلَاَوۡضَعُوۡا خِلٰلَكُمۡ يَبۡغُوۡنَكُمُ الۡفِتۡنَةَ وَفِيۡكُمۡ سَمّٰعُوۡنَ لَهُمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِالظّٰلِمِيۡنَ
৪৭.) যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না। তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো। আর তোমাদের লোকদের অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে শোনে। আল্লাহ এ জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন।
لَقَدِ ابۡتَغَوُا الۡفِتۡنَةَ مِنۡ قَبۡلُ وَقَلَّبُوۡا لَكَ الۡاُمُوۡرَ حَتّٰى جَآءَ الۡحَقُّ وَظَهَرَ اَمۡرُ اللّٰهِ وَهُمۡ كٰرِهُوۡنَ
৪৮.) এর আগেও এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে। এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّقُوۡلُ ائۡذَنۡ لِّىۡ وَلَا تَفۡتِنِّىۡؕ اَلَا فِىۡ الۡفِتۡنَةِ سَقَطُوۡاؕ وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيۡطَةٌۢ بِالۡكٰفِرِيۡنَ
৪৯.) তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে।
اِنۡ تُصِبۡكَ حَسَنَةٌ تَسُؤۡهُمۡۚ وَاِنۡ تُصِبۡكَ مُصِيۡبَةٌ يَّقُوۡلُوۡا قَدۡ اَخَذۡنَاۤ اَمۡرَنَا مِنۡ قَبۡلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمۡ فَرِحُوۡنَ
৫০.) তোমরা ভাল কিছু হলে তাতাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি।”
قُل لَّنۡ يُّصِيۡبَنَاۤ اِلَّا مَا كَتَبَ اللّٰهُ لَنَا هُوَ مَوۡلٰٮنَاۚ وَعَلَى اللّٰهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
৫১.) তাদের বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন (ভাল বা মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না। আল্লাহই আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক এবং ঈমানদারদের তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত।”
قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُوۡنَ بِنَاۤ اِلَّاۤ اِحۡدَى الۡحُسۡنَيَيۡنِؕ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ اَنۡ يُّصِيۡبَكُمُ اللّٰهُ بِعَذَابٍ مِّنۡ عِنۡدِهٖۤ اَوۡ بِاَيۡدِيۡنَا ۖ فَتَرَبَّصُوۡۤا اِنَّا مَعَكُمۡ مُّتَرَبِّصُوۡنَ
৫২.) তাদের বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি? অন্যদিকে আমরা তোমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্ছে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন? তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করো এবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি।”
قُلۡ اَنۡفِقُوۡا طَوۡعًا اَوۡ كَرۡهًا لَّنۡ يُّتَقَبَّلَ مِنۡكُمۡؕ اِنَّكُمۡ كُنۡتُمۡ قَوۡمًا فٰسِقِيۡنَ
৫৩.) তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ব্যয় কর, তা গৃহীত হবে না। কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী।”
وَمَا مَنَعَهُمۡ اَنۡ تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ نَفَقٰتُهُمۡ اِلَّاۤ اَنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَبِرَسُوۡلِهٖ وَلَا يَاۡتُوۡنَ الصَّلٰوةَ اِلَّا وَهُمۡ كُسَالٰى وَلَا يُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا وَهُمۡ كٰرِهُوۡنَ
৫৪.) তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে।
فَلَا تُعۡجِبۡكَ اَمۡوَالُهُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُهُمۡؕ اِنَّمَا يُرِيۡدُ اللّٰهُ لِيُعَذِّبَهُمۡ بِهَا فِىۡ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ اَنۡفُسُهُمۡ وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
৫৫.) তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা প্রতারিত হয়ো না। আল্লাহ চান, এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের শাস্তি দিতে। আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়।
وَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ اِنَّهُمۡ لَمِنۡكُمۡؕ وَمَا هُمۡ مِّنۡكُمۡ وَلٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٌ يَّفۡرَقُوۡنَ
৫৬.) তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা তোমাদেরই লোক। অথচ তারা মোটেই তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আসলে তারা এমন একদল লোক যারা তোমাদের ভয় করে।
لَوۡ يَجِدُوۡنَ مَلۡجَـًٔا اَوۡ مَغٰرٰتٍ اَوۡ مُدَّخَلاً لَّوَلَّوۡا اِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُوۡنَ
৫৭.) যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি-গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ করার মত কোন জায়গা, তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّلۡمِزُكَ فِىۡ الصَّدَقٰتِۚ فَاِنۡ اُعۡطُوۡا مِنۡهَا رَضُوۡا وَاِنۡ لَّمۡ يُعۡطَوۡا مِنۡهَاۤ اِذَا هُمۡ يَسۡخَطُوۡنَ
৫৮.) হে নবী! তাদের কেউ কেউ সাদকাহ বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাচ্ছে। এ সম্পদ থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়, আর না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে।
وَلَوۡ اَنَّهُمۡ رَضُوۡا مَاۤ اٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗۙ وَقَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ سَيُؤۡتِيۡنَا اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ وَرَسُوۡلُهٗ اِنَّاۤ اِلَى اللّٰهِ رٰغِبُوۡنَ
৫৯.) কতই না ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই তাদের দিয়েছিলেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি।”
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰكِيۡنِ وَالۡعٰمِلِيۡنَ عَلَيۡهَا وَالۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوۡبُهُمۡ وَفِىۡ الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِيۡنَ وَفِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَابۡنِ السَّبِيۡلِؕ فَرِيۡضَةً مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
৬০.) এ সাদকা গুলো তো আসলে ফকীর মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের জন্য মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহর সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ।
وَمِنۡهُمُ الَّذِيۡنَ يُؤۡذُوۡنَ النَّبِىَّ وَيَقُوۡلُوۡنَ هُوَ اُذُنٌؕ قُلۡ اُذُنُ خَيۡرٍ لَّكُمۡ يُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَيُؤۡمِنُ لِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَرَحۡمَةٌ لِّلَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡكُمۡؕ وَالَّذِيۡنَ يُؤۡذُوۡنَ رَسُوۡلَ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৬১.) তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা নিজেদের কথা দ্বারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে এ ব্যক্তি অতিশয় কর্ণপাতকারী। বলে দাও, “সে এরূপ করে কেবল তোমাদের ভালোর জন্যই। সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং ঈমানদারদেরকে বিশ্বাস করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সে পরিপূর্ণ রহমত। আর যারা আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
يَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَكُمۡ لِيُرۡضُوۡكُمۡۚ وَاللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗۤ اَحَقُّ اَنۡ يُّرۡضُوۡهُ اِنۡ كَانُوۡا مُؤۡمِنِيۡنَ
৬২.) তারা তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের সামনে কসম খায়। অথচ যদি তার মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّهٗ مَنۡ يُّحَادِدِ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗ فَاَنَّ لَهٗ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدًا فِيۡهَاؕ ذٰلِكَ الۡخِزۡىُ الۡعَظِيۡمُ
৬৩.) তারা কি জানে না, যারা আল্লাহ ও তার রসূলের মোকাবিলা করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তার মধ্য তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি বিরাট লাঞ্ছনার ব্যাপার।
يَحۡذَرُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ اَنۡ تُنَزَّلَ عَلَيۡهِمۡ سُوۡرَةٌ تُنَبِّئُهُمۡ بِمَا فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡؕ قُلِ اسۡتَهۡزِءُوۡاۚ اِنَّ اللّٰهَ مُخۡرِجٌ مَّا تَحۡذَرُوۡنَ
৬৪.) এ মুনাফিকরা ভয় করেছে, মুসলমানদের ওপর এমন একটি সূরা না নাযিল হয়ে যায়, যা তাদের মনের গোপন কথাপ্রকাশ করে দেবে। হে নবী! তাদের বলে দাও, “বেশ ঠাট্টা করতেই থাকো, তবে তোমরা যে জিনিসটির প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় করছো আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন।”
وَلَٮِٕنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَيَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا كُنَّا نَخُوۡضُ وَنَلۡعَبُؕ قُلۡ اَبِاللّٰهِ وَاٰيٰتِهٖ وَرَسُوۡلِهٖ كُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ
৬৫.) যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কথা বলছিলে? তাহলে তারা ঝটপট বলে দেবে, আমরা তো হাসি-তামাসা ও পরিহাস করছিলাম। তাদের বলো, তোমাদের হাসি-তামাসা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলের সাথে ছিল?
لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ كَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِيۡمَانِكُمۡؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآٮِٕفَةٍ مِّنۡكُمۡ نُعَذِّبۡ طَآٮِٕفَةًۢ بِاَنَّهُمۡ كَانُوۡا مُجۡرِمِيۡنَ
৬৬.) এখন আর ওযর পেশ করো না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছো, যদি আমরা তোমাদের একটি দলকে মাফও করে দেই তাহলে আরেকটি দলকে তো আমরা অবশ্যই শাস্তি দেবো। কারণ তারা অপারাধী।
اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍۘ يَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡكَرِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَيَقۡبِضُوۡنَ اَيۡدِيَهُمۡؕ نَسُوۡا اللّٰهَ فَنَسِيَهُمۡؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِيۡنَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
৬৭.) মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরের দোসর। খারাপ কাজের হুকুম দেয়, ভাল কাজের নিষেধ করে এবং কল্যাণ থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, ফলে আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেছেন।
وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُنٰفِقِيۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتِ وَالۡكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاؕ هِىَ حَسۡبُهُمۡۚ وَلَعَنَهُمُ اللّٰهُۚ وَلَهُمۡ عَذَابٌ مُّقِيۡمٌۙ
৬৮.) নিশ্চিতভাবেই এ মুনাফিকরাই ফাসেক। এ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুনের ওয়াদা করেছেন। তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। সেটিই তাদের জন্য উপযুক্ত। আল্লাহর অভিশাপ তাদের ওপর এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।
كَالَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ كَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡكُمۡ قُوَّةً وَّاَكۡثَرَ اَمۡوَالاً وَّاَوۡلَادًا فَاسۡتَمۡتَعُوۡا بِخَلَاقِهِمۡ فَاسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِخَلَاقِكُمۡ كَمَا اسۡتَمۡتَعَ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ بِخَلَاقِهِمۡ وَخُضۡتُمۡ كَالَّذِىۡ خَاضُوۡاؕ اُولٰۤٮِٕكَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِۚ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
৬৯.) তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই। তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ ও সন্তানের মালিক। তারপর তারা দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো। যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো। কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে এই যে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
اَلَمۡ يَاۡتِهِمۡ نَبَاُ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّعَادٍ وَّثَمُوۡدَ ۙ وَقَوۡمِ اِبۡرٰهِيۡمَ وَاَصۡحٰبِ مَدۡيَنَ وَالۡمُؤۡتَفِكٰتِؕ اَتَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَيِّنٰتِۚ فَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيَظۡلِمَهُمۡ وَلٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ
৭০.) তাদের কাছে কি তাদের পূর্ববর্তীদের ইতিহাস পৌঁছেনি? নূহের জাতির, আদ, সামূদ ও ইবরাহীমের জাতির, মাদইয়ানের অধিবাসীদের এবং যে জনবসতিগুলো উল্টে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর? তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিশানীসহ তাদের কাছে এসেছিলেন। এরপর তাদের ওপর জুলুম করা আল্লাহর কাজ ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছিলেন।
وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِيَآءُ بَعۡضٍۘ يَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَيُقِيۡمُوۡنَ الصَّلٰوةَ وَيُؤۡتُوۡنَ الزَّكٰوةَ وَيُطِيۡعُوۡنَ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗؕ اُولٰۤٮِٕكَ سَيَرۡحَمُهُمُ اللّٰهُؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِيۡزٌ حَكِيۡمٌ
৭১.) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবেই। অবশ্যই আল্লাহ সবার ওপর পরাক্রমশালী এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ।
وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَا وَمَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِىۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍؕ وَرِضۡوٰنٌ مِّنَ اللّٰهِ اَكۡبَرُؕ ذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
৭২.) এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে। এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
يٰۤاَيُّهَا النَّبِىُّ جَاهِدِ الۡكُفَّارَ وَالۡمُنٰفِقِيۡنَ وَاغۡلُظۡ عَلَيۡهِمۡؕ وَمَاۡوٰٮهُمۡ جَهَنَّمُؕ وَبِئۡسَ الۡمَصِيۡرُ
৭৩.) হে নবী! পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবিল করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। শেষ পর্যন্ত তাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান স্থল।
يَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ مَا قَالُوۡاؕ وَلَقَدۡ قَالُوۡا كَلِمَةَ الۡكُفۡرِ وَكَفَرُوۡا بَعۡدَ اِسۡلَامِهِمۡ وَهَمُّوۡا بِمَا لَمۡ يَنَالُوۡاۚ وَمَا نَقَمُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ اَغۡنٰٮهُمُ اللّٰهُ وَرَسُوۡلُهٗ مِنۡ فَضۡلِهٖۚ فَاِنۡ يَّتُوۡبُوۡا يَكُ خَيۡرًا لَّهُمۡۚ وَاِنۡ يَّتَوَلَّوۡا يُعَذِّبۡهُمُ اللّٰهُ عَذَابًا اَلِيۡمًا فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِۚ وَمَا لَهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ
৭৪.) তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা ও কথা বলিনি। অথচ তারা নিশ্চয়ই সেই কুফরীর কথাটা বলেছে। তারা ইসলাম গ্রহণের পর কুফরী অবলম্বন করেছে। তারা এমনসব কিছু করার সংকল্প করেছিল যা করতে পারেনি। আল্লাহ ও তাঁর রসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দিয়েছেন বলেই তাদের এত ক্রোধ ও আক্রোশ! এখন যদি তারা নিজেদের এহন আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের জন্যই ভাল। আর যদি বিরত না হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং পৃথিবীতে তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী ও সাহায্যকারী কেউ থাকবে না।
وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ عٰهَدَ اللّٰهَ لَٮِٕنۡ اٰتٰٮنَا مِنۡ فَضۡلِهٖ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الصّٰلِحِيۡنَ
৭৫.) তাদের মধ্যে এমনও কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেছিল, যদি তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের ধন্য করেন তাহলে আমরা দান করবো এবং সৎ হয়ে যাবো।
فَلَمَّاۤ اٰتٰٮهُمۡ مِّنۡ فَضۡلِهٖ بَخِلُوۡا بِهٖ وَتَوَلَّوا وَّهُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
৭৬.) কিন্তু যখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে বিত্তশালী করে দিলেন তখন তারা কার্পণ্য করতে লাগলো এবং নিজেদের অঙ্গীকার থেকে এমনভাবে পিছটান দিল যে, তার কোন পরোয়াই তাদের রইল না।
فَاَعۡقَبَهُمۡ نِفَاقًا فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ اِلٰى يَوۡمِ يَلۡقَوۡنَهٗ بِمَاۤ اَخۡلَفُوۡا اللّٰهَ مَا وَعَدُوۡهُ وَبِمَا كَانُوۡا يَكۡذِبُوۡنَ
৭৭.) ফলে তারা আল্লাহর সাথে এই যে অঙ্গীকার ভঙ্গ করলো এবং এই যে, মিথ্যা বলতে থাকলো, এ কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন, তার দরবারে তাদের উপস্থিতির দিন পর্যন্ত তা তাদের পিছু ছাড়বে না।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ يَعۡلَمُ سِرَّهُمۡ وَنَجۡوٰٮهُمۡ وَاَنَّ اللّٰهَ عَلّٰمُ الۡغُيُوۡبِۚ
৭৮.) তারা কি জানে না, আল্লাহ তাদের গোপন কথাও গোপন সলা-পরামর্শ পর্যন্ত জানেন এবং তিনি সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ও পুরোপুরি অবগত?
الَّذِيۡنَ يَلۡمِزُوۡنَ الۡمُطَّوِّعِيۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ فِىۡ الصَّدَقٰتِ وَالَّذِيۡنَ لَا يَجِدُوۡنَ اِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُوۡنَ مِنۡهُمۡؕ سَخِرَ اللّٰهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৭৯.) (তিনি এমন সব কৃপণ ধনীদেরকে ভাল করেই জানেন) যারা ঈমানদেরদের সন্তোষ ও আগ্রহ সহকারে আর্থিক ত্যাগ স্বীকারের প্রতি দোষ ও অপবাদ আরোপ করে এবং যাদের কাছে (আল্লাহর পথে দান করার জন্য) নিজেরা কষ্ট সহ্য করে যা কিছু দান করে তাছাড়া আর কিছুই নেই, তাদেরকে বিদ্রূপ করে। আল্লাহ এ বিদ্রূপকারীদেরকে বিদ্রূপ করেন। এদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ এ বিদ্রূপকারীদেরকে বিদ্রূপ করেন। এদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِيۡنَ مَرَّةً فَلَنۡ يَّغۡفِرَ اللّٰهُ لَهُمۡؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِيۡنَ
৮০.) হে নবী! তুমি এ ধরনের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো, তুমি যদি এদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেকদেরকে মুক্তির পথ দেখান না।
فَرِحَ الۡمُخَلَّفُوۡنَ بِمَقۡعَدِهِمۡ خِلٰفَ رَسُوۡلِ اللّٰهِ وَكَرِهُوۡۤا اَنۡ يُّجَاهِدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَقَالُوۡا لَا تَنۡفِرُوۡا فِىۡ الۡحَرِّؕ قُلۡ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّاؕ لَوۡ كَانُوۡا يَفۡقَهُوۡنَ
৮১.) যাদেরকে পিছনে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তারা আল্লাহর রসূলের সাথে সহযোগিতা না করারও ঘরে বসে থাকার জন্য আনন্দিত হলো এবং তারা নিজেদের ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে অপছন্দ করলো। তারা লোকদেরকে বললো, “এ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বের হয়ো না।” তাদেরকে বলে দাও, জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশী গরম, হায়! যদি তাদের সেই চেতনা থাকতো!
فَلۡيَضۡحَكُوۡا قَلِيۡلاً وَّلۡيَبۡكُوۡا كَثِيۡرًاۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
৮২.) এখন তাদের কম হাসা ও বেশী কাঁদা উচিত। কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে তার প্রতিদান এ ধরনেরই হয়ে থাকে (যে, সেজন্য তাদের কাঁদা উচিত।)
فَاِنۡ رَّجَعَكَ اللّٰهُ اِلٰى طَآٮِٕفَةٍ مِّنۡهُمۡ فَاسۡتَـٔۡذَنُوۡكَ لِلۡخُرُوۡجِ فَقُل لَّنۡ تَخۡرُجُوۡا مَعِىَ اَبَدًا وَّلَنۡ تُقَاتِلُوۡا مَعِىَ عَدُوًّاؕ اِنَّكُمۡ رَضِيۡتُمۡ بِالۡقُعُوۡدِ اَوَّلَ مَرَّةٍ فَاقۡعُدُوۡا مَعَ الۡخٰلِفِيۡنَ
৮৩.) যদি আল্লাহ তাদের মধ্যে তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কোন দল জিহাদ করার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় তাহলে পরিষ্কার বলে দেবে, “এখন আর তোমরা কখনো আমরা সাথে যেতে পারবে না এবং আমার সঙ্গী হয়ে কোন দুশমনের সাথে লড়াইও করতে পারবে না। তোমরা তো প্রথমে বসে থাকাই পছন্দ করেছিলে, তাহলে এখন যারা ঘরে বসে আছে তাদের সাথে তোমরাও বসে থাকো।”
وَلَا تُصَلِّ عَلٰٓى اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّلَا تَقُمۡ عَلٰى قَبۡرِهٖؕ اِنَّهُمۡ كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ وَمَاتُوۡا وَهُمۡ فٰسِقُوۡنَ
৮৪.) আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার জানাযার নামাযও তুমি কখনো পড়বে না এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাসেক অবস্থায়।
وَلَا تُعۡجِبۡكَ اَمۡوَالُهُمۡ وَاَوۡلَادُهُمۡؕ اِنَّمَا يُرِيۡدُ اللّٰهُ اَنۡ يُّعَذِّبَهُمۡ بِهَا فِىۡ الدُّنۡيَا وَتَزۡهَقَ اَنۡفُسُهُمۡ وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
৮৫.) তাদের ধনাঢ্যতা ও তাদের অধিক সংখ্যক সন্তান সন্ততি তোমাকে যেন প্রতারিত না করে। আল্লাহ তো তাদেরকে এ ধন ও সম্পদের সাহায্যে এ দুনিয়ায়ই সাজা দেবার সংকল্প করে ফেলেছেন এবং কাফের থাকা অবস্থায় তাদের মৃত্যু হোক-এটাই চেয়েছেন।
وَاِذَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَجَاهِدُوۡا مَعَ رَسُوۡلِهِ اسۡتَـٔۡذَنَكَ اُولُوۡا الطَّوۡلِ مِنۡهُمۡ وَقَالُوۡا ذَرۡنَا نَكُنۡ مَّعَ الۡقٰعِدِيۡنَ
৮৬.) আল্লাহকে মেনে চলো এবং তাঁর রসূলের সহযোগী হয়ে জিহাদ করো, এ মর্মে যখনই কোন সূরা নাযিল হয়েছে তোমরা দেখেছো, তাদের মধ্যে যারা সমার্থবান ছিল তারাই তোমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে, জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তাদেরকে রেহাই দেয়া হোক এবং তারা বলেছে, আমাদের ছেড়ে দাও। যারা বসে আছে তাদের সাথে আমরা বসে থাকবো।
رَضُوۡا بِاَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَفۡقَهُوۡنَ
৮৭.) তারা গৃহবাসীনি মেয়েদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে থাকতে চেয়েছে এবং তাদের দিলে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তাই তারা কিছুই বুঝতে পারছে না।
لٰكِنِ الرَّسُوۡلُ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ جَاهَدُوۡا بِاَمۡوَالِهِمۡ وَاَنۡفُسِهِمۡؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ لَهُمُ الۡخَيۡرٰتُؕ وَاُولٰۤٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
৮৮.) অন্যদিকে রসূল ও তার ঈমানদার সাথীরা নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। সমস্ত কল্যাণ এখন তাদের জন্য এবং তারাই সফলকাম হবে।
اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
৮৯.) আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন। যার নিম্নদেশে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই মহা সাফল্য।
وَجَآءَ الۡمُعَذِّرُوۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ لِيُؤۡذَنَ لَهُمۡ وَقَعَدَ الَّذِيۡنَ كَذَبُوۡا اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗؕ سَيُصِيۡبُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৯০.) গ্রামীণ আরবের মধ্যে থেকেও অনেক লোক এলো। তারা ওযর পেশ করলো, যাতে তাদেরকেও পিছনে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। যারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে ঈমানের মিথ্যা অঙ্গীকার করেছিল তারাই এভাবে বসে রইল। এ গ্রামীণ আরবদের মধ্য থেকে যারাই কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে শীঘ্রই তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে।
لَّيۡسَ عَلَى الضُّعَفَآءِ وَلَا عَلَى الۡمَرۡضٰى وَلَا عَلَى الَّذِيۡنَ لَا يَجِدُوۡنَ مَا يُنۡفِقُوۡنَ حَرَجٌ اِذَا نَصَحُوۡا لِلّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖؕ مَا عَلَى الۡمُحۡسِنِيۡنَ مِنۡ سَبِيۡلٍؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌۙ
৯১.) দুর্বল ও রুগ্ন লোকেরা এবং যেসব লোক জিহাদে শরীক হবার জন্য পাথেয় পায় না, তারা যদি পিছনে থেকে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই, যখন তারা আন্তরিকভাবে আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত। এ ধরনের সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অবকাশই নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَّلَا عَلَى الَّذِيۡنَ اِذَا مَاۤ اَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحۡمِلُكُمۡ عَلَيۡهِ تَوَلَّوا وَّاَعۡيُنُهُمۡ تَفِيۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوۡا مَا يُنۡفِقُوۡنَؕ
৯২.) অনুরূপভাবে তাদের বিরুদ্ধে ও অভিযোগের কোন সুযোগ নেই যারা নিজেরা এসে তোমার কাছে আবেদন করেছিল, তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে কিন্তু তুমি বলেছিলে আমি তোমাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না। তখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছিল। তখন তাদের অবস্থা এ ছিল যে, তাদের চোখে দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল এবং নিজেদের অর্থ ব্যয়ে জিহাদে শরীক হতে অসমর্থ হবার দরুন তাদের মনে বড়ই কষ্ট ছিল।
اِنَّمَا السَّبِيۡلُ عَلَى الَّذِيۡنَ يَسۡتَاْذِنُوۡنَكَ وَهُمۡ اَغۡنِيَآءُۚ رَضُوۡا بِاَنۡ يَّكُوۡنُوۡا مَعَ الۡخَوَالِفِۙ وَطَبَعَ اللّٰهُ عَلٰى قُلُوۡبِهِمۡ فَهُمۡ لَا يَعۡلَمُوۡنَ
৯৩.) অবশ্যই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে যারা বিত্তশালী হবার পরও জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তোমার কাছে অব্যাহতি চাচ্ছে। তারা পুরবাসিনীদের সাথে থাকাই পছন্দ করেছে। আল্লাহ তাদের দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন, তাই তারা এখন কিছুই জানে না। (যে, আল্লাহর কাজে তাদের এহেন কর্মনীতি গ্রহণের ফল কী দাঁড়াবে।)
يَعۡتَذِرُوۡنَ اِلَيۡكُمۡ اِذَا رَجَعۡتُمۡ اِلَيۡهِمۡؕ قُل لَّا تَعۡتَذِرُوۡا لَنۡ نُّؤۡمِنَ لَكُمۡ قَدۡ نَبَّاَنَا اللّٰهُ مِنۡ اَخۡبَارِكُمۡؕ وَسَيَرَى اللّٰهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُوۡلُهٗ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
৯৪.) তোমরা যখন ফিরে তাদের কাছে পৌঁছবে তখন তারা নানা ধরনের ওযর পেশ করতে থাকবে। কিন্তু তুমি পরিষ্কার বলে দেবে, “বাহানাবাজী করো না, আমরা তোমাদের কোন কথাই বিশ্বাস করবো না। তোমাদের অবস্থা আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। এখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ করবেন। তারপর তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, যিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই জানেন এবং তোমরা কি কাজ করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন।”
سَيَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰهِ لَكُمۡ اِذَا انقَلَبۡتُمۡ اِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُوۡا عَنۡهُمۡؕ فَاَعۡرِضُوۡا عَنۡهُمۡؕ اِنَّهُمۡ رِجۡسٌ وَّمَاۡوٰٮهُمۡ جَهَنَّمُۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَ
৯৫.) তোমরা ফিরে এলে তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো। ঠিক আছে, তোমরা অবশ্যই তাদেরকে উপেক্ষা করো কারণ তারা অপবিত্র এবং তাদের আসল আবাস জাহান্নাম। তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ এটি তাদের ভাগ্যে জুটবে।
يَحۡلِفُوۡنَ لَكُمۡ لِتَرۡضَوۡا عَنۡهُمۡۚ فَاِنۡ تَرۡضَوۡا عَنۡهُمۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا يَرۡضٰى عَنِ الۡقَوۡمِ الۡفٰسِقِيۡنَ
৯৬.) তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। অথচ তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ কখনো এহেন ফাসেকদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না।
اَلۡاَعۡرَابُ اَشَدُّ كُفۡرًا وَّنِفَاقًا وَّاَجۡدَرُ اَلَّا يَعۡلَمُوۡا حُدُوۡدَ مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ عَلٰى رَسُوۡلِهٖؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
৯৭.) এ বেদুইন আরবরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশী কঠোর এবং আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি যে দ্বীন নাযিল করেছেন তার সীমারেখা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আল্লাহ সবকিছু জানেন, তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।
وَمِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ يَّتَّخِذُ مَا يُنۡفِقُ مَغۡرَمًا وَّيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَآٮِٕرَؕ عَلَيۡهِمۡ دَآٮِٕرَةُ السَّوۡءِؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ
৯৮.) এ গ্রামীণদের মধ্যে এমন এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করলে তাকে নিজেদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো অর্থদণ্ড মনে করে এবং তোমাদের ব্যাপারে কালের আবর্তনের প্রতীক্ষা করছে (অর্থাৎ তোমরা কোন বিপদের মুখে পড়লে যে শাসন ব্যবস্থার আনুগত্যের শৃংখল তোমরা তাদের গলায় বেঁধে দিয়েছ তা তারা গলা থেকে নামিয়ে ফেলবে। ) অথচ মন্দের আবর্তন তাদের ওপরই চেপে বসেছে। আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
وَمِنَ الۡاَعۡرَابِ مَنۡ يُّؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنۡفِقُ قُرُبٰتٍ عِنۡدَ اللّٰهِ وَصَلٰوتِ الرَّسُوۡلِؕ اَلَاۤ اِنَّهَا قُرۡبَةٌ لَّهُمۡؕ سَيُدۡخِلُهُمُ اللّٰهُ فِىۡ رَحۡمَتِهٖۤؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৯৯.) আবার এ গ্রামীণদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা কিছু খরচ করে তাকে আল্লাহর দরবারে নৈকট্য লাভের এবং রসূলের কাছ থেকে রহমতের দোয়া লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। হ্যাঁ,, অবশ্যি তা তাদের জন্য নৈকট্য লাভের উপায় এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। অবশ্যি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَالسّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُهٰجِرِيۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ وَالَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُمۡ بِاِحۡسَانٍۙ رَّضِىَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡهُ وَاَعَدَّ لَهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ تَحۡتَهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۤ اَبَدًاؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
১০০.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যারা সবার আগে ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে এবং যারা পরে নিষ্ঠা সহকারে তাদের অনুসরণ করছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে এবং তারা তার মধ্যে থাকবে চিরকাল। এটাই মহা সাফল্য।
وَمِمَّنۡ حَوۡلَكُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ مُنٰفِقُوۡنَ ۛؕ وَمِنۡ اَهۡلِ الۡمَدِيۡنَةِ ۛ مَرَدُوۡا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعۡلَمُهُمۡؕ نَحۡنُ نَعۡلَمُهُمۡؕ سَنُعَذِّبُهُمۡ مَّرَّتَيۡنِ ثُمَّ يُرَدُّوۡنَ اِلٰى عَذَابٍ عَظِيۡمٍ
১০১.) তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুইন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মুনাফিক। অনুরূপভাবে মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকীতে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। তোমরা তাদেরকে চিন না, আমি চিনি তাদেরকে। শীঘ্রই আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবো। তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
وَاٰخَرُوۡنَ اعۡتَرَفُوۡا بِذُنُوۡبِهِمۡ خَلَطُوۡا عَمَلاً صَالِحًا وَّاٰخَرَ سَيِّئًاؕ عَسَى اللّٰهُ اَنۡ يَّتُوۡبَ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
১০২.) আরো কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে। তাদের কাজকর্ম মিশ্র ধরনের কিছু ভাল, কিছু মন্দ। অসম্ভব নয়, আল্লাহ তাদের প্রতি আবার মেহেরবান হয়ে যাবেন। কারণ, তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
ؕخُذۡ مِنۡ اَمۡوَالِهِمۡ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيۡهِمۡ بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمۡؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ
১০৩.) হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো, (নেকীর পথে) তাদেরকে এগিয়ে দাও এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো। তোমার দোয়া তাদের সান্তনার কারণ হবে। আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
اَلَمۡ يَعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ هُوَ يَقۡبَلُ التَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهٖ وَيَاۡخُذُ الصَّدَقٰتِ وَاَنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ
১০৪.) তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান-খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়?
وَقُلِ اعۡمَلُوۡا فَسَيَرَى اللّٰهُ عَمَلَكُمۡ وَرَسُوۡلُهٗ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَؕ وَسَتُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَۚ
১০৫.) আর হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, তোমরা কাজ করতে থাকো। আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনরা তোমাদের কাজের ধারা এখন কেমন থাকে তা দেখবেন। তারপর তোমাদের তাঁর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে সবকিছু জানেন এবং তোমরা কি করতে তা তিনি তোমাদের বলে দেবেন।
وَاٰخَرُوۡنَ مُرۡجَوۡنَ لِاَمۡرِ اللّٰهِ اِمَّا يُعَذِّبُهُمۡ وَاِمَّا يَتُوۡبُ عَلَيۡهِمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
১০৬.) অপর কিছু লোকের ব্যাপার এখনো আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে, তিনি চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আবার চাইলে তাদের প্রতি নতুন করে অনুগ্রহ করবেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
وَالَّذِيۡنَ اتَّخَذُوۡا مَسۡجِدًا ضِرَارًا وَّكُفۡرًا وَّتَفۡرِيۡقًۢا بَيۡنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ وَاِرۡصَادًا لِّمَنۡ حَارَبَ اللّٰهَ وَرَسُوۡلَهٗ مِنۡ قَبۡلُؕ وَلَيَحۡلِفُنَّ اِنۡ اَرَدۡنَاۤ اِلَّا الۡحُسۡنٰىؕ وَاللّٰهُ يَشۡهَدُ اِنَّهُمۡ لَكٰذِبُوۡنَ
১০৭.) আরো কিছু লোক আছে, যারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে (সত্যের দাওয়াতকে) ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, (আল্লাহর বন্দেগী করার পরিবর্তে) কুফরী করার জন্য মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং (এ বাহ্যিক ইবাদতগাহকে) এমন এক ব্যক্তির জন্য গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে যে ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। তারা অবশই কসম খেয়ে বলবে, ভালো ছাড়া আর কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী, তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী।
لَا تَقُمۡ فِيۡهِ اَبَدًاؕ لَّمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَى التَّقۡوٰى مِنۡ اَوَّلِ يَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِيۡهِؕ فِيۡهِ رِجَالٌ يُّحِبُّوۡنَ اَنۡ يَّتَطَهَّرُوۡاؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِيۡنَ
১০৮.) তুমি কখনো সেই ঘরে দাঁড়াবে না। যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তেতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটি দাঁড়ানোরই (ইবাদতের জন্য) তোমার পক্ষে অধিকতর সমীচীন। সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক-পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন।
اَفَمَنۡ اَسَّسَ بُنۡيَانَهٗ عَلَىٰ تَقۡوٰى مِنَ اللّٰهِ وَرِضۡوَانٍ خَيۡرٌ اَمۡ مَّنۡ اَسَّسَ بُنۡيَانَهٗ عَلٰى شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانۡهَارَ بِهٖ فِىۡ نَارِ جَهَنَّمَؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ
১০৯.) তাহলে তুমি কি মনে করো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নিজের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করলো সে ভাল, না যে ব্যক্তি তার ইমারতের ভিত উঠালো একটি পতাকার স্থিতিহীন ফাঁপা প্রান্তের ওপর এবং তা তাকে নিয়ে সোজা জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়লো? এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ কখনো সোজা পথ দেখান না।
لَا يَزَالُ بُنۡيَانُهُمُ الَّذِىۡ بَنَوۡا رِيۡبَةً فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ اِلَّاۤ اَنۡ تَقَطَّعَ قُلُوۡبُهُمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌ حَكِيۡمٌ
১১০.) তারা এই যে ইমারত নির্মাণ করেছে এটা সবসময় তাদের মনে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে (যার বের হয়ে যাওয়ার আর কোন উপায়ই এখন নেই) যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ অত্যন্তসচেতন, জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰى مِنَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَاَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّةَؕ يُقَاتِلُوۡنَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ فَيَقۡتُلُوۡنَ وَيُقۡتَلُوۡنَ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقًّا فِىۡ التَّوۡرٰٮةِ وَالۡاِنۡجِيۡلِ وَالۡقُرۡاٰنِؕ وَمَنۡ اَوۡفٰى بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَيۡعِكُمُ الَّذِىۡ بَايَعۡتُمۡ بِهٖؕ وَذٰلِكَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِيۡمُ
১১১.) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সেজন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
التَّاۤٮِٕبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحَامِدُوۡنَ السّٰۤٮِٕحُوۡنَ الرّٰكِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَالنَّاهُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَالۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰهِؕ وَبَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
১১২.) আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী, অসৎকাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনাবেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!
مَا كَانَ لِلنَّبِىِّ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ يَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِكِيۡنَ وَلَوۡ كَانُوۡۤا اُولِىۡ قُرۡبٰى مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِيۡمِ
১১৩.) নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সঙ্গত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।
وَمَا كَانَ اسۡتِغۡفَارُ اِبۡرٰهِيۡمَ لِاَبِيۡهِ اِلَّا عَنۡ مَّوۡعِدَةٍ وَّعَدَهَاۤ اِيَّاهُۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهٗۤ اَنَّهٗ عَدُوٌّ لِّلَّهِ تَبَرَّاَ مِنۡهُؕ اِنَّ اِبۡرٰهِيۡمَ لَاَوَّاهٌ حَلِيۡمٌ
১১৪.) ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে। যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহ ভীরু ও ধৈর্যশীল ছিল।
وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُضِلَّ قَوۡمَۢا بَعۡدَ اِذۡ هَدٰٮهُمۡ حَتّٰى يُبَيِّنَ لَهُمۡ مَّا يَتَّقُوۡنَؕ اِنَّ اللّٰهَ بِكُلِّ شَىۡءٍ عَلِيۡمٌ
১১৫.) লোকদেরকে হেদায়াত দান করার পর আবার গোমরাহীতে লিপ্ত করা আল্লাহর রীতি নয়, যতক্ষণ না তিনি তাদেরকে কোন জিনিস থেকে সংযত হয়ে চলতে হবে তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। আসলে আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন।
اِنَّ اللّٰهَ لَهٗ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ يُحۡىٖ وَيُمِيۡتُؕ وَمَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ
১১৬.) আর এও সত্য, আসমান ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন, জীবন ও মৃত্যু তাঁরই ইখতিয়ার ভুক্ত এবং তোমাদের এমন কোন সহায় ও সাহায্যকারী নেই যে তোমাদেরকে তাঁর হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
لَّقَد تَّابَ اللّٰهُ عَلَى النَّبِىِّ وَالۡمُهٰجِرِيۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ الَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُ فِىۡ سَاعَةِ الۡعُسۡرَةِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا كَادَ يَزِيۡغُ قُلُوۡبُ فَرِيۡقٍ مِّنۡهُمۡ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡؕ اِنَّهٗ بِهِمۡ رَءُوۡفٌ رَّحِيۡمٌۙ
১১৭.) আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগিতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন। যদিও তাদের মধ্য থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন। ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এলোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান।
وَّعَلَى الثَّلٰثَةِ الَّذِيۡنَ خُلِّفُوۡا حَتّٰۤى اِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ وَضَاقَتۡ عَلَيۡهِمۡ اَنۡفُسُهُمۡ وَظَنُّوۡۤا اَنۡ لَّا مَلۡجَاَ مِنَ اللّٰهِ اِلَّاۤ اِلَيۡهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيۡهِمۡ لِيَتُوۡبُوۡٓاؕ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ
১১৮.) আর কে তিনজনের ব্যাপার মুলতবী করে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দিয়েছেন পৃথিবী তার সমগ্র ব্যাপকতা সত্ত্বেও যখন তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেলো, তাদের নিজেদের প্রাণও তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ালো এবং তারা জেনে নিল যে, আল্লাহর হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিজের রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই তখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের দিকে ফিরলেন যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। অবশ্যই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا اتَّقُوۡا اللّٰهَ وَكُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِيۡنَ
১১৯.) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও।
مَا كَانَ لِاَهۡلِ الۡمَدِيۡنَةِ وَمَنۡ حَوۡلَهُمۡ مِّنَ الۡاَعۡرَابِ اَنۡ يَّتَخَلَّفُوۡا عَنۡ رَّسُوۡلِ اللّٰهِ وَلَا يَرۡغَبُوۡا بِاَنۡفُسِهِمۡ عَنۡ نَّفۡسِهٖؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ لَا يُصِيۡبُهُمۡ ظَمَاٌ وَّلَا نَصَبٌ وَّلَا مَخۡمَصَةٌ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَلَا يَطَـُٔوۡنَ مَوۡطِئًا يَّغِيۡظُ الۡكُفَّارَ وَلَا يَنَالُوۡنَ مِنۡ عَدُوٍّ نَّيۡلاً اِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ بِهٖ عَمَلٌ صَالِحٌؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُضِيۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِيۡنَۙ
১২০.) মদীনাবাসী ও তাদের আশপাশে বেদুইনদের জন্য আল্লাহর রসূলকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকা এবং তার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে নিজেদের জীবনের চিন্তায় মশগুল হয়ে যাওয়া কোন ক্রমেই সমীচীন ছিল না। কারণ আল্লাহর পথে তারা যখনই ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবে, যখনই এমন পথ অবলম্বন করবে যা সত্য অমান্য কারীদের কাছে অসহনীয় এবং যখনই কোন দুশমনের ওপর (সত্যের প্রতি দুশমনির) প্রতিশোধ নেবে তৎক্ষনাৎ তার বদলে তাদের জন্য একটি সৎকাজ লেখা হবেই। এর ব্যতিক্রম কখনো হবে না। অবশ্যই আল্লাহর দরবারে সৎ কর্মশীলদের পরিশ্রম বিফল যায় না।
وَلَا يُنۡفِقُوۡنَ نَفَقَةً صَغِيۡرَةً وَّلَا كَبِيۡرَةً وَّلَا يَقۡطَعُوۡنَ وَادِيًا اِلَّا كُتِبَ لَهُمۡ لِيَجۡزِيَهُمُ اللّٰهُ اَحۡسَنَ مَا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
১২১.) অনুরূপভাবে তারা যখনই (আল্লাহর পথে) কম বা বেশী কিছু সম্পদ ব্যয় করবে এবং (সংগ্রাম সাধনায়) যখনই কোন উপত্যকা অতিক্রম করবে, অমনি তা তাদের নামে লেখা হয়ে যাবে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের এ ভাল কাজের পুরস্কার দান করেন।
وَمَا كَانَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لِيَنۡفِرُوۡا كَآفَّةًؕ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِنۡ كُلِّ فِرۡقَةٍ مِّنۡهُمۡ طَآٮِٕفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوۡا فِىۡ الدِّيۡنِ وَلِيُنۡذِرُوۡا قَوۡمَهُمۡ اِذَا رَجَعُوۡۤا اِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُوۡنَ
১২২.) আর মুমিনদের সবার এক সাথে বের হয়ে পড়ার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু তাদের জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভাল হতো। তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতো এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদের কে সতর্ক করতো, যাতে তারা (অমুসলমানী আচরণ থেকে) বিরত থাকতো, এমনটি হলো না কেন?
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا قَاتِلُوۡا الَّذِيۡنَ يَلُوۡنَكُمۡ مِّنَ الۡكُفَّارِ وَلۡيَجِدُوۡا فِيۡكُمۡ غِلۡظَةًؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِيۡنَ
১২৩.) হে ঈমানদারগণ! সত্য অস্বীকারকারীদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তীতাদের সাথে যুদ্ধ করো। তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
وَاِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ يَّقُوۡلُ اَيُّكُمۡ زَادَتۡهُ هٰذِهٖۤ اِيۡمَانًاۚ فَاَمَّا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا فَزَادَتۡهُمۡ اِيۡمَانًا وَّهُمۡ يَسۡتَبۡشِرُوۡنَ
১২৪.) যখন কোন নতুন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের কেউ কেউ (ঠাট্টা করে মুসলমানদের) জিজ্ঞেস করে, বলো, এর ফলে তোমাদের কার ঈমান বেড়ে গেছে? (এর জবাব হচ্ছে) যারা ঈমান এনেছে (প্রত্যেকটি অবতীর্ণ সুরা) যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত।
وَاَمَّا الَّذِيۡنَ فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ مَّرَضٌ فَزَادَتۡهُمۡ رِجۡسًا اِلٰى رِجۡسِهِمۡ وَمَاتُوۡا وَهُمۡ كٰفِرُوۡنَ
১২৫.) তবে যাদের অন্তরে (মুনাফিকী) রোগ বাসা বেঁধেছিল তাদের পূর্ব কলুষতার ওপর (প্রত্যেকটি নতুন সূরা) আরো একটি কলুষতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে।
اَوَلَا يَرَوۡنَ اَنَّهُمۡ يُفۡتَنُوۡنَ فِىۡ كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً اَوۡ مَرَّتَيۡنِ ثُمَّ لَا يَتُوۡبُوۡنَ وَلَا هُمۡ يَذَّكَّرُوۡنَ
১২৬.) এরা কি দেখে না, প্রতি বছর এদেরকে দুএকটি পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়? কিন্তু এরপরও এরা তাওবাও করে না কোন শিক্ষাও গ্রহণ করে না।
وَاِذَا مَاۤ اُنۡزِلَتۡ سُوۡرَةٌ نَّظَرَ بَعۡضُهُمۡ اِلٰى بَعۡضٍ هَلۡ يَرٰٮكُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُوۡاؕ صَرَفَ اللّٰهُ قُلُوۡبَهُمۡ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا يَفۡقَهُوۡنَ
১২৭.) যখন কোন সূরা নাযিল হয়, এরা চোখের ইশারায় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের কেউ দেখতে পায়নি তো? তারপর চুপে চুপে সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের মন বিমুখ করে দিয়েছেন কারণ তারা এমন একদল লোক যাদের বোধশক্তি নেই।
لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِكُمۡ عَزِيۡزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيۡصٌ عَلَيۡكُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِيۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِيۡمٌ
১২৮.) দেখো, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল। তোমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী। মুমিনদের প্রতি সে স্নেহশীল ও করুণাসিক্ত।
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُلۡ حَسۡبِىَ اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۖ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُؕ وَهُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِيۡمِ
১২৯.) - এখন যদি তারা তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে হে নবী! তাদেরকে বলে দাও, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আমি তার ওপরই ভরসা করেছি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি।”
No comments:
Post a Comment