بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
الۤرا تِلۡكَ اٰيٰتُ الۡكِتٰبِ وَقُرۡاٰنٍ مُّبِيۡنٍ
১.) আলিফ-লাম-র। এগুলো আল্লাহ্র কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত।
رُّبَمَا يَوَدُّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا لَوۡ كَانُوۡا مُسۡلِمِيۡنَ
২.) এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে) অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবেঃ হায়, যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম!
ذَرۡهُمۡ يَاۡكُلُوۡا وَيَتَمَتَّعُوۡا وَيُلۡهِهِمُ الۡاَمَلُ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُوۡنَ
৩.) ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। শিগ্গির এরা জানতে পারবে।
وَمَاۤ اَهۡلَكۡنَا مِنۡ قَرۡيَةٍ اِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعۡلُوۡمٌ
৪.) ইতিপূর্বে আমি যে জনবসতিই ধ্বংস করেছি তার জন্য একটি বিশেষ কর্ম-অবকাশ লেখা হয়ে গিয়েছিল।
مَا تَسۡبِقُ مِنۡ اُمَّةٍ اَجَلَهَا وَمَا يَسۡتَاْخِرُوۡنَ
৫.) কোন জাতি তার নিজের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে যেমন ধ্বংস হতে পারে না, তেমনি সময় এসে যাওয়ার পরে অব্যাহতিও পেতে পারে না।
وَقَالُوۡا يٰۤاَيُّهَا الَّذِىۡ نُزِّلَ عَلَيۡهِ الذِّكۡرُ اِنَّكَ لَمَجۡنُوۡنٌ
৬.) এরা বলে, “ওহে যার প্রতি বাণী৩ অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি নিশ্চয়ই উন্মাদ!
لَّوۡ مَا تَاۡتِيۡنَا بِالۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اِنۡ كُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِيۡنَ
৭.) যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে আনছো না কেন?”
مَا نُنَزِّلُ الۡمَلٰۤٮِٕكَةَ اِلَّا بِالۡحَقِّ وَمَا كَانُوۡۤا اِذًا مُّنۡظَرِيۡنَ
৮.) ---আমি ফেরেশতাদেরকে এমনিই অবতীর্ণ করি না, তারা যখনই অবতীর্ণ হয় সত্য সহকারে অবতীর্ণ হয়, তারপর লোকদেরকে আর অবকাশ দেয়া হয় না।
اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّكۡرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ
৯.) আর এই বাণী, একে তো আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
وَلَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِكَ فِىۡ شِيَعِ الۡاَوَّلِيۡنَ
১০.) হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল পাঠিয়েছিলাম।
وَمَا يَاۡتِيۡهِمۡ مِّنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا كَانُوۡا بِهٖ يَسۡتَهۡزِءُوۡنَ
১১.) তাদের কাছে কোন রসূল এসেছে এবং তারা তাঁকে বিদ্রূপ করেনি, এমনটি কখনো হয়নি।
كَذٰلِكَ نَسۡلُكُهٗ فِىۡ قُلُوۡبِ الۡمُجۡرِمِيۡنَۙ
১২.) এ বাণীকে অপরাধীদের অন্তরে আমি এভাবেই (লৌহ শলাকার মতো) প্রবেশ করাই।
لَا يُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖۚ وَقَدۡ خَلَتۡ سُنَّةُ الۡاَوَّلِيۡنَ
১৩.) তারা এর প্রতি ঈমান আনে না।৭ এ ধরনের লোকদের এ রীতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
وَلَوۡ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ بَابًا مِّنَ السَّمَآءِ فَظَلُّوۡا فِيۡهِ يَعۡرُجُوۡنَۙ
১৪.) যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোন দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো
لَقَالُوۡۤا اِنَّمَا سُكِّرَتۡ اَبۡصَارُنَا بَلۡ نَحۡنُ قَوۡمٌ مَّسۡحُوۡرُوۡنَ
১৫.) তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে।
وَلَقَدۡ جَعَلۡنَا فِىۡ السَّمَآءِ بُرُوۡجًا وَّزَيَّنّٰهَا لِلنّٰظِرِيۡنَۙ
১৬.) আকাশে আমি অনেক মজবুত দূর্গ নির্মাণ করেছি,৮ দর্শকদের জন্য সেগুলো সুসজ্জিত করেছি,
وَحَفِظۡنٰهَا مِنۡ كُلِّ شَيۡطٰنٍ رَّجِيۡمٍۙ
১৭.) এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেগুলোকে সংরক্ষণ করেছি। কোন শয়তান সেখানে অনুপ্রবেশ করতে পারে না,
اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَهٗ شِهَابٌ مُّبِيۡنٌ
১৮.) তবে আড়ি পেতে বা চুরি করে কিছু শুনতে পারে। আর যখন সে চুরি করে শোনার চেষ্টা করে তখন একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তাকে ধাওয়া করে।
وَالۡاَرۡضَ مَدَدۡنٰهَا وَاَلۡقَيۡنَا فِيۡهَا رَوَاسِىَ وَاَنۡۢبَتۡنَا فِيۡهَا مِنۡ كُلِّ شَىۡءٍ مَّوۡزُوۡنٍ
১৯.) পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি, তার মধ্যে পাহাড় স্থাপন করেছি, সকল প্রজাতির উদ্ভিদ তার মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে উৎপন্ন করেছি
وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِيۡهَا مَعَايِشَ وَمَنۡ لَّسۡتُمۡ لَهٗ بِرٰزِقِيۡنَ
২০.) এবং তার মধ্যে জীবিকার উপকরণাদি সরবরাহ করেছি তোমাদের জন্যও এবং এমন বহু সৃষ্টির জন্যও যাদের আহারদাতা তোমরা নও।
وَاِنۡ مِّنۡ شَىۡءٍ اِلَّا عِنۡدَنَا خَزَآٮِٕنُهٗ وَمَا نُنَزِّلُهٗۤ اِلَّا بِقَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ
২১.) এমন কোন জিনিস নেই যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই এবং আমি যে জিনিসই অবতীর্ণ করি একটি নির্ধারিত পরিমাণেই করে থাকি।
وَاَرۡسَلۡنَا الرِّيٰحَ لٰوقِحَ فَاَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسۡقَيۡنٰكُمُوۡهُۚ وَمَاۤ اَنۡتُمۡ لَهٗ بِخٰزِنِيۡنَ
২২.) বৃষ্টিবাহী বায়ূ আমিই পাঠাই। তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদের পিপাসা মিটাই। এ সম্পদের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে নেই।
وَاِنَّا لَنَحۡنُ نُحۡىٖ وَنُمِيۡتُ وَنَحۡنُ الۡوٰرِثُوۡنَ
২৩.) জীবন ও মৃত্যু আমিই দান করি এবং আমিই হবো সবার উত্তরাধিকারী।
وَلَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَقۡدِمِيۡنَ مِنۡكُمۡ وَلَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَـٔۡخِرِيۡنَ
২৪.) তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে আমি দেখে রেখেছি এবং পরবর্তী আগমনকারীরাও আমার দৃষ্টি সমক্ষে আছে।
وَاِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحۡشُرُهُمۡؕ اِنَّهٗ حَكِيۡمٌ عَلِيۡمٌ
২৫.) অবশ্যি তোমার রব তাদের সবাইকে একত্র করবেন। তিনি জ্ঞানময় ও সবকিছু জানেন।
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
২৬.) আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে।
وَالۡجَآنَّ خَلَقۡنٰهُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ
২৭.) আর এর আগে জিনদের সৃষ্টি করেছি আগুনের শিখা থেকে।
وَاِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلٰۤٮِٕكَةِ اِنِّىۡ خَالِقٌۢ بَشَرًا مِّنۡ صَلۡصٰلٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
২৮.) তারপর তখনকার কথা স্মরণ করো যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে একটি মানুষ সৃষ্টি করছি।
فَاِذَا سَوَّيۡتُهٗ وَنَفَخۡتُ فِيۡهِ مِنۡ رُّوۡحِىۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِيۡنَ
২৯.) যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁকে দেবো তখন তোমরা সবাই তার সামনে সিজদাবনত হয়ো।
فَسَجَدَ الۡمَلٰۤٮِٕكَةُ كُلُّهُمۡ اَجۡمَعُوۡنَۙ
৩০.) সেমতে সকল ফেরেশতা একযোগে তাকে সিজ্দা করলো,
اِلَّاۤ اِبۡلِيۡسَؕ اَبٰٓى اَنۡ يَّكُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِيۡنَ
৩১.) ইবলীস ছাড়া, কারণ সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করলো।
قَالَ يٰۤاِبۡلِيۡسُ مَا لَكَ اَلَّا تَكُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِيۡنَ
৩২.) আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “হে ইবলীস! তোমার কি হলো, তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?”
قَالَ لَمۡ اَكُنۡ لِّاَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ صَلۡصٰلٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ
৩৩.) সে জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজ্দা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো।”
قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡهَا فَاِنَّكَ رَجِيۡمٌۙ
৩৪.) আল্লাহ বললেন, “তবে তুমি বের হয়ে যাও এখান থেকে, কেননা তুমি ধিকৃত।
وَاِنَّ عَلَيۡكَ اللَّعۡنَةَ اِلٰى يَوۡمِ الدِّيۡنِ
৩৫.) আর এখন কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার ওপর অভিসম্পাত!”
قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِىۡۤ اِلٰى يَوۡمِ يُبۡعَثُوۡنَ
৩৬.) সে আরয করলো, “হে আমার রব! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে।”
قَالَ فَاِنَّكَ مِنَ الۡمُنۡظَرِيۡنَۙ
৩৭.) বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো
اِلٰى يَوۡمِ الۡوَقۡتِ الۡمَعۡلُوۡمِ
৩৮.) সেদিন পর্যন্ত যার সময় আমার জানা আছে।”
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغۡوَيۡتَنِىۡ لَاُزَيِّنَنَّ لَهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَاُغۡوِيَنَّهُمۡ اَجۡمَعِيۡنَۙ
৩৯.) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো,
اِلَّا عِبَادَكَ مِنۡهُمُ الۡمُخۡلَصِيۡنَ
৪০.) তবে এদের মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া।”
قَالَ هٰذَا صِرٰطٌ عَلَىَّ مُسۡتَقِيۡمٌ
৪১.) বললেন, “এটিই আমার নিকট পৌঁছবার সোজা পথ।
اِنَّ عِبَادِىۡ لَيۡسَ لَكَ عَلَيۡهِمۡ سُلۡطٰنٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الۡغٰوِيۡنَ
৪২.) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোন জোর খাটবে না। তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে
وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوۡعِدُهُمۡ اَجۡمَعِيۡنَۙ
৪৩.) এবং তাদের সবার জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তির অঙ্গীকার।”
لَهَا سَبۡعَةُ اَبۡوَابٍؕ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٌ مَّقۡسُوۡمٌ
৪৪.) এ জাহান্নাম (ইবলীসের অনুসারীদের জন্য যার শাস্তির অঙ্গীকার করা হয়েছে) সাতটি দরজা বিশিষ্ট। প্রত্যেকটি দরজার জন্য তাদের মধ্য থেকে একটি অংশ নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে।
اِنَّ الۡمُتَّقِيۡنَ فِىۡ جَنّٰتٍ وَّعُيُوۡنٍؕ
৪৫.) অন্যদিকে মুত্তাকীরা থাকবে বাগানে ও নির্ঝরিণীসমূহে
ادۡخُلُوۡهَا بِسَلٰمٍ اٰمِنِيۡنَ
৪৬.) এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা এগুলোতে প্রবেশ করো শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে।
وَنَزَعۡنَا مَا فِىۡ صُدُوۡرِهِمۡ مِّنۡ غِلٍّ اِخۡوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِيۡنَ
৪৭.) তাদের মনে যে সামান্য কিছু মনোমালিন্য থাকবে তা আমি বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে বসবে।
لَا يَمَسُّهُمۡ فِيۡهَا نَصَبٌ وَّمَا هُمۡ مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِيۡنَ
৪৮.) সেখানে তাদের না কোন পরিশ্রম করতে হবে আর না তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হবে।
نَبِّئۡ عِبَادِىۡۤ اَنِّىۡۤ اَنَا الۡغَفُوۡرُ الرَّحِيۡمُۙ
৪৯.) হে নবী! আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
وَاَنَّ عَذَابِىۡ هُوَ الۡعَذَابُ الۡاَلِيۡمُ
৫০.) কিন্তু এ সঙ্গে আমার আযাবও ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক।
وَنَبِّئۡهُمۡ عَنۡ ضَيۡفِ اِبۡرٰهِيۡمَۘ
৫১.) আর তাদেরকে ইবরাহীমের মেহমানদের কাহিনী একটু শুনিয়ে দাও।
اِذۡ دَخَلُوۡا عَلَيۡهِ فَقَالُوۡا سَلٰمًاؕ قَالَ اِنَّا مِنۡكُمۡ وَجِلُوۡنَ
৫২.) যখন তারা এলো তাঁর কাছে এবং বললো, “সালাম তোমার প্রতি।” সে বললো, “আমরা তোমাদের দেখে ভয় পাচ্ছি।”
قَالُوۡا لَا تَوۡجَلۡ اِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلٰمٍ عَلِيۡمٍ
৫৩.) তারা জবাব দিল, “ভয় পেয়ো না, আমরা তোমাকে এক পরিণত জ্ঞান সম্পন্ন পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।”
قَالَ اَبَشَّرۡتُمُوۡنِىۡ عَلٰٓى اَنۡ مَّسَّنِىَ الۡكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُوۡنَ
৫৪.) ইবরাহীম বললো, “তোমরা কি বার্ধক্যবস্থায় আমাকে সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছো? একটু ভেবে দেখো তো এ কোন্ ধরনের সুসংবাদ তোমরা আমাকে দিচ্ছো?”
قَالُوۡا بَشَّرۡنٰكَ بِالۡحَقِّ فَلَا تَكُنۡ مِّنَ الۡقٰنِطِيۡنَ
৫৫.) তারা জবাব দিল, “আমরা তোমাকে সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি, তুমি নিরাশ হয়ো না।”
قَالَ وَمَنۡ يَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَةِ رَبِّهٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ
৫৬.) ইবরাহীম বললো, “পথভ্রষ্ট লোকেরাই তো তাদের রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়।”
قَالَ فَمَا خَطۡبُكُمۡ اَيُّهَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ
৫৭.) তারপর ইবরাহীম জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহর প্রেরিতরা! তোমরা কোন্ অভিযানে বের হয়েছো?”
قَالُوۡۤا اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰى قَوۡمٍ مُّجۡرِمِيۡنَۙ
৫৮.) তারা বললো, “আমাদের একটি অপরাধী সম্প্রদায়ের দিকে পাঠানো হয়েছে।
اِلَّاۤ اٰلَ لُوۡطٍؕ اِنَّا لَمُنَجُّوۡهُمۡ اَجۡمَعِيۡنَۙ
৫৯.) শুধুমাত্র লূতের পরিবারবর্গ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের সবাইকে আমরা বাঁচিয়ে নেবো,
اِلَّا امۡرَاَتَهٗ قَدَّرۡنَاۙ اِنَّهَا لَمِنَ الۡغٰبِرِيۡنَ
৬০.) তার স্ত্রী ছাড়া, যার জন্য (আল্লাহ বলেনঃ) আমি স্থির করেছি, সে পেছনে অবস্থানকারীদের সাথে থাকবে।”
فَلَمَّا جَآءَ اٰلَ لُوۡطِ الۡمُرۡسَلُوۡنَۙ
৬১.) প্রেরিতরা যখন লূতের পরিবারের কাছে পৌঁছল
قَالَ اِنَّكُمۡ قَوۡمٌ مُّنۡكَرُوۡنَ
৬২.) তখন সে বললো, “আপনারা অপরিচিত মনে হচ্ছে।”
قَالُوۡا بَلۡ جِئۡنٰكَ بِمَا كَانُوۡا فِيۡهِ يَمۡتَرُوۡنَ
৬৩.) তারা জবাব দিল, “না, বরং আমরা তাই এনেছি যার আসার ব্যাপারে এরা সন্দেহ করছিল।
وَاَتَيۡنٰكَ بِالۡحَقِّ وَاِنَّا لَصٰدِقُوۡنَ
৬৪.) আমরা তোমাকে যথার্থই বলছি, আমরা সত্য সহকারে তোমার কাছে এসেছি।
فَاَسۡرِ بِاَهۡلِكَ بِقِطۡعٍ مِّنَ الَّيۡلِ وَاتَّبِعۡ اَدۡبَارَهُمۡ وَلَا يَلۡتَفِتۡ مِنۡكُمۡ اَحَدٌ وَّامۡضُوۡا حَيۡثُ تُؤۡمَرُوۡنَ
৬৫.) কাজেই এখন তুমি কিছু রাত থাকতে নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে বের হয়ে যাও এবং তুমি তাদের পেছনে পেছনে চলো। তোমাদের কেউ যেন পেছন ফিরে না তাকায়। ব্যাস, সোজা চলে যাও যেদিকে যাবার জন্য তোমাদের হুকুম দেয়া হচ্ছে।”
وَقَضَيۡنَاۤ اِلَيۡهِ ذٰلِكَ الۡاَمۡرَ اَنَّ دَابِرَ هٰٓؤُلَآءِ مَقۡطُوۡعٌ مُّصۡبِحِيۡنَ
৬৬.) আর তাকে আমি এ ফায়সালা পৌঁছিয়ে দিলাম যে, সকাল হতে হতেই এদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে।
وَجَآءَ اَهۡلُ الۡمَدِيۡنَةِ يَسۡتَبۡشِرُوۡنَ
৬৭.) ইত্যবসরে নগরবাসীরা মহা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত হয়ে লূতের বাড়ি চড়াও হলো।
قَالَ اِنَّ هٰٓؤُلَآءِ ضَيۡفِىۡ فَلَا تَفۡضَحُوۡنِۙ
৬৮.) লূত বললো, “ভাইয়েরা আমার! এরা হচ্ছে আমার মেহমান, আমাকে বে-ইজ্জত করো না।
وَاتَّقُوۡا اللّٰهَ وَلَا تُخۡزُوۡنِ
৬৯.) আল্লাহকে ভয় করো, আমাকে লাঞ্ছিত করো না।”
قَالُوۡۤا اَوَلَمۡ نَنۡهَكَ عَنِ الۡعٰلَمِيۡنَ
৭০.) তারা বললো, “আমরা না তোমাকে বারবার মানা করেছি, সারা দুনিয়ার ঠিকেদারী নিয়ো না?”
قَالَ هٰٓؤُلَآءِ بَنٰتِىۡۤ اِنۡ كُنۡتُمۡ فٰعِلِيۡنَؕ
৭১.) লূত লাচার হয়ে বললো, “যদি তোমাদের একান্তই কিছু করতেই হয় তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে।”
لَعَمۡرُكَ اِنَّهُمۡ لَفِىۡ سَكۡرَتِهِمۡ يَعۡمَهُوۡنَ
৭২.) তোমার জীবনের কসম হে নবী! সে সময় তারা যেন একটি নেশায় বিভোর হয়ে মাতালের মতো আচরণ করে চলছিল।
فَاَخَذَتۡهُمُ الصَّيۡحَةُ مُشۡرِقِيۡنَۙ
৭৩.) অবশেষে প্রভাত হতেই একটি বিকট আওয়াজ তাদেরকে আঘাত করলো
فَجَعَلۡنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَاَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ حِجَارَةً مِّنۡ سِجِّيۡلٍؕ
৭৪.) এবং আমি সেই জনপদটি ওলট পালট করে রেখে দিলাম আর তাদের ওপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করলাম।
اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَاَيٰتٍ لِّلۡمُتَوَسِّمِيۡنَ
৭৫.) প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ লোকদের জন্য এ ঘটনার মধ্যে বিরাট নিদর্শন রয়েছে।
وَاِنَّهَا لَبِسَبِيۡلٍ مُّقِيۡمٍ
৭৬.) আর সেই এলাকাটি (যেখানে এটা ঘটেছিল) লোক চলাচলের পথের পাশে অবস্থিত।
اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَاَيَةً لِّلۡمُؤۡمِنِيۡنَؕ
৭৭.) ঈমানদার লোকদের জন্য এর মধ্যে শিক্ষার বিষয় রয়েছে।
وَاِنۡ كَانَ اَصۡحٰبُ الۡاَيۡكَةِ لَظٰلِمِيۡنَۙ
৭৮.) আর আইকাবাসীরা জালেম ছিল।
فَانتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡۘ وَاِنَّهُمَا لَبِاِمَامٍ مُّبِيۡنٍؕ
৭৯.) কাজেই দেখে নাও আমিও তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছি। আর এ উভয় সম্প্রদায়ের বিরাণ এলাকা প্রকাশ্য পথের ধারে অবস্থিত।
وَلَقَدۡ كَذَّبَ اَصۡحٰبُ الۡحِجۡرِ الۡمُرۡسَلِيۡنَۙ
৮০.) হিজ্রবাসীরাও রসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল।
وَاٰتَيۡنٰهُمۡ اٰيٰتِنَا فَكَانُوۡا عَنۡهَا مُعۡرِضِيۡنَۙ
৮১.) আমি তাদের কাছে আমার নিদর্শন পাঠাই, নিশানী দেখাই কিন্তু তারা সবকিছু উপেক্ষা করতে থাকে।
وَكَانُوۡا يَنۡحِتُوۡنَ مِنَ الۡجِبَالِ بُيُوۡتًا اٰمِنِيۡنَ
৮২.) তারা পাহাড় কেটে কেটে গৃহ নির্মাণ করতো এবং নিজেদের বাসস্থানে একেবারেই নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত ছিল।
فَاَخَذَتۡهُمُ الصَّيۡحَةُ مُصۡبِحِيۡنَۙ
৮৩.) শেষ পর্যন্ত প্রভাত হতেই একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ তাদেরকে আঘাত হানলো
فَمَاۤ اَغۡنٰى عَنۡهُمۡ مَّا كَانُوۡا يَكۡسِبُوۡنَؕ
৮৪.) এবং তাদের উপার্জন তাদের কোন কাজে লাগলো না।
وَمَا خَلَقۡنَا السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَاۤ اِلَّا بِالۡحَقِّؕ وَاِنَّ السَّاعَةَ لَاَتِيَةٌۚ فَاصۡفَحِ الصَّفۡحَ الۡجَمِيۡلَ
৮৫.) আমি পৃথিবী ও আকাশকে এবং তাদের মধ্যকার সকল জিনিসকে সত্য ছাড়া অন্য কিছুর ভিত্তিতে সৃষ্টি করিনি এবং ফায়সালার সময় নিশ্চিতভাবেই আসবে। কাজেই হে মুহাম্মাদ! (এই লোকদের আজেবাজে আচরণগুলোকে) ভদ্রভাবে উপেক্ষা করে যাও।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ الۡخَلّٰقُ الۡعَلِيۡمُ
৮৬.) নিশ্চিতভাবে তোমার রব সবার স্রষ্টা এবং সবকিছু জানেন।
وَلَقَدۡ اٰتَيۡنٰكَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِىۡ وَالۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِيۡمَ
৮৭.) আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়ে রেখেছি, যা বারবার আবৃত্তি করার মতো এবং তোমাকে দান করেছি মহান কুরআন।
لَا تَمُدَّنَّ عَيۡنَيۡكَ اِلٰى مَا مَتَّعۡنَا بِهٖۤ اَزۡوَاجًا مِّنۡهُمۡ وَلَا تَحۡزَنۡ عَلَيۡهِمۡ وَاخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ
৮৮.) আমি তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মুনঃক্ষুণ্নও হয়ো না। তাদেরকে বাদ দিয়ে মু’মিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও
وَقُلۡ اِنِّىۡۤ اَنَا النَّذِيۡرُ الۡمُبِيۡنُۚ
৮৯.) এবং (অমান্যকারীদেরকে) বলে দাও--- আমিতো প্রকাশ্য সতর্ককারী।
كَمَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَى الۡمُقۡتَسِمِيۡنَۙ
৯০.) এটা ঠিক তেমনি ধরনের সতর্কীকরণ যেমন সেই বিভক্তকারীদের দিকে আমি পাঠিয়েছিলাম
الَّذِيۡنَ جَعَلُوۡا الۡقُرۡاٰنَ عِضِيۡنَ
৯১.) যারা নিজেদের কুরআনকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে।
فَوَرَبِّكَ لَنَسۡـَٔلَنَّهُمۡ اَجۡمَعِيۡنَۙ
৯২.) তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যি তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করবো,
عَمَّا كَانُوۡا يَعۡمَلُوۡنَ
৯৩.) তোমরা কি কাজে নিয়োজিত ছিলে?
فَاصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَاَعۡرِضۡ عَنِ الۡمُشۡرِكِيۡنَ
৯৪.) কাজেই হে নবী! তোমাকে যে বিষয়ের হুকুম দেয়া হচ্ছে তা সরবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করো এবং শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না।
نَّا كَفَيۡنٰكَ الۡمُسۡتَهۡزِءِيۡنَۙ
৯৫.) যেসব বিদ্রূপকারী আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও ইলাহ বলে গণ্য করে
الَّذِيۡنَ يَجۡعَلُوۡنَ مَعَ اللّٰهِ اِلٰهًا اٰخَرَۚ فَسَوۡفَ يَعۡلَمُوۡنَ
৯৬.) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট। শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।
وَلَقَدۡ نَعۡلَمُ اَنَّكَ يَضِيۡقُ صَدۡرُكَ بِمَا يَقُوۡلُوۡنَۙ
৯৭.) আমি জানি, এরা তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও।
فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَكُنۡ مِّنَ السّٰجِدِيۡنَۙ
৯৮.) এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁর সকাশে সিজ্দাবনত হও
وَاعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتّٰى يَاۡتِيَكَ الۡيَقِيۡنُ
৯৯.) এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো।
No comments:
Post a Comment